skip to Main Content

ফিচার I মিটলেস মিট

উদ্ভিদ থেকে মৎস্যজাত খাবার পাওয়া একসময় অকল্পনীয় ছিল। মাংসের স্বাদ, টেক্সচার, আকার ও প্রোটিন গ্রহণের অনুকরণ করার ধারণাকে অসম্ভব মনে হতো। খাদ্যশিল্পে প্রযুক্তিগত বিকাশের ফলে তা এখন বাস্তব

মিটলেস মিট কী? সহজভাবে বললে, মাংসের উদ্ভিদভিত্তিক বিকল্প। আমাদের কেন মিটলেস মিট প্রয়োজন? এর নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। তবে টেকসই খাবারের চাহিদা এবং মাংসশিল্পের বৈশ্বিক প্রভাব এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
নেপথ্যে দায়
চলুন, মাংসশিল্পের পরিবেশগত প্রভাবগুলো একটু খতিয়ে দেখা যাক।
মিথেন গ্যাস নির্গমন
গবাদিপশু থেকে মিথেন গ্যাসের প্রকৃত নির্গমন নিয়ে সবকালেই নানা গবেষণা হয়েছে। মিথেন একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। একটি গরু প্রতিদিন প্রায় ১৫০ গ্যালন মিথেন গ্যাস তৈরি করে। মিথেন যখন বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়, তখন তা কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
ভূমি ও পানিদূষণ
পৃথিবীর প্রায় ৩০ শতাংশ ভূমি গবাদিপশু পালনে ব্যবহৃত হয়। আর এক কেজি গরুর মাংস উৎপাদনে প্রায় ১৫ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন পড়ে। ভূমি, পানি ও খাবারের অভাব প্রতিবছর আরও বাড়ছে। ফলে এই সম্পদগুলোর এই বিরাট অপব্যবহার যতটা এড়ানো সম্ভব, ততই মঙ্গল।
বনভূমি উচ্ছেদ
আমাজন বনভূমি উজাড় করার পেছনে মাংসশিল্প একটি আংশিক কারণ। আমাজনের মূল ভূমি ব্রাজিল গরুর মাংস রপ্তানিতে অন্যতম বড় দেশ। দেশটির অর্থনীতি মাংসশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। সেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ ভূমির উচ্ছেদ ঘটে গরুর মাংসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে।
সমুদ্রবিনাশ
মহাসাগরের মৃত অঞ্চলগুলোর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে মাংসশিল্পকে বিবেচনা করা হয়। মানুষের তুলনায় গবাদিপশু প্রায় ১৩০ গুণ বেশি বর্জ্য উৎপন্ন করে। এসব বর্জ্য সাধারণত সমুদ্রে ফেলা হয়, যা সামুদ্রিক জীবন ধ্বংস করে এবং পানিতে অক্সিজেনের অভাব ঘটিয়ে মৃত অঞ্চল তৈরি করে।
চিত্র-বিচিত্র
বিশেষজ্ঞদের মতে পরিবেশে ভারসাম্য টিকিয়ে রাখার জন্যই মাংসের বিকল্প নিয়ে ভাবা জরুরি; আর তাই মিটলেস ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে।
মাংসমুক্ত মাংস বাজার: সময়রেখা
গ্লোবাল উদ্ভিদভিত্তিক (মাংসমুক্ত) মাংস বাজার একটি উচ্চ সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এটি ২০১৭ থেকে ২০২৫ সালের পূর্বাভাসকালীন ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হারে (CAGR) বেড়ে চলতি বছরের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে।

