skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I সন্তোষ সাধনা

ধরুন, নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। বাজেট ঠিকঠাক করার পর হাতে আছে আরও ১০ লাখ টাকা। টাকাটা কি গ্রাহকের ‘অভিজ্ঞতায়’ ব্যয় করবেন, নাকি ‘সম্পৃক্ততায়’?

কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স বা গ্রাহকের অভিজ্ঞতা এবং কাস্টমার এনগেজমেন্ট বা গ্রাহকের সম্পৃক্ততা—দুটো ধারণার মধ্যে মিল থাকায় এ বিষয়গুলোকে অনেক সময় অভিন্ন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু দুয়ের মধ্যে পার্থক্য বেশ। দুটি ধারণার সংজ্ঞার মাধ্যমেই শুরু করা যাক। কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স মাপা হয় গ্রাহকের দৃষ্টিকোণ থেকে। কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানি, ব্র্যান্ড কিংবা পণ্যের সঙ্গে তাদের যে অভিজ্ঞতা, তা বোঝাতেই এ শব্দযুগলের ব্যবহার। অন্যদিকে কাস্টমার এনগেজমেন্ট হলো কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের দৃষ্টিভঙ্গি। গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, লেনদেন সহজ করা, বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো এবং গ্রাহকদের অংশগ্রহণ ও বিশ্বস্ততা বাড়াতে কোম্পানি বা ব্র্যান্ড যেসব ব্যবস্থা নিয়ে থাকে, সেগুলো বোঝাতে ব্যবহার করা হয় কাস্টমার এনগেজমেন্ট শব্দযুগল। আমেরিকান ক্লাউড-বেইজড সফটওয়্যার কোম্পানি সেলসফোর্সের একটি রিপোর্ট অনুসারে, ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হলে ৯৪ শতাংশ ক্রেতা পুনরায় একই ব্র্যান্ড থেকে কেনাকাটা করে থাকেন।
গ্রাহক সম্পৃক্ততা আদতে সহজ না হলেও এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু কৌশল কাজে লাগানো সম্ভব। সফলভাবে কাস্টমার এনগেজমেন্টের জন্য প্রথমেই একটি লক্ষ্য সেট করুন। যেকোনো কার্যকর কৌশল শুরু হয় কোনো লক্ষ্য দিয়ে। তবে তা ঠিক করার সময় খেয়াল রাখা চাই, গ্রাহক সম্পৃক্ততা কেন প্রয়োজন। একটি কোম্পানি কিংবা ব্র্যান্ডের জন্য গ্রাহক সম্পৃক্ততা অপরিহার্য, এ কথা সংশ্লিষ্ট সবারই জানা। কিন্তু লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মাথায় রাখা চাই, আপনার নিজের কোম্পানির জন্য ঠিক কী কারণে এই সম্পৃক্ততা জরুরি। বিষয়টি আরেকভাবেও ভাবা যায়। গ্রাহক আপনার কোম্পানি থেকে আসলে কী সুবিধা পাবেন, তা চিন্তা করেও লক্ষ্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। গ্রাহক সম্পৃক্ততা বিষয়ে ক্যাম্পেইন ডিজাইনের আগেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিলে এতে যেমন বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা সম্ভব, তেমনি তা কার্যকরও হবে।
গ্রাহক সম্পৃক্ততার জন্য আরও প্রয়োজন ক্রস-ফাংশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট। গ্রাহকের সম্পৃক্ততা শুধু একটিমাত্র ডিপার্টমেন্টের কাজ হতে পারে না। সাধারণত এ ক্ষেত্রে সেলস অর্থাৎ বিপণন ডিপার্টমেন্টের ওপরই মূল কাজ চাপানো হয়। আসলেই কি তাই? গ্রাহক সম্পৃক্ততায় ভূমিকা রাখতে পারে মার্কেটিং, অ্যাডভারটাইজিং, অনলাইন কাস্টমার সার্ভিসসহ আরও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র। তা ছাড়া কয়েকটি ডিপার্টমেন্টের মধ্যে কাজ ভাগ করে দিলে দিন শেষে সবার ওপর চাপও কমে আসে। তবে গ্রাহক সম্পৃক্ততার কৌশলগুলো সবই কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কাজে দেবে না। তাই শুরুতেই ঠিক করে নিন কোন কৌশল দীর্ঘ আর কোনটি স্বল্প মেয়াদে ব্যবহার করবেন। গ্রাহক সম্পৃক্ততা সফল হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন, তা হলো তাদের প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা। এ থেকেই গ্রাহক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। তা ছাড়া এসব প্রতিক্রিয়া দেখে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন, এখনকার কৌশলগুলোর মধ্যে কোনগুলো কার্যকর, আর কোনগুলো পরিবর্তন করা চাই। এবার দেখে নেওয়া যাক এমনই কিছু কৌশল।
