skip to Main Content

টেকসহি I প্ল্যানেট পজিটিভ

আলোর নিচে অন্ধকারের মতোই সৌন্দর্যবিশ্বের রয়েছে ভৌতিক রূপ। কী সেটা? সারিয়ে তোলার কী উপায়?

আমাদের পৃথিবী এখন কোড রেড সিচুয়েশনে। ভুগছে, ভোগাচ্ছে। এমন সময়ে বিউটি প্রডাক্টসের উপাদান নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বিউটি কাউন্সিল। তাদের এক গবেষণায় জানা গেছে, ৪৮ শতাংশ ক্রেতা সৌন্দর্য প্রসাধনের উপাদান সম্পর্কে তথ্য চেয়ে থাকেন। আবার ব্র্যান্ড ভ্যালুও তাদের মনোযোগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে ক্রেতাদের। ব্যবহৃত উপাদান ধরণীর জন্য ক্ষতিকর হলে সেসব প্রসাধন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ক্রেতাকুল। একই সঙ্গে অ্যানিমেল রাইটস গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন ক্রেতারা।
বিউটি প্রডাক্ট তৈরির উপাদানের তালিকা দীর্ঘ। সব উপাদান প্রকৃতির জন্য উপকারী, এমন কিন্তু মোটেই নয়। আবার ত্বকের যত্ন অথবা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেই সেই পণ্যগুলো আদতে পৃথিবীরও ভালো করছে, এমনটা ভাবাও ঠিক হবে না। এ বিষয়ে পরিপূর্ণ গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া চাই।
করোনাকালে সৌন্দর্যবিশ্ব খরার মুখোমুখি হয়েছে। দেখেছে, কীভাবে মানুষ সৌন্দর্য আর যত্ন থেকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। এ সময়কে ‘দ্য গ্রেট পস’ বলা হয়। গ্রেট পস বিউটি ওয়ার্ল্ডের সব ক্রেতাকেও দেখিয়ে দিয়েছে, প্রকৃতি কেমন বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে। যুক্তি দিয়ে ভাবতেও শিখিয়েছে। এখন তাই ক্রেতার মনে হাজারো প্রশ্ন! ন্যাচারাল কি আসলেই ন্যাচারাল? জিরো ওয়াস্ট বলতে ঠিক কী বোঝায়? অর্গানিক কি আদতেই অর্গানিক? এসব শব্দের সঙ্গে পরিচিতি বেড়েছে বর্তমান সময়ের ক্রেতাদের। তাদের কেনাকাটাতেও এসেছে পরিবর্তন। জিরো ওয়েস্ট বিউটি রুটিনে আগ্রহ বাড়ছে সচেতন ক্রেতাদের।
বিউটি ইন্ডাস্ট্রি পরিবেশের প্রতি আদতে কতটুকু সচেতন, সে বিষয়ে যদি কথা বলি, তাহলে বলতে হবে সৌন্দর্যবিশ্ব বেশ খানিকটা অসুন্দর। কেমিক্যাল ইউভি ফিল্টারে কোরাল রিফ ধ্বংস হচ্ছে। প্রতিবছর পৃথিবীজুড়ে তৈরি হচ্ছে ১২০ বিলিয়ন ইউনিট প্লাস্টিক প্যাকেজিং। এর বেশির ভাগই নন-রিসাইকেলেবল।
প্রিয় সৌন্দর্য প্রসাধন অপ্রিয় কাজটা করছে। ক্ষতি করছে আমাদের পৃথিবীর। নির্মম এই সত্যকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। আশার কথা, ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে বিউটি লেবেলগুলোতে। ধরণীর করুণতম আর্তনাদ তাদের কানে পৌঁছেছে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য থেকে পুনঃপুন ব্যবহারযোগ্য করতে মনোযোগী হচ্ছে বিশ্ব। পোস্টকনজ্যুমার রিসাইকেলড প্যাকেজ তৈরি হচ্ছে রিসাইকেলড ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহারে। বেশ কিছু ব্র্যান্ড ওয়াটারলেস ফর্মুলা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছে। এতে পানির ব্যবহার কমে আসবে আশা করা যায়। দ্রুত কমছে আমাদের পানির লেভেল। এমন সময়ে বিকল্প ফর্মুলা আশাব্যঞ্জক। বিউটি জায়ান্ট ল’রিয়েল, ইউনিলিভার, প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বেল পণ্যবর্জ্য কমানোর ক্ষেত্রে সচেতনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অলটারনেটিভ এনার্জির খোঁজে কাজ করছে আর পণ্য তৈরির জন্য নতুন নতুন ইকো ফ্রেন্ডলি ফরমুলেটেড প্রডাক্টস খুঁজে বেড়াচ্ছে।
প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বেল
