skip to Main Content

ফিচার I ওয়াগিউ বনাম অ্যাঙ্গাস

ওয়াগিউ ও অ্যাঙ্গাস। বিশ্বের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দুটি গরুর জাত। উভয় জাতের মাংস সুস্বাদু হলেও উৎপত্তি, প্রজনন পদ্ধতি, স্বাদ ও রান্নার প্রয়োগে রয়েছে উল্লেখযোগ্য ফারাক

ওয়াগিউ
ওয়াগিউ শব্দের অর্থ জাপানি গরু। জাপানি ব্ল্যাক, জাপানি ব্রাউন, জাপানি পোল্ড ও জাপানি শর্টহর্ন—এগুলো জাপানের চারটি প্রধান গরুর প্রজাতি; বিশেষ করে জাপানি ব্ল্যাক প্রজাতির তাজিমা স্ট্রেনটি তার অসাধারণ মার্বেলিংয়ের জন্য বিখ্যাত এবং এটি প্রিমিয়াম ওয়াগিউ গরুর মাংসের প্রধান উৎস।
ওয়াগিউ গরুর প্রজননপ্রক্রিয়া বেশ সূক্ষ্ম। খামারিরা এ জাতের গরুগুলোকে নিয়ন্ত্রিত আহার, সীমিত শারীরিক কসরত এবং চাপ কমানোর মতো ঐতিহ্যবাহী কৌশলের প্রয়োগ করে পেশির চর্বি বৃদ্ধি নিশ্চিত করেন। বিশেষ পানীয় পান করানো এবং শরীর মালিশের মতো প্রথাগুলো ঐতিহাসিকভাবে ব্যবহৃত হলেও আধুনিক পদ্ধতিতে মাংসের গুণমান উন্নত করতে গরুর জন্য সুষম খাদ্য এবং শান্ত পরিবেশ প্রদান নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ওয়াগিউ

অ্যাঙ্গাস
অ্যাঙ্গাস গরুর মূল উৎপত্তিস্থল স্কটল্যান্ড। এ জাতের গরুর লোমের রং গাঢ় কালো অথবা লাল। প্রাকৃতিকভাবে শিংহীন (হর্নলেস) মাথার জন্য পরিচিত। বিশেষ করে আবারডিন অ্যাঙ্গাস প্রজাতিটি তার উচ্চমানের মাংসের জন্য মূল্যায়িত, যা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হয়।
অ্যাঙ্গাস গরু বিভিন্ন আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতার জন্যও পরিচিত। এগুলোকে সাধারণত চারণভূমিভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় পালন করা হয়; কিছু কিছু গরুকে শস্য খাওয়ানোর মাধ্যমে মাংসে মার্বেলিংয়ের উন্নতি ঘটানোর চল রয়েছে। কোমল ও সুস্বাদু মাংস উৎপাদনের ক্ষমতা এই প্রজাতির গরুকে উৎপাদক ও ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

