skip to Main Content

দেহযতন I হাইব্রিড এক্সারসাইজ

এমন একটি প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, যা শক্তি ও সহনশীলতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামকে একত্র করে। শরীরের বিভিন্ন অংশের শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতার উন্নতি ঘটায়

আধুনিক ফিটনেস ট্রেন্ডে হাইব্রিড এক্সারসাইজ; বিশেষ করে যারা সময়ের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ ফল চান, তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর আছে নানা ধরন। সেগুলোর মধ্য থেকে জনপ্রিয় পাঁচটি ব্যায়াম তুলে ধরেছেন সার্টিফাইড ফিটনেস কোচ সাদিয়া শীলা।
জ্যাক বারপি
মূলত বারপি ও জাম্পিক জ্যাকের সংমিশ্রণ। এই এক্সারসাইজ পুরো শরীরের জন্য উপকারী। কার্ডিওভাসকুলারের সহনশীলতা বৃদ্ধি, পেশির শক্তি ও সহনশীলতার উন্নতি এবং ক্যালরি বার্ন ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তার জন্য জনপ্রিয়। জ্যাক বারপি বিশেষ করে হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (এইচআইআইটি) সেশনে ব্যবহৃত হয়। আপনি যদি এক্সারসাইজটি করতে আগ্রহী হন, তবে সঠিক ফর্ম বজায় রাখা এবং শরীরের সংকেত অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
সাইড লাঞ্জ টু লেগ লিফট
মূলত একটি ল্যাটারাল মুভমেন্ট, যা নিতম্বের পেশি, ঊরুর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পেশি, কোয়ার্ডস, হ্যামস্ট্রিংস, কোর পেশি সক্রিয় করে এবং শরীরের সামগ্রিক শক্তির বৃদ্ধি ঘটায়। এ ছাড়া হাঁটু ও পায়ের জয়েন্টের স্থিতিশীলতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি দৈনন্দিন কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়াতে এবং ব্যথা কমাতে রাখে সহায়ক ভূমিকা।
সাদিয়া শীলার মতে, প্রাথমিকভাবে এই দেহচর্চা প্রতিটি পায়ের ক্ষেত্রে এক সেট হিসেবে ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করা শ্রেয়। অবশ্য সামর্থ্য অনুযায়ী তিন সেট পর্যন্ত অনুশীলন করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখা চাই, অনুশীলনের সময় হাঁটুর পেছনের অংশে যেন চাপ না পড়ে। শরীর সোজা রেখে কোর শক্তিশালী করা চাই। শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা আবশ্যক।
রেনেগেড রো পুশ-আপ
পুশ-আপ এবং রো একসঙ্গে সম্পাদন করে পুরো শরীরে শক্তি ও স্থিতিশীলতার উন্নতি ঘটায়। এই এক্সারসাইজে পেক্টোরাল মেজর, ল্যাটিসিমাস ডরসি, ডেলটোইড ট্র্যাপিজিয়াস ও রোম্বয়েড, ট্রাইসেপস ও বাইসেপস এবং কোর পেশি সক্রিয় থাকে।
কোর স্ট্যাবিলিটি ও শক্তি বাড়ানো, শরীরের সামনের ও পেছনের পেশিগুলোকে সমানভাবে কাজ করানো, চর্বি পোড়াতে সহায়ক মেটাবলিক স্ট্রেসের বৃদ্ধি ঘটানো এবং দেহের স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য উন্নত করতে ভূমিকা রাখা এই দেহচর্চার রয়েছে কিছু ভিন্নতা ও উন্নত সংস্করণ। যার মধ্যে কেটলবেল রেনেগেড রো পুশ-আপের ক্ষেত্রে কেটলবেল ব্যবহার করে এই এক্সারসাইজকে আরও চ্যালেঞ্জিং করা সম্ভব। অন্যদিকে কনুই ও হাঁটু মাটিতে রেখে বেয়ার প্ল্যাঙ্ক রেনেগেড রো অনুশীলন করা যায়, যেটি কোর স্ট্যাবিলিটি বাড়াতে সহায়ক। আরও আছে ম্যান মেকার, যা রেনেগেড রো ও পুশ-আপের সঙ্গে বারপি যোগ করে আরও পূর্ণাঙ্গ শরীরচর্চা এনে দেয়।
