skip to Main Content

ফিচার I উপকারী উপাদান

সবকিছুর বিকল্প রয়েছে, শুধু খোঁজার ক্ষেত্রে চাই মুনশিয়ানা। ঈদ মানেই যেন পদের বাহার। প্রতিটি আইটেমে স্বাস্থ্যসম্মত উপাদান থাকলে শরীর পড়বে না অস্বস্তিতে। ফিকে হবে না ঈদের আনন্দ

ঈদের আনন্দটা প্রথম দিনই বেশি। তবে এই উৎসবের ভোজনসুখ চলতে পারে সপ্তাহজুড়ে। এ সময় ডায়েট ও নিয়ম—সবই ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। তাই ঈদজুড়ে খাওয়ার বিষয়ে চাই সচেতনতা। জিভ সামলাতে পারলে ভালো, নয়তো রান্নায় রাখতে হবে স্বাস্থ্যবান্ধব উপকরণ।
ঈদে সাধারণত এমন কিছু উপাদান ও পদ থাকে, যা সারা বছর খাওয়া হয় না। হুট করে এসব খাবার উদরে সহ্য না-ও হতে পারে। তাই লবণ থেকে তেল—সব উপকরণ হওয়া চাই পাকস্থলীবান্ধব। সেই উদ্দেশ্যে উপকরণ বাছাইয়ে দক্ষতা থাকা জরুরি। যেমন বিরিয়ানি রাঁধতে খাসির চেয়ে মুরগির মাংস শ্রেয়। স্বাদ খাসি বিরিয়ানির মতো না হলেও পদটি স্বাস্থ্যসম্মত। ক্ষতির শঙ্কাও কম।
অনেকে রাইস আইটেম বাদ দেন ঈদের মেনু থেকে। বেছে নেন রুটি। সে ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেতে পারে তন্দুরি। পরোটার তেল থেকে বাঁচতে ঈদের দিনগুলোতে রুটিই হবে স্বাস্থ্যসম্মত। সে ক্ষেত্রে লাল আটাকে ভালো বলেন অনেকে।
কাজুবাদাম, নারকেল কিংবা ক্রিম এড়িয়ে দই অথবা টমেটোর গ্রেভি খাওয়া যেতে পারে। এগুলো স্বাস্থ্যবান্ধব। রেহাই মিলবে গ্যাস্ট্রিক থেকেও। ঈদের পদগুলোর সঙ্গে রাখা যেতে পারে স্যালাদ বা রায়তা। খুশিকে অসুস্থতায় পরিণত করতে না চাইলে কার্বোনেটেড ওয়াটার থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। নিজের জন্য অথবা মেহমান আপ্যায়নে—ঘরে বানানো ফলের শরবতই উত্তম।
পুরো ঈদ উৎসবে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয় তেলের ক্ষেত্রে। পদের সঙ্গে মিলিয়ে তেল ব্যবহার করলে খাবার হবে স্বাস্থ্যসম্মত। যেমন কারির ডিশের জন্য সূর্যমুখী তেল উপাদেয়। স্যালাদ ও বেকড আইটেমে ভালো হবে অলিভ অয়েল। উচ্চ তাপে রাঁধতে হয় এমন পদগুলোর জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে ক্যানোলা তেল। আবার সামান্য ভাজা পদগুলোর জন্য তিলের তেল বেশ উপকারী। বাড়িতে সস তৈরি করলে তাতে মেশানো যেতে পারে এই তেল। গ্রিলিং আইটেমের জন্য ভালো গ্রেপ সিড অয়েল। পুরো ঈদে ঘি, বনস্পতি, সয়াবিন, পাম ও নারকেল তেল কম ব্যবহার করাই মঙ্গল। তবে যে পদই রান্না হোক, তেল দেওয়া চাই পরিমিত।
ঈদ উৎসবে মাংসের পদ থাকে কয়েক প্রকার। এটি যেন এড়ানোর উপায় নেই। সেই মাংস বাছাইয়ে কিছুটা সতর্কতা দরকার। মাংস থেকে যতটা সম্ভব চর্বি ছাড়িয়ে নিতে হবে। মাংস যেন ভালোভাবে সেদ্ধ ও রান্না হয়, সে জন্য টুকরা করতে পারেন ছোট করে।
ঈদের অন্যতম আকর্ষণ মিষ্টান্ন। দুধ ছাড়া এই পদ কল্পনা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে কনডেন্সড মিল্ক ক্ষতিকর। চিনির বদলে মধু কিংবা মিষ্টি ফল ব্যবহার করা যেতে পারে।
সঠিক উপকরণ নির্বাচনের পর রান্নার পদ্ধতিও যেন স্বাস্থ্যসম্মত হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ডুবো তেলে ভাজা পদগুলো কম রেখে সেদ্ধ আইটেম বেশি রাখা যেতে পারে ঈদের ডাইনিংয়ে। তা ছাড়া বেকড ও গ্রিল আইটেমও মোটামুটি স্বাস্থ্যবান্ধব। মাছ ও সবজির পদগুলো বেশি তাপে না রাঁধাই ভালো। অন্যথায় ভিটামিন নষ্ট হয়।
