skip to Main Content

পাতে পরিমিতি I রোজায় খাদ্যাভ্যাস

সাহ্‌রীতে কী খাচ্ছি আমরা? কী খাচ্ছি ইফতারে? হয়তো মুখরোচক; কিন্তু স্বাস্থ্যবান্ধব তো? থাকছে নিশাত শারমিন নিশির পরামর্শ

পবিত্র রমজান মানেই সংযমের মাস। এই সময় ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করে প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান তার নিজস্ব খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল পরিবর্তনে বাধ্য হন। রোজায় যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়, তাই কোনো রকম শারীরিক জটিলতা থাকলে তা যেন বাড়ে কিংবা নতুন জটিলতা তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা চাই। সাহ্‌রীর দিকে রাখা চাই বিশেষ খেয়াল; কেননা, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার প্রথম ধাপ এটিই।
 সাহ্‌রী না করেই রোজা রাখার প্রবণতা রয়েছে কারও কারও মধ্যে। অথচ সাহ্‌রী গ্রহণ করা সুন্নত। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই সঠিক পরিমাণে সাহ্‌রী গ্রহণ করা জরুরি।
 এই প্রচণ্ড গরমে যেহেতু রোজা চলছে, তাই তরল ও পানীয়ের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার। অনেকেরই অভ্যাস রয়েছে সাহ্‌রীতে চা কিংবা কফি পান করার। মনে রাখা জরুরি, চা ও কফি হলো ডাইইউরেটিক; অর্থাৎ আপনার শরীরকে ডিহাইড্রেট করে দিতে পারে।
 সাহ্‌রীতে অনেকেই উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন। এর ফলে পেটে জ্বালাপোড়া, অ্যাসিডিটি, বদহজম হওয়ার পাশাপাশি সারা দিন অস্বস্তিতে ভোগার শঙ্কা থাকে। তাই সাহ্‌রীর খাবার এমনভাবে বাছাই করুন, যেন পেট সারা দিন ঠান্ডা থাকে। কেননা গরমের মৌসুমে আমাদের শারীরিক তাপমাত্রা এমনিতেই একটু বেড়ে যায়। তাই কিছু সহজপাচ্য খাবার বেছে নিতে পারলে সারা দিনের অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। সাহ্‌রীতে খেতে পারেন মাছ, লাউ বা পেঁপের তরকারি, নরম ভাত ইত্যাদি।
পুরো রমজান মাস সুস্থভাবে কাটাতে হলে সাহ্‌রীর পাশাপাশি ইফতারির দিকেও দিতে হবে বাড়তি মনোযোগ। সারা দিন অভুক্ত থাকার পর ইফতারিতে একসঙ্গে প্রচুর খাবার গ্রহণ করলে তা হজমে আমাদের শরীর বেশ চাপে পড়ে যায়। ফলে বদহজম হওয়া, প্রচণ্ড অ্যাসিডিটি, নানা রকম শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। আমাদের দেশে অনেকের কাছে ইফতারি মানেই কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার, যেমন আলুর চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু, জিলাপি ইত্যাদি। এগুলো অনেকের ক্ষেত্রেই হজমবান্ধব নয়।
 ইফতারে অতিরিক্ত ঝাল মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। অন্যথায় অ্যাসিডিটি, ব্লটিং ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। খেতে পারেন পাতলা সবজি খিচুড়ি, ছোলা সেদ্ধ-মুড়ি, ওটসের খিচুড়ি প্রভৃতি।
 প্যাকেটজাত খাবারে সাধারণত বেশি লবণ ও বিভিন্ন ধরনের স্পাইস ব্যবহার করা হয়। তাই যতটা সম্ভব ন্যাচারাল খাবার গ্রহণের চেষ্টা করুন। অনেকেই ইফতারিতে স্যুপ খেতে পছন্দ করেন। বাসায় তৈরি সবজি স্যুপ, এগ স্যুপ, চিকেন মাশরুম স্যুপ ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন। তবে তাতে অবশ্যই কর্নফ্লাওয়ার, টেস্টিং সল্ট, বিট লবণ পরিহার করা উত্তম।
 ভাজাপোড়া ছাড়া যাদের ইফতার জমে না, তারা খেতে পারেন সবজি পাকোড়া, শাকের বড়া, বাসায় তৈরি ভেজিটেবল রোল ইত্যাদি। এগুলো কম তেলে ফ্রাই করে খেলে মনে শান্তি মিলবে, আবার শারীরিক অস্বস্তি থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
যাদের কোনো রকম শারীরিক অসুস্থতা বা জটিলতা রয়েছে, রোজার আগে অবশ্যই সেই বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার। রোজা রাখা যাবে কি না, এ নিয়ে বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীর মাঝে নানা দ্বিধা কাজ করে। এ ধরনের রোগীরা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে তাদের সুগার ফল হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিক আছে কিংবা রোজা রাখলে শারীরিক কোনো সমস্যা হবে কি না, সে জন্য অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। ডায়াবেটিস কিংবা অন্য কোনো জটিলতা থাকার পরেও যদি রোজা রাখা সমস্যার কারণ না হয়, সে ক্ষেত্রে ডায়েট সিলেক্ট করতে হবে খুব সাবধানে। অনেক রোগী মনে করেন, রমজান মাসে যেকোনো খাবার গ্রহণে কোনো অসুবিধা হয় না; অথচ সত্য হলো, ভুল খাবার গ্রহণ করার ফলে সমস্যা বাড়ার শঙ্কা থাকে। সারা দিন রোজা রাখার পর একটি মিষ্টি ফল কিংবা মিষ্টিজাতীয় খাবার অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে; তবে সেটি অবশ্যই শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বেছে নেওয়া চাই। এবার রোজা যেহেতু গরমকালে, তাই খেয়াল রাখা চাই, যেন শরীরে কোনোভাবেই ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা তৈরি না হয়।
সারা দিনের রোজা শেষে ক্লান্ত শরীর চাঙা রাখতে ইফতারে থাকুক একটু ক্যালরিবহুল খাবারও। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার—
 যারা ভাত পছন্দ করেন, তারা ইফতারে তা খেতে পারেন নির্দ্বিধায়। সারা দিনের অভুক্ত পেটে ভাত পড়লে শরীরে বেশ দ্রুতই এনার্জি ফিরে আসে। তা ছাড়া ভাত খেলে পেট ঠান্ডা থাকে; দ্রুত পেট ভরে যায়।
 শরীরে দ্রুত এনার্জি ফিরিয়ে আনার জন্য ইফতারে নানা রকম জুস বা শরবত রাখার চেষ্টা করুন। এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় এবং দ্রুত ক্লান্তি রোধ হয়। তাই খেতে পারেন বেলের শরবত, তরমুজের জুস, মালটার জুস ইত্যাদি।
 দুধ খেতে অনেকেই পছন্দ করেন না। ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনসমৃদ্ধ এই খাদ্য উপাদান অনেকের ইফতারির তালিকাতে জায়গা পায় না। সে ক্ষেত্রে সরাসরি দুধ না রাখলেও দুধে তৈরি খাবারগুলো রাখা যেতে পারে; যেমন পুডিং, দই চিড়া, দই বড়া, দইয়ের লাচ্ছি ইত্যাদি।
জানা কথা, শরীর সুস্থ না থাকলে ঠিকমতো রোজা রাখা সম্ভব হবে না। তাই এ সময়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা একান্ত জরুরি। আপনার খাদ্যতালিকা ঠিক পথে রয়েছে কি না, জানার জন্য পরামর্শ নিতে পারেন কোনো বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top