গিয়ান দি বেল্ডার, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, প্যাকেজিং সাসটেইনেবিলিটি যে প্রজেক্ট দেখেন, সেটির নাম হলি গ্রেইল ২.০। ডিজিটাল ওয়াটার মার্কিং ফর্মুলা ব্যবহার করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্টস বিষয়ে কাজ করছেন তারা। একসময় ধারণা করা হতো, সমুদ্র পৃথিবীর দেওয়া প্রাকৃতিক ব্লু বিন। এখানে তাই জমা হয়েছে সমুদ্রবর্জ্য। যার পরিমাণ অবাক করার মতো। ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে বিউটি ওয়ার্ল্ড। ওয়াটার মার্কিং খালি চোখে দেখা যাবে না, তবে প্রযুক্তির সাহায্যে নির্ণীত হবে। রিসাইকেলেবল কি না, তা জানা যাবে দ্রুত।
কাও
জাপানিজ কোম্পানি কাও অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ব্যবহার করে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে কাজ করছে। রিফিল পাউচ ব্যবহার করে সম্পন্ন হবে এই প্রক্রিয়া। এর নাম দেওয়া হয়েছে এয়ার বটল। পাউচের মধ্যে বাতাস পরিপূর্ণ করে আমাদের চেনা বোতলের মতো আকার তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ওয়েস্ট লেভেল শূন্যের কাছাকাছি থাকে বললেই চলে। আর এই ফর্মুলা ৯৬ থেকে ৯৮ শতাংশ বায়োডিগ্রেডেবল। নন-টক্সিক সাবস্ট্যান্স ২৮ দিনের মধ্যে ডিকম্পোজ করতে পারে বলে কাও টিমের দাবি।
ইউনিলিভার
আমাদের গ্রহের বিপুল পানির মাঝে শুধু ২ দশমিক ৫ শতাংশ সতেজ এবং এর বড় অংশ হিমবাহে আটকে আছে। এই তথ্য ইউনিলিভার প্রিমিয়ামের সিনিয়র মার্কেটিং ডিরেক্টর সোনিকা মালহোত্রার। পানি রক্ষায় তাই পণ্যের ফর্মুলায় পরিবর্তন এনেছে ইউনিলিভার। কনসেনট্রেটেড লন্ড্রি ডিটারজেন্ট যেমন ছোট এক কাপ ব্যবহার করলেই চলছে, তেমনি এবারে শ্যাম্পু আর কন্ডিশনারেও বদল আসতে শুরু করেছে। এখন যে পরিমাণ হেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহারে চুল ধুয়ে নিতে হয়, তার অর্ধেকে সম্পন্ন হবে রোজকার চুলের যত্ন—এমনটাই আশা ইউনিলিভারের।
দ্য এস্টি লডার
রিনিউয়েবল এনার্জি ব্যবহারে কাজ করছে এস্টি লডার। জ্বালানির ব্যবহারে সচেতনতা থেকে ২০১৯ সালে ওকলাহোমার একটি উইন্ড ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্র্যান্ডটি। প্রথম প্রেস্টিজ বিউটি ব্র্যান্ড হিসেবে তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সোলার ফার্ম ইনস্টল করেছে। ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসিলিটিজ, ল্যাব এবং অপারেশনাল বিল্ডিংস বর্তমানে সোলার এনার্জিতে চলছে।
ল’রিয়েল
বিউটি প্রডাক্টে যেসব উপাদান ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর মাঝে পাম অয়েল একটি। কমন এই ইনগ্রেডিয়েন্টের বড় অংশ সংগ্রহ করা হয় মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। তাতে একের পর এক উজাড় হচ্ছে বন। কমছে সবুজের পরিমাণ। রাউন্ডটেবিল অন সাসটেইনেবল পাম অয়েলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শুধু সার্টিফায়েড সাসটেইনেবল পাম অয়েল ব্যবহার করা হবে। ল’রিয়েল মেনে চলছে সেই সিদ্ধান্ত। পাম অয়েলের বন উজাড়ের বিপরীতে শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে তারা।
তথাকথিত বিগ বিউটি ব্র্যান্ডগুলো তাদের প্রডাক্ট লাইনের ব্যাপকতার কারণে বিচারের কাঠগড়ায় বারবার এসে দাঁড়ায় এবং তাদের নিয়ে সমালোচনামুখর হয় সচেতন বিশ্ব, এ কথা সত্যি। তবে তাদের কাছে পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা বেশি আশা করে সবাই। এর কারণ, তাদের টিমে রয়েছেন তুখোড় বিজ্ঞানীরা। যারা কাজ করে যাচ্ছেন পণ্যের মান উন্নয়নে। তেমনি পৃথিবী এবং পৃথিবীবাসীরাও তাদের কাছে ইকো-সংকট কাটিয়ে ওঠার সমাধান চায়।
পণ্য প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদেরও রয়েছে দায়িত্ব। পৃথিবীকে ভালোবেসে তাই জেনে নিতে হবে, কোন ব্র্যান্ড পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধ আচরণ করছে। নিজেদেরও রিসাইকেলের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
 সারাহ্ দীনা
মডেল: মারিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top