skip to Main Content

ফরহিম I দ্য পেনসিল মাসট্যাশ

ফিনফিনে পাতলা গোঁফের রেখা, কিন্তু ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক হিসেবে ভার আছে বৈকি। মাস্টারিংয়ে প্রয়োজন সঠিক যন্ত্রপাতি, জানতে হবে কৌশলও। পাকা হাতেই মিলবে নিখুঁত হবার নিশ্চয়তা

হলিউড সেলিব্রিটি আর আমেরিকান এলিটদের হাত ধরে ফিরে আসছে ১৯২০-৩০ এর স্টাইল। ভারতীয় অভিনেতাদের কয়েক বছর দেখা গেল সত্তরের দশকের নায়কদের মতো ঘন চুল দাড়ি নিয়ে, একটা অতিনাটকীয়তা সৃষ্টি করতে। সেই স্টাইলকে অনেকটা উপেক্ষা করেই পরিপাটি আর সাটেল ভাব নিয়ে পুরুষদের লুকে অতীতের ইন্সপিরেশন আনছে টিপটপ পেনসিল ছাঁটের গোঁফ।
একটা ভালো হেয়ার কাট আর ভালো আউটফিট যেমন পুরুষদের সার্বিক সৌন্দর্য বিকশিত করে, তেমনি যথাযথভাবে স্টাইল করা গোঁফ বা দাড়ি বদলে দিতে পারে তার আউটলুক।
ওষ্ঠের ওপরে সর্বোচ্চ ১ ইঞ্চি পুরু গোঁফের রেখা, দেখতে যেন মনে হয় পেনসিলে আঁকা, এর নামই পেনসিল মাসট্যাশ বা পেনসিল গোঁফ। একে দেখতে পেনসিলে আঁকা মনে হয় বলেই এই নামকরণ। দেখতে এলোমেলো না; হালকা, একদম যথাযথভাবে কাটা।
পুরোনো এই স্টাইল নিজের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন উইল স্মিথ, ব্র্যাড পিট, দ্য উইকেন্ড এবং মাইকেল বি জর্ডানের মতো তারকারা। পেনসিল মাসট্যাশ প্রথমে নজরে আসে আমেরিকান সংগীতশিল্পী লিটল রিচার্ডের মাধ্যমে। স্কিন টোন আর হাসির সঙ্গে পুরোপুরি ভিন্ন ধরনের মাসট্যাশ স্টাইল যেন নজর কেড়েছিল পুরো শো বিজনেসের।
একটু ঝোলানো আবার হালকা পুরু পেনসিল মাসট্যাশ নিয়ে দ্য উইকেন্ড কাঁপাচ্ছেন পপ ইন্ডাস্ট্রি। লিটল রিচার্ডের সেই হাসি আর স্টাইলকে নিজ ব্যক্তিত্বে ধারণ করে পেনসিল ফ্রেঞ্চ বিয়ার্ডে নিজের একটা ভিন্ন স্টাইল গড়েছেন অভিনেতা উইল স্মিথ। কাঁচা-পাকা দাড়ি আর শ্বেত বর্ণের ব্র্যাড পিট স্ক্রিনে বারবার হাজির হয়েছেন তার পেনসিল মাসট্যাশ নিয়ে। যথাযথ ট্রিমিংয়ে নিজের স্টাইলের সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ না করে নিজস্ব স্টেটমেন্ট রেখেছেন সব সময়।
সেলিব্রিটি স্টাইলিস্ট সরেন রই মনে করেন, ‘পেনসিল মাসট্যাশ রাখার বিষয়টি পুরোটাই নির্ভর করে, আপনি কী ধরনের গান শুনতে পছন্দ করেন আর কী ধরনের স্টাইলিং সব সময় করেন, তার ওপর।’ ছন্নছাড়া জীবনে একটা বোল্ড স্টেটমেন্ট দিতে যারা পছন্দ করেন, তাদের সঙ্গে যেমন মানিয়ে যায়; তেমনি যারা নিজের লুক নিয়ে একদম পুঙ্খানুপুঙ্খ ফল চান, তাদের জন্যও মানানসই। রইয়ের মতে, রাফ-টাফ কেউ; যিনি কোনোভাবেই নিজের লুকের সঙ্গে আপোস করেন না, তাদের জন্য এই মিনিমাল স্টাইল দারুণ হতে পারে।
কোরিয়ান কিংবা চায়নিজ পুরুষদের মতো সাধারণত বাঙালি পুরুষদের দাড়ি গজানো নিয়ে খুব একটা ঝামেলায় পড়তে হয় না; আবার পাতলা গোঁফের পুরুষের সংখ্যাও একেবারে কম নয় এ দেশে। থিন মাসট্যাশ কিংবা বিয়ার্ড লাইন যাদের আছে, যথাযথ স্টাইলিংয়ের অভাবে তাদের বেশির ভাগ সময় ক্লিন শেভে দেখা যায়। যাদের গুম্ফ রেখা পাতলা, তাদের জন্য সহজ অপশন এটি।
