ত্বকতত্ত্ব I টেক্সচার ট্রুথ
বিউটি রুটিন বেসিক। বেছে নেওয়ার মতো বিকল্পও রয়েছে মেলা। কিন্তু ত্বকভেদে কোনটা বেশি কার্যকর, সেটা নির্ভর করবে টেক্সচারের হেরফেরে
সৌন্দর্যচর্চার একদম শুরুর দিককার ভাবনা, কী দিয়ে মুখ ধোয়া হবে? বাজারে এখন বাম, ক্লিনজিং অয়েল, মাইসেলার ওয়াটার—এমন হরেক রকম প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। কোনটি ত্বকে সবচেয়ে উপযোগী, সেটা বুঝে নেওয়াই আসল চ্যালেঞ্জ। সে ক্ষেত্রে ডারমাটোলজিস্টের মতামত আর পরামর্শ ত্বক অনুযায়ী সঠিক ক্লিনজার বেছে নিতে সাহায্য করবে।
ক্লিনজিং অয়েল: মৃদু কিন্তু কার্যকর তেল পরিষ্কারক
সাধারণত গ্রেপ সিড, সানফ্লাওয়ার বা রাইস ব্রান অয়েল দিয়ে তৈরি, যেগুলো ত্বকে পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি গভীর থেকে ময়লা তুলে ফেলে। এই অয়েলগুলো নন-কমেডোজেনিক হলে তা ব্রণ সৃষ্টি করে না এবং ত্বককে শুষ্ক না করে স্নিগ্ধ রাখে। মেকআপ, ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিন ও অতিরিক্ত সিবাম অপসারণে অসাধারণ। তবে ক্লিনজিং অয়েল ব্যবহারের পর একটি ওয়াটার-বেসড ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলা জরুরি, যাতে কোনো তেল অবশিষ্ট না থাকে।
লাইট টু মিডিয়াম ঘনত্বের এই অয়েলগুলো সাধারণ, শুষ্ক, কম্বিনেশন ও তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কার্যকর, যদি তা নন-কমেডোজেনিক হয়। সন্ধ্যায় মুখ ধোয়ার প্রথম ধাপে এই ধরনের অয়েল ব্যবহার করলে ঘাম, সানস্ক্রিন ও দিনের ধুলাবালি সহজে তুলে ফেলা যেতে পারে।
ক্লিনজিং বাম: ঘন, আরামদায়ক ক্লিনজার
সলিড টেক্সচারের ক্লিনজার, যা ত্বকে মাসাজ করলে গলে গিয়ে অয়েলে পরিণত হয় এবং তখন এটি মেকআপ ও সানস্ক্রিনকেও গলিয়ে ফেলে ত্বক থেকে উঠিয়ে আনতে সাহায্য করে। এটি মুখে একধরনের ‘স্পা-লাইক’ অনুভূতি দেয়, যা বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকে উপযোগী। এই বামগুলো সাধারণত শিয়া বাটার, এসেনশিয়াল অয়েল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানে তৈরি, যা ত্বক পরিষ্কারের পাশাপাশি পুষ্টিও দেয়। পুরু ঘনত্বের এই বামগুলো মূলত শুষ্ক, পরিণত বা ডিহাইড্রেটেড ত্বকের জন্য খুবই উপযোগী এবং রাতে ব্যবহারের জন্য আদর্শ।
মাইসেলার ওয়াটার: দ্রুত কার্যকর, মৃদু ও ট্রাভেল-ফ্রেন্ডলি
ওয়াটার-বেসড ক্লিনজার, যা দেখতে পানির মতো হলেও এতে থাকে মাইসেল নামক অণু; যা ত্বকের তেল ও ময়লা আকর্ষণ করে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি ব্যবহার করতে পানি লাগে না। তুলার প্যাডে মাইসেলার ওয়াটার নিয়ে তা দিয়েই মুখ মুছে নেওয়া যায়। এটি সংবেদনশীল ত্বকের জন্য দুর্দান্ত, বিশেষ করে যারা বেশি বড় রুটিনে স্বচ্ছন্দ নন কিংবা অতিরিক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন না তাদের জন্য। এটি ট্রাভেল বা টাচ-আপের সময়েও ভালো কাজ করে। তবে ভারী মেকআপ তুলতে একাধিকবার ব্যবহার করতে হতে পারে।