মাংসবিহীন বা উদ্ভিদভিত্তিক প্রযুক্তি
একটি নিরামিষ বার্গার তৈরি করতে প্রয়োজন পড়ে মাংসবিহীন প্যাটি। সবজির বিকল্প হিসেবে এর উদ্ভাবন ঘটে ১৯০১ সালে। আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ফুড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি কেলগের (বর্তমান নাম কেলানোভা) প্রতিষ্ঠাতা জন হার্ভি কেলগ একটি মাংসবিহীন বিকল্প তৈরি করেন, যার নাম ছিল প্রোটোজ। তার পেটেন্টে উল্লেখ আছে, মূলত চিনাবাদাম ও গমের গ্লুটেন মিশ্রণ থেকে তৈরি ওই উদ্ভাবন কীভাবে মাংসের মতো বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। মাংসবিহীন মাংস প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য হলো এমন একটি সমাধান তৈরি করা, যা প্রাণিজ প্রোটিনের পরিবর্তে উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিন ব্যবহার করে এবং বাজারে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়। এই প্রযুক্তি এমন খাদ্যপণ্য তৈরির দিকে মনোযোগ দেয়, যেগুলো মাংসের স্বাদ, গঠন ও প্রোটিন উৎসের অনুরূপ। এ ধরনের উদ্ভাবন বহু বছরের গবেষণা ও পরীক্ষার ফল। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মাংসবিহীন ব্র্যান্ড উদ্ভিদভিত্তিক উপাদান যেমন সয়াবিন, বিটরুট ও মটরশুঁটির প্রোটিন ব্যবহার করে মাংসের বিকল্প তৈরি করেছে।
মাংসবিহীন মাংস
মিটলেস মিট অথবা মাংসের বিকল্প হিসেবে ইতিমধ্যে বেশ কিছু খাবারের চল রয়েছে।
ইমপসিবল ফুডস বার্গার
মাংসবিহীন মাংসের কথা বললে ভেগান মাংসের বিকল্প বিখ্যাত ইমপসিবল বার্গারের নাম চলে আসে। এই ভেগান বার্গারের উপাদান মাংসের মতো গুণাবলি ও গরুর মাংসের মতো বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত, যা থেকে আসল মাংসের মতো রক্তও ঝরে! বলা হয়ে থাকে, এটি হিমোগ্লোবিন নামক একটি প্রোটিন অণু যোগ করে এই রক্ত ঝরানোর মতো বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে।
বিয়ন্ড বার্গার
মাংসবিহীন প্যাটিতে রক্তের মতো গুণ বা সাদৃশ্য তৈরি করতে বিট রুট ব্যবহার করা হয়। এটি সয়া ও গ্লুটেন-মুক্ত, যা বাজারে বিদ্যমান অন্যান্য পণ্যের মধ্যে একটি বিরল সংমিশ্রণ।
ফিল্ড রোস্ট ও ফিল্ড বার্গার
হাতে গড়া এবং বার্লি, সেলারি ও সতেজ গাজর দিয়ে তৈরি এই জুসি, উদ্ভিদভিত্তিক বার্গার যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও তাদের ভক্তদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
মিটলেস মিট ইন্ডাস্ট্রির সুবিধা
উদ্দেশ্য-বিধেয়
মিটলেস মিট ইন্ডাস্ট্রির মূল উদ্দেশ্য, আরও ভালোভাবে খাদ্য সরবরাহ করার উপায় খোঁজা। এটি প্রোটিনভিত্তিক উৎপাদন চেইন থেকে পশুর চাহিদা কমিয়ে, মূলত এই ইন্ডাস্ট্রির ওপর আলোকপাত এবং পরিবেশগত বিষয়গুলো শক্তিশালীভাবে সমাধান করে। এটি মাংস উৎপাদনের কারণে ছড়িয়ে পড়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক্ষমতা মোকাবিলা করে মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতেও সহায়ক।
বিকল্পের ভবিষ্যৎ
মাংসশিল্পের বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা যেহেতু বাড়ছে, তাই অনেকে উদ্ভিদভিত্তিক ডায়েটে অভ্যস্ত হচ্ছেন। ফলে প্ল্যান্ট-বেজড প্রোটিনের বাজারের দ্রুত বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ ঘটছে। আর তা মিটলেস মিট প্রযুক্তির ভবিষ্যৎকে করছে শক্তিশালী।
ভবিষ্যতের খাদ্য উদ্ভাবনগুলো শুধু সয়া ও গম প্রোটিনের বাইরেও খাদ্য বিকল্প খুঁজে পায় কি না, তা দেখা হবে বেশ ইন্টারেস্টিং।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top