skip to Main Content

ফিচার I মাংসের বরফ ছাড়ানোর মন্ত্র

কোরবানির গরুর মাংস আত্মীয়স্বজনকে দেওয়ার পরও অনেকটা থেকে যায়। সেগুলো সংরক্ষণের অবলম্বন হয়ে ওঠে ফ্রিজ। তবে এই যন্ত্রে হিমায়িত মাংসকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা ঠিক নয়। কেননা, বরফ জমা মাংস ঠিকমতো স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনতে না পারলে সেটিই হতে পারে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ। তাই ফ্রিজে মাংস তোলার আগে ও পরে চাই বিশেষ সতর্কতা

ফ্রিজে জমানো মাংস রান্নার উপযোগী করার পদ্ধতি খুব একটা সাদামাটা নয়। কাজটি সঠিকভাবে সারতে না পারলে নষ্ট হতে পারে মাংসের স্বাদ। ঘটে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও। ফলে এ বিষয়ে কোনো ছাড় নয়।
দীর্ঘ সময় ফ্রিজে মাংস রাখলে বরফের মতো শক্ত হয়ে যায়। সেটিকে ঘরের তাপমাত্রায় আনতে ফ্রিজের বাইরে অনেকক্ষণ রেখে দেন রাঁধুনিরা। তবে এটি সঠিক পদ্ধতি নয়। কেননা, এতে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জানিয়েছে, বরফ গলানোর জন্য ওভাবে ফেলে রাখলে কাঁচা মাংসে দ্রুত ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি উচ্চ তাপে রাঁধলেও ওই জীবাণুর পুরোপুরি বিনাশ ঘটে না।
আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মাংসের উপরিভাগের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে উঠলে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বাড়ে। মার্কিন দ্য সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, ফ্রিজ থেকে বের করে মাংসের বরফ গলার জন্য ফেলে রাখলে সালমোনেলা ও ই-কোলাইয়ের মতো ব্যাকটেরিয়া ২০ মিনিটে দ্বিগুণ গতিতে বিস্তার হয়। অন্যদিকে মাংসের বড় টুকরার ওপরের স্তরের ঠান্ডা দ্রুত কমলেও ভেতরের অংশে তখনো বরফ জমাট বেঁধে থাকে। তা রান্না করতে গেলে স্বাদে হেরফের ঘটে।
১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে বরফ জমা মাংস গলাতে চাইলে তা পানিতে ডুবিয়ে রাখাই ভালো। সে ক্ষেত্রে একটি বড় পাত্রে পর্যাপ্ত পানি নেওয়া চাই, যাতে মাংস পুরোপুরি ডুবে যায়। তাতে এক টেবিল চামচ লবণ যোগ করা চাই। সঙ্গে পাঁচ-ছয় চামচ সাদা ভিনেগার। এরপর মাংসগুলো একটি পলিথিন বা জিপলক ব্যাগে রেখে পানিতে ডুবিয়ে ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা চাই, যেন মাংস পানির ওপরে ভেসে না ওঠে। এভাবে রাখলে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই মাংসের বরফ গলে যাবে। মাংসও হবে নরম।
তবে কিছু আগাম সতর্কতা মেনে চলা ভালো। যেমন রান্নার আগের রাতেই ডিপ ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে ফ্রিজারে রাখা উত্তম। কেননা ফ্রিজারে ঠান্ডা কম। এতে ডিপে রাখার ফলে জমা বরফ গলবে। তা ছাড়া মাংসের বাইরের অংশের তাপমাত্রা এতটা কমে যাবে না, যে তাপে ব্যাকটেরিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। ফ্রিজে দুটি অংশ থাকে। একটি ডিপ, অন্যটি রেফ্রিজারেটর। রেফ্রিজারেটরে তাপমাত্রা থাকে কম। তবে তা কিন্তু শূন্য ডিগ্রি নয়। ফলে এখানে রাখা মাংসে বরফ জমে না।
ফ্রিজের ভেতরে বরফ গলাতে না চাইলেও উপায় রয়েছে। মাংস জিপ লক প্যাকেটে ভরে বেশ কিছুক্ষণ ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে হুট করে মাংসের উপরিভাগ তাপ হারাবে না। ধীরে ধীরে পুরো মাংসই ঘরের তাপমাত্রায় আসবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে যে প্যাকেটে মাংস ছিল, সেটি সহকারেই নতুন প্যাকেটের ভেতর নেওয়া চাই। এরপর ভেতরের বাতাস যতটা সম্ভব বের করে দেওয়া উত্তম। তবে প্রতি ৩০ মিনিট পরপর পানি পাল্টাতে হবে।