অ্যাঙ্গাস

মার্বেলিং ও টেক্সচার
ওয়াগিউ গরুর মাংসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর গভীর মার্বেলিং। এর মাংসে থাকা অন্তঃপেশি চর্বি নিম্ন তাপমাত্রায় গলে যায়। ফলে এটি একটি সমৃদ্ধ, মাখনসদৃশ টেক্সচার তৈরি করে, যা প্রায়শই ‘মুখে গলে যাওয়া’র অনুভূতি দেয়। এই উচ্চ মার্বেলিং স্তর গরুর মাংসের কোমলতা ও স্বতন্ত্র স্বাদে অবদান রাখে।
অন্যদিকে, অ্যাঙ্গাস গরুর মাংসে মার্বেলিং সাধারণত ওয়াগিউর তুলনায় কম মাত্রায় থাকে। এই মাংস কোমলতার জন্য পরিচিত, যা গরুর মাংসের তীব্র স্বাদ জাহির করে। যদিও ওয়াগিউর মতো ‘মুখে গলে যাওয়া’র অনুভূতি মেলে না; তবে অ্যাঙ্গাস গরুর মাংস নিশ্চিতভাবেই সন্তোষজনক ও হৃদয়গ্রাহী স্বাদের অভিজ্ঞতা দেয়।
স্বাদ সমাচার
ওয়াগিউ গরুর মাংসের স্বাদ সমৃদ্ধ এবং উমামি-প্রবণ। চর্বিতে উচ্চ মাত্রার অলিক অ্যাসিডের (ফ্যাটি অ্যাসিডবিশেষ) কারণে এর স্বাদ সূক্ষ্ম মিষ্টি। এর অনন্য মার্বেলিং কেবল টেক্সচারকেই প্রভাবিত করে না; বরং গরুর মাংসের স্বাদের গভীরতা ও জটিলতা বাড়িয়ে তুলে প্রতিটি বাইটকে বিলাসবহুল অভিজ্ঞতায় পরিণত করে।
অপরদিকে, অ্যাঙ্গাস গরুর মাংস স্বাদের জন্য প্রসিদ্ধ। মাংসের প্রাকৃতিক মার্বেলিং এর রসাল ও কোমলতায় অবদান রাখে, যা ঐতিহ্যবাহী গরুর মাংসপ্রেমীদের মুখে সন্তোষজনক স্বাদ এনে দেয়। ওয়াগিউর মতো না হলেও অ্যাঙ্গাস গরুর মাংস একটি ক্ল্যাসিক ও হৃদয়গ্রাহী টেস্ট প্রোফাইল অফার করে।
মূল্য ও প্রাপ্যতা
ওয়াগিউ গরুর মাংস, বিশেষ করে জাপানি এ-ফাইভ গ্রেডের আসল ওয়াগিউ, বিশ্বের সবচেয়ে দামি মাংসের অন্যতম। গ্রেড ও উৎসের ওপর নির্ভর করে এ মাংসের দাম পাউন্ডপ্রতি ১২০ থেকে ৩০০ মার্কিন ডলার (কেজিপ্রতি ৩২ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা) পর্যন্ত হতে পারে। দুষ্প্রাপ্যতা ও নিবিড় প্রজননপ্রক্রিয়ার কারণে ওয়াগিউ গরুর মাংস সাধারণত উচ্চমানের রেস্টুরেন্ট এবং বিশেষ দোকানে পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, অ্যাঙ্গাস গরুর মাংস বেশ সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী; যার দাম সাধারণত পাউন্ডপ্রতি ২ থেকে ৪ মার্কিন ডলার (কেজিপ্রতি ৫৩৫ থেকে ১০৬৬ টাকা)। সুপারমার্কেট ও রেস্টুরেন্টে ব্যাপক উপস্থিতি এ মাংসকে প্রাত্যহিক খাবার এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য জনপ্রিয় করে তোলে।
রন্ধনকৌশল
সহজ রন্ধনপ্রণালিতেই ওয়াগিউ গরুর মাংসের অনন্য গুণাবলির স্বাদ সবচেয়ে ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। এই মাংস দিয়ে রিবাই বা স্যারলয়েনের মতো পাতলা করে কাটা স্টেক বানালে এর কোমলতা বজায় থাকে। এর সমৃদ্ধ চর্বির পরিমাণ ওয়াগিউ গরুর মাংসকে সুশি, ইয়াকিনিকু (জাপানি বারবিকিউ) এবং স্টেক টারটারের মতো খাবারের জন্য আদর্শ করে তোলে, যেখানে এর স্বাদ বাড়তি মসলার প্রয়োজন ছাড়াই উপভোগ করা সম্ভব।
অন্যদিকে, অ্যাঙ্গাস গরুর মাংসের বহুমুখিতা একে বিভিন্ন ধরনের খাবারের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। ক্ল্যাসিক স্টেক, যেমন টি-বোন ও পোর্টারহাউস থেকে শুরু করে বার্গার, মিটবলসের জন্য গ্রাউন্ড বিফসহ বিভিন্ন রন্ধনপ্রণালিতে অ্যাঙ্গাস গরুর মাংস স্থান করে নিয়েছে। এর মজবুত স্বাদ তীব্র মসলা এবং রান্নার পদ্ধতির সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যায়, যা একে অনেক রন্ধনশৈলীতে একটি মৌলিক উপাদান করে তুলেছে।
ওয়াগিউ ও অ্যাঙ্গাস গরুর মাংস—উভয়ই অনন্য এবং ব্যতিক্রমী খাদ্য অভিজ্ঞতা দেয়। ওয়াগিউ অতুলনীয় মার্বেলিং এবং বিলাসবহুল টেক্সচারসমৃদ্ধ। এটি বিলাসবহুল খাবারের সন্ধানকারীদের জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে, অ্যাঙ্গাস একটি হৃদয়গ্রাহী, সুস্বাদু বিকল্প দেয়, যা আরও সহজলভ্য ও বহুমুখী। উভয়ের মধ্যে কোনটি বেশি পছন্দ, তা শেষ পর্যন্ত ব্যক্তি, উপলক্ষ ও বাজেটের ওপর নির্ভর করে। ওয়াগিউর মুখে গলে যাওয়ার মতো কোমলতা উপভোগ করা হোক কিংবা অ্যাঙ্গাস স্টেকের তীব্র স্বাদ—উভয় জাতই বৈশ্বিক গরুর মাংসের রান্নার সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top