skip to Main Content

দেহযতন I ইয়োগা অ্যাক্ট

শারীরিক ও মানসিক ব্যায়ামের সংমিশ্রণের জন্য হাজার বছর ধরে ইয়োগা বা যোগব্যায়াম বেশ জনপ্রিয়, যা বিশ্বজুড়ে ইয়োগা অনুশীলনকারীদের মনোযোগ ধরে রেখেছে। চাইলে আপনিও ইয়োগা ম্যাট রোল করে এখনই অনুশীলনে বসে পড়তে পারেন

ইয়োগার সৌন্দর্য হলো এর উপকার পেতে আপনাকে যোগী বা যোগিনী হতে হবে না! বয়সে তরুণ কিংবা বৃদ্ধ, স্থূলকায় কিংবা জিরো ফিগার—ইয়োগা যে কারও মন শান্ত এবং শরীর শক্তিশালী করার ক্ষমতা রাখে। ইয়োগা পরিভাষা দেখে, অভিনব ইয়োগা স্টুডিও ও জটিল ইয়োগা মুভের কথা চিন্তা করে ভয় পাবেন না। দিন শেষে, ইয়োগা সবার জন্যই।
ইয়োগার বিল্ডিং ব্লক হলো পোজ বা ভঙ্গি। নিয়মিত ইয়োগা অনুশীলনের অভ্যাস গড়ে তুলতে দশটি বেসিক ভঙ্গি চেষ্টা করে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন সার্টিফাইড ইনস্ট্রাক্টর নাতাশা সানজিদা। একই সঙ্গে সেগুলোর উপকারের ওপরও আলোকপাত করেছেন দেশি এই ইয়োগা এক্সপার্ট।
নাতাশা বলেন, ‘প্রতিটি ভঙ্গির মধ্য দিয়ে শরীরকে ধীরে ধীরে মুভ করুন। মুভমেন্টের পাশাপাশি শ্বাস নেওয়ার বিষয়টিও খেয়াল রাখুন। কোনো ভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জিং মনে হলে বিরতি নিন, বিশেষ করে আপনার যদি শ্বাসকষ্ট হয়। শ্বাস স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে আবার শুরু করুন। মূল ব্যাপার হলো, পরের ভঙ্গিতে যাওয়ার আগে প্রতিবার কিছুক্ষণের জন্য নিশ্বাস ধরে রাখুন।’
চাইল্ডস পোজ
এ এক ডিফল্ট ভঙ্গি; দুটি ভঙ্গির বিরতিকালে দারুণ কাজে দেয়। পরবর্তী ভঙ্গিতে যাওয়ার আগে বিশ্রাম গ্রহণ এবং পুনরায় ফোকাস করার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করতে পারেন। পিঠ, নিতম্ব, ঊরু, হাঁটু ও গোড়ালি আলতো প্রসারিত করার এ ভঙ্গি আপনার মেরুদণ্ড, কাঁধ ও ঘাড় রিল্যাক্স করবে। তবে খেয়াল রাখুন—
i ঘাড়, মেরুদণ্ড ও নিতম্বের সুন্দর প্রসারিত কাঠামো পেতে চাইলে এ ভঙ্গির অনুশীলন করতে পারেন।
i হাঁটুতে আঘাত পেলে কিংবা গোড়ালির সমস্যা থাকলে এটি বাদ দেওয়াই ভালো। অন্যদিকে, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বা গর্ভবতী হলে এই ভঙ্গি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
i কুশন বা ব্লকে মাথা রেখে বিশ্রাম নিতে পারেন। অস্বস্তি বোধ করলে গোড়ালির নিচে একটি রোল করা তোয়ালে রাখা যেতে পারে।
i শ্বাস নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ড ও পিঠের নিচের পেশিগুলো শিথিল করার দিকে মনোনিবেশ করুন।
ডাউনওয়ার্ড ফেসিং ডগ
পায়ের হ্যামস্ট্রিং ও মাংসপেশি প্রসারের মাধ্যমে বাহু, কাঁধ ও পিঠকে শক্তিশালী করতে বেশ উপকারী এই ভঙ্গি। এটি পিঠের ব্যথা উপশমেও কাজে দেয়। খেয়াল রাখুন—
i কার্পাল টানেল সিনড্রোম, কবজির অন্যান্য সমস্যা কিংবা উচ্চ রক্তচাপ এবং গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে থাকলে এই ভঙ্গির অনুশীলন ডেকে আনতে পারে বিপদ।