বলা হয়, লবণ ও চিনি—দুটোই বিষ। তাই চিনির মতো লবণ ব্যবহারেও দেখাতে হবে পরিমিতি। ঈদে অতিথিদের স্বাদে মোহিত করতে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করেন অনেকে। এতে দিন শেষে ক্ষতি ছাড়া উপকার মেলে না। তাই এ ধরনের লবণ ব্যবহার না করাই উত্তম। বিকল্প উপায়ে খাবারের স্বাদ বাড়নোর চেষ্টা করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ধনে, মরিচ, পার্সলে কিংবা লেবুর রস পদ বুঝে করতে পারেন ব্যবহার। স্বাদ তো বাড়াবেই, পাশাপাশি এসবের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল ঈদজুড়ে মন-মেজাজ রাখবে ফুরফুরে।
ঈদের দিনে রান্না শেষে টেবিলে মিলবে নানান পদ। কোনটা আগে আর কোনটা পরে খাওয়া হবে, তার ওপরও নির্ভর করবে সুস্থতা। ভারী খাবার খাওয়ার আগে ফল ও সবজির পদ খেয়ে নেওয়াই ভালো। এতে পেট ভরা থাকবে। ফলে তেল-চর্বির পদগুলো খাওয়া পড়বে কম। এ ক্ষেত্রে খাবার শুরু করা যেতে পারে স্যালাদ দিয়ে। এ উদ্দেশ্যে লেটুস, টমেটো, শসা, মরিচ, গাজর, বেবি কর্ন দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে সবজির স্যালাদ। আপেল, নাশপাতি, কমলা, পেঁপে, বেদানা দিয়েও বানানো যেতে পারে। এই স্যালাদ আগ্রহ নিয়ে খেতে পারবে শিশুরা। এর সঙ্গে কিছুটা চাট মসলা মিশিয়ে নিলে স্বাদ হবে দ্বিগুণ। প্রশংসিত হবেন রাঁধুনি।
স্যালাদ খাওয়া হয়ে গেলে পাতে তোলা যেতে পারে মেইন ডিশ। সেগুলো খাওয়াতেও বুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। ঈদ মৌসুমে যেহেতু টানা ৬-৭ দিন ভালোমন্দ খেতে হয়, তাই থালা ভর্তি করে খাবার না নিয়ে অল্প করে খাওয়া শ্রেয়। থালার খাবার শেষ হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার না নেওয়াই উত্তম। তবে লোভ সামলাতে না পারলে ৪-৫ ঘণ্টা পর আবার খাওয়া যেতে পারে। মানে অল্প অল্প করে বারবার খেলে পাকস্থলীর ওপর চাপ পড়বে কম। ভারী খাদ্য গ্রহণজনিত অস্বস্তি থেকেও রেহাই মিলবে।
আগেই বলা হয়েছে কার্বোনেটেড পানীয় এড়ানোর কথা। সাধারণত ভারী খাবার হজমের স্বার্থে এসব পান করা হয়। তবে বিকল্প উপাদানে তৈরি পানীয় দিয়ে হজমশক্তির উন্নতি ঘটানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে জিরা পানি, ঘোল, দই-পুদিনার শরবত, কমলার রস, লেবুর শরবত, কফি, আদা-লেবু-পুদিনা মিশ্রিত চা, হারবাল চা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এগুলোও খাবার হজমে সহায়ক।
শেষ পাতে মিষ্টি। ঈদের কয়েক দিন চিনির ওপর অবরোধ তুলে নেন অনেকে। শরীর কিন্তু উৎসব বোঝে না। ফলে এ সময় বেশি চিনিযুক্ত ডেজার্ট ডেকে আনতে পারে ঝুঁকি। জিভের লাগাম টানতে হবে কৌশলে। তাই ডেজার্ট তৈরির সময়ই কম ঘি ও চিনি ব্যবহার করা ভালো।
খাদ্য উপভোগ করার জন্য নিয়ম মেনে খাওয়া দরকার। তা ছাড়া খাওয়ার আগে-পরের কিছু রীতি মানলে খাদ্য উপভোগ করা যাবে। নয়তো শরীর পড়বে অস্বস্তিতে। সে ক্ষেত্রে ফিকে হবে ঈদের আনন্দ। তাই সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প উপাদান যোগে পদ তৈরি করে, নিয়ম মেনে রেঁধে ও খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়া চাই।

 আহমেদ সজিব
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top