skip to Main Content

এডিটর’স কলাম I উদ্দাম উনিশ

তারুণ্যের উদ্যমে জীবন লাভ করুক প্রকৃত মাত্রা। নিরাপদ ও আনন্দের হোক উদ্দাম জীবনের যাত্রাপথ

উনিশ। ব্যক্তিমানুষের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। আনুষ্ঠানিকভাবে কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পদাপর্ণের সময়। যদিও মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ একটি চলমান প্রক্রিয়া, একে দিন-ক্ষণ গুনে সুনির্দিষ্ট করা মুশকিল; তবু উনিশ বছর বয়স এমনই এক সময়, যখন কৈশোরের প্রাণবন্ত সত্তার সঙ্গে যৌবনের দায়িত্বশীলতা বোধের ঘটে যায় এক দারুণ মিথস্ক্রিয়া। তাই যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কালে চনমনে থাকার পাশাপাশি প্রয়োজনে প্রজ্ঞাবান মনোভাবের প্রকাশ ঘটানোও হয়ে পড়ে দরকার।

দুই
‘সফল হওয়ার চেষ্টা না করে বরং মূল্যবান মানুষ হওয়ার চেষ্টা করাই শ্রেয়,’ বলে গেছেন কিংবদন্তি বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। এই ‘মানুষ হয়ে ওঠা’র পর্যায়কাল মূলত কৈশোর থেকে তারুণ্যে পদার্পণকেই বোঝানো হয়ে থাকে। এই সময়কালে বিশেষ কিছু ব্যাপারে অবগত ও সচেতন থাকার পরামর্শ মনস্তত্ত্ব ও সমাজবাস্তবতা নিয়ে গবেষণা করা বিশেষজ্ঞদের। জন্মগ্রহণের পর দীর্ঘ একটি সময় শৈশব ও কৈশোরে কাটিয়ে এসে, এ সময়ে এক ক্রান্তিলগ্নের মুখোমুখি হয় মানুষ। একদিকে অবাধ স্বাধীনতার হাতছানি, অন্যদিকে ছড়ানো-ছিটানো দৃশ্যমান ও অদৃশ্য শত্রুর মহড়া। তাই এ পর্যায়ে সবার আগে যত নেতিবাচক চিন্তা উতরে আসার পরামর্শ তাদের। তারুণ্যে প্রবেশ মানেই জীবনে নতুন সব চ্যালেঞ্জের হাজিরা। নেপথ্যে অভিভাবক ও পরিম-লের নানাবিধ সাবধানবাণী মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাতে জেঁকে ধরতে পারে নেতিবাচক চিন্তা। সেই সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে না পারলে জীবনের পথ বন্ধুর হয়ে ওঠে।
বয়সের এ পর্যায়ে পড়াশোনার পাশাপাশি কেউ কেউ অর্থ উপার্জনেও জড়িয়ে নেন নিজেকে। তা নিঃসন্দেহে স্বাবলম্বী হওয়ার স্মার্ট চয়েস। অন্যদিকে, টাকা খরচের স্বাধীনতাও পেয়ে যান কেউ কেউ। কিন্তু খরচে সাবধান না হয়ে, অপচয়ের হিড়িকও পড়ে যায় হরদম। তাই অর্থব্যবস্থাপনার পাঠ শিখে নেওয়ার এটিই উৎকৃষ্ট সময়। অন্যদিকে, মানুষের সহজাত কৈশোরক বৈশিষ্ট্যগুলোর অন্যতম হলো অবাধ আবেগ। নেতিবাচক ও ইতিবাচক—উভয় অর্থেই। তারুণ্যে পা রেখে, একজন ব্যক্তিমানুষকে অবশ্যই নিজের বেপরোয়া আবেগের রাশ টেনে ধরা প্রয়োজন। অন্যথায় অজান্তে থাবা বসাতে পারে অগুনতি বিপদ।
আধুনিক এই সময়ে তরুণ-তরুণীদের কাছে বোঝাপড়া করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘বডি ইমেজ’ বা দেহচিত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিবিধ সুযোগ-সুবিধার কারণে মুহূর্তেই একটি তুলনা-ধারণা বাসা বাঁধতে পারে যেকারও মনে; বিশেষত সদ্য তরুণদের। নিজেকে দেখতে কেমন লাগছে, নিজের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মনমতো নয়, কিংবা আদর্শ মনে হওয়া কোনো তারকার তুলনায় নিজে শারীরিক সৌন্দর্যে পিছিয়ে রয়েছেন কোন কোন ক্ষেত্রে—এসব ভাবনা সহজে কাবু করে ফেলতে পারে এ বয়সে। তা থেকে উদ্রেক ঘটতে পারে বিষণ্নতা, হতাশাসহ বিভিন্ন মনোরোগ; এমনকি আত্মহননের মতো মর্মান্তিক পথেও হেঁটে ফেলেন কেউ কেউ! বলি, একেক মানুষ দেখতে একেক রকম, একেক গড়নের; আর এটা মানবসভ্যতার অন্যতম নিগূঢ় সৌন্দর্য। তাই নিজেকে নিজের রূপেই মেনে নেওয়া শ্রেয়।