i মাটিতে কনুই দিয়ে ভঙ্গিটি করতে পারেন, যা আপনার কবজির ওপর ওজনের চাপ কমাতে সাহায্য করবে। আরেকটু আরাম পেতে হাতের নিচে ব্লক ব্যবহারও করতে পারেন।
i হাতের তালুর মাধ্যমে ওজন সমানভাবে বণ্টন করার দিকে মনোনিবেশ করুন এবং কাঁধ থেকে দূরত্ব রেখে নিতম্ব ওঠানামা করান।
প্ল্যাঙ্ক পোজ
এটি বেশ প্রচলিত একটি ইয়োগা, যা কাঁধ, বাহু ও পায়ে শক্তি তৈরিতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখুন—
i অ্যাবস টোন করতে এবং ওপরের শরীরে শক্তি তৈরিতে প্ল্যাঙ্ক পোজ বেশ কাজে দেয়।
ু কার্পাল টানেল সিনড্রোমে ভুগলে এই পোজ এড়িয়ে চলাই উত্তম। কেননা, কবজিতে ভর দিয়ে এর অনুশীলন করা বেশ কষ্টসাধ্য। পিঠের নিম্নাংশে ব্যথা থাকলেও এটি এড়িয়ে যাওয়া কিংবা ভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে।
i অস্বস্তি কিংবা কষ্ট হলে মেঝেতে হাঁটু স্থাপন করে এই ভঙ্গির পরিবর্তন করা যেতে পারে।
i প্ল্যাঙ্ক করার সময় ঘাড়ের পেছনের অংশ এবং মেরুদণ্ড সটান রাখার ব্যাপারটি খেয়াল রাখা চাই।
ফোর-লিম্বড স্টাফ পোজ
এই পুশ-আপ ব্যায়াম সান স্যালুটেশন নামে পরিচিত একটি সাধারণ ইয়োগা, যা ক্রমানুসারে প্ল্যাঙ্ক পোজ অনুসরণ করে। শেষ পর্যন্ত আরও উন্নত ভঙ্গিতে কাজটি করতে চাইলে, যেমন হাতের ভারসাম্য বা বিপরীতে কাজ করার মতো ব্যাপারগুলো শেখার জন্য এটি উপযুক্ত। মনে রাখুন—
i প্ল্যাঙ্কের মতো এই ভঙ্গিও বাহু ও কবজি শক্তিশালী এবং পেটকে টোন-আপ করে।
i কার্পাল টানেল সিনড্রোম, পিঠের নিচের দিকে ব্যথা, কাঁধে আঘাত পাওয়া কিংবা গর্ভবতী হলে এটি বাদ দিতে হবে।
i হাঁটু মেঝেতে রেখে ভঙ্গি পরিবর্তন করা নতুনদের জন্য এটি একটি ভালো আইডিয়া।
i হাতের তালু সমানভাবে মেঝেতে চেপে ধরতে হবে এবং এই ভঙ্গি ধরে রাখার সঙ্গে সঙ্গে কাঁধ মেঝে থেকে ওপরে তুলতে হবে।
কোবরা পোজ
এই ব্যাক-বেন্ডিং ভঙ্গি পেছনের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করতে, মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়াতে এবং বুক, কাঁধ ও পেট প্রসারের ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক। তবে খেয়াল রাখুন—
i মেরুদণ্ড কিংবা ঘাড়ে আর্থ্রাইটিস, পিঠের নিম্নাংশে আঘাত কিংবা কার্পাল টানেল সিনড্রোম থাকলে এটি বাদ দেওয়া চাই।
i কোমর কয়েক ইঞ্চি ওপরে ওঠাতে হবে; কিন্তু বাহু সোজা রাখার চেষ্টা করা যাবে না।
i এই ভঙ্গি ধরে রাখার সঙ্গে সঙ্গে আপনার নাভিকে মেঝে থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
ট্রি পোজ
ভারসাম্য উন্নত করার পাশাপাশি এটি গোড়ালি, মাংসপেশি, ঊরু ও মেরুদণ্ড শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে। খেয়াল রাখুন—
i নিম্ন রক্তচাপ কিংবা ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে—এমন কোনো মেডিকেল প্রবলেম থাকলে এই ভঙ্গি এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
