skip to Main Content

ফরহিম I কেমেক্সফোলিয়েশন

কেমিক্যালনির্ভর এই ট্রিটমেন্টে কৌতূহল বাড়ছে সৌন্দর্যসচেতন পুরুষদেরও। খানিকটা সংশয় রয়েছে বটে। তবে সাবধানতা অবলম্বনে দারুণ ফলপ্রসূ

ত্বকযত্নের অন্যান্য পণ্যের মতো অসংখ্য বিকল্প রয়েছে এক্সফোলিয়েন্টের। তবে সব কটি ধরনের মধ্যে ইদানীং খুব জনপ্রিয় কেমিক্যাল পিল। নাম শুনে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর মনে হলেও ব্যাপারটি তেমন নয়। বহু বছর ধরেই বিভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে ত্বকের পুনরুজ্জীবনের জন্য অনেকে বেছে নিচ্ছেন এ প্রক্রিয়া। তবে কতটা নিরাপদ এবং কী ধরনের ফলাফল পাওয়া যেতে পারে, তা বুঝতে প্রথমেই জানতে হবে কেমিক্যাল পিলের খুঁটিনাটি।
ত্বকের উপরিভাগে ব্রণ, হাইপারপিগমেন্টেশন, সূক্ষ্ম রেখা কিংবা বলিরেখা থাকলেও এর ঠিক নিচের স্তরেই রয়েছে সতেজ, মসৃণ ত্বক। প্রতিদিন জমতে থাকা মৃতকোষে যা ঢাকা পড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কেমিক্যাল পিল ত্বকের অভ্যন্তরীণ এই সতেজ স্তর বের করে আনতে সাহায্য করতে পারে। তবে এ প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার হয় বলে সামান্য ভুলে এটি ত্বকের ভেতর-বাইরের দুটো স্তরেই করতে পারে ক্ষতি। পুরুষদের ত্বকে কেমিক্যাল পিলিং সানট্যান, পিগমেন্টেশনের সমস্যা, এমনকি দাগছোপ দূর করার ক্ষেত্রেও কার্যকর। এ ক্ষেত্রে ত্বকের ধরন, সমস্যা এবং সেটি কতটা গুরুতর, সেসব অনুযায়ী বেছে নেওয়া চাই সুপারফিশিয়াল, মিডিয়াম কিংবা ডিপ পিল।
সুপারফিশিয়াল কেমিক্যাল পিলের মধ্যে থাকে গ্লাইকোলিক, স্যালিসাইলিক, রেটিনোয়িক ও ম্যান্ডেলিক অ্যাসিডের মতো রাসায়নিক। এর সব কটিই ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে বিবেচিত। এই ধরনের কেমিক্যাল পিল ত্বকের ওপর খুব হালকা এবং সাধারণত শুধু এপিডার্মিস বা ত্বকের বাইরের স্তরেই প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে মিডিয়াম কেমিক্যাল পিল কাজ করে আরও একটু গভীরে। এই পিল ত্বকের ভেতরের স্তরের অর্থাৎ ডার্মিসের সমস্যাযুক্ত বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করে সেগুলোর প্রতিকারে সহায়তা করে। যার ব্যবহার বলিরেখা ও সূক্ষ্ম রেখার মতো বয়সের স্বাভাবিক চিহ্নগুলোকে সারিয়ে তোলে। মিডিয়াম পিলের মধ্যে থাকে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। সবশেষে, ডিপ পিলিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের উপাদানগুলো ত্বকের একদম মাঝের স্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ফটো এজিং, তীব্র বলিরেখা কিংবা কঠিন দাগ দূর করতে সাহায্য করে। তবে ডিপ কেমিক্যাল পিল যতটা কার্যকর, ঠিক ততই ব্যয়বহুল। সে জন্য ত্বকের কোন সমস্যার ক্ষেত্রে কোনটি বেছে নেওয়া প্রয়োজন, তা জানা জরুরি।
ব্রণ ও ব্রণের দাগ
ছেলেদের ব্রণ কিংবা অ্যাকনে সমস্যার ক্ষেত্রে সুপারফিশিয়াল কিংবা মিডিয়াম ডেপথ কেমিক্যাল পিল কার্যকর। এ প্রক্রিয়ায় খুব বেশি খরচ নেই। ব্যবহারও নিরাপদ। ত্বকের মৃতকোষ, জীবাণু আর স্বাভাবিক তেল একত্র হয়ে যে অ্যাকনে তৈরি হয়, তার প্রতিকারে এই কেমিক্যাল পিল সাহায্য করে। এ ছাড়া পোর সাইজ ছোট করে আনতে এবং সিবাম উৎপাদন কমাতেও দারুণ। যেকোনো ধরনের প্রদাহ বা জীবাণু সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষমতাও আছে এগুলোর। ৪৫ জন পুরুষ ও নারীর ওপর করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ও স্যালিসাইলিক অ্যাসিডের সঙ্গে ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড ও ফাইটিক অ্যাসিডের ব্যবহার ১২ সপ্তাহের মধ্যে ত্বকের অ্যাকনে সমস্যা একেবারে কমিয়ে আনতে পারে। আর এসব উপাদানেই তৈরি হয় কেমিক্যাল পিল। শুধু অ্যাকনে প্রতিরোধেই নয়, এর ফলে সৃষ্ট দাগ দূর করতেও সাহায্য করে এর ব্যবহার। ত্বকে যদি ইনফ্ল্যামেটরি অ্যাকনের প্রবণতা বেশি থাকে, সে ক্ষেত্রে স্যালিসাইলিক ও ম্যান্ডেলিক অ্যাসিডের মিশ্রণে তৈরি কেমিক্যাল পিল ব্যবহার বেশি কার্যকর।
বলিরেখা
