skip to Main Content

সেলুলয়েড I সন্তুরি

পরিচালনা: দারিউস মেহরজুই
চিত্রনাট্য: ভাহিদেহ মোহাম্মদিফর, দারিউস মেহরজুই
চিত্রগ্রহণ: তুরাজ মনসুরি
সংগীত: মোহসেন চাভোশি
সম্পাদনা: মেহদি হোসেইনবান্দ
অভিনয়: বাহরাম রাদান, গোলশিফতেহ ফারাহানি
সময়ব্যাপ্তি: ১০৬ মিনিট
ভাষা: ফার্সি
দেশ: ইরান
মুক্তি: ২০০৭

১৪ অক্টোবর ২০২৩। বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে এক কালো দিন। ইরানের চতুর্থ বৃহত্তম শহর কারাজে, নিজ বাড়িতে, আততায়ীর হাতে এদিন সস্ত্রীক নৃশংসভাবে খুন হন ৮৩ বছর বয়সী মাস্টার ফিল্মমেকার দারিউস মেহরজুই। যার হাতে ষাটের দশকের শেষ ভাগে সূচনা ঘটেছিল নতুন ধারার চলচ্চিত্র জোয়ার ‘ইরানি নিউ ওয়েভ’-এর।
স্ত্রী ভাহিদেহ মোহাম্মদিফরের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনের পাশাপাশি দারুণ এক কর্মজীবনও ছিল দারিউসের। এর চমৎকার উদাহরণ ‘সন্তুরি’। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য যুগ্মভাবে এই যুগলেরই লেখা।
‘সন্তুরি’র প্রেক্ষাপট আধুনিক ইরানের নগরজীবন। যার কেন্দ্রে একজন বিখ্যাত সন্তুরবাদক, যার জীবন তুমুল উত্থান থেকে চরম পতনমুখী। নেপথ্যে মাদকাসক্তি। সেই কালো ছোবল থেকে তাকে ফেরাতে না পেরে, একসময় ছেড়ে চলে যায় স্ত্রী। পাড়ি জমায় প্রবাসে। আর ওই সন্তুরবাদক, যার বেড়ে ওঠা এক ধনী পরিবারে, ধীরে ধীরে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে সে পর্যবসিত হয় গহিন অন্ধকারের কানাগলিতে। একসময় যে ছিল দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পপতারকাদের একজন, যে পিয়ানোবাদক প্রেমিকাকে পেয়েছিল স্ত্রী রূপে, ছিল আপাতদৃষ্টে সুখের সংসারের বাসিন্দা; মাদক তাকে ঠেলে নিয়ে যায় ছন্নছাড়া জীবনের শেষ প্রান্তে। সব হারিয়ে ঘুরতে থাকে রাস্তায়। আস্তাকুঁড় থেকে কুড়িয়ে খেতে থাকে উচ্ছিষ্ট খাবার।
এই সন্তুরবাদকের স্মৃতিচারণা থেকেই মূলত চলচ্চিত্রটির শুরু। ধাপে ধাপে, ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হয়েছে তার জীবনের বর্ণিল অতীত; আর বর্তমানে ফিরলেই তা এক বেদনাদায়ক রূঢ় বাস্তবতা। খালি চোখে, এর সব দায়ভার স্বয়ং তাকেই দিতে হয়। তবু তার পরিবার, পরিজন, বিশেষত স্ত্রী দীর্ঘ বিরতি শেষে, অভিমান ভুলে তাকে অন্ধকার থেকে ফেরানোর চেষ্টা চালায়। শহরজুড়ে তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকে তাকে। পায়ও একসময়। পরিত্যক্ত রাস্তার প্রান্তে, আবর্জনার স্তূপের পাশে। তত দিনে সে অনেকটাই বায়ুগ্রস্ত; স্মৃতিভ্রষ্ট। তাকে ভর্তি করানো হয় মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সেখানে ওই সব হারানো সন্তুরবাদক আবারও হাতে তুলে নেয় বাদ্যযন্ত্র। কেন্দ্রের অন্যান্য পুনর্বাসন রোগীকে শেখাতে থাকে বাদ্যের পাঠ। এমনকি তাদের সামনে পরিবেশন করে কনসার্ট। চূড়ান্ত পতনের অশেষ অন্ধকার সুড়ঙ্গ শেষে যেন আবারও উঁকি দেয় এক চিলতে আলো। এই আবহে পর্দা নামে ‘সন্তুরি’র।
অর্থ, যশ, সুখ—আপাতদৃষ্টে সব থাকা সত্ত্বেও আধুনিকতার আড়ালে লুকায়িত নানামুখী সাপের ছোবলে বিষে আক্রান্ত হয়ে পড়া ব্যক্তিজীবনের এক যন্ত্রণাকাতর ছাপচিত্র মনোমুগ্ধকর ও ঋদ্ধ সংগীত ও দৃশ্যমালার পরতে জড়িয়ে এই চলচ্চিত্রে হাজির করেছেন দারিউস। নিজের দেখা জীবনকে সিনেমার পর্দায় নিজস্ব ফিল্মিভাষায় উপস্থাপনের যে খ্যাতি তার, এর অন্যতম উদাহরণ হয়ে আছে ‘সন্তুরি’। একই সঙ্গে, জীবনসঙ্গীর বিপথে গমনে তার প্রতি অভিমান কিংবা ক্ষোভ সত্ত্বেও, সাময়িক দূরত্ব তৈরির পরও, তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার যে দায়বোধ আপনাআপনি দাম্পত্য জীবনের শর্ত হয়ে ওঠে, তারও ঘটিয়েছে প্রকাশ।

 আরিফুল ইসলাম

কুইজ
১। ‘সন্তুরি’র নির্মাতার মৃত্যুর কারণ কী?
[ক] আততায়ীর হাতে খুন
[খ] ক্যানসার
[গ] সড়ক দুর্ঘটনা
[ঘ] অগ্নিকাণ্ড

২। ‘ইরানি নিউ ওয়েভ’-এর সূচনা কার হাতে?
[ক] আব্বাস কিয়ারোস্তামি
[খ] মোহসেন মাখমালবাফ
[গ] দারিউস মেহরজুই
[ঘ] জাফর পানাহি

৩। ‘সন্তুরি’র কেন্দ্রীয় চরিত্রের পরিচয় কী?
[ক] রাজনীতিক
[খ] পপতারকা
[গ] অভিনেতা
[ঘ] ফুটবলার

গত সংখ্যার বিজয়ী
১. শিরীন আক্তার, সেগুনবাগিচা, ঢাকা।
২. মানতাশা, উত্তরা, ঢাকা।
৩. নেওয়াজ, অলংকার মোড়, চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top