skip to Main Content

ফিচার I কোয়াইট লাক্সারি

শুধু ট্রেন্ড নয়, লাইফস্টাইলও। নিউ এইজ মিনিমালিজমের নতুনতর রূপ। মজেছেন সুপারমডেল আর সেলিব্রিটিরাও

নিউ ফ্যাশন ইডিয়ম ‘কোয়াইট লাক্সারি’। ২০২৩ সালের অটাম-উইন্টারের কালেকশনে নতুন এই ফ্যাশন অ্যাসথেটিক দাপিয়ে বেড়িয়েছে রানওয়ে। বর্তমান পৃথিবীর ফাইন্যান্সিয়াল ক্লাইমেটের প্রভাব পষ্ট ফ্যাশন জগতে। যার প্রতিফলন কোয়াইট লাক্সারির। পাশাপাশি ডিজাইনার ফোয়িবো ফিলোর বিশেষ ভূমিকা খুঁজে পাওয়া গেছে এই ট্রেন্ডের জনপ্রিয়তার পেছনে।
নিউ এইজ মিনিমালিজম বলা যেতে পারে এই ট্রেন্ডকে। মূল বিষয় হচ্ছে ফোকাস থাকতে হবে হাই কোয়ালিটি ম্যাটেরিয়ালে তৈরি ইনভেস্টমেন্ট পিস কেনায়। তৈরি করতে হবে থটফুল শপিং হ্যাবিট। মিনিমালিস্ট মুভমেন্টের সঙ্গে অ্যাসথেটিক্যালি মিল আছে কোয়াইট লাক্সারি ভাবনার। ফ্যাশনের মূল নির্ভরশীলতা অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থায়। এর বাইরে গিয়ে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট এস্টাবলিশ করা বাস্তবসম্মত নয়। এই নীতিই মেনে চলে কোয়াইট লাক্সারি ট্রেন্ড। ইজি এলিগেন্সে আগ্রহীদের জন্য দারুণ অপশন এটি।
ট্রেন্ডটি প্রথম নজরে আসে ২০১৯ সালে। অভিনয়শিল্পী কেটি হোমস পাপারাজ্জির ফটোগ্রাফে ধরা পড়েন কেইট ব্র্যান্ডের ওটমিল রঙা কার্ডিগান ও ব্রালেটে। একদমই সাদাসিধে এই পোশাকে তার ছবি ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়। যার সাটেল সেক্সিনেসে মুগ্ধ হন নেটিজেনরা। এফোর্টলেস কিন্তু শিক এই লুক নজর কেড়ে নেয় সবার। কোয়াইট লাক্সারির নাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে সর্বত্র। সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল টিকটকের বদৌলতে নতুন করে ফিরেছে ট্রেন্ডটি। আবার এইচবিওর সিরিজ ‘সাসপেন্স’-এও দেখা গেছে। ব্রিটিশ ডিজাইনার ফোবিও ফিলোও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ফিলোর মিনিমালিস্ট মাইডাস টাচ দেখা যায় তার নতুন ডিজাইনে। ফ্রি ফ্যাশন সার্চ ইঞ্জিন ট্যাগওয়াকের মতে এবারের ফল/উইন্টার কালেকশনে দেখা যায় কালো, সাদা, কালো, বেইজের আধিক্য। ফিলোর ফেভারিট কালার প্যালেট হিসেবে ইতিমধ্যে এ রংগুলো পরিচিতি পেয়েছে। আর কোয়াইট লাক্সারির ট্রেন্ডকে ডিফাইন করতেও এ রংগুলো যথেষ্ট।
ফাস্ট ফ্যাশনের বিপরীত মতবাদের অ্যাসথেটিক এটি। রং এখানে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফ্লাশি কালারে বিগ নো। সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে নিউট্রাল কালার। স্পেসিফিকেশনে বলতে হবে বেইজের কথা। বোল্ড কালারের ক্ষেত্রেও বিগ নো। কালার প্যালেটে নতুনত্ব নজর কাড়বে। কালারের পাশাপাশি টেক্সচারের বিভিন্নতাও দেখা যাবে। শুধু সলিড নয়, সেলফ টেক্সচারড ফ্যাব্রিকও এই ট্রেন্ডের অন্তর্ভুক্ত।
কোয়াইট লাক্সারি ট্রেন্ড মানেই চাই হাই কোয়ালিটির ফ্যাব্রিকে তৈরি পোশাক; যেকোনো বুননের ফ্যাব্রিকে নৈবচ! ক্যাশমেয়ার, সিল্ক, লিনেনে আস্থা রাখতে হবে এই ট্রেন্ড মেনে স্টাইলিং করতে হলে। কারণ, এসব কাপড় ব্যবহারে পোশাকের ডিটেইলিং সুন্দরভাবে দৃশ্যমান হয়।
