skip to Main Content

ছুটিরঘণ্টা I সূরি-তীর্থ সাসারাম

এ শুধু ভ্রমণ নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের বিশেষ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের হালহকিকত জানারও প্রচেষ্টা। লিখেছেন আল মারুফ রাসেল

জমজমাট কলকাতা বইমেলার পর হাতে কিছুটা সময় মিলল পরবর্তী বইয়ের রসদ খোঁজার। এজেন্ট ধরে প্রথমে খোঁজা হলো জৌনপুরের টিকিট। পছন্দমতো দিনক্ষণ না মেলায় শেষে সাসারামের একখানা টিকিট পকেটস্থ করলাম নানা ধরনের নাটকীয়তায়।
নৌকো গবেষক স্বরূপ ভট্টাচার্য তার সাবেক সহকর্মীকে আমার যাত্রার ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছিলেন আগেই। এই সহকর্মী আবার এখন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বড় কর্তা। রাতের দুন এক্সপ্রেস ধরে ছুটতে ছুটতে ভোর পাঁচটায় নিজেকে আবিষ্কার করলাম সাসারামের স্টেশনে।
স্টেশনে নামতেই ফোন বেজে উঠল, সাসারামের সাইট অফিসার ত্রৈলোক্যনাথ জানালেন, বাইরে আমার জন্য অপেক্ষা করছে বুলেট! আগে থেকে জানা থাকায় আতঙ্কিত না হয়ে বরং ভরসা পেলাম খানিক। কারণ, এখানে রয়্যাল এনফিল্ডের একটা মডেল বুলেট নামেই পরিচিত, অনেকটা আমরা মোটরসাইকেলকে যেমন হোন্ডা বলি আরকি! প্রথম গন্তব্য হোটেল মৌর্য (স্থানীয় উচ্চারণে মৌরিয়া)। স্টেশন থেকে বেরিয়ে যে পথ ধরে বাইক ছোটালেন ব্রজমোহন, সেটাও ঐতিহাসিক, এর এক প্রান্ত আমাদের সোনারগাঁয়ে, আর অন্য প্রান্ত গিয়ে থেমেছে কাবুলে; জি, এটাই সেই শাহ রাহি আযম ওরফে গ্র্যান্ড ট্র্যাংক রোড। এরপর হোটেলে ব্যাগ রেখে, মুখ-হাত ধুয়ে সাসারামের এএসআইয়ের টিলার ওপরের অফিসে।
ত্রৈলোক্যবাবুর আগে অবশ্য আমাকে স্বাগত জানাল তার জার্মান শেফার্ড—টাইগার। একটু ঘাড়ে-গলায় আদর পেতেই গলে গিয়ে আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল ত্রৈলোক্যবাবুর ঘরে। পূর্ণিয়া এলাকার ছেলে ত্রৈলোক্যনাথ, বউ-বাচ্চা ফেলে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে চাকরির তাগিদে রয়েছেন সাসারামে। তিনিই জানিয়ে দিলেন, সাসারামে আমার থাকা-খাওয়ার সব দায়িত্ব তাদের। কথায় কথায় জানিয়ে দিলেন রোহতাসগড় আর শেরগড়—এ দুটো এলাকায় এ-যাত্রা তারা ব্যবস্থা করতে পারবেন না; সেখানে একলা যাওয়াটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ আর সময়সাপেক্ষও বটে। তাই শুরুতে দুটো গন্তব্য ঝরে যাওয়ায় মন খানিকটা ভার হয়ে গেলেও, ঢ্যালঢ্যালে চা, বিস্কুট আর টাইগারের সঙ্গ জলদিই সব ভুলিয়ে দিয়েছিল।
সাসারাম ছিল শের শাহ সূরির বাবার প্রশাসনিক এলাকা, সিকান্দার লোদির কাছ থেকে পাওয়া। শের শাহ সূরির জন্ম ও শৈশবের কিছু সময় এখানেই কেটেছে। এরপর ক্ষমতায় আসার পর স্বাভাবিকভাবে এই জায়গার প্রতি কিছু টান ছিল। বাবার সমাধিতে সৌধ তৈরির পাশাপাশি, পাশেই নিজের সমাধি তৈরি করিয়েছিলেন এ কারণে। আর দিল্লি বা আগ্রার প্রতি তার টান একটু কমই দেখা গিয়েছিল, হয়তোবা পুবের থেকে উঠে এসেছিলেন বলেই উত্তর ভারতের প্রতি খানিকটা অবহেলা ছিল তার!
