skip to Main Content

সম্পাদকীয় I স্বাগত ১৪২৮!

বর্ষবরণ ফিরে এলো। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের প্রধান একটি উৎসব। গত বছরের করোনাজনিত বিপর্যয়ের পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা হিসেবে এই অঞ্চলের মানুষ উদ্যাপন করতে যাচ্ছে। প্রেক্ষাপট যদিও বদলায়নি; কেননা, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ নতুন করে প্রবল হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মানুষ এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। বিশেষত কৃষকেরা এই দুর্যোগের মধ্যেও তাদের কর্তব্যে পিছিয়ে পড়েননি; বরং উৎপাদনে আগের চেয়ে সমৃদ্ধ করেছেন দেশকে। অন্যদিকে, অনেক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানও ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে বিগত বছরের ক্ষতি ও সংকট।
আমি ইতিবাচক মানুষ। বারবার বলে আসছি, মানুষের সম্ভাবনা অসীম। কোনো দুর্যোগকেই সে দীর্ঘস্থায়ী হতে দেয় না; বরং নতুন করে তার যে জাগরণটি ঘটে, তাতে আত্মবিশ্বাস ও কর্মস্পৃহা আগের চেয়ে বেড়ে যায় বহুগুণে। যেমন গত বৈশাখে, পৃথিবীব্যাপী লকডাউন চলাকালে অর্থনীতির চালিকাশক্তি, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক আনুষ্ঠানিকতার সবকিছুই বন্ধ ছিল। স্থবির হয়ে পড়েছিল যাবতীয় মানবিক সম্পর্ক। ক্যানভাসও আমরা প্রকাশ করতে পারিনি। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের উৎপাদন বন্ধ হয়নি। কৃষক মাঠের ফসল ঘরে তুলেছেন। জোগান দিয়েছেন খাদ্যের, যখন অন্য অনেক দেশের কৃষি পর্যন্ত স্থবির হয়ে গিয়েছিল। বৈশাখের চিরায়ত উৎসব বাঙালি আগের মতো উদ্যাপন করতে পারেনি বটে, কিন্তু নিজের ঘরের মধ্যে তা উদযাপনের ঘাটতি পড়েনি। আমার বারবার মনে হয়েছে রৌদ্রদগ্ধ ও বৃষ্টিভেজা কৃষকদের সংগ্রামের ছবি। এবারের বর্ষবরণ আমরা কি তাদেরকে উৎসর্গ করতে পারি না?
জাতিগত পরিচয়ের বাহক একটি কথা বহুকাল ধরে প্রচলিত-মাছে ভাতে বাঙালি। দুটিরই প্রাচুর্য ও খাদ্য হিসেবে অপরিহার্যতা বোঝাতে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। একটির অবস্থান স্থলে, আরেকটির জলে। এবারের ক্যানভাসের কভারস্টোরি জলের এই শস্য নিয়ে। শুধু খাদ্য হিসেবে নয়, এই রচনায় মাছের নানা বিষয়, এমনকি মিথ ও লোকশ্রুতি বাদ রাখা হয়নি। আশা করি, পাঠকের কাছে এটি ভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা হিসেবে প্রতিভাত হবে।
বাঙালির সংস্কৃতি-যাপনের অংশ হিসেবে এই সংখ্যায় আরও স্থান পেয়েছে রুটিযুদ্ধ, পান, পাট ইত্যাদি নিয়ে রচনা। রয়েছে জীবন ও শরীর গঠনের উল্লেখযোগ্য সংস্কৃতিচর্চা ব্রতচারীবিষয়ক নিবন্ধ। এ ছাড়া কাঠের বাড়ির চিরায়ত নকশা, ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা গান, ঝড়-বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণে লোকবিশ্বাস, পট-পুতুলের বাংলা, শাড়ির নানান নামকরণ সম্পর্কে রচনাও এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। বাংলাদেশের লোকায়ত দর্শন বাউলগানের তীর্থস্থান লালন সাঁইয়ের ছেঁউড়িয়া নিয়ে একটি ভ্রমণকাহিনি স্থান পেয়েছে ছুটিরঘণ্টা বিভাগে। এ ছাড়া ফ্যাশন ও রূপচর্চাসম্পর্কিত নিয়মিত রচনা তো রয়েছেই। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top