skip to Main Content

যাপনচিত্র I রাত জাগা তারা

তাশফি। প্রতিশ্রুতিশীল গায়িকা। জ্যাজ, আরঅ্যান্ডবি, রক, পপ, ফোক, ফিউশন—সব ধরনের গানেই দুর্দান্ত। সম্প্রতি ‘কোক স্টুডিও সিজন-২’তে ‘দিওয়ানা’ গানের মাধ্যমে রয়েছেন চর্চায়

ছোটবেলায় গান শোনার নেশা চেপে বসে তার। সমবয়সীরা যখন খেলাধুলা কিংবা টিভি দেখায় মগ্ন, তাশফি তখন বাসায় বসে গান শুনতেন। বাল্যকালে পছন্দের শিল্পী ছিলেন স্টিভি ওয়ান্ডার, মাইকেল জ্যাকসন, টিনা টার্নার, ট্রেসি চ্যাপম্যান প্রমুখ। ক্লাস সিক্সে উঠে অনুরক্ত হন মেটাল মিউজিকের; তা-ও আবার ব্ল্যাক ও গথিক মেটালের মতো এক্সট্রিম জনরার। এই ঘরানায় সবচেয়ে পছন্দ ‘ক্রেডল অব ফিলথ’ ও ‘ওপেথ’। সেই সঙ্গে হেভি মেটাল, হার্ড রক, ব্লুজ রক জনরার কিংবদন্তি ভোকাল রনি জেমস ডিও’র গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শিখেছেন ‘ভিব্রাতো’ টেকনিক। তাশফি কিন্তু অনেকটাই গাইতে গাইতে গায়েন। তবে তার কাছে গান গাওয়ার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা বিয়ন্সে। আমেরিকান ওই গায়িকার গায়কি টেকনিক অনেক কষ্টসাধ্য বলে তাশফি ভেবেছিলেন, তা রপ্ত করতে পারলে বাকি অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে।
ব্যক্তিজীবনে, কাজ থাকলে সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়েন। তবে এমনিতে একটু দেরিতেই, বেলা ১১-১২টায় বিছানা ছাড়েন তাশফি। দেরিতে ওঠার কারণ রাতা জাগা। বললেন, ‘রাতের ঝামেলাবিহীন শান্ত পরিবেশ উপভোগ করি। ১২টা-১টার পর একান্ত নিভৃতে সৃষ্টিশীল কাজের তাড়না চাপে আমার মাঝে। সবার ঘুমানোর সময় হলেও রাতের ওই সময় একান্তই নিজের মনে হয়। সে সময়ে গান লিখি, গানের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আপন মনে ভাবি। সম্প্রতি বেজ বাজানো শুরু করেছি। সেই প্র্যাকটিসও সাধারণত গভীর রাতেই করি।’
দেরিতে ওঠার কারণে সাধারণত ব্রেকফাস্ট সারা হয় না তার। দিনের প্রথম আহার হিসেবে বেলা দুইটায় সারেন লাঞ্চ। পাতে থাকে ভাত, শাকসবজি, মাছ। মা পুষ্টিবিদ হওয়ায় সব সময় নিশ্চিত করতে চান পরিবারের সবার পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি খাওয়ার বিষয়টি। বাসার সবাই মাছ পছন্দ করায় প্রোটিনের উৎস হিসেবে সপ্তাহে ছয় দিন তা খাওয়া হয়; আর এক দিন মাংস। বিকেলে বাবা-মায়ের সঙ্গে চা ও টোস্ট বিস্কুট খান। সন্ধ্যার পর ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটতে বের হন নিয়মিত।
তাশফির বাসা বেশ পরিপাটি। ২০১৭ সালে জীবন কিছুটা হতাশার ভেতর কাটিয়েছেন। তা থেকে বেরিয়ে আসতেই রুম সাজানোর ব্যাপারে প্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন। রুমজুড়ে দেখা মেলে বিভিন্ন মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টের। ওয়ার্ম লাইট বেশি পছন্দ তার। আলো নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন বলেই রুমজুড়ে রেখেছেন নানা ধরনের ওয়ার্ম লাইট, স্পটলাইট ও ল্যাম্প।
ড্রেসআপের ব্যাপারে ওয়েস্টার্নকেই প্রাধান্য দেন এই গায়িকা। মাঝেমধ্যে গাউন, শাড়িও পরেন। পছন্দের রং কালো। পছন্দের অ্যাকসেসরিজ অ্যাপল ওয়াচ, স্যাপটাম রিং। স্টাইলে কমফোর্টকে দেন প্রাধান্য। নিজেকে গথিক ঘরানার সাজে সাজাতে ভালোবাসেন। তাতে থাকে সাদা-কালোর সঙ্গে নানা রকমের ডার্ক কালারের উপস্থিতি। হয়তো ছোটবেলায় মেটাল মিউজিকের প্রতি আসক্তি এর নেপথ্য কারণ। খুব একটা এক্সপেরিমেন্ট না করলেও মেকআপ করতে অসম্ভব পছন্দ করেন। একে তার ডেইলি রুটিনের অংশ বলা যায়। বিশেষ করে বাইরে কোথাও গেলে মেকআপ করা চাই-ই। পারফিউম ব্যবহারও আবশ্যক তার জন্য। পছন্দের পারফিউম জুসি কাচোর।
