skip to Main Content

দেহযতন I ওয়াটার অ্যারোবিকস

মজার ছলে ব্যায়াম। পানিতে নেমে। এক অন্য রকম রোমাঞ্চে ঠাসা। উপকারীও খুব

ডুব দিন ওয়াটার অ্যারোবিকসে। এই কম-প্রভাবক ওয়ার্কআউট পেশিশক্তি জোরালো করবে; বাড়াবে সহনশীলতা। এটি একটি ফান ওয়ার্কআউট। চাইলেই পছন্দমতো চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন। ওয়াটার অ্যারোবিকস ক্লাস সাধারণত ঘণ্টাব্যাপী হয়ে থাকে। একজন প্রশিক্ষক বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে নেতৃত্ব দেন। অংশগ্রহণকারীদের অনুপ্রাণিত রাখতে প্রায়শই সেট করা হয় মিউজিক।
প্রতিটি ওয়াটার অ্যারোবিকস ক্লাসে ওয়ার্মআপ, কার্ডিও আর স্ট্রেন্থ ট্রেনিং ব্যায়াম এবং একটি কুলডাউন সিগমেন্ট অন্তর্ভুক্ত থাকে। ওয়াটার ওয়াকিং, বাইসেপ কার্ল, লেগ লিফট এবং কিকবোর্ড চালনার মতো ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত থাকে এতে। মনে রাখা ভালো, ওয়াটার অ্যারোবিকস মানে পানিতে সাঁতার কাটা নয়। অধিকাংশ সময় পুলের অগভীর প্রান্তে করা হয় এই ওয়ার্কআউট।
স্বাভাবিকভাবে পানির তরঙ্গ শরীরের জয়েন্টে আরামের অনুভূতি এনে দেয়। জয়েন্টের সমস্যা থাকলে, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কিংবা আঘাত থেকে সেরে উঠতে চাইলে ওয়াটার অ্যারোবিকস হতে পারে বেশ ভালো পছন্দ। সিনিয়র সিটিজেন ও গর্ভবতী নারীদের কাছেও এই দেহচর্চার জনপ্রিয়তা বেশ।
কম-প্রভাবক হওয়ায় এই ওয়ার্কআউটে কঠিন পন্থা বেছে নেওয়া যেতে পারে। যেমন প্রতিটি পদক্ষেপের কয়েকবার পুনরাবৃত্তি কিংবা ওয়ার্কআউটের সময় দ্রুতলয় করা। অন্যদিকে, আন্ডারওয়াটার ইন্টারভেল ট্রেনিং অন্তর্ভুক্ত থাকে অ্যাডভান্সড লেভেলে। আবার মাঝারি তীব্রতায় ওয়াটার অ্যারোবিকস করলে হৃৎস্পন্দন পুনরুজ্জীবিত হয় ঠিকই; তবে পানি জয়েন্টে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না।
এবার দেখা যাক ওয়াটার অ্যারোবিকস শরীরের কোথায় কেমন প্রভাব ফেলে:
 কোর: বেশির ভাগ ওয়াটার অ্যারোবিকস ক্লাসের মধ্যে রয়েছে ফুসফুস, সাইড লেগ লিফট ও অন্যান্য মুভমেন্ট, যা অ্যাবস ও অন্য মূল পেশিগুলোকে ভালো শেপে রাখতে সাহায্য করে।
 হাত: পানির নিচের বাইসেপ কার্লের মতো মুভমেন্টে বাহুতে প্রভাব পড়ে। আঘাত প্রতিরোধের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে পুল নুডলস ও কিকবোর্ড।
 পা: হাঁটা, জগিং, জাম্পিং জ্যাক ও আন্ডারওয়াটার কিক ওয়াটার অ্যারোবিকস ওয়ার্কআউটে জনপ্রিয়।
 গ্লুটস: স্কোয়াট, লাঞ্জ ও হাঁটুর কিক গ্লুটকে টোন করতে সাহায্য করে।
 পিঠ: কম-প্রভাবক ওয়াটার ওয়ার্কআউট পিঠের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করতে ও পিঠব্যথা কমাতে সাহায্য করতে সক্ষম।
এবার নজর দেওয়া যাক ওয়াটার অ্যারোবিকস আসলে কোন বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত এবং কোনগুলোর নয়:
 ফ্লেক্সিবিলিটি: হ্যাঁ। এই শরীরচর্চা ফ্লেক্সিবিলিটি উন্নত করতে সাহায্য করে।
 অ্যারোবিক: হ্যাঁ। এমনকি কম-প্রভাবক ওয়াটার অ্যারোবিকস হৃৎস্পন্দন সঠিক রাখতে কাজে দেয়।
 স্ট্রেন্থ: হ্যাঁ। পানির প্রতিরোধক্ষমতা পেশি টোন করতে ও শক্তি তৈরিতে বেশ সহায়ক।
 খেলাধুলা: না। এটি একটি ফিটনেস অ্যাকটিভিটি; স্পোর্টস নয়।
 কম প্রভাব: হ্যাঁ। ওয়াটার অ্যারোবিকস একটি দুর্দান্ত, তবে কম-প্রভাবক ওয়ার্কআউট।
জানা থাক
 কীভাবে: ওয়াটার অ্যারোবিকস অফার করে, এমন জিম কিংবা কমিউনিটি সেন্টারে ক্লাসের জন্য নিবন্ধন করতে পারেন।
 নতুনদের জন্য ভালো?: হ্যাঁ। যদি ব্যায়ামে নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে ওয়াটার অ্যারোবিকস হতে পারে একটি চমৎকার স্টার্টআপ ওয়ার্কআউট।
