skip to Main Content

কুন্তলকাহন I হেয়ার সাইক্লিং

স্কিন সাইক্লিংয়ের অনুপ্রেরণায়। শ্যাম্পু, কন্ডিশনার আর স্টাইলারের সমন্বয়ে চুলচর্চার ট্রেন্ডিং রুটিন

বাথরুমে বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পু রাখতে যারা অভ্যস্ত; যেমন, একটি চুল পরিষ্কার করার জন্য তো আরেকটি চুলের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বাড়ানোর জন্য, অথবা একটি অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ তো আরেকটি অ্যান্টি-ফ্রিজ শ্যাম্পু—ধরে নিতে হবে, হেয়ার সাইক্লিং টিকটকে ট্রেন্ডি হওয়ার আগেই এই প্রক্রিয়ায় তারা এক ধাপ এগিয়ে। ডার্মাটোলজিস্ট অনুমোদিত স্কিন সাইক্লিংয়ের প্রেরণায় চুলের যত্নে হেয়ার সাইক্লিং নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে গেল বছর থেকে।
সহজ কথায় হেয়ার সাইক্লিং হলো চুলে ও স্ক্যাল্পে একাধিক পণ্য ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখার সর্বোত্তম চেষ্টা। পুরো প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ধাপে যতবার চুল ধোয়া হবে, ততবারই একটি লক্ষ্য অর্জিত হবে। উদাহরণস্বরূপ, সাইকেলের প্রথম ধাপে চুলে ও স্ক্যাল্পে জমে থাকা ময়লা দূর করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। দ্বিতীয় ধাপে চুলের আর্দ্রতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালানো যায়। সাইকেলের মাঝে কিছুদিন বিশ্রামের জন্য সময় রাখা চাই। তখন চুল ধোয়া বা কন্ডিশনিং থেকে বিরত থাকতে হবে। সে সময় চুলে থাকা প্রাকৃতিক তেল পুষ্টি সঞ্চারের কাজ করবে।
চুল ও স্ক্যাল্পের অবস্থা খুব স্বাভাবিকভাবে জলবায়ু, আবহাওয়া, খাদ্য, হরমোনের ওপর নির্ভর করে। তাই বিভিন্ন প্রোডাক্ট মিলিয়ে ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য বজায় থাকবে। দেখাবে উজ্জ্বল। হেয়ার সাইক্লিংয়ের কিছু সুবিধার মাঝে উল্লেখযোগ্য:

 এটি মাথার ত্বকে যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমিয়ে আনতে পারে।
 হেয়ার সাইক্লিং মাথার ত্বকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যাতে স্ক্যাল্পে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া না হয়।
 যারা একই সঙ্গে ফ্রিজি ও ডিহাইড্রেটেড চুলের সমস্যায় ভুগছেন, তারা দুটি পৃথক ওয়াশে ভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করে নিতে পারবেন।
 ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহারে একটি রুটিন মেনে চললে চুলের ত্বক বেশি সুস্থ থাকবে। কারণ, এটি যেকোনো প্রোডাক্টের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমায়।
 চুলে খুশকির সমস্যা থাকলে হেয়ার সাইক্লিং আশীর্বাদ। কারণ, একটি অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুর পাশাপাশি একটি নারিশিং শ্যাম্পুও ব্যবহার করা হবে এই প্রক্রিয়ায়।
 সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, চুল কিংবা স্ক্যাল্পের ধরন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় সুবিধামতো সাইকেল তৈরি করে নেওয়া যাবে।

