skip to Main Content

মনোজাল I এনক্লথড কগনিশন

ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার প্রভাবক নাকি তার পরনের পোশাক। ভাবা যায়!

পোশাক পরার সময় যে ডিজাইন ও রংগুলো বেছে নেওয়া হয়, সেসব ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুভাবেই মেজাজকে প্রতিফলিত করতে পারে। এটি বিশেষজ্ঞ মতামত। পোশাক পরিহিত জ্ঞান সম্পর্কে জানা তাই খুব প্রয়োজন। প্রশ্ন জাগতে পারে, এ আবার কী? আসলে, মনস্তাত্ত্বিকভাবে, যে পোশাকগুলো শারীরিক এবং একই সঙ্গে মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে, সেটি জেনে পোশাক নির্বাচন করাকে পোশাক পরিহিত জ্ঞান বলা হয়। শুনতে একটু অবাক লাগতে পারে; কিন্তু বলা হয়, দৈনন্দিন জীবনে যে পোশাকগুলো পরা হয়, তা শারীরিক ও মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বুঝতে সহজ হবে। যেমন কোনো কোনো দিন সতেজ এবং উদ্যমী বোধ হয়; আবার কোনো দিন আসে, যখন কিছুই পরতে ভালো লাগে না। কেমন অলসতা ও বিষণ্নতা বোধ হয়। আসলে, যে পোশাক পরা হয়, তা পরিধানকারীর মানসিক সুস্থতা ও স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। মনোবিদদের ভাষায় এই অবস্থাকে এনক্লথড কগনিশন বলা হয়।
নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী অ্যাডাম গ্যালিনস্কি এবং হাজো অ্যাডাম এ শব্দবন্ধ তৈরি করেছিলেন; যা মূলত পোশাকের প্রতীকী অর্থ এবং সেগুলো পরার সময় ঘটে যাওয়া মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়াগুলো বর্ণনা করে। এ দুজন বিজ্ঞানী একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির পোশাক পরা ও দেখার ওপর ভিত্তি করে দুটি পরীক্ষা করেছেন। প্রথমটি ছিল পোশাক পরার ওপর। মাধ্যম ছিল ল্যাব কোট। তারা দেখেছেন, একজন ব্যক্তি ল্যাবে কাজ করার সময় সাধারণ পোশাকের পরিবর্তে যদি ল্যাব কোট পরেন, তখন তার মনোযোগ ও সতর্কতা বেশি থাকে এবং কর্মক্ষমতাও অনেক উন্নত হয়। এটি নির্দিষ্ট একজনের জন্য নয়; সবার ক্ষেত্রেই সত্যি ঘটে। গবেষণার ফলাফলে তারা জানিয়েছেন, পরিহিত পোশাক সব সময় একজন ব্যক্তির জন্য একটি প্রতীকী অর্থ বহন করে। তাই বোঝা উচিত কখন আমরা কী পরব। কারণ, এটি আমাদের কর্মক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে।
দ্বিতীয় পরীক্ষাটি ছিল চিকিৎসক পোশাকের ওপর যে সাদা অ্যাপ্রোন পরেন, তা নিয়ে। দেখা গেছে, যে মুহূর্তে একজন চিকিৎসক তার সাধারণ পোশাকের ওপর এই সাদা কোট পরেন, তার পর থেকে রোগীরা শ্রদ্ধাভরে তাকায়, বিশ্বাস করতে শুরু করে। অর্থাৎ এ পোশাক তাকে অন্যের কাছ থেকে আলাদা করে, বুদ্ধিমান হিসেবে, ভরসাদাতা হিসেবে প্রতীয়মান করে তোলে। গবেষণায় উঠে এসেছে আরও অনেক কিছু। যেমন অনেক নারীর কাছে হাই হিল পরা একধরনের আত্মবিশ্বাস জন্ম দেয়। কিন্তু যখনই তিনি নরমাল ডিজাইনের জুতা পরেন, তা যতই সুন্দর হোক না কেন, তা তাকে একটি নৈমিত্তিক ও সহজ অনুভূতি দেয়। নিজের মধ্যে সেই বিশ্বাস কিছুতেই আসে না। একইভাবে, যখন কোনো মিটিং বা সাক্ষাৎকারের জন্য একটি ভালো পোশাক পরি, সেটি হতে পারে চমৎকার কোনো স্যুট বা ফিটেড ব্লেজার, তা একরকম আত্মবিশ্বাসবোধ তৈরি করে; শুধু ওই পোশাকের কল্যাণেই। একইভাবে স্পোর্টি পোশাক আরও বেশি ব্যায়াম বা খেলাধুলায় জড়িত হওয়ার ইচ্ছাবোধ জাগ্রত করে। সাধারণ পোশাক পরা থাকলে সেই একই ব্যক্তির মধ্যে ওই অনুভূতি জাগ্রত হয় না। উজ্জ্বল রঙের পোশাক যেখানে মেজাজ উন্নত করে, সেখানে আনুষ্ঠানিক পোশাক আরও শক্তিশালী ও কর্তৃত্বপূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করে। সংক্ষেপে বললে, পুরো গবেষণার ফলে প্রকাশিত হয়েছে, যখন যে পোশাক পরা হয়, তার শারীরিক অভিজ্ঞতার মধ্যে কিছু বিশেষ পরিবর্তন ঘটে; যা মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। কর্মক্ষমতা এবং জীবনের মানের ওপরও তার প্রতিফলন সৃষ্টি হয়। এমনকি পোশাকগুলো ব্যক্তি কীভাবে চিন্তা করে এবং ভাবে, তা-ও প্রতিফলিত করে। সুতরাং ফ্যাশনেবল বা দামি বলেই যেকোনো পোশাক সব সময় পরা যাবে, ব্যাপারটা মোটেই তেমন নয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, দৈনন্দিন জীবনে আসলে কীভাবে পোশাক পরা উচিত।