তিন
আগামী দিনের পথপ্রদর্শক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য তারুণ্যের শুরুটাই মোক্ষম সময়। কিছু সহজ চর্চার মাধ্যমে তা অর্জন সম্ভব। শুরুতেই রাখা চাই শারীরিক সুস্থতার গুরুত্ব। নিয়ম করে শরীরচর্চা আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। কে না জানে, শরীর সুস্থ না থাকলে মনও ভালো থাকে না! এত দিন ধরে বাবা-মাসহ নানাজনের কাছ থেকে বিশেষ সুযোগ, বিশেষত আর্থিক সুবিধা পেয়ে এসেছেন। এ বেলা কমাতে হবে সেই চাওয়া। অন্যের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে না থেকে, নিজেরই খুঁজে নেওয়া দরকার যথাযোগ্য সমাধান। তবে প্রয়োজনে তাতে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। নিজের জীবনের পুরো দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়ার এটিই সেরা সময়। তাই নিজেকে প্রতিনিয়ত গড়ে তোলার ওপর দেওয়া চাই গুরুত্ব। পড়াশোনা ও প্রাত্যহিক কাজের প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে তোলা দরকার। হওয়া চাই নম্র ও মার্জিত। নিজে বেশি না বলে অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাসও গড়ে তোলা চাই।

চার
‘কিশোর হয়ে ওঠা মানে সেতুতে পা রাখা। আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই তা রেখে ফেলেছেন। এ হলো প্রাপ্তবয়স্কতার বিপরীত কূল। শৈশব পড়ে রয়েছে পেছনে। কাঠে গড়া এই সেতু। যখনই পেরিয়ে যাবেন, সেতুটি আপনার পেছনে পুড়ে যাবে’—শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যকে এমন রূপকধর্মী ও গভীর অর্থবোধী উপমায় বিশ্লেষণ করেছেন আমেরিকান লেখিকা গেইল কারসন লেভিন। এই ‘পুড়ে যাওয়া’ মানে বাস্তব থেকে স্মৃতির কোঠরে জায়গা করে নেওয়া। অস্তিত্বশীল থেকে অতীত রোমন্থনে পদার্পণ। সামনের পথটি নতুন জীবনের। অতীতের অভিজ্ঞতা যেখানে জোগাবে রসদ। মাকালের রূপে বিভ্রান্ত হয়ে বেপথে পা না বাড়িয়ে, সঠিক রসদ বেছে নিতে জানলে জীবন হয়ে উঠবে অর্থময়। জয় হবে প্রকৃত তারুণ্যের।

পাঁচ
তারুণ্যের উদ্যমে জীবন লাভ করুক প্রকৃত মাত্রা। নিরাপদ ও আনন্দের হোক উদ্দাম জীবনের যাত্রাপথ।
মঙ্গল হোক সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top