skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I ফেক ইট, টিল ইউ মেক ইট

‘আজ আমাকে রাত দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তেই হবে’—লেট-নাইট কল আর নেটিফ্লিক্সিংয়ের এই যুগে সে-ও সম্ভব?

মোটামুটি অসম্ভবই বলা যায়। মনে মনে সেটা সবাই মানলেও, মুখ খুলবেন না অনেকে। প্রতিদিনকার দৌড়ঝাঁপের জীবনে রাতের নির্দিষ্ট প্রহরে নিজের মতো সময় কাটানোর এমন অমোঘ আকর্ষণ এড়ানো দুষ্কর। আর রোজায় রাত জাগার ব্যাপারটি যেন পায় নতুন মাত্রা। বন্দেগি তো আছেই, এর ওপর একেবারে সাহ্‌রী সেরে, ফজর সালাত আদায় করে ঘুমাতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সাহ্‌রী পার্টির প্রোগ্রাম যদি থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু মোটেই স্বাস্থ্যকর নয় ব্যাপারটি। যার পষ্ট প্রমাণ রাত জেগে উপভোগের পরের দিনের পরিশ্রান্ত চেহারা। ফোলা চোখ, ডার্ক সার্কেল আর শরীরজুড়ে ক্লান্তি। তবে এ শাস্তি এড়ানোর উপায় আছে। প্রো-টিপ মেনে পরিচর্যা, ব্যস!
লিম্ফেটিক রুট
নামটা খটমটে শোনায় শুধু। প্রক্রিয়া একদম সহজ। একধরনের মাসাজ কৌশল, যার মাধ্যমে মুখ-ত্বক মাসাজ করে লিম্ফ নোড থেকে লিম্ফেটিক ফ্লুয়িড নিষ্কাশিত করা হয়। লিম্ফেটিক ফ্লুয়িড মূলত বর্জ্য ও দূষণ দূর করে ত্বককোষ থেকে। এই ফ্লুয়িডের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেই বিপদ। চেহারা ফোলা ফোলা দেখায়; বাড়িয়ে দেয় অ্যাকনে, শুষ্ক ভাবসহ নানা ধরনের ত্বক সমস্যা। বাসায় বসে নিজে নিজেই লিম্ফেটিক মাসাজ করে নেওয়া সম্ভব। এতে ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়ে; দেখায় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। টান টান, লিফটেড ইফেক্ট দেয় চেহারায়। ক্লান্ত, ফোলা ফোলা চোখের জন্য এটি জাদুকরী।
আই মাস্ক মাস্ট
রোজকার ঘুমের হেরফেরের সব সত্য কিন্তু উগলে দিতে পারে চোখজোড়া। আট ঘণ্টার ঘুম না হলে চোখের চারপাশের কোষগুলো দুর্বল হতে শুরু করে, কমিয়ে দেয় কোলাজেন উৎপাদনের হার। ফলাফল—ফ্লুয়িড জমতে থাকে চোখের চারপাশে। দেখা দেয় ফোলা ভাব। তাই চোখজোড়া যেন সত্য ফাঁস না করে দেয়, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত। পেপটাইডযুক্ত আইপ্যাচ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নেওয়া গেলে তো আরও ভালো। আরাম জোগাবে; দ্রুত ডিপাফ করবে চোখের ক্লান্ত অংশগুলোকে।
ক্রায়ো ট্রিটমেন্ট
সুপার মডেল বেলা হাদিদ অ্যাপ্রুভড বলে কথা! চেহারা থেকে রাত জাগার চিহ্ন মুছে ফেলতে ক্রায়োথেরাপি হতে পারে দারুণ সমাধান। সহজ কথায় কোল্ড থেরাপি। এই আইসি টেকনিকে ত্বকে ঠান্ডা কোনো টুল ব্যবহারে কোলাজেনকে উদ্দীপ্ত করা হয়। সাময়িকভাবে পোরগুলোর মুখ বন্ধ করতেও সহায়তা করে। ডিপাফ করার পাশাপাশি কমায় প্রদাহ। ত্বকে দেয় শিশিরশিক্ত প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা। তবে সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে ঠান্ডা টুলটি। ক্রমাগত চেহারায় বোলাতে থাকতে হবে, যেন ত্বকের কোনো ক্ষতি না হয়।
স্লাগ ইট আপ