বার্ধক্যজনিত বলিরেখা কিংবা ত্বকের ফাইন লাইন দূর করতে ডিপ কেমিক্যাল পিল জাদুকরি। এ ছাড়া ফটো এজিং রোধ করতেও ব্যবহারের পরামর্শ দেন অনেক ডার্মাটোলজিস্ট। ফেনল ও ক্রোটন তেলের সংমিশ্রণে তৈরি ডিপ কেমিক্যাল পিল ত্বকের গভীরে গিয়ে ডার্মিস ও এপিডার্মিসের অংশ বের করে আনতে সক্ষম। খানিক ভীতিকর শোনালেও ত্বকের জন্য খুব উপকারী। এটি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বকে ইলাস্টিসিটি বজায় রাখতে জরুরি। চেহারার বার্ধক্য রোধে।
মেলাজমা
মেছতা নামেও পরিচিত। পুরুষদের জন্য তৈরি কেমিক্যাল পিল এই সমস্যা কমিয়ে আনতে বেশ উপকারী। ত্বকের মেলানিন অপসারণের জন্য জনপ্রিয় এ প্রক্রিয়া। পাশাপাশি ত্বকের টোন ও টেক্সচার উন্নত করতেও সক্ষম। কেমিক্যাল পিলে থাকা ইকোলিক অ্যাসিডের মতো আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড মেলাজমা রোধে ত্বকের পিলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। একইভাবে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, ট্রেটিনোয়িন এবং ল্যাকটিক অ্যাসিডও কার্যকর এমনতর ত্বক সমস্যায়।
কেমিক্যাল পিলিংয়ের সময়
সুপারফিশিয়াল বা মিডিয়াম পিলিং ব্যবহারের প্রক্রিয়ায় ত্বকে খুব গুরুতর কোনো প্রভাব পড়ে না। তবে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহারের আগে ত্বকের শুষ্কতা আর পোরের অবস্থা পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। খুব বেশি শুষ্ক না হলে আর পোর ওপেন না থাকলে এর পরপরই হাইড্রোকুইনোন বা টপিক্যাল রেটিনয়েড দিয়ে ত্বককে পিলের জন্য প্রস্তুত করে নেওয়া হয়। এটি প্রদাহজনিত হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে সহায়ক। তারপর গ্লাইকোলিক অ্যাসিড একটি তুলার প্যাড বা ব্রাশ দিয়ে পুরো মুখে প্রয়োগ করা হয়। তবে যেকোনো কেমিক্যাল ত্বকে দেওয়ার আগে খুব ভালোভাবে নাক আর ঠোঁটের চারপাশ পরিষ্কার করে নেওয়া জরুরি। তিন থেকে পাঁচ মিনিট পর এটি ত্বক থেকে তুলে ফেলা হয়। অন্তত ১৫ দিন পরপর চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করা হয় এই প্রক্রিয়া। ত্বকে পছন্দসই ফল পাওয়া অব্দি।
ডিপ কেমিক্যাল পিলের ক্ষেত্রে সাধারণত অ্যানেসথেসিয়ার ব্যবহার হয়। এ ক্ষেত্রেও ত্বক খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। অ্যানেসথেসিয়া কার্যকর হলেই ত্বকের ওপর খুব দ্রুত ও সমানভাবে কেমিক্যালটি মাখিয়ে নেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় পর শুকিয়ে গেলে সাবধানী হাতে পিলিং প্রক্রিয়া সেরে নেন ডার্মাটোলজিস্ট। এরপর নতুন ত্বকে যেকোনো ধরনের প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া রোধের জন্য প্রয়োগ করা হয় কোল্ড কম্প্রেস। এটি লোশন কিংবা ক্রিম দিয়েও করা যায়। অনেক সময় ডিপ পিলের ক্ষেত্রে ত্বকে ক্ষতও তৈরি হতে পারে, যার জন্য প্রয়োজন হয় আলাদা ড্রেসিং।
কেমিক্যাল পিলিংয়ের পর
ধরন অনুযায়ী ডার্মাটোলজিস্টরা সাধারণত এক থেকে সাত দিনের সময় দিয়ে থাকেন পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য। এই সময়ে, ত্বকে লালচে ভাব এবং সামান্য স্কেলিং হতে পারে, যা খুব স্বাভাবিক। এগুলোই প্রমাণ করে, ত্বকে কেমিক্যাল পিল কাজ করছে। এই সময়ে সঠিক ময়শ্চারাইজার ও পরিমিত পরিমাণে সানস্ক্রিনের ব্যবহার ত্বক সেরে ওঠার প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। মিডিয়াম পিলের ক্ষেত্রে সাধারণত সাত থেকে চৌদ্দ দিন সময় ধরে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে লালচে ভাব আর স্কেলিংয়ের পাশাপাশি চোখের পাতায়ও কিছুটা ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। যেহেতু ডিপ পিল ত্বকের অনেক গভীরে প্রবেশ করে, তাই এই প্রক্রিয়ার পর ত্বকে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে রাখা হয় এবং এটি সেরে উঠতে বেশ সময় নেয়। যত্নও নিতে হয় নিয়ম করে। প্রতিদিন চার থেকে ছয়বার এই ব্যান্ডেজ ওপর থেকে ভিজিয়ে নিতে হয়; কেননা এর ভেতরে থাকা অয়েন্টমেন্ট কাজ করে অন্তত ১৪ দিন ধরে। ব্যান্ডেজ খুলে ফেলার পরে ত্বক স্বাভাবিক হতে আরও কিছুটা সময় লাগে। সেই সঙ্গে নিয়ম করে খুব ঘন ঘন ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হয়।

 শিরীন অন্যা
মডেল: রাফি
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top