চুল এবং চোখের রং যে গোঁফের স্টাইলে ভূমিকা রাখতে পারে, তা অনেকের অজানা। যাদের চুল কালার করা বা গ্রে হেয়ার আছে, অথবা যাদের চুল একটু তামাটে বর্ণের, তাদের খুব পাতলা পেনসিল মাসট্যাশ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কিন্তু যাদের চুলের রং গাঢ়, তারা নির্বিঘ্নে বেছে নিতে পারেন অরিজিনাল পেনসিল মাসট্যাশ। চোখের রং হালকা হলে অরিজিনাল স্টাইল কাস্টমাইজ করে একটু লম্বা মাসট্যাশ, আর গাঢ় হলে একটু পাতলা কিন্তু বাঁকানো মাসট্যাশ স্টাইল করা যেতে পারে। রেট্রো হেয়ারস্টাইলের সঙ্গে যারা নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন, কিংবা নিজের ব্যক্তিত্বে একটা ওল্ড মানি ফিটফাট লুক আনতে চান, তাদের জন্যও পেনসিলের গোঁফের রেখা কাজে দিতে পারে। আবার চুল পরিপাটি রেখে যারা করপোরেটে কাজ করছেন, তাদের জন্যও নতুন এই গোঁফের স্টাইল মন্দ হয় না।
স্টাইলিংয়ের সূত্র
ওষ্ঠের ওপরে একটা লম্বা কিন্তু পাতলা গুম্ফ রেখা কীভাবে আঁকা যায়, তা নিয়ে হতে পারে সহজ এক জ্যামিতিক আলোচনা। প্রয়োজন বিয়ার্ড ট্রিমার আর স্ট্রেইট রেজরের। পেনসিল মাসট্যাশ তৈরিতে সাধারণ রেজরগুলো যথাযথভাবে কাজ করে না; তাই স্ট্রেইট রেজর বেছে নেওয়া শ্রেয়। যেহেতু এই ধরনের গোঁফ পাতলা আর লম্বা, তাই স্ট্রেইট রেজরে কাটা গোঁফের রেখা ততটা দৃশ্যমান হয় না।
শেভিংয়ের প্রথম ধাপে ঠোঁটের ওপরের গোঁফ বাদে পুরো দাড়ির অংশ শেভ করে ফেলতে হবে। এবার স্ট্রেইট রেজরের সাহায্য নিজের পছন্দমতো একটা শেপ দেওয়া যেতে পারে। পরে ট্রিমারের সাহায্যে মুখের আকৃতি ও চুলের দৈর্ঘ্যের সঙ্গে মিলিয়ে একটা ফাইনাল টাচ দিয়ে আয়নায় দেখে যাচাই করে নেওয়া চাই।
এ ছাড়া কিছু কাটছাঁট বা একটা ড্রামাটিক লুক আনতে আই ব্রাও এবং চুলের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে আই ব্রাউ কিটের সাহায্যে সাজিয়ে নেওয়া যাবে পেনসিল মাসট্যাশ।
পুরো প্রক্রিয়া জটিল লাগলে স্যালনে চলে যাওয়াই শ্রেয়। একজন স্টাইলিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে ফেস ও চুলের ধরন বুঝিয়ে পছন্দ জানিয়ে, পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত লুক।
পেনসিল মাসট্যাশের মাপটা ঠিক রাখা ততটাও সহজ নয়। এদিক-সেদিক হলেই লুক বিগড়ে যেতে পারে। কিন্তু ট্রিমিং চাই ঘন ঘন, শুরুতে রেজর না ধরে ব্যবহার করা যেতে পারে সূক্ষ্ম কিন্তু ধারালো কাঁচি। বর্ডারটা থাকবে একদম নিট অ্যান্ড ক্লিন।
তবে এত জটিল প্রক্রিয়া গুলিয়ে ফেললে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। পুরো স্টাইলটাই যেহেতু পুরোনোকে নতুন করে দেখা, তাই নিজের মতো কাস্টমাইজ করে একটু ফ্যাশনেবল করে ট্রিম করে রাখলেও মন্দ হবে না।
পেইন্টারস ব্রাশ, জোরো, ল্যাম্পশেড বা ইংলিশ কমেডিয়ান, নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো স্টাইলেই রাখা যেতে পারে সাধের গোঁফ।

 বিদিশা শরাফ
মডেল: আয়ান
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top