skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I চালে ত্বক চকচক

প্রাচীন প্রথা। তবে টিকটকের কল্যাণে পুনরায় আবির্ভূত হয়েছে সৌন্দর্যবিশ্বে। দেখাচ্ছে চমক

চীন, জাপান না কোরিয়া? উৎপত্তিস্থল নিয়ে দ্বিধা থাকলেও কার্যকারিতা নিয়ে অতটুকু প্রশ্নের সুযোগ নেই। কথা হচ্ছে রাইস ওয়াটার নিয়ে। কথিত আছে, এর প্রচলন মূলত হিয়ান যুগে। চীনের হুয়ানলু অঞ্চলে। যেখানে এখনো নারীরা চালের পানি দিয়ে চুল আর ত্বক ধুয়ে থাকেন। ফলাফল—এই অঞ্চলের কারও মাথায় আশি বছরের আগে একটি পাকা চুলও দেখা যায় না। একইভাবে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই এবং বি ত্বকের বার্ধক্য রোধে অব্যর্থ।
রাইস ওয়াটার কী
একদম সহজে বলতে চাইলে, চাল ধোয়া পানি। শোনায় সাধারণ, কিন্তু গুণে অসাধারণ। নির্দিষ্ট উপায়ে তৈরি করে নিতে হবে। পদ্ধতি খুব সহজ। বাড়িতে বসেই বানিয়ে নেওয়া সম্ভব। জেসমিন, ব্রাউন কিংবা সাধারণ বাসমতি চাল এ ক্ষেত্রে আদর্শ। পরিমাণমতো চাল নিয়ে বেশ খানিকটা পানি দিয়ে একবার ধুয়ে নেওয়া চাই। তারপর পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। যত বেশি সময় ভিজিয়ে রাখা যাবে, ততই ভালো। ৩০ থেকে ৬০ মিনিট। পারলে এক-দুদিনও রেখে দেওয়া যেতে পারে। এতে পানি ফারমেন্ট বা জারিত হওয়ার সুযোগ পাবে। এই ফারমেন্টেড রাইস ওয়াটারই সবচেয়ে উপকারী। এরপর চাল ছেঁকে সাদা তরলটা বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। সপ্তাহখানেক ভালো থাকবে। এ ছাড়া পানিসহ চাল ৫-৭ মিনিট ফুটিয়েও নেওয়া যেতে পারে। এর বেশি ফোটানো যাবে না; নচেৎ চালের বেশ কিছু গুণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এই পানি ছেঁকেও ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দেওয়া যায়। যে পদ্ধতিতেই রাইস ওয়াটার বানানো হোক, এই পানি কিন্তু এক সপ্তাহের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। রাইস ওয়াটারের নিজস্ব কোনো গন্ধ নেই। তাই ব্যবহারের আগে নিশ্চিত করে নিতে হবে, এটি কোনো দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে কি না। পেলে সেই পানি ব্যবহার করা যাবে না। ত্বকে ইনফেকশনের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে এতে। ত্বকচর্চায় মূলত টোনার হিসেবে ব্যবহৃত হয় রাইস ওয়াটার। প্রশান্তি দিতে সহায়তা করে। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে থাকা স্টার্চ, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়ক। সেই সঙ্গে নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের দাগছোপ এবং আনইভেন ভাব দূর হয়। টোনিং ও ফার্মিংয়ের পাশাপাশি ত্বকের প্রদাহ ও সংক্রমণ শান্ত রাখতে কার্যকর। রূপচর্চার এই উপাদান সহজে তো বানিয়ে নেওয়া যায়ই। এ ছাড়া রাইস ওয়াটার অথবা মিল্ক-সংবলিত প্রোডাক্ট এখন সুলভে মিলে বাজারে।
ফাস্ট ফ্যাক্ট
 ব্যবহৃত হয়: টোনার হিসেবে।
 প্রধান উপকারিতা: প্রদাহে স্বস্তি দেয়, দাগছোপ দূর করে, অ্যান্টি এজিং প্রোপার্টি থাকায় বয়স রুখে দেয়।
 ব্যবহার উপযোগী: বেশির ভাগ মানুষের ত্বকে মানানসই। তবে অতি শুষ্ক এবং ডিহাইড্রেটেড ত্বকের শুষ্কতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। আর যাদের রাইস অ্যালার্জি আছে, তারা এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গল।
