skip to Main Content

ই-সোসাইটি I ওস্তাদের ওস্তাদি

নানা দেশের মতো বাংলাদেশেও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে বেশ। অনেকেই দক্ষতা বাড়াতে ঘন ঘন অনলাইন কোর্সে নিজেদের যুক্ত করেন। কিন্তু বিভিন্ন তথ্য অনুসারে, দক্ষতা বিকাশের অনলাইন কোর্স শুরু করা প্রতি দশজনের মাত্র একজন তা সম্পন্ন করেন।
কিছুসংখ্যক ব্যক্তি অনলাইন কোর্স শুরু ও সমাপ্তির মধ্যে এই ব্যবধান খেয়াল রাখেন এবং কীভাবে এই গ্যাপ পূরণ করা যায়, তা নিয়ে ভাবেন। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) পাঁচজন সদ্য স্নাতকও সেই দলে। তারা খেয়াল করেন, বাংলাদেশে মানুষের দক্ষতা বিকাশে একটি গুরুতর সমস্যা রয়ে গেছে। শূন্যতা পূরণে দক্ষতা উন্নয়নের প্ল্যাটফর্ম ‘ওস্তাদ’-এর [ostad] ধারণা মাথায় আসার আগে তারা ছিলেন কুয়েটের খানজাহান আলী হলের ৩১২ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা। বলছি আব্দুল্লাহ মুসাব্বির, ফাহিম সিদ্দিক, মৃদুল খন্দকার, শরিফুল মুবিন ও সৌরভ বড়ুয়ার কথা।
শুরুটা ২০২০ সালে। তৎকালীন এই পাঁচ কুয়েট শিক্ষার্থী সহপাঠীদের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের জিজ্ঞাসা ছিল, কেন তারা অনলাইনে দক্ষতা বিকাশের কোর্সগুলো শুরু করার পর সম্পন্ন করেন না। তাদের গবেষণায় দুটি ফলাফল চিহ্নিত হয়েছে। একটি হলো এ ধরনের কোর্স সম্পন্ন করার ব্যাপারে কেউ চাপ না দেওয়ায় একসময় তাদের মধ্যে আলসেমি ভর করে। অন্য কারণটি হলো, শিক্ষার্থীরা কোর্স প্রশিক্ষকদের সঙ্গে লাইভ ইন্টার‌্যাকশনে আগ্রহী। এসব সমস্যা সমাধানে ওই পাঁচ শিক্ষার্থী গড়ে তোলেন ‘ওস্তাদ’। সদ্য স্নাতক করা এবং তরুণ পেশাজীবীদের লাইভ লার্নিং এবং একটি টাস্কভিত্তিক পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে সেরা ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের কাছ থেকে দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স অফার করে এই প্ল্যাটফর্ম।
ওস্তাদের যাত্রা শুরু লাইভ স্ট্রিমিং শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। এখানে সবই শেখানো হয় শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকদের মধ্যে লাইভ ইন্টার‌্যাকশনের মাধ্যমে। যে কেউ যেকোনো জায়গা থেকে তাদের দক্ষতা বিকাশ করতে পারেন। এতে খরচ বাঁচে ৪০ শতাংশ, আর সাপ্তাহিক সাশ্রয় হয় ১০ ঘণ্টা। পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।
ওস্তাদের লক্ষ্য অনলাইন শিক্ষা খাতে ঝরে পড়ার হার কমানো। তাই তারা শিক্ষার্থীদের লাইভ মেকানিজমের আওতায় নিয়ে আসছে। প্রশিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে কোর্সের পাঠ্যক্রম তৈরি করে থাকে ওস্তাদ। যেকোনো কোর্স চালু করার আগে একটি পাঠ্যক্রম তৈরি করতে সাধারণত সময় নেয় তিন-চার মাস। এই প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী এবং চারটি কোর্স নিয়ে। এখন প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী বাড়ছে। কোর্সের সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ২৮-এ।
এর উদ্যোক্তারা এমন একটি নামকরণ করতে চেয়েছিলেন, যার সঙ্গে জনসাধারণ পরিচিত। এভাবেই ‘ওস্তাদ’। তারা বলেন, ‘ওস্তাদের কাছ থেকে শিখে ওস্তাদ হও।’ যেহেতু পাঁচ কো-ফাউন্ডারই ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের, তাই লঞ্চের আগে তারা তেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হননি। এমনকি ঝামেলা ছাড়াই প্রশিক্ষকদের পরিচালনা করেছিলেন। শুরুতে মূলত বিপণনজনিত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাদের।
বাংলাদেশে অনলাইন কোর্সে সাধারণত কোর্সগুলো আগে থেকেই রেকর্ড করা থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় তা চালানো হয়। শিক্ষার্থীরা কোর্সে ভর্তি হলেই ভিডিওতে প্রবেশের সুযোগ পান। এই বাস্তবতায় ওস্তাদ দেশের একাডেমিক বাজারে ‘লাইভ কোর্স’ ও ‘লাইভ ব্যাচ’ শব্দযুগলকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। মার্কেটিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য ওস্তাদের একটি তহবিল দরকার ছিল। এ ক্ষেত্রে শুরুতে স্টিল টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর মোহাম্মাদ মাজের কাছ থেকে ২৫ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হিসেবে পান এর উদ্যোক্তারা।
এরই মধ্যে ওস্তাদ একাধিকবার তহবিল সংগ্রহ করেছে। করোনা অতিমারির দিনে সৃষ্ট সংকটের মধ্যে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একজন অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরের কাছ থেকে বিনিয়োগ হিসেবে পেয়েছে ১২ হাজার মার্কিন ডলার। পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে সোনিয়া বশির কবিরের এসবিকে টেক ভেঞ্চার, মিয়াকো ক্যাপিটাল ও এসওএসভি থেকে ৯০ হাজার মার্কিন ডলার সংগ্রহ করে ওস্তাদ। এসওএসভি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আরও দেড় লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে ওস্তাদে।
স্টার্টআপ মডেলকে ধারণ করে আরও ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে চলছে ওস্তাদের কার্যক্রম।

 লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ওস্তাদের সৌজন্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top