প্রথমে গন্তব্য অফিসের জানালা দিয়ে দেখা শের শাহের সমাধি। ত্রৈলোক্যজির বদান্যতায় তখন আমিই নিজেকে শের শাহ ভাবছিলাম! সকাল আটটাও বাজেনি, শহর জাগলেও বেড়াতে আসার মতো মানুষ হয়নি তখনো। তাই শের শাহের পুরো কম্পাউন্ডে তখন আমি একা; আর আমি ছাড়া যারা আছেন, নিতান্ত পেটের তাড়নায়—সিকিউরিটি গার্ডরা। শের শাহের সমাধির হদিস মেলে সেই প্রধান সড়ক থেকেই। সেখান থেকে গলিতে ঢোকার মুখে সবজির পসরা, আর তারই লাগোয়া ছোট্ট একটি গেট। এই গেট সম্ভবত বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর অগাস্টাস রিভারস থম্পসন যখন শের শাহের সমাধি পুনঃসংস্কার করেছিলেন, তখনই তৈরি। সেই গলি ধরেই মৌর্য হোটেল, আর এগিয়ে গেলে সেই পুরোনো আফগান জমানার সমাধির এলাকা, যেখানে সুর বংশের অন্তত দুজন রাজপুরুষ শায়িত তাদের পরিজনদের নিয়ে।
ফেব্রুয়ারির সকাল। বাতাসে বসন্ত হলেও বেশ শীত শীত ভাব। প্রথমেই সমাধির চারপাশে পুরো এলাকায় এক চক্কর দিয়ে নিলাম। বিশাল দীঘি কেটে মাঝখানে সমাধিসৌধ। পাড় থেকে কেবল এর সৌন্দর্য দেখা যায়। কিন্তু সেতু ধরে যতটা কাছে যেতে থাকলাম, ততটাই বিস্মিত হতে হলো এর আকৃতি দেখে—প্রায় ১২২ ফুট উঁচু। তবে মূল স্থাপত্য কতটা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে; কারণ, ১৮৮২ সালে জোসেফ বেগলার যখন এর সংস্কার করছিলেন, তখন ভারতীয় প্রাচীন ইমারতের তত্ত্বাবধায়ক হেনরি হার্ডি কোল এটা পরিদর্শনে এসে কিছু উপকারের পাশাপাশি একটা অপকারও করেছিলেন। তার ধারণায় ছিল, ভারতীয় উপমহাদেশে সুলতানি আমলের ইমারতে ছত্রীর ব্যবহার ছিল না। তাই তিনি মেঠো পথের জায়গায় সুদৃশ্য সেতু, দীঘির চারপাশে হাঁটার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পাশাপাশি মূল গম্বুজে ছত্রীর জায়গায় ফিনিয়াল বসিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরও যা দৃশ্যমান, তা-ও কি কম? আট কোনার তিনতলা সৌধ, যার প্রতিটি কোণের একেবারে ওপরে আটটি করে ছত্রী দৃশ্যমান, আর মাঝে বিশাল এক গম্বুজ। ভেতরে ২৫টির মতো সমাধি রয়েছে, যেগুলোর একটি শের শাহের নিজের, আর একটি রয়েছে আসলাম খানের—শের শাহের বড় ছেলে। তুঘলক, সাইয়্যিদ আর লোদি স্থাপত্যধারার যেমন ছাপ আছে এই সৌধে, তেমনি আছে ভারতীয় জলমহাল আর মন্দির স্থাপত্যের মিশেল।
