skip to Main Content

মনোজাল I কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি

কারও জন্য থেরাপিউটিক হলেও আবহাওয়ার এমন বিরূপ প্রভাবে কারও কারও মুড সুয়িং অবশ্যম্ভাবী। তা থেকে মুক্তির আশায় অনেকে খুলে বসেন মেকআপের পসরা। যদিও ফলাফল ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন

রোদ-বৃষ্টি আর প্যাচপ্যাচে গরমের খেলায় মনে হচ্ছে, বর্ষা এবার দারুণ ভোগাবে। এমনিতেও যারা সাজতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য বর্ষাকাল এর আচরণের মতোই রহস্যময়। মেকআপের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে এই ঋতু। মনেও। বৃষ্টিতে কখনো খুব সাজতে ইচ্ছে করে, আবার কখনো জাগে বিরক্তিবোধ। তা ছাড়া আর্দ্রতা, তাপ ও বৃষ্টির কারণে সাজ গলে যাওয়া এবং স্মোকি হয়ে ওঠার ঝুঁকি তো থাকেই। বর্ষার মেকআপ এবং মুড সুইয়িংজনিত সাজ আলাদা বিষয়। তবু একটা গূঢ় সম্পর্ক কিন্তু আছে। তাই বর্ষা-মেকআপে মুড পরিবর্তন কেন হয় কিংবা এটি কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করে, সে বিষয়ে একটু জেনে নেওয়া শ্রেয়।
সমস্যা দিয়েই শুরু করা যাক। সাধারণত বর্ষাকালে বাড়তি আর্দ্রতার কারণে মেকআপ গলে যায়; ছোপ ছোপ ভাব দেখা দেয়। আবার অতিরিক্ত ঘাম বা বৃষ্টির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ফলে মেকআপ বিবর্ণ হওয়ার এবং ঝরে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। ঘাম, ময়লা ও মেকআপের সংমিশ্রণে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে ব্রেকআউট হতে পারে। আর্দ্রতা ত্বককে আঠালো ও দাগযুক্ত করে তুলতে পারে। এত সব সমস্যা মোকাবিলা করে মেকআপের জন্য আলাদা প্রস্তুতি তো নিতেই হবে। মনেও জোর আনা চাই; না হলে মেকআপ করতে ইচ্ছে করবে কেন?
তবে সমাধান যে নেই, তা নয়। এই সময় মেকআপের জন্য হালকা ও তেলমুক্ত ফর্মুলা এবং ওয়াটারপ্রুফ পণ্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু, একটি ভালো প্রাইমার ও সেটিং স্প্রে মেকআপকে দীর্ঘায়িত করতে সাহায্য করবে। দীর্ঘস্থায়ী কভারেজের জন্য ব্রিদেবল অয়েল ফ্রি ফাউন্ডেশন, বিবি ক্রিম এবং টিনটেড ময়শ্চারাইজার বেছে নেওয়া যেতে পারে। ওয়াটারপ্রুফ মাসকারা, আইলাইনার ও লিপস্টিক মানিয়ে নিতে পারে বৃষ্টি আর আর্দ্রতার সঙ্গে। প্রয়োজন একটি ভালো প্রাইমার। প্রাইমার একটি মসৃণ বেস তৈরি করতে সাহায্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং মেকআপকে ত্বকে ধরে রাখে। সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে সেটিং স্প্রে। মেকআপকে সিল করে, সারা দিন দীর্ঘস্থায়ী রাখতে। লেয়ারিং মেকআপ লুক এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ, এগুলো গলে পড়ার কিংবা ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।
প্রয়োজন হাইড্রেশন ও এক্সফোলিয়েশন। নিয়মিত ত্বকের যত্ন, হাইড্রেশন ও এক্সফোলিয়েশন পারে আটকে থাকা ছিদ্র ও ব্রেকআউট প্রতিরোধে সাহায্য করতে। পাশাপাশি আরামদায়ক, ব্রিদেবল পোশাক পরা চাই, যা ত্বককে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করবে। সানস্ক্রিন নিতেও ভুলে যাবেন না। দিনের শেষে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করা চাই, যেন ছিদ্র বন্ধ ও ব্রেকআউট না হয়। পরিচ্ছন্নতা এ সময় খুব ভালো কাজ করে ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং পুষ্টি জোগাতে।
ব্যস, ত্বক ঠিক থাকলে মেকআপ না করার ইচ্ছাটাও মরে যাবে! তারপরেও কথা আছে। বর্ষা ঋতুতে মেকআপ মেজাজকে সূক্ষ্ম অথচ শক্তিশালী উপায়ে প্রভাবিত করতে পারে। কীভাবে—তা তো আগেই জানা হয়েছে। এবার জানা যাক, সেই প্রভাব মোকাবিলার জন্য কী করা চাই।