শীলা জানান, রেনেগেড রো পুশ-আপের চর্চা প্রথমে তিন সেট করে, প্রতিটি সেটের পাঁচ থেকে সাতবার পুনরাবৃত্তি করা উত্তম। প্রতিটি পুনরাবৃত্তির মাঝখানে ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড বিশ্রাম নেওয়া চাই। প্রথমে হালকা ওজন দিয়ে এক্সারসাইজ শুরু করে, পরে ধীরে ধীরে বাড়ানো যেতে পারে। তবে এর অনুশীলন শুরুর আগেই কিছু সতর্কতা খেয়াল রাখা দরকার। যেমন ডাম্বেলগুলো হেক্সাগনাল হলে ভালো; কারণ, সেগুলো ঘুরবে না। তা ছাড়া পুশ-আপ করার সময় শরীর সোজা এবং কোর শক্ত রাখা চাই। এক হাতে রো করার সময় শরীর যেন ঘুরে না যায়, সেদিকেও নজর রাখুন।
নি টাক পুল-আপ
যদি হাঁটু ভাঁজ করে পুল-আপ বা পুশ-আপ করতে চান, তাহলে শরীরের ওপরের অংশের শক্তি বাড়ানোর জন্য এটি একটি চমৎকার উপায়। বিশেষ করে যারা নতুন, পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় আছেন কিংবা স্রেফ শক্তি বাড়াতে চান, তাদের জন্য। সাদিয়া শীলার মতে, এই দেহচর্চায় বুক, কাঁধ, বাহু ও পেটের পেশি শক্তিশালী হয়। যারা পূর্ণ পুশ-আপ করতে পারেন না, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প। এর অনুশীলনে কোর পেশি সক্রিয় থাকে, যা মেরুদণ্ডের সঠিক অবস্থান বজায় রাখতে সহায়ক। সঠিক ফর্মে ব্যায়ামটি করতে পারলে পরবর্তী সময়ে পূর্ণ পুশ-আপের সামর্থ্য অর্জন করা সম্ভব।
শীলার পরামর্শ, প্রথমে দুই থেকে তিন সেট আট থেকে বারোবার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে এর চর্চা শুরু করা ভালো। হাঁটুতে সমস্যা থাকলে ওয়াল পুশ-আপ বা ইনক্লাইন পুশ-আপ দিয়ে শুরু করতে পারেন। ব্যথা অনুভূত হলে হাঁটুর নিচে ব্যবহার করতে পারেন তোয়ালে বা বালিশ। ফর্ম ঠিক রাখার দিকে মনোযোগ দেওয়া চাই; পিঠ বাঁকানো কিংবা কোমর নিচে নামানো যাবে না। ব্যায়ামের আগে ও পরে হালকা স্ট্রেচিং করা শ্রেয়। ব্যায়ামের সময় ধীরে ধীরে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন; এটি ফোকাস বাড়াতে সাহায্য করবে। হাঁটুতে অসহনীয় বা অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভূত হলে তৎক্ষণাৎ ব্যায়াম থামিয়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
বার্ড ডগ পুশ-আপ
পুশ-আপ ও বার্ড ডগ এক্সারসাইজের সংমিশ্রণ। মূলত কোর স্ট্যাবিলিটি, শক্তি ও ভারসাম্য উন্নত করতে সহায়ক। এর চর্চার মাধ্যমে বিশেষত পেট, পিঠ ও কোমরের পেশিগুলো শক্তিশালী হয়। দুই হাত ও পা একসঙ্গে ওঠানোর ফলে দেহে ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতার পাশাপাশি অঙ্গবিন্যাসের উন্নতি ঘটে। শরীরের কম্পন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
বার্ড ডগ পুশ-আপের রয়েছে নানা ধরন। এর মধ্যে, হালকা ওজন বাড়ানো এবং স্ট্যাবিলিটি বল ব্যবহারের মাধ্যমে একে আরও কার্যকর করে তোলা সম্ভব। যারা এই দেহচর্চা নতুন শুরু করেছেন বা করতে যাচ্ছেন, তারা প্রতিটি পাশে আট থেকে দশবার পুনরাবৃত্তি করা মঙ্গল। তবে সাদিয়া শীলার পরামর্শ, নতুনদের ধীরে ধীরে শুরু করে সঠিক ফর্ম বজায় রাখার প্রতি মনোযোগী হওয়া চাই। অনুশীলনের সময় পিঠ বেঁকে গেলে ব্যায়ামটি সঠিকভাবে করা হবে না; তাই সোজা রাখুন। অন্যদিকে, কোর শক্তিশালী না থাকলে এর চর্চা করতে সমস্যা হতে পারে। তা ছাড়া দ্রুতগতিতে এর অনুশীলন করলে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ; তাই ধীরতালে চর্চাই শ্রেয়।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top