skip to Main Content

দেহযতন I ফাংশনাল ফিটনেস

শরীরকে বাস্তব জীবনের কার্যকলাপের জন্য প্রস্তুত করার অনুশীলন। ফাংশনাল ট্রেনিং বা ফাংশনাল মুভমেন্ট নামেও পরিচিত

মায়ো ক্লিনিকের মতে, ফাংশনাল ফিটনেস পেশিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার প্রশিক্ষণ দেয় এবং বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা খেলাধুলায় আপনার করা সাধারণ নড়াচড়ার অনুকরণে দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রস্তুত করে। ব্যায়ামের রুটিনে কার্যকরী ফিটনেস একীভূত হলে স্কোয়াটিং, রিচিং, পুলিং ও লিফটিংয়ের মতো মুভমেন্ট আরও সহজ হয়ে ওঠে।
সার্টিফাইড ফিটনেস কোচ সাদিয়া শীলা বলেন, ‘এই মুভমেন্টগুলো পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা একটি দুর্দান্ত ব্যাপার হতে পারে। কেননা, এগুলো দৈনন্দিন জীবনে কার্যকারিতার উন্নতি ঘটায় এবং আঘাতের ঝুঁকি কমায়। প্রতিবার যখন আপনার শরীর এই নড়াচড়ার ধরনগুলোর সম্পাদনের জন্য পেশিগুলো সমন্বয় করে, আপনি স্নায়বিকভাবে নতুন ও ইতিবাচক হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকেন।’
ধরন-ধারণ
এবার চলুন, এই ফিটনেস এক্সপার্টের কাছ থেকে আরও গভীরভাবে প্রতিটি প্যাটার্ন নিয়ে কিছু জানার চেষ্টা করা যাক। জানা যাক দৈনন্দিন জীবনে এর ভূমিকা এবং এটি চর্চার জন্য সেরা অনুশীলনগুলোও।
স্কোয়াটস
স্কোয়াট হলো প্রথম মুভমেন্টের ধরন। স্কোয়াটে নিতম্ব ও হাঁটু একসঙ্গে বাঁকানো থাকে, ফলে শরীর নিচে নেমে আসে। এই শরীরচর্চায় সম্পৃক্ত প্রধান পেশিগুলোর মধ্যে রয়েছে কোয়াড্রিসেপস, হ্যামস্ট্রিংস, গ্লুটস, অ্যাডাক্টর ও কোর। গ্লুটসকে শক্তিশালী করতে এবং পাশের ও ঊরুর মেদ ঝরাতে ভূমিকা রাখে। স্কোয়াট অনুশীলন করলে বসা অবস্থান থেকে ওঠার ক্ষমতা উন্নত হয়। এ রকম কিছু স্কোয়াট এক্সারসাইজ হচ্ছে গবলেট স্কোয়াট, বক্স স্কোয়াট, ল্যান্ডমাইন গবলেট স্কোয়াট প্রভৃতি।
বেন্ড
বেন্ডিং বা বাঁকানো হলো শরীরের নিম্নাংশের দ্বিতীয় মুভমেন্ট। এতে হাঁটুর দৃঢ়তা অক্ষুণ্ন রেখে নিতম্বের দিকে নমনীয়তা বজায় রাখা এবং গ্লুটস, হ্যামস্ট্রিং ও কোর ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় বেন্ডিং এক্সারসাইজের নাম ডেডলিফট। দৈনন্দিন জীবনে যখনই মাটি থেকে কিছু তুলে নেন, তখন এমন মুভমেন্ট ব্যবহার করা হয়। এর অন্তর্গত উল্লেখযোগ্য ব্যায়াম হিপ থ্রাস্ট, বেন্ট নি গুড মর্নিং, রাশিয়ান কেটলবেল সুইং ইত্যাদি।
লাঞ্জ
শরীরের নিম্নস্তরের শেষ নির্দিষ্ট মুভমেন্টের ধরন। এটি স্কোয়াট ও বেন্ডের ক্ষেত্রে সাপোর্ট প্যাটার্ন, যার জন্য কোর ও পা—উভয়েরই সক্রিয় স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবনে সিঁড়ি বা পাহাড়ে ওঠার সময় আপনি লাঞ্জ ব্যবহার করেন। আদর্শ কিছু লাঞ্জ এক্সারসাইজের মধ্যে স্প্লিট স্কোয়াট, স্টেপ আপ, কেটলবেল ফ্রন্ট র‌্যাক স্প্লিট স্কোয়াট উল্লেখযোগ্য।
কোর
চতুর্থ ধরনটি হলো শরীরের কোরকে নিযুক্ত করা। কোর হলো পেশিগুলোর একটি জটিল সিরিজ, যাকে ব্যাপকভাবে ধড় (বাহুর নিচ থেকে পায়ের ওপর পর্যন্ত সবকিছু) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর প্রধান কাজ স্থির ও গতিশীল মুভমেন্টে মেরুদণ্ডকে স্থিতিশীল করা। বেশির ভাগ দৈনন্দিন কাজে কোরের ব্যবহার ঘটে। এটি নিজেকে স্থিতিশীল করার প্রধান উপায় এবং উঠোনের কাজ কিংবা চলাফেরা করার সময় ভারী বোঝা বহন করতে সাহায্য করে। ভালো কোর অনুশীলনের মধ্যে রয়েছে সাইড প্ল্যাঙ্ক, ফ্রন্ট প্ল্যাঙ্ক, ফারমার্স ক্যারি ইত্যাদি।
পুশ