স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করেও মাংস রান্নার উপযোগী করার পদ্ধতি রয়েছে। তবে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা। যদিও এ ব্যবস্থায় কিছুটা সতর্কতা প্রয়োজন। গলানোর পরপরই এই মাংস রান্না করা ভালো। নয়তো স্বাদ পরিবর্তন হওয়ার শঙ্কা থাকে। হতে পারে ইনফেকশনও।
অনেকে অবশ্য মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ডিফ্রস্ট সেটিং চালু করে মাংসের বরফ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা কাটিয়ে নেন। এটি ব্যবহার করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই বরফ গলিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা সম্ভব। এর জন্য পরিমাণমতো মাংস ওভেন উপযোগী পাত্রে নিয়ে ভেতরে রাখা চাই। মাঝেমধ্যে মাইক্রোওয়েভ থামিয়ে মাংস পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি কোনো দিক বেশি গরম হয়ে যায়, তাহলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা শ্রেয়। এভাবে অল্প সময়ের মধ্যে রান্নার উপযোগী মাংস পাওয়া যাবে। তবে তা দ্রুত রান্না করা চাই। অন্যথায় মাংসের স্বাদ ও গুণ—উভয়ই নষ্ট হতে পারে। মনে রাখা ভালো, মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে রান্নার উপযোগী করা মাংস রান্না না করে আবার ফ্রিজে রাখা ঠিক নয়।
আগাম সতর্কতার মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো, কাঁচা কিংবা রান্না মাংস সংরক্ষণের বেলায় তাতে যেন বাতাস ঢুকতে না পারে, এমন বাক্সে ভরে ফ্রিজে রাখা ভালো। বায়ুরোধী বাক্সে ভরে কাঁচা মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে দীর্ঘদিন ভালো থাকার সম্ভাবনা বাড়ে।
অনেকে মাছ ও মাংস একসঙ্গে ফ্রিজে রাখেন। এটি না করাই উত্তম। এভাবে রাখলে মাংসের পুষ্টিমান কমে যেতে পারে। যে মাংস ফ্রিজে রাখা হবে, তা আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া চাই।
অনেক মাংস একসঙ্গে প্যাকেট করে ফ্রিজে রাখা ভালো নয়। অল্প অল্প করে ভাগ করে রাখলে তা ভালো থাকবে। একবার ফ্রিজ থেকে বের মাংস বরফ গলানোর পর আবার ফ্রিজে তোলা মোটেই উচিত নয়। এতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। যদি ফ্রিজে রাখতে হয়, তবে রান্না করে রাখা চাই।
অনেকে এক বছর পর্যন্ত মাংস ডিপ ফ্রিজে রেখে দেন, যা একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কারণ, প্রোটিনজাতীয় খাবার ফ্রিজে রাখলে তাতে দ্রুত ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমিত হয়। পুষ্টিগুণও নষ্ট হয়ে যায়। খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রেফ্রিজারেটরে কাঁচা মাংস চার মাস থেকে এক বছর, মাংসের চপ চার থেকে ছয় মাস, রোস্ট কিংবা তেলে ভাজা মাংস চার থেকে বারো মাস এবং সসেজ এক থেকে দুই মাস ভালো থাকে।
অন্যদিকে মাংসের তরকারি খুব বেশি সময় ধরে ফ্রিজে রাখা সম্ভব নয়। রান্না করা গরু, ছাগল কিংবা ভেড়ার মাংস দুই থেকে তিন মাস ফ্রিজে ভালো থাকে। এসব বিষয় মাথায় রেখে ফ্রিজে মাংস রাখলে কোরবানির ঈদ হবে স্বাস্থ্যসম্মত।

 আহমেদ সজিব
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top