তো রাত এখন তিনটা। পরের দিন সকালের প্রথম কাজ প্রেজেন্টেশন। তাহলেই সেরেছে। এখন উপায়? সমাধান—স্লাগিং। রাতের সব রূপচর্চা সেরে সবশেষে ভ্যাসলিনের ভারী পরত মেখে নেওয়া চাই ত্বকে। উদ্দেশ্য—ট্রান্স-এপিডারমাল ওয়াটার লস রোধ। সহজ ভাষায়, ত্বক থেকে পানি অর্থাৎ আর্দ্রতা যেন বেরিয়ে যেতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা। এমনি এমনি তো একে গ্লো গেমের গেম চেঞ্জার বলা হয় না! ভ্যাসলিন ব্যবহার না করে আরও কিছু মাখতে চাইলে বাজারে মিলবে হরেক রকমের স্লিপিং মাস্ক। কোনোটা হেম্প সিড অয়েল যুক্ত তো কোনোটা গাজরের নির্যাসে তৈরি। সব কটির কাজ ত্বকের সুরক্ষা দেয়ালকে আগলে রাখা, বাড়তি পুষ্টি জোগানো। রাতে ফুল স্কুপ নিয়ে মেখে নিলে বিউটি স্লিপ ছাড়াই পরের দিন চেহারা দেখাবে পরিপুষ্ট, উজ্জ্বল।
হাইড্রেট, হাইড্রেট, হাইড্রেট
আমেরিকান স্লিপ ফাউন্ডেশনের এক জরিপ থেকে জানা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। আর উজ্জ্বল ত্বকের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। পর্যাপ্ত আর্দ্রতার অভাবে ত্বক ঝুলে যেতে পারে, আর অনুজ্জ্বলতা তো আছেই। চোখের চারপাশের কালো দাগও কিন্তু নিদ্রাহীনতায় দেখা দেয়। তাই পর্যাপ্ত পানি পান যে জরুরি, সে পুরোনো খবর। ত্বকের যত্নেও জোগান দিতে হবে জরুরি আর্দ্রতা। বিশেষ করে লেট নাইট আউটের প্ল্যান থাকলে। রূপরুটিন পরিপূর্ণ থাকুক হাইড্রেটিং সব ফর্মুলায়। শুরুটা করা যেতে পারে ময়শ্চারাইজিং টোনার দিয়ে। তারপর ত্বকের পিপাসা মেটাতে ব্যবহার করা যেতে পারে এসেন্স। স্কিন প্লামিং সেরামের সঙ্গত কিন্তু এর সঙ্গে চমৎকার। সবশেষে জুসি কোনো নাইট ক্রিম মেখে নিলেই; ব্যস, কেল্লা ফতে! সেরাম বাছাইয়ের সময় দেখে নেওয়া যেতে পারে, তাতে হায়ালুরনিক অ্যাসিডের উপস্থিতি আছে কি না। সঙ্গে ব্রাইটেনিং নিয়াসিনামাইড, স্কিন ফ্লামিং পেপটাইড থাকলে তো কথাই নেই। কোরিয়ানদের মাঝে একটি হ্যাক দারুণ জনপ্রিয়। সেভেন স্কিন মেথড নামে। মূলত সাতবার টোনিং করার প্রক্রিয়া বলে এমন নামকরণ। শুধু একটি কটন প্যাডে হাইড্রেটিং টোনার নিয়ে মুখত্বকে বুলিয়ে নিতে হবে। এর পরপর হালকা চাপড় দিয়ে নিতে হবে। এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করতে হবে নিদেনপক্ষে তিনবার। আর টোনার অবশ্যই হতে হবে অ্যাসট্রিনজেন্টমুক্ত, নন-অ্যালকোহলিক, হাইড্রেটিং টোনার।
আইস ফেশিয়াল
খানিকটা আতঙ্কের উদ্রেক করলেও ত্বকে এর কার্যকারিতা জাদুকরী। ভিক্টোরিয়াস সিক্রেট এঞ্জেল অ্যাপ্রুভড এই কৌশল। মুখে বরফ ঠান্ডা পানি ছিটাতে হবে, ব্যস। এই আইসি ফেশিয়াল ত্বকের লোমকূপগুলোকে আঁটসাঁট করে দেয়, চেহারায় চটজলদি জেল্লা নিয়ে আসে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, ত্বকের ফোলা ভাব কমায়। যা করতে হবে তা হচ্ছে একটি গামলায় পানি নিয়ে তাতে বরফখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে। তারপর ত্রিশ সেকেন্ড ধরে সেই বরফ ঠান্ডা পানি ছিটাতে হবে মুখত্বকে। ফল—চমৎকার। কিন্তু হাতে অত সময় নেই? ফ্রিজে একটি চামচ মিনিট বিশেক ঠান্ডা করে নিয়ে তা ধরে রাখা যেতে পারে চোখের তলার অংশে।

 বিউটি ডেস্ক
মডেল: মারিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top