skip to Main Content

পাতে পরিমিতি I স্বাদে শীতলতা

গ্রীষ্মকাল এমনিতেই গরমের ঋতু। অতিরিক্ত গরম মানে পেটের নানাবিধ গন্ডগোল। এ ছাড়া ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালেন্স, ডিহাইড্রেশন, ঘামাচি, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগবালাই হতে দেখা যায় এ সময়ে। তাই থাকা চাই বাড়তি সতর্ক। রইল পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশির পরামর্শ

তীব্র গরমে শরীর যখন আর চলে না, তখন প্রয়োজন পড়ে এমন কিছু খাদ্য উপাদানের, যা দেহকে শীতল ও সুস্থ রাখতে সহায়ক। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে খাদ্যতালিকায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রাখতে পারেন—
দই
এই ডেজার্টে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, জিংক ও ফসফরাস। দই মিষ্টি ও টক—দুই স্বাদেই খাওয়া যায়। তবে গরমে প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে টক দই বেশি উপকারী। দইয়ে রয়েছে প্রোবায়োটিক। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়াগুলো হজম ভালো হতে সাহায্য করে, পেট ঠান্ডা রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া যাদের রক্তে বাড়তি কোলেস্টেরল রয়েছে, বিশেষ করে গরমের সময় তাদের বাড়তি ব্লাড প্রেশারে ভোগার শঙ্কা বেশি। শরীরকে শীতল রাখতে তাই প্রতিদিনই নিতে পারেন টক দইয়ের আইটেমের স্বাদ। পাতে রাখতে পারেন দইয়ের লাচ্ছি, রায়তা ইত্যাদি।
ডাবের পানি
গরমে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়। সেই সঙ্গে বেরিয়ে যায় প্রয়োজনীয় লবণ ও পানি। তাতে শারীরিক যে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি সবার আগে ঘটে, তা হলো ইলেকট্রোলাইটস। ডাবের পানি এর দারুণ উৎস। এতে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম হওয়ায় ওজন বাড়ার ঝুঁকি নেই; বরং পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা ভিটামিন মিনারেলস দেহকে সুস্থ রাখার পক্ষে যথেষ্ট। ১০০ মিলিলিটার ডাবের পানিতে রয়েছে মাত্র ১৮ ক্যালরি; অন্যদিকে ১০৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ২০৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ভিটামিন সি, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম। ডাবের পানি প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা হওয়ায় প্রচণ্ড গরমে শরীরের বাড়তি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক। এ ছাড়া রক্তে ইলেকট্রোলাইটসের সামঞ্জস্য রক্ষার মাধ্যমে ডিহাইড্রেশন থেকে সুরক্ষা দেয়।
শসা
গরমে শসা খেতে পারেন মধ্য সকালের নাশতা কিংবা বা বিকেলের স্যালাদ হিসেবে। শসার রয়েছে অনেক গুণ। পুরো শসাজুড়েই পানি, যা দেহকে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার।
পুদিনাপাতা
এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তসঞ্চালনের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়ক। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এ ছাড়া হজম ভালো রাখার পাশাপাশি শরীর শীতল রাখতে মিন্ট বা পুদিনাপাতার জুড়ি মেলা ভার!
লাউ
এই মৌসুমি সবজি যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর রয়েছে সহজে হজম হওয়ার ক্ষমতা। লাউয়ে রয়েছে ফোলেট, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন সি। প্রায় ৯৬ শতাংশ পানিসমৃদ্ধ এ সবজি নিয়মিত খেলে আমাদের শরীর থাকে হাইড্রেট। গরমে লাউ দিয়ে ঝটপট বানানো যেতে পারে কিছু দারুণ রেসিপি।
লাউয়ের স্যুপ
বিকেল বা রাতের হালকা নাশতা হিসেবে এটি চমৎকার। সেদ্ধ লাউ ব্লেন্ড করে পিউরি বানিয়ে নিন। তারপর পরিমাণমতো রসুন ও পেঁয়াজ যোগ করে, তেলের ফোড়ন দিলেই তৈরি এই হেলদি মেনু।
লাউ কারী