i ভঙ্গিটির অনুশীলনের সময় সমর্থনের জন্য একটি হাত দেয়ালে রাখতে হবে।
i এই ভঙ্গি ধরে রাখার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি মনোনিবেশ করুন।
ট্রায়াঙ্গল পোজ
ট্রায়াঙ্গল অনেক ইয়োগা সিকোয়েন্সের একটি, যা পায়ে শক্তি তৈরি এবং নিতম্ব, মেরুদণ্ড, বুক, কাঁধ, কুঁচকি, হ্যামস্ট্রিং ও মাংসপেশি প্রসারিত করতে বেশ সহায়ক। নিতম্ব ও ঘাড়ের গতিশীলতা বাড়াতেও কাজে দেয় এটি। মনে রাখুন—
i শক্তি ও সহনশীলতা তৈরির জন্য দুর্দান্ত এক ভঙ্গি এটি।
i মাথাব্যথা বা নিম্ন রক্তচাপ থাকলে এই ভঙ্গি এড়িয়ে চলুন।
i উচ্চ রক্তচাপ থাকলে চূড়ান্ত ভঙ্গিতে নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে, ঘাড়ের সমস্যা থাকলে ওপরের দিকে তাকিয়ে মাথা ঘোরানো যাবে না; সোজা সামনে তাকাতে এবং ঘাড়ের উভয় পাশ সটান রাখতে হবে।
i উত্থিত হাতটি সিলিংয়ের দিকে তুলে রাখা চাই।

সিটেড হাফ-স্পাইনাল টুইস্ট পোজ
কাঁধ, নিতম্ব ও বুক প্রসারিত করার সময় মোচড়ের এই ভঙ্গি আপনার পিঠের নমনীয়তা বাড়াতে পারে। এটি পিঠের মাঝখানের ব্যথা উপশমে উপকারী। তবে খেয়াল রাখুন—
i কাঁধের ওপরে এবং পিঠের নিম্নাংশের চারপাশে আঁটসাঁট পেশি শিথিল করতে চাইলে এই ভঙ্গির অনুশীলন করা যেতে পারে।
i পিঠে চোট থাকলে এটি বাদ দেওয়াই শ্রেয়।
i ডান হাঁটু বাঁকাতে অস্বস্তি হলে সামনে সোজা করে রাখুন।
i প্রতিটি নিশ্বাস নেওয়ার সময় ধড় ওপরের দিকে তুলুন এবং শ্বাস ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোচড় দিন।
ব্রিজ পোজ
এটি একটি পিঠ বাঁকানো ভঙ্গি, যা বুক, পিঠ ও ঘাড়ের পেশিগুলো প্রসারিত করে। পিঠ ও হ্যামস্ট্রিং পেশিতে শক্তি তৈরি করতে এটি বেশ কাজে লাগে। খেয়াল রাখুন—
i দিনের বেশির ভাগ সময় বসে কাটালে এই ভঙ্গি আপনাকে বুকের ঊর্ধ্বাংশে স্বস্তি ফিরে পেতে সহায়তা করবে।
i ঘাড়ে আঘাত থাকলে এই ভঙ্গি এড়িয়ে চলাই ভালো।
i পিঠের নিচের অংশ আপনাকে বিরক্ত করলে পেলভিসের নিচে একটি ব্লক রাখতে পারেন।
i ভঙ্গিটি ধরে রাখার সময় বুক উত্তোলনের চেষ্টা করুন এবং স্টার্নামটি চিবুকের দিকে রাখুন।
করপস পোজ
জীবনের মতো, ইয়োগা ক্লাসগুলো সাধারণত এই ভঙ্গিতেই শেষ হয়! এটি এমন এক মুহূর্ত, যা শিথিলতার অনুভূতি এনে দেয়। তবে কেউ কেউ এই ভঙ্গিতে স্থির থাকাকে বেশ কঠিন মনে করেন। যাহোক, এই ভঙ্গি যত বেশি চেষ্টা করা হবে, তত সহজে একটি শিথিল, ধ্যানমূলক অবস্থায় মগ্ন হওয়া সম্ভব হয়ে উঠবে। অবশ্য খেয়াল রাখা চাই—
i এটি সব অবস্থাতেই করা যাবে।
i এ ক্ষেত্রে মাথার নিচে একটি কম্বল রাখা যেতে পারে। এতে আরাম বোধ হবে। পিঠের নিম্নাংশে অস্বস্তি হলে একটি কম্বল গুটিয়ে নিয়ে হাঁটুর নিচে রাখতে পারেন।
সহজ মনে হলেও ইয়োগা চর্চা অত সহজ নয়। যথাযথভাবে অনুশীলন না করলে ঘটতে পারে মারাত্মক বিপদ। তাই ইয়োগা ইনস্ট্রাক্টরের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।
i ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top