এই শহর এই সময় I চিত্রে-চলচ্চিত্রে
কালেভদ্রে বৃষ্টির ঝলক মিললেও প্রচণ্ড গরমের দাপট ছিল মে মাসজুড়ে। তাতে রাজধানীবাসী বেশ নাকাল হয়েছে। তবে তাদের মনে প্রশান্তি এনে দিতে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনগুলোতে ছিল বেশ কিছু আয়োজনের পসরা।

ক্রমশ
দৃশ্যশিল্প যাদের চিন্তার খোরাক জোগায়, তাদের জন্য ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে ছিল ‘ক্রমশ’। মুনেম ওয়াসিফের একক দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনী। আগের মাসের মাঝামাঝি, অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল শুরু হয়ে এ প্রদর্শনী চলেছে মে মাসের শেষ দিন অবধি। আলোকচিত্র, ফিল্ম ও ভাস্কর্যের মিশ্র মাধ্যমে সাজানো প্রদর্শনীতে পুরান ঢাকার জটিল রূপান্তরের বাস্তবতা উঠে এসেছে। এই প্রদর্শনী সম্পর্কে কিউরেটরিয়াল নোটে তানজিম ওয়াহাব বলেন, ‘এর শুরু আলোকচিত্রশিল্পী মুনেম ওয়াসিফের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে; কিন্তু এটি প্রচলিত অর্থে কোনো খেরোখাতা বা ডায়েরিস্টিক কাজ নয়। ছবিগুলো অতীত থেকে ভবিষ্যতের দিকে বিস্তৃত নানা মুহূর্তের এক বিশাল সমাহার—কিছু রেকর্ডেড মুহূর্ত, কিছু আয়োজন করে তোলা, আর কিছু সম্পূর্ণ কল্পনার খোরাক। পুরান ঢাকার প্রচলিত গল্প, আমাদের চেনা সরু গলির প্রাণবন্ত মহল্লা-সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, বিলুপ্তপ্রায় প্রাচীন স্থাপত্য ও ঐতিহ্য, যা ঢাকার সবচেয়ে বেশি ক্যামেরাবন্দি হওয়া ছবি। আমাদের দেখা গল্পগুলো মূলত দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত—একদিকে দ্রুত পরিবর্তনের চাপ, অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাড়া-মহল্লার ব্যস্ত জীবনপ্রবাহ; অন্যদিকে অতীতের স্মৃতিকাতর রেশ, কল্পলোকে মন্থর এক সময়।’ এই প্রদর্শনী একই সঙ্গে সাধারণ দর্শক ও বোদ্ধাদের গভীর ভাবনায় বুঁদ করেছে।

সিনে সন্ধ্যা
‘দেব্রিস’ (বা ‘ধ্বংসাবশেষ’)। বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদের একক চিত্র প্রদর্শনী। ১৭ থেকে ৩১ মে, অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে। এতে শিল্পীর সাম্প্রতিক শিল্প-অনুসন্ধান ফুটিয়ে তোলা, অ্যাক্রিলিক মাধ্যমের প্রায় ৩০টি চিত্রকর্ম স্থান পায়। বলে রাখা ভালো, শিল্পী কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়া, রাশিয়া, কাশ্মীর ও মিয়ানমারের মতো অঞ্চলে মানবসৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী হয়েছেন। ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের লোভে পরিচালিত এসব মানবিক বিপর্যয় তার দৃষ্টিভঙ্গিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। কয়েক দশক ধরে, এই অভিজ্ঞতাগুলো তার শৈল্পিক যাত্রায় একটি স্থায়ী ছাপ ফেলেছে, যা তার কাজের বিষয়বস্তু ও চিত্রকর্মে প্রকাশিত আবেগকে করেছে প্রভাবিত। প্রদর্শনীটি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক মন্তব্যে শিল্প সমালোচক মুস্তাফা জামান উল্লেখ করেন, ‘বাস্তব ও আবেগিক ধ্বংসাবশেষ: সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়া গাজা শহর, কাশ্মীরের মানুষের চলমান দুর্ভোগ কিংবা চট্টগ্রামের ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জীবনের হতাশা—সবকিছুই আমাদের মানসপটকে আলোড়িত করে। ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের ব্যর্থতার ইতিহাসও পেছনে ফেলা কঠিন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বপ্ন যেন চিরকালই এক মরীচিকা। দমনমূলক শাসনের পতন আমাদের একটি নতুন ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে উদ্বুদ্ধ করলেও বাস্তবে যেন সবকিছু ভেঙে পড়ে আছে এবং আমরা কেবল আবেগিক ধ্বংসাবশেষই আঁকড়ে আছি। আমি এমন এক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে আমাদের সামষ্টিক স্বপ্নের কাঠামো ভেঙে পড়েছে—এ কারণেই প্রদর্শনীটির নাম “দেব্রিস”।’

দেব্রিস
ধানমন্ডির ৯ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত জার্মান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গ্যেটে ইনস্টিটিউটের আয়োজনে, ১৮ মে সেখানে আয়োজিত হয়ে গেল ‘সিনে সন্ধ্যা’। বিশেষ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। তাতে বাংলাদেশি ফিল্মমেকার গোলাম রাব্বানীর দুটি শর্টফিল্ম ‘ছুরত’ ও ‘আনটাং’ এবং জার্মান নির্মাতা অনিকা ডেকারের ‘লিভসডিংস’ চলচ্চিত্রটি দেখার সুযোগ পান দর্শকেরা। মানুষের বহুরূপী সত্তার গল্প নিয়ে ২০২৩ সালে নির্মিত হয় ‘ছুরত’। আর গেল বছরের শুরুর দিকে নির্মিত ‘আনটাং’ কথা বলে বাক্স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার নিয়ে। এই দুই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন মিজানুর রহমান, নওশাবা আহমেদ, প্রসূন আজাদ, চন্দনা বিশ্বাস, জয়নাল আবেদীন, মানিক সাহা প্রমুখ। এর আগে ভেনিস ইন্টারকালচার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, বুদাপেস্ট চলচ্চিত্র উৎসব ও ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবি দুটি অনারেবল মেনশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