 আউটডোর: আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আউটডোর পুলের পানিতে এই এক্সারসাইজ করতে পারেন।
 বাড়িতে: বাড়িতে কমপ্লেক্সে পুল থাকলে সেখানেই সারতে পারেন ওয়াটার অ্যারোবিকস।
 সরঞ্জাম: হ্যাঁ, কিছু সরঞ্জাম প্রয়োজন। সেগুলো মিলতে পারে পুলেই। তা ছাড়া প্রশিক্ষকেরা প্রায়ই এমন পুল নুডলস, কিকবোর্ড এবং ফোম ওয়েটস ব্যবহার করেন, যা ওয়াটার অ্যারোবিকস ক্লাসের জন্য ডিজাইন করা। রিক্রিয়েশন সেন্টারে এসব সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়।
বিশেষজ্ঞ মত
রাজিব উল হক, ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবের পুলে ওয়াটার অ্যারোবিকস করিয়ে থাকেন। তার মতে, এটি প্রায় নিখুঁত এক ওয়ার্কআউট। যদিও পুলে থাকা এমনিতেই বেশ আরামদায়ক অনুভূতি দেয়, পাশাপাশি এই দেহচর্চা হার্ট ও পেশিকে একটি দুর্দান্ত ওয়ার্কআউট এনে দিতে সক্ষম। পানিতে ব্যায়াম মনকে একটি ভালো ফ্রেমে রাখে। যদি ঘামতে পছন্দ না করেন, তাহলে এটি দারুণ অভিজ্ঞতা দেবে। প্রতিটি ফিটনেস স্তরের জন্য রয়েছে ক্লাস। একই সেশনে কার্ডিওর পাশাপাশি স্ট্রেন্থ ট্রেনিং পেতে পারেন। যদি দ্রুত হার্ট-পাউন্ডিং ওয়ার্কআউট পছন্দ করেন, তাহলে অবশ্য ওয়াটার অ্যারোবিকস আপনার জন্য নয়। যদিও পানির নিচে কিছু চালনা করতে বেশ শক্তি ব্যবহার হয়, যেমন হাঁটা। এতে ক্যালরি বার্ন হলেও তা ডাঙার তুলনায় কম। ত্বকের ঝুঁকি কমাতে পুল শু পরে নিতে পারেন।
স্বাস্থ্য সমস্যায়
নতুন ওয়ার্কআউট শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সব সময়ই ভালো। হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করার জন্য ওয়াটার অ্যারোবিকস একটি দুর্দান্ত উপায়। রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি এটি ভালো এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং মন্দ এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস থাকলে ওয়াটার অ্যারোবিকস পুলে থাকাকালে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। অন্যান্য অ্যারোবিক এক্সারসাইজের মতো এটি ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজে দেবে। তবে এর চর্চা অন্য ব্যায়ামগুলোর তুলনায় বেশ সহজ। অবশ্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তা নিজের প্রশিক্ষক বা লাইফগার্ডকে আগে থেকেই বলে রাখা ভালো। পুলে থাকাকালে নিজের মেডিকেল অ্যালার্ট জুয়েলারি সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না।
বাতের ব্যথা, হাঁটু কিংবা পিঠে সমস্যা থাকলে পানিতে ব্যায়াম করা হতে পারে দুর্দান্ত সমাধান। এতে ব্যথাযুক্ত জয়েন্টে কম চাপ পড়ে বলে ব্যায়াম করার জন্য আরও বেশি সময় ব্যয় করা সম্ভব হয়। জয়েন্ট প্রসারে সহায়তা করে এবং আঘাত পাওয়ার শঙ্কা কমাতে পারে এটি। এই এক্সারসাইজ অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
তা ছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য পানিভিত্তিক ব্যায়াম প্রোগ্রাম রয়েছে বেশ কিছু। তাদের জন্য কী অফার করা হয়, তা জানতে স্থানীয় ফিটনেস ক্লাবের দ্বারস্থ হতে পারেন।
গর্ভবতী নারীরা পানিতে ব্যায়াম করলে পিঠ, পা ও পায়ের ভার বেশ কমে যায়। কিছুটা ব্যায়াম করলে, কয়েক মাস আগের মতো হালকা অনুভব করবেন। গর্ভবতী হওয়ার আগে যতটা সক্রিয় ছিলেন, গর্ভাবস্থায় ততটাই সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। সেই ফিটনেস স্তর গর্ভধারণকালীনও চালিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top