skip to Main Content

বহুরূপী I নানান নান

এশীয় রন্ধনশৈলীতে ভীষণ সমাদৃত একটি খাবার—নান। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং আশপাশের দেশগুলো থেকে এটি ছড়িয়ে পড়েছে দুনিয়ার নানা প্রান্তে। নান খামিরযুক্ত ফ্ল্যাট রুটি, যা বাংলাদেশ, ভারতের উত্তরাঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এর রয়েছে এক দীর্ঘ ও আকর্ষণীয় ইতিহাস। রয়েছে বৈচিত্র্যও। হলুদ ও মরিচগুঁড়া, এমনকি পুদিনার মতো মসলা নান রুটির স্বাদ বাড়াতে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার হয়ে থাকে।
নান বলতে শুরুতেই চলে আসে প্লেইন নানের কথা। এটিই নান রুটির সবচেয়ে সুপরিচিত সংস্করণ। এই ফ্ল্যাটব্রেড মূলত গমের আটা দিয়ে তৈরি হয়। ভেতরটা কোমল আর বাইরের অংশ খানিক পুরু। দক্ষিণ এশীয় অনেক খাবারের সঙ্গে দারুণ মাত্রা যোগ করে এই প্লেইন নান রুটি এবং ওভেন-বেকড ফ্ল্যাটব্রেড। বড় আকারের সুস্বাদু প্লেইন নানের স্বাদের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট উপভোগ করতে চাইলে সঙ্গী করতে পারেন বাটার ও মিষ্টি দুধ-চা।
গার্লিক নান রুটিও অনেকের বেশ পছন্দের সাইড ডিশ, বিশেষ করে পশ্চিমা ভোজনকারীদের কাছে। এর অন্যতম কারণ মাখন ও রসুনের সংমিশ্রণ। চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো উপমহাদেশীয় খাবার সহযোগে একে উপভোগ করতে পারেন। জানা কথা, উপমহাদেশীয় খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধ এমনিতেই অতুলনীয়। অনেকে এই রুটিকে ক্রিমি ও গ্রেভি কারির সঙ্গে খেতে ভালোবাসেন।
কুলচা নান প্রচলিত ভারতীয় নান রুটির মতো তুলতুলে বা নরম হয় না। এটি ফ্লেকি টেক্সচারের জন্য খ্যাত। আটার বদলে মিহি সাদা ময়দা দিয়ে বানানো হয়। সুস্বাদু খাবার হিসেবে তৈরি করতে এর সঙ্গে আলু বা ডালের মতো উপাদান মেশানোরও চল আছে। ভারতীয় উপমহাদেশে এর বেশ কদর থাকলেও পাশ্চাত্যে খুব একটা দেখা মেলে না।
পেশওয়ারি নান সাধারণত ব্রেকফাস্টে খাওয়া হয়। পাকিস্তানের পেশোয়ার শহর অঞ্চল থেকে এর বিস্তার, তাই এমন নামকরণ। নানের সাধারণ উপাদানের পাশাপাশি বাদাম, কিশমিশ ও নারকেল যোগে তৈরি হয় এটি।
কিমা নান মূলত ঐতিহ্যবাহী নান রুটির একটি সৃজনশীল রূপ। ভেতরের অংশে পুরে দেওয়া হয় মসলাযুক্ত ভেড়া বা ছাগলের মাংস। এরপর ওপরে দেওয়া হয় মাখনের ব্রাশ। এই প্রক্রিয়া রুটিকে একটি সমৃদ্ধ স্বাদ দেয়। ফলে চাটনির মতো ঐতিহ্যবাহী টপিংস ব্যবহার না করেও খাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেশীয় খাদ্যসংস্কৃতিতে অতিরিক্ত মাংস ব্যবহারের যে প্রবণতা, কিমা নান তার অন্যতম উদাহরণ।
আফগানিস্তানের একটি ঐতিহ্যবাহী ফ্ল্যাটব্রেডকে বলে নান-ই রোগনি। ময়দায় যোগ করা অতিরিক্ত তেল প্রচলিত নানের মতো হওয়া সত্ত্বেও রন্ধনশৈলী একে নরম বালিশের মতো টেক্সচার এনে দেয়। এর প্রস্তুতিতে তেল, ময়দা, লবণ, চিনি, খামির, দুধ, তিল ও কালোজিরা ব্যবহার করা হয়।
নানের সবচেয়ে পরিচিত সংস্করণগুলোর অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় বাটার নান। ময়দা, খামির, লবণ, চিনি ও দই ব্যবহারে তৈরি। ময়দা বেক করার পর নান গরম তন্দুর চুলা থেকে ওঠানো হয়। এরপর রসুনের কিমা ছিটিয়ে দেওয়ার আগে মাখন বা ঘি মেখে নেওয়া হয়। কারি, বাটার চিকেন, ডাল মাখানি, মালাই কোফতা, শাহি পনিরসহ ভারতীয় উপমহাদেশের বেশ কিছু খাবারের সঙ্গে বাটার গার্লিক নান দারুণ উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
দেশি নান আপনার দুপুর, রাত, এমনকি সকালের নাশতাকে করে তুলবে চমৎকার। বিভিন্ন উপায়ে এই রুটি তৈরি করা যায়। প্রতিটি কোর্সই সুস্বাদু। তাই যেকোনো তরকারির সঙ্গে উপভোগ করতে কিংবা অতিথিদের সুস্বাদু খাবার দিতে চাইলে বিভিন্ন ধরনের নান পরিবেশন করতে পারেন।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

This Post Has One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top