skip to Main Content

ঘরেবাইরে I বিয়েবাড়ির স্পেস

অতিথিরা সুখকর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন বিয়েবাড়ি থেকে। সেই ব্যবস্থা নান্দনিকভাবে করে তোলা সম্ভব দক্ষ ও সৃষ্টিশীল ডিজাইনারের পক্ষেই

অতিথিদের বসার ও খাওয়ার জায়গাগুলো যদি পরিচ্ছন্ন ও সুসজ্জিত হয়, তবে বর-কনের আনন্দের ভাগীদার তারাও হতে পারেন। দুজন মানুষ তাদের জীবনের সব থেকে সুন্দর সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন অজস্র শুভাকাঙ্ক্ষীকে সাক্ষী রেখে। ফলে সেই দিনটি বিশেষ হয়ে ওঠে আমন্ত্রিত অতিথিদের কলরবে। এ সবকিছু মিলিয়ে একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে কাজের কি আর শেষ আছে! অনুষ্ঠানটা যাতে সবাই উপভোগ করতে পারেন, সেই ধারণা থেকে বিয়ের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এখন খুব জনপ্রিয়।
একটা বিয়ের অনুষ্ঠান কেবল তখনই সঠিক আবহ তৈরিতে সক্ষম, যখন একজন অভিজ্ঞ, দক্ষ ও সৃষ্টিশীল ডিজাইনার তা সম্পন্ন করার দায়িত্ব পান। তাই প্রফেশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থপতিদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
কেননা, ডিজাইনারের পক্ষে সম্ভব থিমনির্ভর আয়োজন। তবে সে জন্য বিয়েবাড়ির লোকজনের সঙ্গে আলোচনা জরুরি। থিমভিত্তিক বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথমেই বাজেট ও স্বপ্নের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসে। সেটা মিটে গেলে আউটডোর ও ইনডোর এই দুই স্পেসের আলোকে মূল কাজ শুরু হয়ে যায়।
আউটডোর স্পেস নিয়ে কাজ করলে বর-কনের স্বপ্নপূরণ প্রথম কর্তব্য। তারা যা বলতে পারেন, একজন ডিজাইনার সেটাকে ছাপিয়ে নান্দনিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এই আউটডোর স্পেসের মাত্রা কিন্তু অসীম। সেটা হতে পারে সমুদ্রতীরে, বিরাট গলফ পার্কে, কোনো ঐতিহাসিক স্থানে। ডেস্টিনেশন বিয়ের ধারণাও এ ক্ষেত্রে চলে আসতে পারে। কারণ, আগে থেকেই নির্ধারিত বলে তাকে ইনডোরের মাঝেই বিবেচনা করা যায়।
এখানে একজন ডিজাইনারের অনেকখানি কাজের সুযোগ থাকে। একটা শূন্য জায়গার সঙ্গে প্রাকৃতিক দৃশ্য তখন তার মূল হাতিয়ার। আবহাওয়া এবং বর-কনের স্বপ্নকে বাস্তবে নিয়ে আসাটাই তখন প্রধান কাজ। অর্থাৎ, তাদের ইচ্ছের পরিপ্রেক্ষিতে তখন চলে আসবে রঙের ধরন ও প্রাধান্য। অস্থায়ীভাবে নির্মিত অংশও নির্ভর করে এই ধারণার ওপরে। এই যে নির্মাণের কাজ চলে এলো শূন্যস্থানকে ঘিরে, তখন তা কোথায় বসানো যায়, সেই সিদ্ধান্তে সাহায্য করে কোন দিক থেকে বর-কনে আসবেন, কোন দিক থেকে আমন্ত্রিত অতিথিরা আসবেন, কতজন পারিবারিক বা বন্ধুভাবাপন্ন যারা সর্বদা বর-কনের কাছে থাকবেন কিংবা অতিথিদের স্বাগত জানাবেন- এসব তথ্য। কোথায় সবাই খাবেন আর কোথায় বসে ছোট ছোট দল ধরে আড্ডা দেবেন, বুফে নাকি টেবিলে খাবার দিলে অল্প পরিশ্রমে অতিথিরা সাবলীল থাকতে পারবেন, সেটাও তখন প্রাধান্য পেতে থাকে। এসব মিলিয়ে কাজ শুরু করলে দেখা যায়, আউটডোর বা ইনডোর যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক না কেন, বিয়ের মতন একটা পাবলিক ইভেন্ট হলেও ‘পাবলিক’, ‘প্রাইভেট’ এবং ‘সেমি প্রাইভেট’ বলে কিছু অঞ্চল তৈরি হয়। এই বিভাজনের মাঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই একটা বিয়ের অনুষ্ঠান সফল হতে পারে। ভাগ করা এই অঞ্চলগুলোর আরও একটু গভীরে খেয়াল করলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেমন পাবলিক বলতে বোঝানো হচ্ছে জনমানুষ কোন দিক দিয়ে আসবে, গাড়ির পার্কিং কোথায়, কোথায় উপঢৌকন রাখা হবে, কোথায় প্রাথমিক আতিথেয়তা, ছবি তোলার বুথ, টয়লেট ও খাবার জায়গা। সাধারণ অতিথি, যাদের সংখ্যা বেশি- তাদের বিচরণ বেশির ভাগ এগুলোর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে এই কাজগুলো একদিকে সম্পন্ন করানো গেলে একটা পরিচ্ছন্ন পরিভ্রমণ এলাকার সৃষ্টি হয়। সেমি প্রাইভেট হলো বর-কনে যেখানে বসছেন, যেখানে বিশেষ অতিথিরা (বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, দাদা-দাদি, নানা-নানি, উকিল বাপ, কাজি সাহেব প্রমুখ) বসবেন এবং এই বিশেষ অতিথিবৃন্দের জন্য খাওয়ার জায়গা, আলাদা টয়লেট। প্রাইভেট বলতে কনে এবং নারীদের জন্য গ্রিনরুম বা প্রিপারেশন এলাকা ও টয়লেট বোঝানো হয়েছে। এই যে তিনটা আলাদা এলাকা পাওয়া গেল, সেগুলো যদি যথাযথভাবে অঞ্চলভিত্তিক সাজানো যায়, তবে সব অতিথি কিন্তু সজাগ হয়ে যান কোথায় কী আছে বা পাওয়া যাবে। এতে কাউকে ভিড়ের মাঝে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় না।
তাহলে একটি সুন্দর, সৃশঙ্খল বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রথম বিবেচ্য হলো প্রোগ্রামটাকে ভালো করে বোঝা, সাজিয়ে তোলা। জায়গা নির্ধারণ করে, সৃষ্ট জোনগুলোর মধ্যে সংযোগ তৈরি করা। কারণ, শেষাবধি এসব অঞ্চল মিলেই অখন্ড এক অঞ্চলের সৃষ্টি হয়।
ইনডোর বিয়েতে ডিজাইনারের কাজের সুযোগ কম নয়। তবে চ্যালেঞ্জিং। জানাশোনা জায়গাটাকে কী করে রাতারাতি অচেনা ও আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে তোলা যায়, সেই চেষ্টা করতে হয়। এখানেও বিভাজন একই। কিন্তু ছোট ছোট সিদ্ধান্তে আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখা দিতে পারে। যেকোনো ইভেন্ট থিমনির্ভর হলে ডিজাইনার একটি দিশা পান। সেদিক থেকে হলুদ বা বিয়েতে কোন ফুল প্রাধান্য পাচ্ছে, তাকে ঘিরে যেমন কাজ হতে পারে, একই সঙ্গে দেশজ নানা সংস্কৃতিকে তুলে ধরেও সাজানো যেতে পারে। ডিজাইনারের কাজ সাধারণ ভবনকে ক্ষণিকের জন্য অন্য সাজে এবং একই সঙ্গে অন্য এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী করানো, যা বর-কনে চেয়েছেন। যেমন প্রথাগত বিয়েবাড়ির আলোকসজ্জায় দেখা যায়, বহুতল ভবনের ছাদ থেকে মাটি অব্দি ইলেকট্রিক বাতি দিয়ে সাজানো হয়। কিন্তু স্থাপনা যদি সুন্দর হয়, তাহলে এই বিশেষ উদ্যাপনের চিত্র ভিন্ন হবেই। ঐতিহাসিক ভবনে কিংবা ভালো স্থাপনায় বিয়ে হলে বিশেষ কিছু আলোকসজ্জা চোখে পড়ে।

যেখানে পুরো বাড়ি বাতিতে ভরিয়ে না ফেলে একেবারে কিনার দিয়ে সাজানো হয়। ভবনটি কাঠামোর প্রকৃত রূপ নিয়ে ফুটে ওঠে। জানালা, ছাদ, কার্নিশ, বারান্দার রেলিং- এসব জায়গা নান্দনিক হয়ে ওঠে। ছোট ছোট বাতির সচেতন প্রয়োগ গোটা আবহ পাল্টে দিতে পারে। পুরো এলাকা না জ্বালিয়ে যে জায়গাগুলো ফোকাসে রাখার মতন, সেগুলোর কথা ভেবে হরেক রকমের আলোকসজ্জা করা সম্ভব। বিয়ে মানেই ছবি তোলা, আর ছবি মানেই আলো তাই আলোসম্পর্কিত সিদ্ধান্ত বিয়ের অনুষ্ঠানে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এসব মোটা দাগের সিদ্ধান্তের নিচেই থাকে ছোট ছোট অনেক সিদ্ধান্ত। সেগুলোকেও পরম যত্নে সামলে নেন ডিজাইনার। এবং এই খুঁটিনাটি কাজের মাঝেই নিপুণতা অর্জন করা সম্ভব।

 সুপ্রভা জুঁই
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top