skip to Main Content

কভারস্টোরি I ঝরাপাতার গান

ঋতুবৈচিত্র্যে নেমে এলো শীত, এই জনপদে। কুয়াশার চাদরে চারপাশ ঢেকে যাওয়ার দিন ফিরে এলো। ফিরে এলো গাছে গাছে বিষাদের বার্তাবাহী ঝরাপাতার দিন। একি সত্যি বিষাদের? নাকি নতুন পাতার সম্ভাবনা জারি করার উপলক্ষ? বিস্তারিত রুদ্র আরিফের লেখায়

‘পাতাকুড়োনীর মেয়ে তুমি কী কুড়োচ্ছো? ছায়া, আমি ছায়া কুড়োই!
পাখির ডানার সিক্ত সবুজ গাছের ছায়া, গভীর ছায়া, একলা মেঘে
কুড়োই, হাঁটি মেঘের পাশে মেঘের ছায়া—ছায়া কুড়োই!

পাতাকুড়োনীর মেয়ে তুমি কী কুড়োচ্ছো? পাতা, আমি পাতা কুড়োই!
কয়টি মেয়ে ঝরাপাতা: ঝরছে কবে শহরতলায়,
শিরায় তাঁদের সূক্ষ্ম বালু,
পদদলিত হৃদয় ক’টি, বৃক্ষবিহীন ঝরাপাতা—
কুড়োই আমি তাদের কুড়োই!’
—ধরিত্রী/ আবুল হাসান