লাউ দিয়ে মাছ এমনকি মুরগির মাংস রান্না করে প্রোটিন ও ভিটামিন মিনারেলসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সহজে হজমের মাধ্যমে দেহকে সুস্থ ও শীতল রাখা সম্ভব।
দুধ-লাউ
গরমের সময় অনেকে দুধ হজম করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে তারা প্রোটিনের একটি বড় উৎস থেকে বঞ্চিত থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে এই রেসিপি হতে পারে এক দারুণ সমাধান। তবে বাড়তি ক্যালরির ঝামেলা এড়াতে এতে চিনি ব্যবহার না করাই উত্তম।
শরীর সুস্থ রাখতে পানির বিকল্প নেই। তবে শুধু পানি অনেক সময় খুব বেশি উপভোগের হয় না। তাই শরীর শীতল রাখার মতো কিছু পানীয় তৈরি করা যেতে পারে।
তরমুজ
গরমে বাজারে সহজলভ্য ফল হিসেবে পাওয়া যায় এটি। তরমুজ দিয়ে ঝটপট তৈরি করে নেওয়া সম্ভব দারুণ হাইড্রেটিং ড্রিংকস। বরফকুচি দিয়ে তৈরি করা তরমুজ-ইয়োগার্ট আর দারুচিনির সংমিশ্রণে তৈরি এনার্জি বুস্টার ওয়াটারমেলন ড্রিংস যেমন হেলদি, তেমনই তীব্র গরম থেকে বাসায় এসে এটি গ্রহণে পাওয়া যায় বেশ প্রশান্তি।
কাঁচা আম
গ্রীষ্মের শুরুতে প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আশীর্বাদ হিসেবে কাঁচা আম সহজলভ্য হয়ে ওঠে। এই দারুণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল দেহের তাপদাহ কমিয়ে শরীরকে শীতল রাখতে সহায়ক। এটি হজমক্ষমতার উন্নতি ঘটায়; পেট রাখে ঠান্ডা। ঘামের কারণে শরীর থেকে যে ভিটামিন মিনারেলস বেরিয়ে যায়, কাঁচা আম তা পূরণে যথেষ্ট সহায়ক।
আখ
অনেকের প্রিয়। পুষ্টিগুণও দারুণ। গরমে সুস্থ থাকতে খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন সুগার ক্যান জুস। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রনের মতো প্রয়োজনীয় মিনারেল রয়েছে আখের রসে। এটি শরীরকে হাইড্রেট রাখে, ক্লান্তি দূর করে এনার্জি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
লেবু
গরমের সময় হাইড্রেশন অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় খাবারের পাশাপাশি পানিশূন্যতা দেখা দিলে শরীরে ভর করে ক্লান্তি। সে ক্ষেত্রে লেমোনেড অনেকটাই ডিহাইড্রেশন দূর করে, শরীরকে করে ডিটক্সিফাই। লেবুর রস, আদাকুচি ও বরফকুচি মিক্স করে সহজে বানানো সম্ভব এই ডিটক্সিফাই হাইড্রেটিং ওয়াটার। এতে কিছু মিন্ট জুড়ে দিলে ফ্লেভার আর নিউট্রিয়েন্টে ভরপুর এই লেমোনেড শরীরকে রাখবে দারুণ শীতল।
গরম বাড়লে অনেকের পেটে গোলমাল দেখা দেয়। ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ভালো রাখা সে ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। তাই সুস্থ থাকতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম।
ভাজাপোড়া
অতিরিক্ত তেলে ভাজাপোড়া খাবার কখনোই স্বাস্থ্যকর নয়। এমন খাবার রক্তচাপের পাশাপাশি লিভারেও চাপ বাড়াতে পারে। তাই ভাজাপোড়া খাবার একেবারে ছেড়ে দিতে না পারলে, অন্তত কম খাওয়া শ্রেয়।
অতিরিক্ত ঝাল-মসলা
আমাদের খাদ্যসংস্কৃতির একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে মুখরোচক ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার। তবে গরমের দিনগুলোতে এ ধরনের খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া কিংবা কম গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে মঙ্গল।
লবণের বাড়াবাড়ি
বাড়তি লবণ কখনোই স্বাস্থ্যকর নয়। লবণে থাকা সোডিয়াম ক্লোরাইড রক্তে চাপ বাড়ায়। দেহে অতিরিক্ত পানি জমিয়ে হার্ট, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
চর্বিচর্বণ
প্রচণ্ড গরমে অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্য বাদ দেওয়া উত্তম। খাদ্যতালিকায় রেড মিট বা রেড অরগান না রাখাই শ্রেয়। কেননা, গরমে দেহের হজমপ্রক্রিয়া একটু কম হয় এবং চর্বিজাতীয় খাবারের অতিরিক্ত ফ্যাটগুলো দেহে বাড়তি তাপ উৎপন্ন করতে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top