প্রথমেই আপনাকে একটি ‘ব্র্যান্ড ভয়েস’ বা নিজস্ব স্লোগান তৈরি করতে হবে। গ্রাহক সাধারণত এমন কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার করতে চান, যাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব রয়েছে। ব্র্যান্ড ভয়েস থাকলে গ্রাহক সেই কোম্পানিকে মূলত তাদের পণ্যের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করেন; এতে তাদের একটি ভরসার ক্ষেত্রও তৈরি হয়। আরেকটি কার্যকর কৌশল হলো গ্রাহকের অভিজ্ঞতা পারসোনালাইজ করা। আমাজনের মতো কিছু বড় আকারের কোম্পানি এমন সব সফটওয়্যার ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে একজন গ্রাহক এর আগে যেসব কেনাকাটা করেছেন, তার ওপর ভিত্তি করে সার্চ অপশনে পণ্য রেকমেন্ড করা হয়। কিন্তু সব কোম্পানিকেই এই পন্থায় যেতে হবে, তা নয়। কিছু কোম্পানি শুরুতেই গ্রাহকদের একটি প্রোফাইল খুলতে বলে। সেই প্রোফাইলে গ্রাহকের পছন্দের পণ্যও লেখা থাকে। এটিও বেশ কার্যকর। একেক গ্রাহকের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে তাকে পণ্য রেকমেন্ড করলে গ্রাহকেরা কোম্পানির সেবায় সন্তুষ্ট হবেন সহজেই।
কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স পারসোনালাইজ করার একটি বড় উদাহরণ কোকা-কোলা। ২০১৪ সালে কোমল পানীয় ব্র্যান্ডটি একটি নতুন বিপণন প্রচারাভিযান শুরু করে, যা বিশ্বজুড়ে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে। #ShareACoke ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কোকা-কোলা তাদের ২৫০ মিলির বোতলগুলো থেকে কোম্পানির লোগো সরিয়ে সেখানে মানুষের কিছু প্রচলিত নাম লিখে বাজারে ছাড়ে। এতে গ্রাহকদের ব্যাপক সাড়া মেলে। কোকা-কোলার মতো জায়ান্ট কোম্পানির এ উদ্যোগ শুধু একটি সাধারণ বিপণন প্রচারণা ছিল না; বরং তাদের পণ্যকে এত বেশি পারসোনালাইজ করার ফলে এ ক্ষেত্রে গ্রাহক সম্পৃক্ততাও বেড়েছে অনেকাংশে। গ্রাহকেরা কোকের মতো পানীয়র বোতলের গায়ে প্রথমবারের মতো নিজের নাম দেখতে পান। আপাতদৃষ্টে সাধারণ মনে হলেও এ প্রচারাভিযান কোকা-কোলার টার্গেট অডিয়েন্স ধরে রাখতে বেশ কাজে দেয়।
গ্রাহকের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কনটেন্ট বেইজড রেকমেন্ডেশন দেওয়াও হতে পারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মিউজিক স্ট্রিমিং অ্যাপ স্পটিফাইয়ের কথা। এই অ্যাপে ‘ডিসকভার উইকলি প্লেলিস্ট’ নামে একটি ফিচার রয়েছে, যেখানে প্রত্যেক স্পটিফাই ব্যবহারকারীর জন্য আলাদাভাবে সাজানো একটি অটোমেটেড প্লেলিস্ট থাকে। একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে এ ফিচার ব্যবহারকারীদের পছন্দের গান অনুযায়ী প্লেলিস্ট সাজানো হয়। এতে একদিকে যেমন ব্যবহারকারীরা সন্তুষ্ট হচ্ছেন, তেমনি স্পটিফাইও লাভবান হচ্ছে।
গ্রাহক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আরেক মাধ্যম হলো প্রতিযোগিতা তৈরি করা। সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে ইদানীং আরও সহজে প্রতিযোগিতা বা গিভঅ্যাওয়ের ব্যবস্থা করতে পারে কোম্পানিগুলো। তবে অনেক সময় এসব প্রতিযোগিতা স্বল্প মেয়াদে কার্যকর হয়। তাই এ ধরনের কিছু আয়োজন করার আগে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তবেই মাঠে নামা উচিত।
গ্রাহক সম্পৃক্ততা বাড়াতে গ্রাহকের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করা উচিত কোম্পানি বা ব্র্যান্ডগুলোর। বলছিলাম অ্যাডভারটাইজিংয়ের কথা। কোম্পানির প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া যদিও ভালো মাধ্যম, তবু এর বাইরে অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার চালানো দরকার, বিশেষ করে এমন কোনো উপায়ে, যা অন্যদের চেয়ে কিছুটা আলাদা। এতে গ্রাহকের নজরে আসার সম্ভাবনাও বেশি। যেসব এলাকায় লোকজন হেঁটে চলাচল করে বেশি, সেখানে প্রচারের অংশ হিসেবে বিশেষ ম্যুরাল আঁকা যেতে পারে। তা ছাড়া পাবলিক ট্রান্সপোর্টে কিউআর কোডের মাধ্যমেও চালানো যেতে পারে প্রচারাভিযান। তবে গ্রাহক সম্পৃক্ততা বাড়াতে যা-ই করা হোক না কেন, গ্রাহকের অভিজ্ঞতা অনেকাংশেই নির্ভর করে তাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর।