প্রকৃতিতে যখন হিমশীতলতা, উনুনের পাশে বাষ্প ছড়ানো হাওয়ায় উষ্ণতার পরশ গায়ে মেখে নেন এ দেশের গ্রামীণ মানুষ। শহুরেদের অনেকের ঘরে রুম হিটারের ছড়ানো ওমের আবহ। শীতপোশাকে নিজেকে আরাম দেওয়ার নানা প্রচেষ্টা। আপামর বাংলার আকাশ তখন কুয়াশার দখলে। তার ফাঁক গলে দিনের বেলা আলোর ফোয়ারা ছড়ায় সূর্য। রোদের এমন তুলতুলে স্পর্শ বোধ করি এই সময়েই মানুষের মনে সবচেয়ে আদুরে হয়ে ধরা দেয়। রৌদ্রস্নাতে মাতোয়ারা হতে চনমন করে ওঠে মন। রাতের গগন-ক্যানভাসে কখনো কখনো হয়তো উঁকি দেওয়ার সুযোগ পায় বহুদূরের নক্ষত্রেরা। আলোকবর্ষ দূরত্ব থেকে ছড়িয়ে দেয় মিটিমিটি হাসি—হয়তো মায়ের কোলের ওমে আদরখেকো কোনো শিশুর উদ্দেশে। আবার কোনো কোনো দিন কুয়াশার চাদর এত গাঢ়, এত নিবিড় হয়ে ওঠে, তাকে হারানো সম্ভব হয় না সূর্য কিংবা নক্ষত্রের পক্ষে। ভীষণ ভারী এক পর্দা যেন ছড়িয়ে থাকে আদিগন্ত। তবে তা গুমোট আবহ ছড়ায় না মোটেই। সেই ভারিক্কির ভেতর বসত করে এক প্রাণজুড়ানো স্নিগ্ধতা। বাতাসে হিমশীতলতার বিশেষ মিষ্টি সুঘ্রাণ।
এমনই অনিন্দ্য শীতলতা নিয়ে, ধূসর কুয়াশার জাল ছড়িয়ে এই জনপদে নেমে আসে শীত। ঘুম ঘুম আবেশ ছড়িয়ে থাকে সর্বত্র। জারি রাখে উষ্ণতার কোমল আর্তি। তাই এই ঋতু অনেকের খুব প্রিয়। জানি, অনেকেই আনমনেই অপেক্ষায় থাকেন এর আগমনীর। ‘…একবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই মেঘ ঝুঁকে থাকতে দেখেছিলাম/ জানলার কাছে—চারদিক অন্ধকার/ নিজের হাতের নখও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না সেদিন—সেইদিন/ তোমার কথা মনে পড়তেই আমি কেঁদে ফেলেছিলাম—চুলে, দেশলাই জ্বালিয়ে/ চুল পোড়ার গন্ধে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আবার/… শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা?’—কবি ভাস্কর চক্রবর্তীর এমন কাব্যবোধে যারা কাটিয়েছেন সময়, তাদের কারও কারও হয়তো সেই অপেক্ষার প্রহর হয় শেষ।
শীতের এ সময়ে ঋতুবদলের বড় ধরনের ছাপ পড়ে বৃক্ষরাজির ওপর। উর্বর এই ভূখণ্ডের চিরসবুজ প্রাকৃতিক সন্তান অর্থাৎ গাছগুলোর দিকে তাকালে অবশ্য হু হু করে ওঠে যেকোনো সংবেদনশীল মানুষের মন। কেমন এক বিষাদ ভর করে, অজান্তেই। যত দূর চোখ যায়, সবুজের লেশ ফুরিয়ে, দেখা মেলে হলুদ পাতার। আর সেই পাতাগুলো বৃক্ষের বুক খালি করে দিয়ে, ধীরে ধীরে ঝরে পড়তে থাকে ধরণীর কোলে। গাছের নিচটায় যখন ঝরাপাতার স্তূপ, তা যেন কোনো অব্যক্ত শোকসভার ইঙ্গিত দেয়। প্রাগৈতিহাসিক এক হাহাকার যেন ছড়িয়ে পড়ে তল্লাটে তল্লাটে। দখলে নিয়ে, অন্তরমহল পুরোটা করে তোলে বেদনার্ত, সিক্ত, রিক্ত!
কেন পাতাগুলোর এত অভিমান? কোন বেদনায় চিরহরিৎ থেকে হলুদে বাঁক নেওয়া? ঝরে পড়া? বিজ্ঞান বলে, গাছের পাতায় থাকে ক্লোরোফিল বা পত্রহরিৎ। একধরনের সবুজ রঞ্জক পদার্থ। আর তা সূর্যের আলোর হাজিরায় প্রস্তুত করে গাছকে বাঁচিয়ে রাখার আহার। রূপক অর্থে গাছের প্রতিটি পাতাকে যদি ধরা হয় কোনো বিশাল হেঁসেল, তাহলে সেই রান্নাঘরে খাদ্য প্রক্রিয়ার জন্য গাছেরও দরকার পড়ে পানি। মাটির গভীর থেকে তা শুষে নেয় শিকড়। তবে বরাবরই প্রয়োজনের চেয়েও বেশি পরিমাণে। আর বাড়তি পানি বাষ্প হিসেবে ছড়িয়ে দেয় প্রকৃতিতে, পাতার মাধ্যমে। বৃক্ষের নিজ খাদ্যপ্রস্তুতির এ এক অতুলনীয় প্রাকৃতিক রেওয়াজ। বছরের অন্য দিনগুলোতে তাতে তেমন একটা গোলমাল বাধে না। কিন্তু শীতে যেহেতু প্রকৃতি থাকে শুষ্ক, তাই টেনে তোলার মতো পর্যাপ্ত পানি পায় না বৃক্ষের শিকড়। পাতার অভ্যন্তরে তৈরি হয় জলজ ঘাটতি। আবার, কুয়াশার দাপটে পর্যাপ্ত রোদের দেখাও পায় না গাছ। তাতে বিপত্তি। ক্লোরোফিল উৎপাদন থেমে যায় অক্সিন হরমোনের প্রভাবে। এমন বিপদের দিনে কী করে বৃক্ষ? প্রকৃতি রেখেছে তারও শৃঙ্খলা। পানি ও ক্লোরোফিলের ভারসাম্য রক্ষায় পাতার কাণ্ড ও