তনুরাগ I চকলেট ট্রিট
প্রিয় ফ্লেভারে হারিয়ে যেতে যেতে মুহূর্ত উপভোগ। মন ও ত্বক—দুয়ের জন্যই আদরমাখা সময়। ক্লান্তিহরা, আনন্দ সঞ্চারণের ক্ষণ
চকলেটের প্রতি দুর্বলতা আছে বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের। এখানে কিন্তু বয়সও কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সব বয়সের মানুষই এই এক খাবারের ফ্যান। রঙিন রাংতায় মোড়ানো এক টুকরো চকলেট দুনিয়ার খুশি নিয়ে হাজির হতে পারে। তবে হরেক রকম মোড়কে না রেখে চকলেটকে যদি স্থান দেওয়া হয় বাথটাবে, কেমন হয়?
চকলেট, শতভাগ আধুনিক নাম, তাই তো? আদতে কিন্তু এর ইতিহাস বহু পুরোনো। চকলেট বা কোকো প্রাচীন মায়া ও অ্যাজটেক সভ্যতায় পবিত্র ও ঔষধি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তারা কোকো বীজকে গুরুত্ব দিত সৃষ্টিকর্তার উপহার হিসেবে। আধুনিক যুগে ইউরোপ, বিশেষ করে সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্সে প্রথম চকলেট স্পা থেরাপি জনপ্রিয় হয়। তারপর ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। ত্বক ও মনের জন্য লাক্সারি ট্রিট বলা যেতে পারে একে। কারণ, অল্পতে মিলবে না চকলেটি বাথ। গুনতে হবে বেশ কিছু পয়সা। তবে এ-ও সত্য, ইচ্ছার কাছে বাকি সব তুচ্ছ! এই বিশেষ স্নানের গুণের বহর বেশ দীর্ঘ। দু-এক কথায় শেষ করার নয়। কারণ, শুধু সুন্দরতা নয়; এর যোগাযোগ রয়েছে মনের সঙ্গেও।
গুণবাহার
অনেক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপস্থিত থাকে চকলেটে। যেগুলো ত্বকের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক পুনরুজ্জীবিত ও মসৃণ করতে পারে। ত্বককে গভীর থেকে ময়শ্চারাইজ এবং রুক্ষতা ও খসখসে ভাব দূর করে। এমনকি সূর্যের তাপে তামাটে হয়ে যাওয়া ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে পারে। ত্বকের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে; বয়সের ছাপ কমায়। এমনকি চকলেটে উপস্থিত উপাদান ত্বককে ডিটক্সিফাই করার ক্ষমতাও রাখে। একটি হট চকলেট বাথ শরীর থেকে মৃত কোষ দূর করে ত্বক পরিষ্কার করতে পারে। ত্বক তরল চকলেটের সংস্পর্শে এলে কোকোয়া শুষে নেয়। এই শুষে নেওয়া তরল চকলেট রক্তপ্রবাহ দ্রুত করে। আর যখন ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে, তখন দেহের কোষের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। ফলাফল—অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আরও সাবলীলভাবে কাজ করতে পারে। আবার এই একই কারণে ব্রেইনে রক্ত পৌঁছে যাওয়ার পরিমাণ বাড়ে। চোখের দৃষ্টিও প্রখর হয়।
চকলেটের ঘ্রাণে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মন ভালো রাখে এবং বিষণ্নতা দূর করে। উষ্ণ পানিতে চকলেটের গন্ধ শরীর-মনকে একধরনের আরাম দেয়, যা স্পা থেরাপির মতো কাজ করে। অনেক অভিজাত স্পা, হোটেল ও রিসোর্টে চকলেট বাথ একটি প্রিমিয়াম ট্রিটমেন্ট হিসেবে অফার করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় এটি একধরনের ফ্যান্সি, ইনস্টাগ্রামেবল অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু এই স্কিন কেয়ার মোটেই সাধারণ যত্ন নয়। এতে উপস্থিত ফ্লেভারোনয়েডস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রোপার্টি। দেহ থেকে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। হৃৎযন্ত্রও ভালো রাখে। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সবচেয়ে বেশি থাকে ডার্ক চকলেটে। ইচ্ছা হলে বেছে নেওয়া যেতে পারে ডার্ক চকলেট বাথ।
এই কিন্তু শেষ নয়; ডার্ক চকলেটে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদানের উপস্থিতি থাকায় নানাভাবে ত্বক উপকার পেয়ে থাকে। স্ক্যাল্প ইনফেকশন এর মধ্যে একটি। এই তালিকায় আরও আছে আলট্রা ভায়োলেট রে থেকে সুরক্ষা। চকলেট বাথের পরে তাই সূর্যে আলোর উদ্ভাসন উপভোগ করা যাবে নিশ্চিন্তে।
যজ্ঞের বিস্তারিত
চকলেট বাথ মানে তরল চকলেটে নিশ্চিন্তের স্নান। প্রথমে স্কিন ক্লিনজিংয়ের জন্য হালকা স্ক্রাবিং করে নেওয়া যেতে পারে। এর পরের পর্বে শরীরে কোকো পাউডার, বাটার, দুধ ও তেল দিয়ে তৈরি ঘন চকলেট প্যাক লাগানো। শরীর র্যাপ করে কিছুক্ষণ রাখা হয়, যেন উপাদানগুলো ভালোভাবে ত্বকে মিশে যায়। তারপরে চকলেট মিশ্রিত হালকা গরম পানিতে দীর্ঘ শান্ত স্নান। সব শেষে ময়শ্চারাইজার বা সুগন্ধি তেল ব্যবহার করে মাসাজ।
চকলেট বাথে সাধারণত বিশুদ্ধ কোকো পাউডার, ডার্ক চকলেট, কোকো বাটার ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই উপাদানগুলো স্কিন-ফ্রেন্ডলি ও থেরাপিউটিক। শরীর ও মন—দুয়েরই যত্ন হয় এতে।
চকলেট বাথ রিলাক্সিং স্কিন কেয়ারের অন্তর্ভুক্ত। মূলত ইউরোপ, দুবাই, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ডের মতো ট্যুরিস্ট স্পট বা আন্তর্জাতিক হোটেল স্পাগুলোর অফারে দেখা যায় নিয়মিত। আমাদের দেশেও অল্পস্বল্প আয়োজন রয়েছে। চাইলে নিজের গৃহকোণেও হতে পারে এই আয়োজন। সে জন্য প্রয়োজন কোকো পাউডার, দুধ, নারকেল তেল ও মধু। চাইলে এতে মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে ২-৩ ফোঁটা ভ্যানিলা এসেন্স, যা অ্যারোমাথেরাপির মতো কাজ করবে। এবার এই মিশ্রণ বাথটাবে কুসুম গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে কিছু সময়ে স্বেচ্ছা নির্বাসন। সবিশেষে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে ফেললেই, ব্যস! এরপরে আরামকেদারায় শুয়ে এক কাপ হট চকলেট। কাটুক সময় নিরজনে, আপন ভুবনে।
সারাহ্ দীনা
মডেল: মায়শা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল