skip to Main Content
আত্মঘাতী দুই মার্কিন সেলিব্রিটি

মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আত্মঘাতী হয়েছেন প্রখ্যাত শেফ,ভ্রমণমূলক তথ্যচিত্রনির্মাতা, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও লেখক অ্যান্টনি বৌর্ডেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন ডিজাইনার কেট স্পেড।
রন্ধনশালা থেকে ফ্যাশন, ভ্রমণচিত্র, বিনোদনসহ সংস্কৃতি জগতের দুই আন্তর্জাতিক মানের এই দুই মার্কিন তারকার পরপর আত্মহত্যার ঘটনা নেহাতই কাকতালীয়, নাকি দুটি ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র রয়েছে, তা নিয়ে বিস্তর চর্চা শুরু হয়েছে মার্কিন বিনোদনজগতে। এ নিয়ে যা কিছুই আলোচনা হোক না কেন, দুই মার্কিন সেলিব্রিটির মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র তথা আন্তর্জাতিক বিনোদনজগতের বড়সড় ক্ষতি।
গত ৮ জুন ফ্রান্সের কায়সারবুর্গ শহরে একটি হোটেলের বাথরুম থেকে বৌর্ডেনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসন। এর আগে ৫ জুন নিউইয়র্কের পার্ক অ্যাভিনিউ অ্যাপার্টমেন্টের বেডরুম থেকে উদ্ধার হয় কেট স্পেডের ঝুলন্ত মৃতদেহ।
সিএনএন চ্যানেলের খাদ্য ও ভ্রমণবিষয়ক টেলিভিশন সিরিজ ‘পার্টস আননোন’-এর ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গের ওপর একটি এপিসোডের শুটিং চলাকালীন কায়সারবুর্গ শহরে তিনি আত্মঘাতী হন। তাঁকে মৃত অবস্থায় প্রথম দেখতে পান তাঁর দীর্ঘকালের বন্ধু এইক রিপার্ট। উল্লেখ্য, এরিকও একজন শেফ বা রন্ধনশিল্পী। আর মার্কিন লাইফ স্টাইল ও ফ্যাশনের কিংবদন্তিও সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে আত্মঘাতী হয়েছেন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অ্যান্টনি বৌর্ডেন একাদিক্রমে রন্ধনশিল্পী হিসেবে জগদ্বিখ্যাত, তেমনই টেলিভিশনের উপস্থাপক, ডকু ফিল্মের পরিচালক-উপস্থাপক ও লেখক হিসেবেও তার যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। এমনকি নিউইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকায় স্টাফ এডিটর হিসেবেও তিনি বেশ কিছুটা সময় দায়িত্বভার সামলেছেন। ২০০০ সালে বৌর্ডেনের লেখা ‘কিচেন কনফিডেন্সিয়াল’ বইটি বেস্ট সেলার হয়। ২০০২-০৩ কালপর্বে মার্কিন চ্যানেল ফুড নেটওয়ার্কের ‘আ কুকস ট্যুর’ নামের একটি নন-ফিকশন টিভি সিরিজের মাধ্যমে তিনি প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ট্রাভেল চ্যানেলে তাঁর শো ‘অ্যান্টনি বৌর্ডিন : নো রিজারভেশন’ ২০০৫ থেকে ২০১২ সাল অবধি একনাগাড়ে সম্প্রচারিত হয়েছে। এই টিভি সিরিজের ‘বেইরুট’ এপিসোডের ইসরায়েল-লেবাননের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের নানা মুহূর্ত ফুটে উঠেছিল। এবং এ বিষয়ে অ্যান্টনি বৌর্ডেন ও তাঁর সহযোগীদের নানা অভিজ্ঞতার কথা এই টিভি সিরিজের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন অগণিত দর্শক। বেইরুট এপিসোডটির জন্য এম্মি পুরস্কার অর্জন করেন বৌর্ডেন। চলচ্চিত্রেও তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সখ্য ছিল তাঁর। কয়েকবছর আগে ভিয়েতনামে একটি নুডলস রেস্তোঁরায় ওবামা-বৌর্ডেনকে অনেকটা সময় একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। এই বহুমুখী প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ওবামা। অজস্র নন-ফিকশনের লেখক, টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক, অভিনেতা ও রন্ধনশিল্পী এই ব্যক্তিত্বের জনপ্রিয়তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বরং তাঁর অগণিত গুণমুগ্ধ ও ভক্তরা রয়েছেন বিশ্বজুড়ে। মাত্র ৬১ বছর বয়সে অ্যান্টনির আত্মঘাতী হওয়া তাঁদের কাছে চরম অপ্রত্যাশিত।
অন্যদিকে কেট স্পেড জীবন শুরু করেছিলেন সাধারণ ম্যানহাটনের একটি ঐতিহ্যবাহী নারী পত্রিকার ফ্যাশন বিভাগের চাকরিজীবী হিসেবে। তাঁর আসল নাম কেট ভ্যালেন্টাইন। পরে কেট স্পেড নামে তিনি নিজেই হয়ে উঠলেন ফ্যাশন জগতের কিংবদন্তি। মেয়েদের ফ্যাশনেবল ভ্যানিটি ব্যাগের সম্ভার নিয়ে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু। পরে ভ্যানিটি ব্যাগের পাশাপাশি মেয়েদের জুতা, বেল্ট, ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সামগ্রীসহ নানা পণ্য নিয়ে হাজির হন। এমনকি বুটিকেও নিজের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। নিজের নামেই কেট স্পেড ব্র্যান্ডকে আমেরিকায় ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলেন। অবশ্য ১৯৯৯ সালে নেইমান মার্কাস গ্রুপকে কেটস স্পেড ব্র্যান্ডের অধীন শোরুম, ফ্যাশন হাউজ ও প্রোডাক্টের ৫৬ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে বাকি শেয়ারটুকুও নেইমান মারকাসকে বিক্রি করে দেন কেট ভ্যালেন্টাইন। শেষ জীবনে নিজের মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন কেট। কিন্তু সকলকে হতবাক করে দিয়ে তিনিও আত্মঘাতী হলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top