পাতার মাঝামাঝি সৃষ্টি হয় বিশেষ ধরনের কোষ। আর সেটিই কাজ করে প্রাকৃতিক কাঁচি হিসেবে। ওই কোষ ক্রমাগত বেড়ে বৃক্ষ ও তার পাতার মধ্যে তৈরি করে একধরনের দূরত্ব। তাতে একটু বাতাসেই শিউলি ফুলের মতো ঝরঝর ঝরে পড়তে থাকে পাতাগুলো। ফলে খাদ্যের চাহিদা কমে যায়; আর নিজ অভ্যন্তরে জমিয়ে রাখা খাদ্য দিয়ে দীর্ঘদিন টিকে থাকার লড়াই চালাতে পারে গাছ। এই ঋতুর প্রভাব ফুরোতেই আবারও হয়ে ওঠে ফুরফুরে। উঁকি দেয় নতুন, চকচকে সবুজ পাতা। বৃক্ষের এ এক অনুপম জীবনচক্র। এর সঙ্গে মানুষের জীবনচক্রও ওপপ্রোতভাবে জড়িত। আক্ষরিক অর্থে তো বটেই, রূপকার্থেও।
অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড লেনদেনেই সীমিত নয় বৃক্ষজীবন ও মানবজীবনের পারস্পরিক সম্পর্ক। মানুষের জীবনেও এমন সময় আসে, যখন ঝরাপাতার মতো হলুদ হয়ে ঝরে পড়তে থাকে বিবিধ সঙ্গ-অনুষঙ্গ। খুব কাছের কারও মৃত্যু, প্রিয় কোনো বিষয় খোয়ানো কিংবা কারও কাছ থেকে পাওয়া মনোবেদনা মানুষকে করে তোলে বিমর্ষ। নিজের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে নেয় মানুষ তখন। জীবনকে অর্থহীন মনে হতে থাকে প্রতিনিয়ত। এমন দুঃসময়ে কোনো সান্ত¡নাই হয়তো চাঙা করতে পারে না তাকে। প্রতি মুহূর্তে ছুটে যেতে থাকে এক অদৃশ্য সুড়ঙ্গের পানে, যার প্রবেশদ্বার হয়তো রয়েছে, কিন্তু প্রস্থানদ্বার নেই! সেই সব বিষাদের দিনে, আবেগ-অনুরাগ ঝরাপাতায় পরিণত হওয়ার ক্ষণগুলোতে প্রকৃতিপাঠ তাকে দেখাতে পারে সেই অশেষ অন্ধকারাচ্ছন্ন সুড়ঙ্গের শেষে আলোর নিশানা। শীতের পাতাহীন বৃক্ষ যেমন ভেতরে জমিয়ে রাখা খাদ্যকণার বদৌলতে জীবন চালনার লড়াই জারি রাখে, থাকে অপেক্ষায় আবারও সবুজ পত্রপল্লবে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠার; হাতে গোনা ব্যতিক্রম বাদে, মানুষও সচরাচর তা-ই করে। মনোবলে ভর দিয়ে, বেদনার দিন পেরিয়ে, আবারও হয়ে ওঠে চাঙা। আর এভাবেই এই পৃথিবীর বুকে এগিয়ে যায় মানুষের জীবনচক্র।
তবে যত সহজে বলা গেল, সেই লড়াই তত সহজ নয় মোটেই। আর সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানুষের প্রয়োজন পড়ে অন্যের সহযোগিতা। কখনো কখনো একটুখানি হাতের পরশই কোনো পতনশীল মানুষের জন্য হয়ে উঠতে পারে প্রাণ বাঁচানোর মহৌষধ। এ প্রসঙ্গে চিলিয়ান-ফ্রেঞ্চ ফিল্মমেকার আলেহান্দ্রো হোদোরোস্কির একটি অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নেওয়া আশা করি অবান্তর হবে না। ওই ফিল্মমেকার তার তারুণ্যে, বিবিধ বিষয় ঘিরে নৈরাশ্যের কুয়াশায় আপাদমস্তক আচ্ছাদিত হয়ে, চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে একদিন বাসা থেকে বেরিয়ে দেখেছিলেন, রাস্তার পাশে, রেলট্র্যাকে বহু মানুষের জটলা। ভিড় ঠেলে কাছে গিয়ে দেখলেন, রেললাইনে পড়ে আছেন এক লোক। তাকে চাপা দিয়ে থেমে আছে ট্রেনের একটি বগি। লোকটি জীবিত তখনো। আহত, নির্বাক, পাংশুটে। উদ্ধারকারী সংস্থার আগমনের কিংবা বগিটি সরানোর জন্য ক্রেন আনতে লেগে যাবে বেশ দীর্ঘ সময়। কিন্তু ততক্ষণ প্রাণ বাঁচিয়ে রাখার স্পৃহা কোথায় পাবেন এই অসহায় লোক? চারপাশে মানুষের ভিড়, শোরগোল; তবু কারও যে কিছুই করার নেই। এ যেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ কবি স্যামুয়েল টেইলর কলরিজের জগদ্বিখ্যাত কবিতা ‘দ্য রাইম অব দ্য অ্যানসিয়েন্ট ম্যারিনার’-এর সেই অমর পঙ্ক্তির মতো: ‘ওয়াটার, ওয়াটার এভরিহোয়্যার, নর অ্যানি ড্রপ টু ড্রিঙ্ক’। না, ভীষণ সংবেদনশীল আলেহান্দ্রো সে রকম ছিলেন না। তিনি ছুটে গিয়ে লোকটির একটি হাত ধরে বসে থাকলেন চুপচাপ। কতক্ষণ বসে ছিলেন ঠায় ওভাবে? করেননি হিসাব। তবে আত্মজীবনী ‘দ্য ড্যান্স অব রিয়েলিটি’তে ওই ঘটনার উল্লেখ টেনে অনুমান প্রকাশ করেছিলেন, হয়তো কয়েক ঘণ্টা। শ্বাসরুদ্ধকর, পরস্পর নির্বাক সেই হাত ধরে বসে থাকা প্রহরগুলো পেরিয়ে অবশেষে যখন ক্রেন নিয়ে হাজির হলো রাষ্ট্রীয় উদ্ধারকারী সংস্থা, অতঃপর আহত লোকটির হাত ছেড়েছিলেন আলেহান্দ্রো। তবে ছাড়ার আগে টের পেয়েছিলেন, এতক্ষণ লোকটির মৃতবৎ হাতটির এ বেলা একটু আলতো চাপ। ‘হাতের ওপর হাতের পরশ!’ বুঝেছিলেন, এই আলতো চাপের মাধ্যমে আহত লোকটি আসলে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন; জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা—এত দীর্ঘ সময় ধরে, ওই চরম দুর্দশায় তাকে সঙ্গ দেওয়ায়। মনুষ্যস্বভাবের এ একেবারেই চিরায়ত বোঝাপড়া। নিদারুণ দুঃসময়ে কখনো কখনো সামান্য একটু স্পর্শ, সামান্য একটু কথা—হোক পরিচিত কিংবা অপরিচিতজনের, মানুষকে তার বিপর্যস্ত প্রাণশক্তি পুনরুজ্জীবিত করতে রাখে অতুল ভূমিকা। তাতে ভর দিয়ে, ঝরাপাতার দিন ফুরোনোর স্পৃহা পায় বিপন্ন মানুষ।
এ তো গেল মনোজগতের বোঝাপড়া। দেহজগতেও ঝরাপাতার দিনের বিস্তার চিরায়ত। আর তা যে বরাবরই বেদনা জানান দেয়, তা নয়; বরং শুরুতে যে প্রসঙ্গ এসেছিল, সেই উষ্ণতা-অন্বেষণ এনে দেয় অনিন্দ্য অনুভূতি। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এ বেলা প্রয়োজন পড়ে ভিন্ন ধরনের, বাড়তি পোশাকের। বলছি শীতপোশাকের কথা। চাদরে শরীর ঢাকার চল এই জনপদে বেশ পুরোনো। সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলারও বেশ কিছুকাল ধরেই চলছে। হালে যুক্ত হয়েছে বাহারি পঞ্চো, বিনি ক্যাপ, হুডি, কার্ডিগান, সোয়েটশার্ট…আরও কত কী! শীতপোশাক শুধু পোশাক নয়; অনেকের, বিশেষত তরুণদের কাছে স্টাইল স্টেটমেন্ট। যদিও চলতি ফ্যাশনে যুক্ত হওয়ার সামর্থ্য সবার থাকে না; তা ছাড়া আমাদের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশকেই প্রতিনিয়ত রত থাকতে হয় জীবনযুদ্ধে, দুবেলা দুমুঠো আহারের ব্যবস্থা করতেই খেতে হয় হিমশিম; তাই শীতকাল এক মানবিক আর্তি নিয়েও হাজির হয় মানুষের পৃথিবীতে। সুবিধাবঞ্চিতদের কাছে এই ঋতু যেহেতু উপভোগের চেয়ে বরং বিড়ম্বনারই নামান্তর হয়ে ধরা দেয়; তাই সুবিধাপ্রাপ্ত ও সামর্থ্যবানদের ওপর দায়িত্ব বর্তায় নিজ অবস্থান থেকে যথাসম্ভব চাহিদাসম্পন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। কেননা, শীতসহ যেকোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উপভোগ কিংবা উদ্‌যাপনের বিষয়টি কখনোই একক নয়; সামগ্রিক হলেই তা অর্থবহ হয়ে ওঠে। আর এ কারণেই শীত ঘিরে দেশে দেশে প্রচলন রয়েছে বিবিধ উৎসবের মাধুর্য।
বলা হয়ে থাকে, শীতের স্বকীয় রূপ পরখের জন্য নগর বা শহরের চেয়ে গ্রাম হলো যথার্থ স্থান। তা অস্বীকারের খুব একটা উপায়ও নেই। শহরে ছড়ানো অট্টালিকা, যানবাহন, বিবিধ দূষণ পেরিয়ে শীত কেন, যেকোনো ঋতুরই প্রকৃত রূপ বা প্রভাবের দেখা মেলা বেশ দুষ্কর। অন্যদিকে, গ্রামপ্রধান এ দেশের আদিগন্ত মাঠঘাট, নদীনালা, ফসলের জমিনে চোখ রাখলে, কুয়াশায় মোড়ানো এক অপূর্ব দৃশ্যাবলি ভেসে ওঠে। তাতে জুড়িয়ে যায় নয়ন, জুড়ায় মন। তা ছাড়া এ সময়ে গ্রামবাংলাজুড়ে পড়ে যায় বৈচিত্র্যময় ও সুস্বাদু পিঠা খাওয়ার ধুম। শীতের সবজি টগবগ করে জানান দেয় সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা। হলুদ রং শুধু ঝরাপাতার বেদনাবাহী প্রতীক হয়েই থাকে না; জমিনে ছড়ানো শর্ষেফুলের হলুদ জানায় প্রাণের উচ্ছ্বাস। আর ধরে জীবনের বৈচিত্র্যময়তার গান! তাই বোধ করি আবুল হাসান লিখে গেছেন, ‘এবার আমার ঝরাপাতার শস্য হবার দিন এসেছে,/ শস্য কুড়োই, শস্যমাতা!’
গ্রন্থসূত্র:
১। আবুল হাসান/ রচনাসমগ্র; বিদ্যাপ্রকাশ, ঢাকা; ১৯৯৪
২। শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা/ ভাস্কর চক্রবর্তী; দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা; ১৯৭১
৩। দ্য ড্যান্স অব রিয়েলিটি/ আলেহান্দ্রো হোদোরোস্কি; পার্ক স্ট্রিট প্রেস, কানাডা; ২০১৪

