skip to Main Content

কুন্তলকাহন I স্রেফ সিঁথি

যার সঠিক প্লেসমেন্টে পাল্টে যেতে পারে পুরো ব্যক্তিত্ব। অল্পবিস্তর, কিন্তু চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় এর প্রভাব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই

চুলের সিঁথি কোন দিকে—হেয়ার স্যালনে গিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর সবারই কখনো না কখনো দিতে হয়েছে। চুলে যেকোনো হেয়ারকাট দেওয়ার আগে এমনকি কালার করার আগেও হেয়ারস্টাইলিস্টদের এটা জেনে নেওয়া জরুরি। কারণ, চুলগুলোকে কীভাবে ভাগ করা হয়, তা চুলের কালার, কাট এবং সামগ্রিক লুকের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
সাধারণত সবাই সিঁথি একটি নির্দিষ্টভাবে রাখতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। হতে পারে সেটি ডান, বাম কিংবা মাঝে। তবে কখনো কখনো এই সিঁথির দিক পরিবর্তন চুলের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু সিঁথি পরিবর্তন করেই চেহারার আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা যায়। নিয়মিত যেদিকে সিঁথি করে অভ্যস্ত, তার উল্টো পাশে করলে তা চুলে অতিরিক্ত ভলিউম নিয়ে আসে। আবার দিনের পর দিন একই দিকে সিঁথি করলে ওই অংশে অনেক সময় চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। তাই সিঁথি পরিবর্তন করলে স্ক্যাল্পের ওপর চাপ কমে আসে। চুলের সিঁথি কিংবা চুল ভাগ করার স্থানের পরিবর্তন খুব সহজ মনে হলেও দেখতে সুন্দর দেখানোর এবং চেহারার সঙ্গে মানানসই করার জন্য চুলকে আগেভাগে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
সাধারণত চুল স্বাভাবিকভাবে যেদিকে পড়ে থাকে, সেদিকেই সিঁথি করতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন বেশির ভাগ মানুষ। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সব সময় একইভাবে চুল ভাগ করতে হবে। চুলকে পোষ মানানো সম্ভব; শুধু সঠিক পদ্ধতি খুঁজে বের করা চাই। সে ক্ষেত্রে কখনো পিছপা হওয়া যাবে না। নানান এক্সপেরিমেন্ট করতে করতেই বোঝা যাবে ঠিক কোন দিকে সিঁথি করলে চেহারায় সবচেয়ে মানানসই হবে। তবে সবার আগে বুঝতে হবে, স্বাভাবিকভাবে চুলে ঠিক কোন দিকে সিঁথি হয়। এটা বুঝতে শুরুতেই শুকনো চুল সবটুকু যেকোনো মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে ব্যাক ব্রাশ করে নিতে হবে। তারপরে মাথার ওপরের দিকের চুলগুলোকে হাত দিয়ে আলতো করে সামনের দিকে ঠেলে দেওয়া চাই। চুল ঠিক যেখানে দুভাগ হবে, সেখানেই স্বাভাবিক সিঁথি। খেয়াল রাখা চাই চুল যেন শুকনো থাকে। তবে কোন দিক থেকে চুল ভাগ করলে মানানসই হবে, সেটি মুখের আকৃতি, চুলের ধরন কিংবা টেক্সচার বিবেচনা করে ঠিক করে নেওয়া সম্ভব।
চুল যদি খুব ঘন হয় এবং অতিরিক্ত ভলিউম থাকে, তবে মাঝ বরাবর সিঁথি করাই বেশি উপযুক্ত হতে পারে। তবে ঘন ও ভলিউমযুক্ত চুলের ক্ষেত্রে হেয়ারস্টাইলিস্টদের পরামর্শ, সিঁথি খুব বেশি নিপাট করে না টানার। হালকা করে মাঝে সিঁথি করলে চুল খুব সুন্দরভাবে চেহারার দুপাশে পড়ে থাকবে, যা যেকোনো হেয়ারস্টাইলকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। আর যদি চুল পাতলা ধরনের হয়, তবে ডানে কিংবা বামে সিঁথি করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে পাতলা চুল তুলনামূলকভাবে ম্যানেজেবল হওয়ায় সিঁথি ডান থেকে বাম কিংবা বাম থেকে ডানে পাল্টে নেওয়া যায় কয়েক দিন পরপর। এতে চুলের ভলিউম গোড়া থেকে বাড়ে। এই সিঁথি যে শুধু সোজা লাইনে করতে হবে এমন নয়। চাইলে জিগজ্যাগ স্টাইলেও করা যেতে পারে। এতে স্ক্যাল্পের খুব বেশি অংশ দেখা যাবে না। সিঁথির অংশে চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যাও কমে আসবে।