 ব্যবহারের মাত্রা: প্রতিদিন এক অথবা দুবারই যথেষ্ট।
 ভালো কাজ করে: বেশির ভাগ ত্বকযত্নের পণ্যের সঙ্গে।
গুণাগুণ
সেই সিক্রেটটাই তো জানা চাই!
 ফ্রি র‌্যাডিক্যাল প্রোটেকশন: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, তাই সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব পৌঁছতে দেয় না ত্বক অব্দি। বোর্ড সার্টিফাইড ডার্মাটোলজিস্টদের মত, ইউভি এক্সপোজারের ফলে যে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল তৈরি হয়, তা আটকে দিতে সক্ষম এই উপাদান। ফোটোএজিং প্রতিরোধেও এর কার্যকারিতা প্রমাণিত। স্টাডিতে প্রমাণিত, একটি বিশেষ ধরনের উদ্ভিজ্জ নির্যাসের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে এটি দারুণ সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে।
 অ্যান্টি এজিং প্রোপার্টি: ইলাস্টেট। ত্বকে উপস্থিত একধরনের এনজাইম, যার মূল কাজ ইলাস্টিক ফাইবারগুলোকে ভেঙে চেহারায় বলিরেখা আর ঝুলে যাওয়ার মতো বয়সের ছাপ তৈরি করা। রাইস ওয়াটার ইলাস্টেটের কার্যকারিতায় বাধা দেয়। ফলে অ্যান্টি এজিংয়ের উপকারিতা মেলে এটি ব্যবহারে। তবে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে এ ক্ষেত্রে।
 হাইড্রেশন: হাইড্রেটিং প্রোপার্টিযুক্ত হওয়ায় এর নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক আরও মসৃণ হয়ে ওঠে। টেক্সচারে আসে নজরকাড়া পরিবর্তন।
 ত্বকের অস্বস্তিতে স্বস্তি: উচ্চমাত্রার স্টার্চ আর ভিটামিনসমৃদ্ধ রাইস ওয়াটার ত্বকে স্বস্তির জোগান দিতে কার্যকর। এ নিয়ে গবেষণা সীমিত। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা, এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাবক উপস্থিত থাকতে পারে, যা শুষ্ক ত্বক আর একজিমার মতো সমস্যা সারাইয়ে সহায়ক। উপরন্তু এতে থাকা হাইড্রেটিং এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান পুরো প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে।
 হাইড হাইপারপিগমেন্টেশন: স্কিন ব্রাইটেনিং ইফেক্টসমৃদ্ধ এই উপাদান হাইপারপিগমেন্টেশন রুখে দিতে সহায়ক হতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞের মত। যদিও বিজ্ঞানসম্মত আরও গবেষণা প্রয়োজন এ ক্ষেত্রে। রাইস ওয়াটারে ইনোসিটোল নামে একধরনের উপাদান উপস্থিত থাকে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এটি ত্বকে উজ্জ্বলতা জোগানোর জন্য দারুণ। তাই রাইস ওয়াটার হাইপারপিগমেন্টেশনও সারিয়ে দিতে পারে এমন ধারণা অনেকের।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
চালে অ্যালার্জি না থাকলে আর তেমন গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এই উপাদানের। ত্বকে ব্যবহার করা যাবে চোখ বন্ধ করে। তবে শুষ্ক অথবা ডিহাইড্রেটেড ত্বকের অধিকারী হলে রাইস ওয়াটারের ব্যবহার এই সমস্যাগুলো আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
রাইস ওয়াটার ব্যবহারের পর অনেকের ত্বকে চটচটে আঠালো ভাব সৃষ্টি হয়। এমন সমস্যা এড়াতে ত্বকে স্প্রে করতে হবে রাইস ওয়াটার। তারপর ভালোভাবে শুকানোর সময় দিতে হবে। রাইস ওয়াটার ব্যবহারে ত্বকে শুষ্কতা সৃষ্টি হয়, তাই ময়শ্চারাইজার ব্যবহার মাস্ট।

 বিউটি ডেস্ক
মডেল: মৃদুলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top