স্কিন সাইক্লিংয়ের মতো হেয়ার সাইক্লিংয়ের জন্য কোনো সর্বজনীন প্রটোকল নেই। এটি মাথার ত্বক, চুলের ধরন, স্টাইলিং ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। বলা যায়, এ এক স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া। আর কোনো ধরনের পণ্য সবচেয়ে ভালো কাজ করবে, তা বুঝতে চুলের প্রাকৃতিক গঠন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হেয়ার সাইক্লিংয়ের সহজ আরও তিনটি ধাপ হলো:
ফার্স্ট ওয়াশ: ডিটক্সিং ও ময়শ্চারাইজিং
হেয়ার সাইক্লিংয়ে প্রতিবার চুল ধোয়ার সময় একটি ভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহৃত হয়। চুল কতবার ধোয়া হবে, তার ওপরেও সাইক্লিং প্রক্রিয়া নির্ভর করে। অতিরিক্ত তেল-ময়লা পরিষ্কার করে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুলকে ডিটক্স ও ময়শ্চারাইজ করা যায়। এরপর চুলের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে ব্যবহার করা যেতে পারে একটি হেয়ার মাস্ক। সঙ্গে স্ক্যাল্পে যেকোনো ভালো মানের সেরাম।
সেকেন্ড ওয়াশ: রিপেয়ারিং
যাদের চুল শুষ্ক, ক্ষতিগ্রস্ত, কালার বা ডাই করা, তাদের জন্য বন্ড-বিল্ডিং পণ্যগুলোর অন্তর্ভুক্তি জরুরি। এগুলো চুলের গোড়াকে শক্তিশালী এবং প্রয়োজনীয় শক্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে।
থার্ড ওয়াশ: টার্গেটিং অ্যান্ড হাইড্রেটিং
সাধারণত তৃতীয় ওয়াশটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে চুলের ধরন ও প্রয়োজনের ওপর। এ পর্যায়ে এমন একটি শ্যাম্পু দরকার, যেটি নির্দিষ্টভাবে চুলের প্রয়োজনীয়তা ও সমস্যা বুঝে সমাধান করতে পারে। অর্থাৎ যদি অনুজ্জ্বলতা কিংবা ফ্রিজিনেস থাকে, তাহলে ব্যবহার করা যেতে পারে একটি নারিশিং ও ময়শ্চারাইজিং শ্যাম্পু। খুশকির সমস্যা থাকলে বেছে নিতে হবে ভালো মানের অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু। তৃতীয় ওয়াশের পর অবশ্যই একটি লিভ ইন কন্ডিশনার এবং হেয়ারস্টাইল অনুযায়ী ভালো হেয়ার ক্রিম ব্যবহার জরুরি। আর শীতের সময় হলে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার ময়শ্চারাইজিং মাস্ক ব্যবহার করতেই হবে। কেননা এই সময়ে স্ক্যাল্প বেশি শুষ্ক থাকে।
হেয়ার সাইক্লিং যে কারও জন্যই উপযোগী। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা ঘন ঘন চুল ধুয়ে নিতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন না, তাদের জন্য এই প্রক্রিয়া অনুপযুক্ত। যারা সপ্তাহে একবার অথবা এর চেয়েও কম সময় চুল ধুয়ে থাকেন, তাদের জন্য এই প্রক্রিয়া কার্যকর হবে না; বরং যারা সপ্তাহে দু-তিনবার চুল ধুয়ে থাকেন, এটি তাদের জন্যই। এ ছাড়া যাদের স্ক্যাল্পে একজিমা বা সেবোরিয়েক ডার্মাটাইটিসের মতো সমস্যা রয়েছে, তাদের হেয়ার সাইক্লিংয়ের রুটিন ঠিক করার আগে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যারা চুল নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন, স্টাইল করা এমনকি ব্রাশ করাও কঠিন মনে হয়, তাদের নিস্তেজ অনুজ্জ্বল চুলের স্বাস্থ্যকে উন্নত করার একটি উপায় হতে পারে হেয়ার সাইক্লিং। রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এ এক দুর্দান্ত পদ্ধতি হলেও তার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। কোনো রুটিন নির্ধারণের আগে চেষ্টা করতে হবে একটি ট্রায়াল অ্যান্ড রান পদ্ধতি চালানোর। অতিরিক্ত ক্ল্যারিফাইয়িং শ্যাম্পু বা স্ক্রাব ব্যবহার করলে স্ক্যাল্প অনেক বেশি শুষ্ক হতে পারে। অন্যদিকে কন্ডিশনারের অত্যধিক ব্যবহার চুলকে তেলতেলে ও আঠালো করে তুলতে পারে। তাই বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে চুলে ও স্ক্যাল্পে আসলেই কী প্রয়োজন এবং ব্যবহার করা প্র্রোডাক্ট সেই প্রয়োজন মেটাতে পারছে কি না। যদি হেয়ার সাইক্লিংয়ের মাধ্যমেও চুলের সমস্যার সমাধান না হয়, অর্থাৎ অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা, কিংবা খুশকির সমস্যা থেকেই যায়, তবে দেরি না করে ভালো একজন হেয়ার স্পেশালিস্ট কিংবা ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ জরুরি।

 শিরীন অন্যা
মডেল: অন্তরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top