ফ্যাশন ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ব্র্যান্ড রিকগনেশন হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ফ্রেঞ্চ ব্র্যান্ড হারমেসের কথা। ব্র্যান্ডটি তাদের ‘আরটিসানাল মডেল’-এর মাধ্যমে ফাস্ট ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ইউ এক্স এক্সপেরিয়েন্স এবং ক্যাম্পেইন—দুই ক্ষেত্রেই এই ব্র্যান্ড ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভেবেছে। তাদের ক্যাটালগের ক্লিয়ার কাট ইলাস্ট্রেশনে প্রডাক্ট লাইন দৃষ্টিকে দিয়েছে শান্তি। এর সঙ্গে ইমেইল মার্কেটিং ও ব্যক্তিগতভাবে ক্রেতাদের দিয়েছে তথ্য।
অ্যাথলেটিক ওয়্যার জায়ান্ট নাইকির অ্যাপের মাধ্যমে ক্রেতারা পারসোনালাইজড ভিউ পেয়ে থাকেন। এতে ক্রেতা আর লেবেলের মাঝে সম্পর্ক দৃঢ় হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। ক্রেতাদের উপযোগী একটি ইকো সিস্টেম তৈরির চেষ্টা করেছে নাইকি। ক্রেতার জন্য ‘সেটিসফাইয়িং শপিং এক্সপেরিয়েন্স’ তৈরিতে মনোযোগ দিয়েছে তারা।
ফরাসি লেবেল লুই ভিতোঁ ইদানীং লাক্সারিয়াসনেসের সিনোনিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে ক্রেতাদের জীবনে। এর পেছনে তাদের সময়সচেতন চিন্তা ভূমিকা রেখেছে। ল্যাভিশ শপিং এক্সপেরিয়েন্সকে এই লেবেল ডিজিটালাইজেশন করেছে। তাদের ই-কমার্স সাইটের ইন্টারফেস তৈরিতে দেখা যায় ক্রেতা চাহিদার গুরুত্ব। তথ্যের ব্যাপকতার মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয় ক্রেতার কাছে, যা তাদের শপিং এক্সপেরিয়েন্স উন্নত করে। বুটিক ব্রাউজিংয়ে ক্রেতার অভিজ্ঞতা যেন সুন্দর হয়, সে জন্য সেলস পিপলদের যুক্ত করেছে লেবেলটি। প্রডাক্ট সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য তা যত ক্ষুদ্র-ই হোক না কেন, সেগুলো তুলে ধরতে প্রস্তুত লুই ভিতোঁ। অন্যদিকে, ইংলিশ লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ড বারবেরি তাদের শতবর্ষ উপলক্ষে ই-কমার্স শুরু করেছে। ডিজিটাল রিটেইল হিসেবে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে তারা।
করোনাকালের পর থেকে কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্সে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে ডিজিটাল দুনিয়া। কিন্তু এখানেই শুধু মনোযোগ আবশ্যক, তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, এখন মানুষ দুই মাধ্যমেই কিনতে অভ্যস্ত। সেলসফোর্সের রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়, অনলাইনে কোনো ক্রেতা যখন প্রডাক্ট দেখেন এবং অর্ডার করতে চান, তাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশই তৎক্ষণাৎ ব্র্যান্ডটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আগ্রহী থাকেন। লাইভ চ্যাটে তাই দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ক্রেতার চাহিদাতে।
ওই রিপোর্ট আরও জানিয়েছে, ৪৩ শতাংশ ক্রেতা অনলাইন কেনাকাটায় স্বচ্ছন্দবোধ করেন না। তারা হ্যান্ড ফিলের মাধ্যমে পণ্য বুঝে তবে সিদ্ধান্ত নিতে চান। তাই নন-ডিজিটাল চ্যানেলগুলোতেও ক্রেতা অভিজ্ঞতা সুন্দর করার দিকে লক্ষ রাখলে তা ইতিবাচক হবে বলে ধারণা করা যায়।

 সাদিয়া আফরিন শায়লা
ছবি: ইন্টারনেট

This Post Has One Comment
  1. এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আমার দৃষ্টিকোন থেকে মনে হলো গ্রাহক ও গ্রাহক সন্তুষ্টির উপর ক্লদিং ব্রান্ডগুলোর নতুন দৃষ্টি উন্মোচন হবে।

    আর্টিকেলটি পড়ার পর অনেক তথ্য জানতে পারলাম, যা একজন ফ্যাশন সচেতন হিসেবে সবসময় নিজেকে আাপডেট রাখতে সাহায্য করে।

    ধন্যবাদঃসাদিয়া আফরিন শায়লাকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top