বেশ কিছু ফ্যাশন লেবেলে ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে লাক্সারির এই নতুন ধারার প্রভাব। তালিকায় আছে দ্য র, টোটেম আর টোভ। ব্র্যান্ডগুলো টেইলরিংয়ে সর্বাধিক খেয়াল রেখে তৈরি করছে প্রতিটি পণ্য। র নিয়ে এসেছে স্ট্রাপলেস উলেন টপ, জার্সি ড্রেস, জার্সি মিডি স্কার্ট। অ্যাকসেসরিজে লেদার টোটও মিলবে। আর আছে লেদার স্যান্ডেল। ব্র্যান্ড কেইটের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে ক্যাশমেয়ার সোয়েটার, জার্সি বডিস্যুট, ফ্রেইড জিনস, হল্টার মিডি ড্রেস। এই তালিকা আরও লম্বা। বলতে হয় ব্র্যান্ড ম্যাক্স মারার কথাও। তারা তৈরি করছে উলেন ব্লেন্ড ব্লেজার, ওভারসাইজড বাটন আপ, স্ট্রেইট লেগ ট্রাউজার, উল এবং ক্যাশমেয়ার কোট।
লন্ডনের ব্র্যান্ড টোভ এবারের লন্ডন ফ্যাশন উইকের অটাম/উইন্টার ২৩ কালেকশনে প্রদর্শন করেছে রিফাইন্ড রেডি টু ওয়্যার লাইন। এ সময়ে মিলান, গুচি তাদের মনোগ্রাম ইনফিউসড ম্যাক্সিমালিজম থেকে সরে এসেছে। বরং নজর কেড়েছে তাদের শ্যাম্পেইন নিট ড্রেস এবং বক্সি ব্লেজার। লোগোমেনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত লাক্সারি রিলেটেড এই ফ্যাশন ধারা। দীর্ঘ সময় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে লোগোর উপস্থিতি নিয়ে কাজ করেছেন ডিজাইনাররা। নামীদামি ফ্যাশন লেবেলের প্রোডাক্টে দেখা গেছে লোগো ব্যবহারের আধিক্য। প্রিন্ট, মেটাল—সবখানে। আর কোয়াইট লাক্সারিতে মনোগ্রামের উপস্থিতি এবং লোগোর এমবেলিশমেন্টকে ছাপিয়ে গেছে ‘ইফ ইউ নো ইউ নো’ ভাইব। কোনো প্রকাশ্য উপস্থাপন নেই, নীরব জয়যাত্রা।
ফ্যাশনের সহজলভ্য বিলাসিতায় আগ্রহী হয়েছেন আধুনিক দুনিয়ার মানুষেরা। নন-লাক্সারিতে কমেছে মনোযোগ। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে টাইমলেস সফিস্টিকেশন। কোয়াইট লাক্সারির মূল ভিত্তি ‘লেস ইজ মোর’। সেই সঙ্গে হাইয়েস্ট কোয়ালিটির পোশাক বেছে নিতে হবে হাজার অপশনের মধ্য থেকে।
কোয়াইট লাক্সারি আর এলিগেন্সকে মিলিয়ে ফেলার মতো অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে; পার্থক্যও আছে। ফ্লেক্সিবিলিটি কম এখানে। বরং কালার প্যালেট আর ফ্যাব্রিকের ওপরই দেওয়া হয় প্রাধান্য। ডিটেইলসে ফোকাসড থাকতে হয়। টেইলরিং ও ম্যাটেরিয়ালসের ক্ষেত্রে বেছে নিতে হয় প্রিমিয়াম কোয়ালিটিরটা। দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী কি না, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। অল্প সময়ের তুষ্টি কোয়াইট লাক্সারির জন্য নয়। স্টাইলিংয়ের সময় ওয়্যারড্রোবে যা আছে, সেটাকেই প্রাধান্য দিতে হয় বেশি। সঙ্গে প্রয়োজনীয় কিছু দরকার হলে শুধু সেটাই কেনার পরামর্শ এক্সপার্টদের।

 সারাহ্ দীনা
মডেল: মাশিয়াত
মেকওভার: পারসেনা
ওয়্যারড্রোব: অরনেট
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top