রঙের সঙ্গে বিষণ্নতার লড়াই
মেঘলা আকাশ আর সূর্যের আলোর ঝাপটায় জড়িয়ে থাকে বর্ষা; যা সেরোটোনিনের মাত্রা কমিয়ে মেজাজকে প্রভাবিত করে। সেটি ঠিক করার জন্য চাই উজ্জ্বল বা উষ্ণ-টোনযুক্ত মেকআপ। যেমন ম্যাজেন্টা মিক্স ন্যুড লিপস্টিক, পিচ ব্লাশ বা গাঢ় আইলাইনার। বিষণ্নতাজনিত নিস্তেজতা মোকাবিলা করতে। যেন নিজেকে দেখে মন ভালো হয়ে যায় এবং আনন্দের সেই ঝলক মনোবল বাড়াতে কাজে দেয়।
নিয়ন্ত্রণ ও আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি
বৃষ্টির দিনগুলো প্রায়শই অনিশ্চয়তা নিয়ে আসে। কাদা, আর্দ্রতা, কোঁকড়ানো ঘেমে যাওয়া চুল। তাই জরুরি ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ, ম্যাট ফাউন্ডেশন; যেন সেগুলো নিয়ে চিন্তা না করতে হয়। একটি চকচকে পলিশড চেহারা বজায় রাখতে। মেকআপ করতে তখন ইচ্ছা করবে, ভালো লাগবে। আর এতে মনের ওপর নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি পুনরুদ্ধার হবে; আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।
অভিব্যক্তি ও সৃজনশীলতা
বর্ষায় অনেক সময় ঘরে আটকে থাকতে হয়। বাইরে যাওয়ার উপায় থাকে না। এই ঘন ঘন ঘরের ভেতরে থাকায় কেউ কেউ একঘেয়েমিতে ভোগেন। লো ফিল করতে পারেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই একঘেয়েমি থেকে মুক্তির একটি উপায় হলো মেকআপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। চকচকে আইশ্যাডো বা রঙিন মাসকারা ব্যবহার করে নিজের জন্য নতুন লুক তৈরির চেষ্টা করা যেতে পারে; যা মেজাজকে ভালো করার জন্য চমৎকার একটি সৃজনশীল উপায় হতে পারে।
সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি
সুগন্ধযুক্ত শীতল পণ্য; যেমন রিফ্রেশিং সেটিং স্প্রে বা হালকা সুগন্ধযুক্ত হাইড্রেটিং প্রাইমার ব্যবহার ইন্দ্রিয়গুলোকে জাগ্রত করতে পারে। তাই টেক্সচার ও সুগন্ধি যোগ করা যেতে পারে বর্ষার মেকআপ রুটিনে। যেন ফুরফুরে লাগে; বিষণ্নতা মুষড়ে দিতে না পারে।
সুরক্ষা ও স্ব-যত্ন
বর্ষা প্রায়শই আর্দ্রতা, ঘাম ও ত্বকের সমস্যা নিয়ে আসে। যেগুলোর শক্ত হাতে মোকাবিলা জরুরি। ত্বকের যত্ন নিতে তাই হাইব্রিড মেকআপ জরুরি। টিনটেড ময়শ্চারাইজার বা গ্লো ইফেক্টযুক্ত সেরাম ব্যবহার ত্বককে সুরক্ষা দেয়। চেহারাকে সুন্দর করে; নিজের প্রতি যত্নশীল এবং স্ট্রং বোধ করাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও নিজেকে বেস্ট দেখানোর জন্য প্রথম কৌশল হলো মেকআপ হালকা রাখা। এর অর্থ হলো ভারী ফাউন্ডেশন, কনট্যুরিং ও হাইলাইটারের একাধিক স্তর ব্যবহার করা যাবে না। আসলে এই ঋতুর জন্য ক্রিম ফাউন্ডেশন আলাদা করে সরিয়ে রাখা দরকার। তার চেয়ে বরং ফেস পাউডার ব্যবহার করা ভালো। মন রঙিন রাখার জন্য মেকআপে ইচ্ছেমতো রং যোগ করা যেতে পারে। তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছোট একটা জিনিস, যা ব্যাগে সব সময় থাকা উচিত, তা হলো টিস্যু পেপার। বৃষ্টিতে বাইরে বেরোলে মাঝে মাঝে কেবল সেটা দিয়ে মুখ আলতো করে মুছে নেওয়া যায়, যাতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা দূর হয়। কাজটা করতে হবে চেপে চেপে; একটানে মোছার প্রয়োজন নেই। অন্যথায় সম্পূর্ণ মেকআপ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। বর্ষায় ঠোঁটের জন্য আদর্শ হলো ম্যাট লিপস্টিক। লিপ গ্লস এবং চকচকে লিপস্টিকগুলো আঠালো হয়ে যায়। আকর্ষণীয় গাঢ় সব শেড বেছে নিলে লুকে যোগ হবে বাড়তি উজ্জ্বলতা।

 রত্না রহিমা
মডেল: এফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top