হেয়ার পার্ট ঠিক করার ক্ষেত্রে চেহারার কাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফেস শেপ লম্বাটে কিংবা ওভাল হলে, আইব্রাও এর সবচেয়ে উঁচু জায়গা থেকে সমান্তরালভাবে সিঁথি টেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে কোনো কোনো হেয়ারস্টাইলিস্টের মতে, লম্বাটে কিংবা ওভাল আকৃতির চেহারার সঙ্গে মাথার যেকোনো পাশেই হেয়ার পার্টিং মানানসই। তাই চেহারার ধরন এমনটা হলে মাঝে কিংবা ডানে-বামে সিঁথি করা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা যেতে পারে যখন-তখন। চেহারার আকৃতি যদি হার্ট শেপড হয়, তবে মাঝে সিঁথি টেনে নেওয়া যেতে পারে। এতে চেহারা কিছুটা লম্বাটে দেখাবে। হেয়ারস্টাইলিংয়ের জন্য এ ক্ষেত্রে সামনের দিকের চুলে ছোট ছোট লেয়ার কেটে নেওয়া যায়। যদি এমন ফেস শেপে কেউ সাইড পার্ট করতে চান, সেটাও সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সামনে ব্যাঙস কেটে নিলে সহজে মানিয়ে যাবে মুখাবয়বে।
গোলাকৃতির চেহারার জন্য হেয়ারস্টাইলিস্টদের রয়েছে ভিন্নমত। কেউ কেউ বলেন, এ ধরনের শেপের জন্য মাঝে সিঁথি করাই সবচেয়ে উপযোগী; কেননা এটি গোলাকৃতির চেহারার সুন্দর গোল আকারটি ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলে। অন্যদিকে, আরেক দল স্টাইলিস্ট মনে করেন, এ ধরনের চেহারায় সাইড পার্ট বেশি মানানসই; কেননা এটি চেহারায় একটি ভার্টিক্যাল অ্যাঙ্গেল যোগ করে ফেসের আকারের ভারসাম্য তৈরি করে। তবে চারকোনা ফেসের ক্ষেত্রে সব হেয়ারস্টাইলিস্টই একমত, এ ধরনের চেহারায় যেকোনো একদিকে সিঁথিই মানানসই। হার্ট শেপড ফেসে সামনে ব্যাঙস কেটে নিলে খুব ভালো দেখায়।
এখন প্রশ্ন হলো, সিঁথি পরিবর্তনের আগে চুলকে কীভাবে প্রস্তুত করা হবে? চুলের সিঁথি বদলানো সহজ মনে হলেও সেটিকে স্থায়ী করা একটু ঝক্কির। হেয়ার পার্ট ঠিকঠাক না বসলে হেয়ারস্টাইলের তো বটেই, এমনকি পুরো স্টাইল স্টেটমেন্টের বারোটা বেজে যেতে পারে। চুলকে নতুন সিঁথিতে অভ্যস্ত করে নেওয়ার আগে হেয়ারস্টাইলিস্টের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। বর্তমান চুলের কাটের সঙ্গে সিঁথি পরিবর্তন মানাবে কি না, এ সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে এতে। চুল কালার করা থাকলে কনসালটেশন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জানতে হবে যে চুলের সিঁথি পাল্টানোর পর যে অংশ দেখা যাবে, সেখানে হেয়ার কালার ঠিকঠাক আছে কি না। যদি না থাকে, তবে আগেই হেয়ার কালার ঠিক করার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। চুলের কাট আর কালারের সব সমস্যা সমাধানের পর যখন চুল নতুন সিঁথির জন্য প্রস্তুত, তখন মেনে চলা যেতে পারে নিচের ধাপগুলো:
 শ্যাম্পু করার পরপরই চুল ভেজা থাকা অবস্থায় চুলে নতুন সিঁথি কেটে নিতে হবে।
 এবার ওই সিঁথি অনুযায়ী ব্লো ড্রাই করে নেওয়া চাই। ব্লো ড্রায়ার থেকে নির্গত তাপ চুলকে তার নতুন দিকে স্থির হতে সাহায্য করবে।
 সিঁথি পরিবর্তন করা নিয়ে মনস্থির করতে না পারলে এক দিনের জন্যই এই পরিবর্তনটি করে দেখা যেতে পারে। প্রথম দিনে চুল কোনোভাবেই সেট না হতে চাইলে উল্টো পাশের চুল ক্লিপ দিয়ে আটকে রাখা যেতে পারে। কিংবা নতুন সিঁথি করার পর সব চুল একসঙ্গে পেছনে টেনে নিয়ে নিচু করে একটি ঝুঁটি বানিয়ে রাখা যায়।
এই পুরো প্রক্রিয়ার সবচেয়ে মজার দিক হচ্ছে, এটি চিরস্থায়ী নয়। চাইলেই আবার সিঁথি পরিবর্তন করে নেওয়া যাবে। তবে চুলকে প্রস্তুত করে ফেলতে হবে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, যাতে চুল চেহারার ধরনের তুলনায় বেখাপ্পা না দেখায়।

 শিরীন অন্যা
মডেল: ফাবলিহা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top