skip to Main Content

সেলুলয়েড I ইকিরু

ইংরেজি শিরোনাম: টু লিভ
পরিচালনা: আকিরা কুরোসাওয়া
চিত্রনাট্য: আকিরা কুরোসাওয়া, শিনোবু হাশিমোতো, হিদেয়ো ওগুনি
চিত্রগ্রহণ: আসাকাজু নাকাই
সম্পাদনা: কোইচি আইওয়াশিতা
অভিনয়: তাকাশি শিমুরা, শিনিচি হিমোরি, হারুয়ো তানাকা
সময়ব্যাপ্তি: ১৪৩ মিনিট
ভাষা: জাপানিজ
দেশ: জাপান
মুক্তি: ১৯৫২

জীবনের ত্রিশটি বছর গেছে আমলাতান্ত্রিক কর্মজীবনের একঘেয়ে শৃঙ্খলায়। যখন বার্ধক্য হাজির, চাকরিতে অবসর গ্রহণের সময় আসন্ন, এমন দিনে লোকটি জানতে পারল, শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। আয়ু বড়জোর এক বছর। এত দিনের চিরচেনা গণ্ডি, মৃত স্ত্রীর রেখে যাওয়া নিসঙ্গতাবোধ, পুত্র ও পুত্রবধূর স্বার্থপরতা—সব মিলিয়ে জীবনকে নতুন করে বোঝাপড়ার মুহূর্তে এসে হাজির হয় সে। কিছুতেই মেলে না হিসাব! তাই একদিন বেরিয়ে পড়ে নিরুদ্দেশ। সাধারণত যে উদ্দাম জীবন কাটানোর জন্য যৌবনকেই গণ্য করা হয় মোক্ষম সময়, বার্ধ্যকে এসে সেই কামনা ও উন্মত্ততা ঘেরা উদযাপনের দিকে পা বাড়ায়। সারা রাত মত্ত থাকে পার্টিতে। অফিসে হয়ে পড়ে অনিয়মিত। পানাহার, নারীসঙ্গ ও নাইট ক্লাবের উন্মত্ততা তাকে ক্ষণিকের জন্য কাঙ্ক্ষিত পুলকের অনুভূতি দিলেও একসময় তা-ও ফাঁপা মনে হয়। এরই মধ্যে এক তরুণীর সঙ্গে ঘটে পরিচয়। ঘটে আন্তরিকতা। সেই সম্পর্কও টেকে না বেশি দিন। এই বৃদ্ধ আবারও বুঝে যায়, বাস্তবতার রূঢ় ছোবল কতটা বিষাক্ত হতে পারে!
এরই মধ্যে শহরের এক পরিত্যক্ত ডোবা, যেখানে আবর্জনার স্তূপ, সেটি পরিচ্ছন্ন ও ব্যবহারোপযোগী করার দাবিতে স্থানীয় নারীদের যে আবেদনপত্র দীর্ঘকাল চাপা পড়ে ছিল ফাইলের ভিড়ে, সেই ফাইল একদিন ধূলি ঝেড়ে হাতে তুলে নেয় সে। তাতে নিজের ভেতর ফিরে পায় নতুন এক প্রাণশক্তি। নিজেরই কর্মপ্রতিষ্ঠানের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বহুকাল আটকে থাকা এই ফাইল পাস করানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে সে। ডোবা পরিষ্কার করে সেখানে পার্ক তৈরি করার অনুমোদন পাস করাতে ছুটতে থাকে এক সহকর্মী থেকে আরেক সহকর্মীর কাছে। তার এই খেপাটে লড়াই সবাইকে চমকে দেয়। কেউ কেউ নিরস্ত করার চেষ্টাও চালায়। তবু সে অনড়।
এদিকে অসুখের তীব্রতাও বাড়তে থাকে দিন দিন। ভেতরে-ভেতরে ক্ষয়ে যেতে থাকে সে। মৃত্যু আসন্ন। তবু লড়াকু এই লোক আমলাতান্ত্রিক সব বাধা পেরিয়ে, সেই নোংরা ডোবাকে শিশুদের খেলার পার্কে পরিণত করতে সক্ষম হয়। এক রাতে তুমুল বৃষ্টির ভেতর, সেই পার্কে বসানো এক দোলনায় আপন মনে দুলতে থাকে একা একা, হাশিখুশি। জীবন যেন উদযাপনের পবিত্রতম উদাহরণ হয়ে ধরা দেয় তার কাছে। বস্তুত মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করে সে।
ওয়াতানাবে নামের এই বুড়ো আমলার এত দিনের আত্মিক দারিদ্র্য কাটিয়ে আত্মিক ঐশ্বর্য খুঁজে পাওয়ার মহাকাব্যিক সিনেমা ‘ইকিরু’। লিও তলস্তয়ের ঔপন্যাসিকা ‘দ্য ডেথ অব ইভান ইলিচ’ থেকে আংশিক প্রেরণা নিয়ে তা নির্মাণ করেছেন কিংবদন্তি জাপানি ফিল্মমেকার আকিরা কুরোসাওয়া। সিনেমাটির যে কাহিনিসংক্ষেপ এতক্ষণ শোনানো হলো, এটি মূলত এর প্রথমাংশের। শেষাংশ পুরোটাই এই লোকের মৃত্যুপরবর্তী পারিবারিক শোকসভা ঘিরে। সেখানে ওয়াতানাবে আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশী ও সহকর্মীরা আলোচনায় মেতে ওঠে তার শেষ বয়সের অমন পাগলামি ঘিরে। কেন লোকটা আচমকাই এত উতলা ও একগুঁয়ে হয়ে উঠেছিল পার্ক বানাতে? উত্তর জানা থাকে না তাদের। কেন থাকে না? হয়তো ওয়াতানাবের মতো জীবনের প্রকৃত অর্থ তাদের কাছে এখনো ধরা দেয়নি বলেই!

 আরিফুল ইসলাম

কুইজ
১। ওয়াতানাবের পেশা কী?
[ক] সরকারি আমলা
[খ] বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
[গ] সাংবাদিক
[ঘ] ফটোগ্রাফার

২। ওয়াতানাবে কোন রোগে আক্রান্ত ছিল?
[ক] যক্ষ্মা
[খ] ক্যানসার
[গ] ডেঙ্গু
[ঘ] থ্যালাসেমিয়া

৩। ‘ইকিরু’ কার উপন্যাস থেকে আংশিক প্রেরণা নিয়ে বানানো?
[ক] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
[খ] উমবের্তো ইকো
[গ] লিও তলস্তয়
[ঘ] আর্নেস্ট হেমিংওয়ে

গত পর্বের বিজয়ী

১. রাইসা ইসলাম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম,
২. পারভিন সুলতানা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা,
৩. কামরুল হাসান কামাল, উত্তরা, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top