শরীরের ওপরের অংশের প্রথম মুভমেন্টের ধরন পুশ। এটি এমন মুভমেন্ট, যেখানে হাতের ওপর ওজনকে কাজে লাগিয়ে শরীর ওপরে তোলা হয়। পুশ মুভমেন্ট ট্রাইসেপস, কাঁধ ও বুকের সঙ্গে জড়িত। দৈনন্দিন জীবনে পুশ দরজা খোলা অথবা ঝুঁকে (মুখ নিচু করে) দাঁড়ানো অবস্থায় ফিরে আসার সঙ্গে সাদৃশ্য। উল্লেখযোগ্য পুশ এক্সারসাইজের মধ্যে রয়েছে বেঞ্চ প্রেস, স্ট্যান্ডিং ডাম্বেল প্রেস, ল্যান্ডমাইন প্রেস প্রভৃতি।
পুল
শরীরের ঊর্ধ্বাংশের শেষ মুভমেন্ট এটি। পুল এমন এক মুভমেন্ট, যা কোনো বোঝা নিজের দিকে টেনে আনার মতো কাজে ব্যবহৃত হয়। পুল মুভমেন্ট ওপরের পিঠ ও বাইসেপসকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিবার যখন আপনি আবর্জনার ক্যান থেকে ব্যাগ বের করেন, তখন পুল প্যাটার্নের ব্যবহার ঘটে। পুল আপ, বেন্ট ওভার বারবেল রো, সিটেড ব্যান্ডেড রো প্রভৃতি এর অন্তর্গত।
সাইক্লিক্যাল
সারা শরীরের শেষ মুভমেন্টের ধরনটি সাইক্লিক্যাল। এ এমন এক মুভমেন্ট, যা চক্রাকারে ঘটে এবং আপনি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে এটি ব্যবহার করেন। এই প্যাটার্ন প্রশিক্ষণ নিলে বাকি জীবনে চলাফেরার সক্ষমতায় উপকার মেলে। সাইক্লিক্যাল এক্সারসাইজের মধ্যে রয়েছে এয়ারবাইক, রোয়িং ও সাইক্লিং।
অশেষ উপকারিতা
প্রাত্যহিক জীবনে শরীরকে আরও সুসংহত করার পাশাপাশি, ফাংশনাল ফিটনেসের অনেক সুবিধা রয়েছে। সুস্বাস্থ্য, দৈনন্দিন জীবনযাপন ও ক্রীড়া পারফরম্যান্সের জন্য উপকারিতা মেলে। সাদিয়া শীলা মূল পাঁচটি উপকারিতার আলোকপাত করেছেন।
জীবনযাত্রার উন্নয়ন
অরবিট ফিটনেস ডট কমের এক প্রবন্ধে শনাক্ত করা হয়েছে, ফাংশনাল ফিটনেস চর্চা শরীরের সামগ্রিক কার্যকারিতার উন্নয়ন, পেশিশক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং পেশি ও শরীরের স্থিতিশীলতা বিকাশের মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজকর্ম সহজে সম্পন্ন করতে কাজে দেয়। প্রচলিত প্রশিক্ষণের তুলনায় ফাংশনাল ফিটনেসের সুবিধা বেশি। কেননা, আমরা প্রতিদিন যেসব মুভমেন্ট করি, এটি সেগুলোর উন্নতি ঘটায়। এ ছাড়া স্ট্রেস রিলিফ ফ্যাক্টরের কারণে ফাংশনাল ফিটনেস সামগ্রিক জীবনমান উন্নত করে। দৈনন্দিন জীবনের কাজের সঙ্গে মিল থাকায় এ ধরনের দেহচর্চা সাধারণত অন্য ব্যায়ামের তুলনায় বেশি আনন্দদায়ক হয়।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
অরবিট ফিটনেসের একই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, নিয়মিত ফাংশনাল ফিটনেস অনুশীলনের মাধ্যমে শরীরে শুধু পেশি ও মূল শক্তি তৈরি হয় না; বরং প্রকৃতপক্ষে মস্তিষ্কের ব্যায়ামও চর্চা করা হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্কে স্মৃতিশক্তির বৃদ্ধি ঘটে।
গতিশীলতার বাড়বাড়ন্ত
ফাংশনাল ফিটনেস শরীরে ভারসাম্য, সমন্বয় ও নমনীয়তা তৈরির পাশাপাশি পেশিশক্তি এবং কাজের প্রতি তৎপরতার বিকাশে কাজে দেয়। এসব উপাদান আপনাকে আরও গতিশীল করে তুলবে, যা দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করবে।
ভারসাম্য ও ভঙ্গির উন্নতি
ফাংশনাল ফিটনেসের মূল উদ্দেশ্য যেহেতু লক্ষ্যবস্তুতে প্রশিক্ষণের পরিবর্তে পেশিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাই এতে সামগ্রিক শক্তি ও ভারসাম্যের উন্নতি ঘটে। ওজন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য পেশিগুলোকে প্রশিক্ষণ দিলে শরীরের ওপর চাপ কমে। ফলে ভঙ্গি উন্নত হয়।
আঘাতের ঝুঁকি হ্রাস
দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজ অনুকরণ করার মাধ্যমে এই দেহচর্চা শরীরে চাপ সহ্যের সক্ষমতা বাড়ায়। ফাংশনাল ফিটনেস আঘাতের ঝুঁকি বেশি থাকা পেশি ও লিগামেন্টের শক্তি বৃদ্ধি করে।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top