প্রিয় ঋতুর উষ্ণতা

সিয়াম আহমেদ

শীত আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু। এর একটি বড় কারণ, উইন্টার কস্টিউম। ব্যক্তিগতভাবে আমার বিভিন্ন লেয়ারড কস্টিউম ভালো লাগে। যেহেতু আমাদের কাজটিই শো বিজনেসে, যেকোনো ফটোশুট কিংবা শুটিংয়ে যখন কোনো লেয়ারড কস্টিউম পরি, ওখানে অনেক ফ্লেভার অ্যাড করা যায়। ওয়ান লেয়ারড সিম্পল কস্টিউমের তুলনায় ওটা একটা আলাদা ক্যারেকটার অ্যাড করে। তাই নিজের কাজের ক্ষেত্রে শীতকালকে আমার কাছে সেরা সময় বলে মনে হয়। অন্যদিকে, ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের কাপড় কখনোই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসলে যে কাপড় নিজে ভালো ক্যারি করতে পারি, যে কাপড় আমার পারসোনালিটি শো করে, সেটাই বেছে নিই। ডেনিম ব্যবহার করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য লাগে। হুডিও বেশ প্রিয়। ডেনিম জ্যাকেটের কথা তো বলাই বাহুল্য। আর নিজের কালেকশন প্রসঙ্গে বলব, আমি অনেক বেশি ফোকাস করি ব্লেজারে। আমার সংগ্রহে এ পর্যন্ত কতগুলো ব্লেজার আছে, এক হলফে বলতে পারব না! কেউ কেউ আছেন, যারা মনে করেন, তার সংগ্রহে প্রিয় পোশাক যতই থাকুক না কেন, তা যথেষ্ট পরিমাণ নয়—আমারও তেমন মনে হয়! স্যুটের ক্ষেত্রেও একই কথা। এ আমার সব সময়ই খুব প্রিয়। আর এগুলোতে নিজেকে যথাযোগ্যভাবে সাজানো যায় শীতকালে; বিশেষ করে থ্রিপিস স্যুট উইদ দ্য ভেস্ট, এটি সাধারণত আমরা সামার টাইমে তো পরতেই পারি না, শীতকালে ঘামের বিড়ম্বনা না থাকায় তা সহজে গায়ে জড়িয়ে নিতে পারি। আমার ধারণা, এসব পোশাকের জন্য শীতকালই সবচেয়ে উপযোগী সময়। অন্যদিকে, আমার সাম্প্রতিক পছন্দের পোশাক সেমি ওভারকোট। আমি মনে করি, এটি ডেনিম ও বুটসের সঙ্গে খুব ভালো যায়।

মডেল: সিয়াম আহমেদ, তর্ষা, জামি, মারিয়াম, তাজরিয়ান, নাহিদ খান ও আকাশ
মেকওভার: পারসোনা
লোকেশন: লো মেরিডিয়ান
ওয়্যারড্রোব: টুয়েলভ
ছবি: কৌশিক ইকবাল

বিশেষ কৃতজ্ঞতা: নওশীন রহমান খন্দকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top