তাশফির অন্যতম শখ রান্না করা। মজার ছলেই বললেন, ‘আমি মিউজিশিয়ান না হলে হয়তো শেফ হতাম।’ একসময় ‘মাঞ্চকিন ঢাকা’ নামে নিজস্ব অনলাইন ফুড পেজ মেনটেইন করতেন। রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্টও পছন্দ। নিজের বানানো সবচেয়ে হিট আইটেম বিবেচনা করেন পর্তুগিজ ডিশ সেরাডুরাকে। চার ধরনের ক্রিম, কেকের লেয়ার দিয়ে বানানো এই খাবার বেশ মুখরোচক। তা ছাড়া দেশে বিফ পিকলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। ভারতে গিয়ে এই খাবারের সন্ধান পেয়েছিলেন। তবে সেখানকার মসলার পরিবর্তে দেশি মসলা ব্যবহার করার ফলে এটি জিভে পানি এনে দেওয়ার স্বাদ পায় বলে দাবি তার। পাশাপাশি গার্লিক মায়ো, হট ফাজ, কেরালা বিফ, চিকেন কেক, মিনি সসেজ রোল, গার্লিক ফ্লেভারড ভেগান কেক, পিজ্জা, সুশি বানানোরও খ্যাতি আছে তাশফির। সময়-সুযোগ পেলে কাছের বন্ধুদের দাওয়াত দিয়ে রান্না করে খাওয়াতে ভালোবাসেন।
তাশফির সবচেয়ে পছন্দের ব্যক্তিত্ব তার মা। এই গায়িকার দুই হাতে রয়েছে ট্যাটু। ডান হাতে মায়ের নাম লেখা—‘পাপিয়া’। জানালেন, মা সকল ব্যাপারে ভালো-মন্দ বুঝিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সব সময় তার হাতেই ছেড়ে দেন। জীবনের প্রতিকূল সময়গুলোতে সামাজিক চাপ তোয়াক্কা না করে সব সময় পাশে থাকেন।
তাশফির জীবনে আট বছর ধরে বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে পোষা দুই বিড়াল শেফালি ও মিডোরি। বাসায় থাকলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওদের সঙ্গে সময় কাটান। রাতে ঘুমানও পাশে নিয়ে। পারিবারিকভাবে পশুপাখির প্রতি গভীর মমত্ববোধ তার। পরিবারে রয়েছেন বাবা-মা, বড় ভাই ও ছোট বোন।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার খুব একটা পছন্দ করেন না তাশফি। তবে পাবলিক ফিগার হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ঢুঁ মারেন। ফেসবুকের চেয়ে ইনস্টাগ্রামে অ্যাকটিভ থাকেন বেশি। স্টোরি আপলোড করতে ভালো লাগে। সময় পেলে বাংলা বই পড়েন। হুমায়ূন আহমেদের বই, কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা সিরিজ এবং রাকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা সিরিজের তিনি একনিষ্ঠ ভক্ত। অবসরে নেটফ্লিক্সে নানা ধরনের কনটেন্ট দেখেন। মুভির চেয়ে টিভি সিরিজ বেশি পছন্দ। প্রিয় সিরিজ ডেক্সটার, মেড ইন হেভেন। আর তাশফির সেলিব্রিটি ক্রাশ ব্রিটিশ অভিনেতা হেনরি কেভিল।
তাশফি বেশ ভ্রমণপিয়াসি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে দুটি জ্যাজ ফেস্টিভ্যালে হাজির থাকতে পারা তার কাছে বিশেষ অভিজ্ঞতা। এর একটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ব্রুকলিনের প্রসপেক্ট পার্কে; অপরটি ব্লু নোট জ্যাজ ক্লাবে। সেখানে বিশ্বখ্যাত জ্যাজ আর্টিস্ট রবার্ট গ্লসপারের পারফরম্যান্স দেখেছেন। এ ছাড়া কিংবদন্তি জ্যাজ ডাবল ব্যাজিস্ট রন কার্টারের পারফরম্যান্সও উপভোগ করেছেন।
রাতের খাবারও একটু দেরিতে সারেন তাশফি; ১১টা-১২টায়। মেনু অনেকটা দুপুরের মতোই। ভোর পর্যন্ত জেগে থাকা হয় মাঝেমধ্যে। সে সময় রাত ১-২টার দিকে গ্রহণ করেন স্ন্যাকস।
তাশফির জীবনদর্শন খুব সিম্পল, ‘লিভ অ্যান্ড লেট লিভ’। জীবনে সুখী হওয়া ও মানসিক প্রশান্তি অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। আর সেটি অর্জনে ইতিবাচক যা কিছু করা দরকার, তা করতে দ্বিধা নেই তার।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top