গবেষকেরা বলছেন, দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবনে, যখন কী পোশাক পরা হবে, তা নিয়ে ভাবি, তখন পোশাক পরিধানের জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করলে ফল আসবে চমৎকার। যেমন কোন পোশাক প্রতিদিনের কাজের জন্য, একটি বিশেষ দিন বা একটি সাক্ষাৎকারের জন্য, অথবা বিশ্রামের জন্য; তা নির্দিষ্ট করে রাখা প্রয়োজন। পরার আগে অনুষ্ঠানের ধরন, মেজাজ এবং কীভাবে পোশাক পরা হবে, সে সম্পর্কে চিন্তা করার জন্য কয়েক মিনিট সময় নেওয়া চাই; একটু ভাবা চাই। এই কয়েক মিনিটের ভাবনা সামগ্রিক আচরণ পরিবর্তনে সাহায্য করবে। যেমন—
 পোশাক পরার স্টাইল মনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। উজ্জ্বল রঙের পোশাক মেজাজ উন্নত করে, আন্তমানসিকতার পরিবর্তন ঘটায়। গবেষকদের মতে, পোশাক পরার ধরনের মাধ্যমে আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং জীবনের মানও উন্নত করা সম্ভব। কারণ, পোশাক ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করে, সারা দিনে করা কাজের উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।
 পোশাক আত্মসচেতনতা এবং তার প্রতিফলন ঘটায়। হতাশ, উদ্বিগ্ন বা চাপে থাকা অবস্থায় দিকনির্দেশনা খুঁজে পেতে সাহায্য করে। তাই এ সম্পর্কে ভাবা জরুরি। ফ্লোরাল প্রিন্টের কিংবা আরামদায়ক পোশাক মানসিক শক্তি বাড়াতে সক্ষম। পোশাক নির্বাচন এবং পরার স্টাইলের মাধ্যমে আত্মসচেতনতা তৈরি করা যায়; যা চিন্তাভাবনা আরও স্পষ্ট করে তোলে। আর আত্মপ্রতিফলন হচ্ছে, যে পোশাক পরার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তার সঙ্গে মনোভাবের মিল রেখে, পরার আগে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।
দ্য টাইমস অনুসারে, বিশ্বের প্রথম ফ্যাশন মনোবিজ্ঞানী ড. ডন কারেন একজন ব্যক্তির পোশাকের ধরন অনুযায়ী তার আচরণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি তার ব্যাখ্যায় ‘মুড এনহ্যান্সমেন্ট’, ‘মুড ইলাস্ট্রেশন’ এবং ‘রিপিটেটিভ ওয়্যারড্রোব কমপ্লেক্স’ ইত্যাদি সব জটিল শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছিলেন। যেমন তার মতে, মুড এনহ্যান্সমেন্ট ড্রেস হলো, বর্তমান মেজাজকে অনুকূল করার জন্য পোশাক। মুড ইলাস্ট্রেশন ড্রেস হলো মেজাজকে মানিয়ে চলার জন্য পোশাক। রিপিটেটিভ ওয়্যারড্রোব কমপ্লেক্স হলো প্রতিদিন একই পোশাক পরা এবং দৈনন্দিন জীবনে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য নান্দনিকতার পুনরাবৃত্তি ঘটানো।
তার মতে, একজন গ্রাহকের নিজ অনুভূতি এবং তিনি সেটা কীভাবে উপস্থাপন করতে চান, তা অনুভব করার জন্য কীভাবে পোশাক পরতে হবে, সে সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। কাজটি কে করবেন? অবশ্যই একজন ভালো ফ্যাশন ডিজাইনার কিংবা সে-সম্পর্কিত জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি। উপযুক্ত পোশাক নির্বাচনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার উদ্বেগ কমাতে, বিষণ্নতা ও রাগ দূর করতে, কাজের প্রতি আরও মনোযোগ অর্জন করতে এবং শান্ত থাকতে পারেন। এত কিছু যেখানে সম্ভব, তা জানা নিশ্চয় আবশ্যকতার পর্যায়ে পড়ে। গবেষকেরা বলছেন, ডিজাইনার ও গ্রাহক—উভয় পক্ষের জন্যই এটি লাভজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। কাজটি পুরোপুরি করা সম্ভব হলে ফ্যাশন এবং মানসিক সুস্থতা-সম্পর্কিত একটি নতুন দিকের সূচনা হবে।

 রত্না রহিমা
মডেল: শাওন ও মিথিলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top