এরপর ‘বুলেটে’ যাদবজির পিছে বসে পড়া। গন্তব্য ধানগোলা। পথে বাইকের চাকায় হাওয়া ভরা হলো, দেখা হলো মোগল আমলে (মূলত শাহজাহানের শাসনামলে) মুজাহিদ খান নামের এক অভিজাতের তৈরি সাদামাটা এক ঈদগাহ। মোগল আমলেও যে সাসারাম তার গুরুত্ব হারায়নি, তা বোঝা যায় এটা থেকে।
ধানগোলার অলিগলি পেরিয়ে মোটরসাইকেল থামল ভাগাড়ে। তবে ভাগাড়ের সামনে বিশাল এক তোরণ। ধারণা করা হয়, সিকান্দার লোদি যখন হাসান খান সূরিকে সাসারামের ইকতা-দার করেছিলেন, তখনকার ইমারত এটা। কান্দাহার কিলা নামে পরিচিত এই দালানের ভেতরের অংশে এখন সবজির বাজার বসে, ভেঙে পড়া ছাদের এক পাশে জুয়ার আসর। মূল ফটক বলে যেটা ধারণা করছি, সেটা ময়লা ফেলা, সিদ্ধি আর অন্য নেশা করার জায়গা এখন। সঙ্গে যাদবজি না থাকলে হয়তো সাহস করে এতটা ঘোরা হতো না। তিনিই জানালেন, এটা সংরক্ষিত স্থাপনা নয়। ভেঙে পড়া ঘরগুলোয় কুলুঙ্গি, খিলান দরজা, মূল ফটকে মুকারনা (পারসিক ঘরানার মৌচাকের মতো দেখতে নকশা) আর পুরোনো টাইলস এখনো পুরোনো গৌরবের জানান দিয়ে চলেছে। এই কান্দাহার কিলা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য মেলে না এখন।
এরপরের গন্তব্য চন্দন শহীদের দরগা। শহরের থেকে অনেকটা দূরের পথে যেতে যেতেই বিহারের ট্রেডমার্ক মহিষের ‘তাবেলা’ দর্শন হয়ে গেল। বিহারের যে রুক্ষ প্রকৃতির বর্ণনা আমরা পাই ইতিহাসের পাতায়, তার অনেকটা বোঝা হয়ে যায় এই পাহাড় দর্শনে।
বলা হয় কাইমুর পাহাড়শ্রেণির এই পাহাড়ের এক গুহায় এসে ধ্যানে বসেছিলেন স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ। আর সেই স্মৃতি ধরে রাখতে পরে সম্রাট প্রিয়দর্শী অশোক নাকি কিছু শিলালেখ রেখেছিলেন পালি ভাষায়। এখন অবশ্য একটাই রয়েছে। তা-ও চন্দন শহীদের প্রদীপ দান হিসেবে ছিল বহুদিন; গত বছরের ডিসেম্বরে সেটা উদ্ধার করার পর আপাতত গুহায় বন্দি হয়ে আছে। পাহাড়ের ঠিক চূড়ায় রয়েছে চন্দন শহীদ বা পীরের দরগা। বেশ কিছু অনুসারী নিয়ে শেষ শয্যায় শায়িত সম্রাট জাহাঙ্গীরের সমসাময়িক এই ধর্মপ্রচারক। বেনারসে এক যুদ্ধে নাকি তিনি মাথা হারিয়ে ঘোড়ায় চেপে অনুসারীদের নিয়ে ছুটে আসছিলেন, পথে এক পান বিক্রেতা নারীর কাছে পান চাইলে ওই নারী উত্তর দিয়েছিলেন, ‘মাথা নেই তো পান চাবানোর উপায় কী?’ এই শুনে ঘোড়ার পিঠ থেকে সবাই পড়ে গিয়েছিলেন আর তাদের আত্মা মুক্তি পেয়েছিল। পাহাড়ের ওপরে পুরোনো কিছু ইমারত আর সমাধির চেয়ে বেশি টানছিল কাইমুর পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। আর সেই পুরোনো পালি শিলালেখ। শিলালেখ দেখতে পেলাম না। তবে মাথার ওপরে সূর্য রেখে পাহাড়ে ওঠার পর চিলাখানার ছায়ায় বসে নাম না জানা কিছু পাখি আর দূরে হট্টিটির ডাক শুনতে বেশ লাগছিল। ভাবছিলাম, এই কাইমুরেরই কোনো এক পাহাড়ে ফরিদ খান খালি হাতে একদিন পরাস্ত করেছিলেন এক বাঘকে। তার ভাগ্য সেদিন থেকেই ঘুরে গিয়েছিল; তার নাম ছড়িয়ে গিয়েছিল শের খান নামে। চিন্তায় ছেদ পড়ল এক মুরিদের ডাকে: পানি আর অল্প একটু নামকিন নিয়ে এসেছেন আমার জন্য। এলাকা নিয়ে কথা হলো, মাজার নিয়েও কথা হলো; তবে ইতিহাস নিয়ে বিশেষ কিছু জানেন না, তাই আলাপ তেমন জমল না। অবশ্য এ রকম বিরানভূমিতে অপ্রত্যাশিত আপ্যায়ন মন্দ লাগেনি।
এরপরের গন্তব্য সালিমগড় ওরফে ইসলামগড়। শের শাহের ছেলে ইসলাম খান তার সমাধি তৈরি করতে শুরু করেছিলেন এখানে। আকারে সামান্য বড় করে বাবার মতোই অষ্টকোনাকার এক রাজকীয় সমাধি তৈরি করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় কাজ অসমাপ্তই রয়ে গিয়েছিল। আর এরপর দিল্লির ক্ষমতায় তো হুমায়ুন আবারও চলে এলেন আফগানদের নিজস্ব কোন্দলের সুযোগ নিয়ে। এই স্থাপত্য মূলত ইতিহাসে তিনটি কারণে বিখ্যাত—প্রথমত, এটা সূরি তথা শেষ আফগান রাজকীয় স্থাপত্য; দ্বিতীয়ত, কৃত্রিম দিঘি তৈরি করে মাঝে তিনতলা সমাধিসৌধের শেষ নিদর্শন এবং এটা অসমাপ্ত থাকার কারণে সূরি নির্মাণশৈলীর অনেক না-জানা কথা জানিয়ে দেয়। এএসআইয়ের অধীনে থাকলেও এখন সেটা না থাকার মতো। সৌধের দিকে যাওয়ার পথটা ক্ষয়ে মাটির পথ হয়ে গেছে। চারপাশের কৃত্রিম দিঘিটা ডোবায় পরিণত হয়েছে; অবশ্য ব্যাপারটা খারাপ হয়নি বেশি, এর ফলে কিছু ডুবুরি আর জলমোরগের সাক্ষাৎ পেলাম এখানে। কিছু অসমাপ্ত দেয়াল ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, ঝোপঝাড় হয়ে একাকার। এর মাঝেই আটটি কবর।
মাঝে খাবারের বিরতি। বিহারি রেস্টুরেন্টগুলো মূলত থালি ধরনের খাবার বিক্রি করে। পাপড়, রুটি, ভাত, আলু-ঝিঙে ভাজি, একটা পাঁচমিশালি সবজি, আচার ও ডাল; সঙ্গে আলাদা একটা হাফ প্লেটে ধনেপাতা-পুদিনাপাতার চাটনি, আচার, লেবু, কয়েক টুকরা করে শসা, পেঁয়াজ আর টমেটো। এই এলাকা বেশ কঠোরভাবে নিরামিষাশী। খাবারের মান মন্দ নয়; যাদবজি জানালেন এএসআইয়ের বড় কর্তারা এলে এখানে বসেই খান।
এরপরের গন্তব্য আলাওয়াল খানের সমাধি। স্থানীয় লোকগাথা আর মৌলভি মুহাম্মাদ হামিদ কুরাইশির মতে তিনি ছিলেন শের শাহের রাজকীয় ইমারত তৈরির তত্ত্বাবধায়ক বা স্থপতি। শের শাহ তার ও বাবা হাসান শাহ সূরির সমাধিসৌধ তৈরি করিয়েছিলেন। তবে তার সমাধিটা আট কোনা নয়, বরং চার কোনা। এএসআইয়ের দখলে নেই এই ভূমি। কোনো এক দখলদার চারপাশে দেয়াল তুলেছে। যাদবজি সঙ্গে থাকায় একটু সাহস নিয়ে দেয়াল টপকে ঢুকে গেলাম। অবশ্য যাদবজি এবারও সাহস দেখাতে পারলেন না, বাইরেই রয়ে গেলেন। চারকোনায় চারটি বুরুজ আকৃতির ঘর। বেশ বড়-সড়, অলংকৃত প্রবেশ-তোরণ। প্রবেশ-তোরণের দুটো মিনারের একটি ভেঙে পড়েছে বহু আগেই। দখলদার অবশ্য ভেতরের কবরগুলোর বারোটা বজিয়ে দিয়েছে। তবে চারকোনায় চারটি ঘর বেশ পরিষ্কার; রাতের অন্ধকারে যে সেখানে বিহারে নিষিদ্ধ পানীয়ের আসর বসে, তা বোঝা গেল।
এরপরের গন্তব্য সুখা রওজা ওরফে হাসান শাহ সূরির সমাধি। হাসান শাহ সূরির ছেলে ও নাতির কবর হাওয়া মহলের নকশায় হলেও এই সমাধিসৌধে পানির কোনো সংস্পর্শ নেই। শের শাহ গৌড়ে বসে নিজেকে সুলতান ঘোষণা করার পরই সম্ভবত এই সমাধিসৌধের কাজ ধরেছিলেন, সে হিসেবে সাসারামে এটিই প্রথম শাহি সূরি স্থাপত্য। সম্ভবত এর আগে সাদামাটা এক সমাধি ছিল এটা। এই স্থাপত্যে একই সঙ্গে দিল্লি আর বাংলার স্থাপত্য মিলেছে। আগের দুটো সূরি সমাধির পরিকল্পনা তিনতলার হলেও এটা ছিল দ্বিতল; তবে আগেরগুলোর মতোই গম্বুজসহ বারান্দা রয়েছে আট দিকেই, আর প্রতি কোণে রয়েছে কিউপোলা।
এগুলো দেখে সেদিনের মতো বিদায় জানালাম যাদবজি আর তার মোটরবাইককে। উনি থাকলে কোনোভাবেই স্থানীয় খাবার লিট্টি চোখা বা বাটি চোখার দিকে হাত দেওয়া যাচ্ছিল না। আর উনারা রক্ষণশীল হিন্দু—নিরামিশাষী, তাদের সামনে বিরিয়ানি খাব, লখনৌয়ি বিরিয়ানি খেয়ে নেব, সে সুযোগও নেই। বাটি হলো মূলত ছাতু দিয়ে ভেতরে খানিকটা ডাল বা আলুর পুর দিয়ে তৈরি গোলাকার ডো (লিট্টিতে কোনো পুর হয় না), যেটা বিহারে কাবাবের মতো পুড়িয়ে, তেলে ভেজে, ভাপে—নানাভাবে খায়; আর চোখা হলো নানা ধরনের সবজি মেশানো ঝালভর্তা। আমি পেয়েছিলাম বেগুন, আলু আর টমেটো, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ দিয়ে ভর্তা। তবে সাসারামে খাঁটি পোলাও বা বিরিয়ানির আকালে বেশ মর্মাহতই হয়েছি। কপালে মিলল এক দোকানে হায়দরাবাদি আর সো-কল্ড মুরাদাবাদি বিরিয়ানি। রোহতাস আর শেরগড়ে যেহেতু আর যাওয়া হবে না নিরাপত্তার কারণে, তাই সাসারামকে বিদায় জানাতে হলো পরদিনই। পরের গন্তব্য সিরাজ-ই-হিন্দ, জৌনপুর। সে অন্য গল্প।

ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top