লাইটওয়েট এই ক্লিনজার মূলত সংবেদনশীল, ব্রণপ্রবণ বা মেকআপ কম ব্যবহারকারীদের জন্য ভালো কাজ করে। সকালে রিফ্রেশড দেখাতে, ভ্রমণের সময় অথবা ক্লান্ত রাতে দ্রুত ত্বক পরিষ্কারে এটি আদর্শ।
যদিও ক্লিনজিং অয়েল ও ক্লিনজিং বাম—দুটোই তেলভিত্তিক ক্লিনজার, তাদের টেক্সচার ও ব্যবহার পদ্ধতিতে রয়েছে মূল পার্থক্য। ক্লিনজিং বাম সাধারণত সলিড ফর্মে পাওয়া যায় এবং একটি ছোট টাব বা কনটেইনারে রাখা হয়, যা ট্রাভেল-ফ্রেন্ডলি ও দীর্ঘস্থায়ী। এটি ব্যবহারের জন্য প্রথমে এর সঙ্গে দেওয়া একটি স্প্যাচুলা দিয়ে পণ্যটি হাতে নিয়ে, ত্বকে মাসাজ করতে হয়; যাতে শরীরের তাপে এটি গলে গিয়ে তেলে রূপান্তরিত হয়। তখন এটি মেকআপ, সানস্ক্রিন ও ধুলাবালি গলিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে, ক্লিনজিং অয়েল সাধারণত তরল বা লিকুইড ফর্মে পাওয়া যায়, পাম্প বোতলে। এটি সরাসরি মুখে ব্যবহার করা যায়; মাসাজ করতে বিশেষ প্রস্তুতির দরকার পড়ে না এবং ব্যস্ত দিনে বা ক্লান্ত রাতে দ্রুত ত্বক পরিষ্কার করার জন্য আদর্শ। অন্যদিকে, মাইসেলার ওয়াটার সম্পূর্ণ ওয়াটার-বেসড এবং খুবই হালকা। এটি ব্যবহারে মুখ ধোয়ার প্রয়োজন হয় না; তাই ট্রাভেল বা ব্যস্ত দিনের জন্য বেশ সুবিধাজনক।
কীভাবে বাছবেন
ক্লিনজিং অয়েল, বাম এবং মাইসেলার ওয়াটার—তিনটি প্রোডাক্টই ত্বক পরিষ্কারে খুবই কার্যকর। কোনটি ব্যবহার করা হবে, তা নির্ভর করে প্রয়োজন, ত্বকের ধরন এবং ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ডারমাটোলজিস্ট ড. জোডি লোজারফোর মতে, ক্লিনজিং অয়েল, বাম ও মাইসেলার ওয়াটার প্রতিটি ত্বক পরিষ্কারের জন্য ভালো অপশন। তবে তাদের ব্যবহার ও অনুভূতিতে পার্থক্য আছে। ক্লিনজিং অয়েল মেকআপ গলিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর এবং ত্বকের প্রাকৃতিক ব্যারিয়ার রক্ষা করে। ক্লিনজিং বাম ব্যবহার করলে ত্বকে একপ্রকার সমৃদ্ধ ও স্নিগ্ধ অনুভূতি পাওয়া যায়, যা প্রায় স্পার মতো অভিজ্ঞতা দেয় এবং ত্বককে লাবণ্যময় করে তোলে। আর মাইসেলার ওয়াটার হালকা, ব্যবহার সহজ এবং বিশেষ করে ব্রণপ্রবণ বা তৈলাক্ত ত্বকে উপযুক্ত। এর পাশাপাশি এটি বাজেট-ফ্রেন্ডলি হওয়ায় অনেকের কাছে জনপ্রিয় বিকল্প। তাই ত্বকের ধরন ও প্রয়োজন অনুযায়ী এই তিনের মধ্যে সেরাটা পছন্দ করা উচিত।
প্রত্যেকের ত্বক এক রকম নয় এবং একেক দিন ত্বকের প্রয়োজনও আলাদা হয়। এ জন্য একটি সুবিধাজনক রুটিন অনুসরণ করা যেতে পারে, যেখানে প্রথমে ক্লিনজিং বাম বা অয়েল দিয়ে মেকআপ ও সানস্ক্রিন গলিয়ে ফেলে তারপর একটি ওয়াটার-বেসড ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে রুটিন শেষ করা যায়। দিনের মধ্যে যদি তেমন মেকআপ না করা হয়, সে ক্ষেত্রে শুধু মাইসেলার ওয়াটার দিয়েই ত্বক পরিষ্কার করে নেওয়া যায়।
শিরীন অন্যা
মডেল: নাভিলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল