skip to Main Content

ফিচার I ডিটক্স ডিকোড

বিয়ের আগের আর পরের কটা দিন প্রাণভরে সাজার শাস্তিই বটে! প্রয়োজন পড়বে যথা যত্ন। ত্বক আর চুলের হানিমুন পিরিয়ডের প্রস্তুতি তাই নেওয়া চাই আগেভাগেই

লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন! বিয়ে নামক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শোডাউনে কনে চুটিয়ে সাজগোজ করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। অতশত চোখ আর ক্যামেরার সামনে পারফেক্ট থাকার জন্য। কিন্তু বিয়ে মানে তো আর এক দিনে কিসসা খতম নয়। মূল অনুষ্ঠানের আগের আর পরের নানা আয়োজন, তারপর শুরু হয় আত্মীয়স্বজনের মন রক্ষার পালা। নানান বাড়ি, নানান নেমন্তন্নে হাজিরা মাস্ট। সব মিলিয়ে চেহারা আর চুলের নাকাল দশা অবশ্যম্ভাবী। আর এ থেকে বাঁচার জন্য মাস্টারপ্ল্যান থাকলে মন্দ হবে না কিন্তু।
ফিরুক ত্বকের জৌলুশ
ক্লিনজিং, টোনিং আর ময়শ্চারাইজিং অর্থাৎ সিটিএম। ডিটক্সের মূলমন্ত্রও এই তিনটাই। মেকআপ করে বাড়ি ফিরে তা তুলে নেওয়া মাস্ট। ক্লিনজিং বাম এ ক্ষেত্রে দারুণ কাজের। হালকা হাতে মাসাজ করে নিতে হবে মেকআপ ভরানো মুখে। তারপর সেটা মুছে ফেলে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলেই হয়ে গেল ডাবল ক্লিনজিং। ঈষদুষ্ণ পানিতে কাজটা সেরে নিলে সবচেয়ে ভালো। গরম পানি ত্বককে ডিহাইড্রেট করে দেয়, আবার ঠান্ডা পানিতে ওপেন পোর বন্ধ হবে না। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করা যেতে পারে। টোনার ত্বকের পিএইচের বিগড়ে যাওয়া ব্যালেন্স ঠিক করে দেবে। হাতের তালুতে নিয়ে আলতো হাতে মাসাজ করতে হয়; জোরে ঘষা মানা। আর টোনিং স্প্রে থাকলে তো কোনো কথাই নেই! রাতে শোয়ার আগে স্কিন রিপেয়ারিং ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে মনে করে। আর বাইরে বেরোলে সানস্ক্রিন মাখা চাই ভালোভাবে।
সপ্তাহে অন্তত দুই দিন এক্সফোলিয়েটর দিয়ে সার্কুলার মোশনে মাসাজ করতে হবে ত্বক। এতে রক্তসঞ্চালন বাড়বে। মৃতকোষও সরে যাবে। কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা ত্বরান্বিত হবে। এতে ত্বক নরম, তুলতুলে থাকবে বেশ খানিকটা সময়। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটরের ফ্যান? গ্লাইকোলিক আর ল্যাকটিক অ্যাসিড রাখা যেতে পারে হাতের কাছে। বাড়িতে বানাতে চাইলে তা-ও সম্ভব। আধা কাপ নারকেল অথবা অলিভ অয়েলের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ চিনি আর এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। মুখ ধুয়ে এই স্ক্রাব হালকা হাতে মেখে নিতে হবে ত্বকে। দশ মিনিট রেখে ধুয়ে নিলেই চলবে।
ব্ল্যাকহেডস আর হোয়াইটহেডস—ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করতে এ দুটোই যথেষ্ট। অথচ সামান্য যত্নেই এগুলো থেকে পরিত্রাণ মিলতে পারে। সপ্তাহে একবার মধু আর বেকিং সোডার মিশ্রণ আক্রান্ত স্থানে মাখিয়ে রাখতে হবে। মিনিট পাঁচেক পর সার্কুলার মোশনে ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। যাদের অত ঝামেলা করার সময় নেই, তাদের জন্য রেডিমেড ব্ল্যাকহেড স্ট্রিপস তো থাকছেই।
প্রোডাক্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও একটু ট্রিকি হওয়া চাই। টি ট্রি অয়েল, মালবেরি এক্সট্র্যাক্টের মতো উপাদান প্রোটিন আর পুষ্টিগুণে ভরপুর! তাই ত্বকের উপযুক্ত প্রোডাক্ট বেছে নিতে গেলে এ ধরনের উপাদানগুলো আছে কি না, দেখে নেওয়া যেতে পারে। এগুলো অ্যাকনে, র‌্যাশের মতো সমস্যা সারাবে। ত্বকের তারুণ্যোজ্জ্বলতা বজায় রাখবে। ক্লান্ত, স্ট্রেসড ত্বকে প্রাণ ফেরাতে ফেশিয়াল কিন্তু খুব কাজের। বিউটি স্যালনগুলোতে এখন কতশত বিশেষায়িত সেবা! সেগুলোর যেকোনোটি বেছে নেওয়াই যেতে পারে সুবিধামতো। তবে এক্সপার্ট হাতে সারতে হবে পুরো প্রক্রিয়া। তবেই প্যাম্পারড সেশনের পুরো কার্যকারিতা লুফে নেওয়া যাবে। সেই সময়টুকু না থাকলে বাজারে মিলছে হরেক রকমের ডিআইওয়াই ফেশিয়াল কিট। একদম সোজাসাপটা নির্দেশনা দেওয়া থাকে, মেনে চললেই হবে। নিয়ম মেনে নানা ধরনের ফেস মাস্কও ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরে পেতে।
চুলও থাকুক যতনে
ত্বকে যত ঘন ঘন মেকআপ করা হয়, চুলের ওপর অতটা অত্যাচার হয় না, কথা সত্যি। কিন্তু বিয়ের কয়টা দিন চুলের সাজে হেয়ারস্টাইলিং জেল, মুজ, স্প্রের ব্যবহার ঘটে সাংঘাতিক পরিমাণে। চুলের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজিয়ে দিতে এটুকুই যথেষ্ট। তাই বিয়ের পর্ব মিটে গেলে অন্তত কিছুদিন চুলকে সব ধরনের কেমিক্যাল থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা চাই। স্টাইলিং প্রোডাক্ট, হিট টুলসের চেহারা না হয় কদিন না-ই দেখা হলো। পরিবর্তে চুলকে বাড়তি আদর-যত্নে রাখলে বরং পুরোনো জৌলুশ ফিরে আসতে পারে। যারা নিয়মিত স্টাইলিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন, তারা হেয়ার ডিটক্স করতে পারেন নিয়মিত, সপ্তাহে এক দিন। এতে স্ক্যাল্প প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে, তেমনি হেয়ার ফলিকলগুলোও স্টিমুলেটেড হবে। চুলও বাড়বে সুন্দর করে।
স্ক্যাল্পে অয়েল মাসাজ মাস্ট। নারকেল আর অলিভ অয়েল ক্ষতিগ্রস্ত চুল সারাইয়ে মহৌষধ। জোজোবা অয়েল সারাবে স্ক্যাল্প ইচিংয়ের সমস্যা। ক্যাস্টর আর নারকেল তেল মিশিয়ে গরম করে নিতে হবে। সেই মিশ্রণ চুলের ডগায় মাসাজ করতে হবে ভালোভাবে। তারপর গরম পানিতে তোয়ালে ডুবিয়ে নিংড়ে নিয়ে মাথায় পাগড়ির মতো করে বেঁধে নেওয়া চাই মিনিট পাঁচেকের জন্য। হট টাওয়েল র‌্যাপের এ পদ্ধতি তিন থেকে চারবার করলেই যথেষ্ট। এটা স্প্লিট এন্ডের সমস্যাও কমাবে। সপ্তাহে এক দিন তিন কাপ গরম পানিতে আধ কাপ বেকিং সোডা মিশিয়ে স্ক্যাল্পে যদি মাসাজ করা যায়, মাখার ত্বকে জমে থাকা তেল দূর করতে সাহায্য করবে। অ্যাপেল সিডার ভিনিগারও স্ক্যাল্পে জমে থাকা হেয়ার প্রোডাক্ট দূর করতে দারুণ। সঙ্গে চুলের জেল্লা বজায় রাখবে। এক মগ কুসুম গরম পানিতে দুই টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে নেওয়া চাই। শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার ব্যবহার শেষে মিশ্রণটা চুলে ঢেলে নিতে হবে। ধোয়া যাবে না কিন্তু। হেয়ার ডিটক্সের খুব ভালো পদ্ধতি এটি। মাসে একবার শ্যাম্পুর সঙ্গে সি সল্ট মিশিয়েও মাথা ধুয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতেও স্ক্যাল্পের মৃতকোষ দূর হবে। এ ক্ষেত্রে শ্যাম্পুর সঙ্গে দু-এক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। মাসাজ করে মিনিট পাঁচেক পর ধুয়ে ফেলতে হবে শুধু।
অনেকেই ডিটক্স শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকেন। এই ক্ল্যারিফায়িং শ্যাম্পুগুলো স্ক্যাল্প ডিটক্সিফায়িংয়ের কাজ করে ঠিকই, কিন্তু চুল শুষ্ক হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়ে যায়; বরং মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহারই ভালো। ন্যাচারাল উপাদানসমেত। আর কন্ডিশনার কিন্তু মাস্ট। বিয়ের পরের কিছুদিন রেগুলার কন্ডিশনারের পরিবর্তে লিভ-ইন কন্ডিশনার ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো ধোয়ার দরকার পড়ে না। চুলেই অ্যাবজর্বড হয়ে যায়। রুক্ষতা নিয়ন্ত্রণে থাকে; চুলও পুষ্টি পায়। মেহেদি, টক দই, পাকা কলা, ডিম চুলে প্রাণ জোগাতে সুপরিচিত। মাসে একবার যেকোনো একটা ব্যবহার করতে পারলে চুলের বাড়তি পুষ্টি নিশ্চিত।
মেকআপ বিরতি
এ কী করে হয়? বিয়ের পর হুটহাট আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যাওয়া, বাড়িতে অতিথি সমাগম ইত্যাদি লেগেই থাকে। অথচ নতুন বউ একেবারে সাজগোজ ছাড়া সবাইকে আপ্যায়ন করবেন, আত্মীয় বাড়ির নেমন্তন্ন রক্ষা করবেন, তা কি সম্ভব! অল্পবিস্তর মেকআপ আর সাজগোজ না থাকলে কি চলে! কিন্তু ত্বকের কথাটাও তো ভাবতে হবে। বিয়ের আগে-পরে মিলিয়ে বেশ কয়েক দিনের চড়া মেকআপে ত্বকের হাঁপিয়ে ওঠা স্বাভাবিক। তার রেশ যদি বিয়ের পরও দীর্ঘদিন চলতে থাকে, তাহলে ত্বকের সমস্যা অবধারিত। ত্বক ভালো রাখতে নিয়মিত যত্ন তো চালিয়ে যেতে হবেই, সঙ্গে মেকআপের ব্যবহারেও কিছু দাঁড়ি-কমা বসাতে হবে বৈকি! একেবারে যদি পারা না যায়, তাহলে কিছু স্টেপ বাদ তো দেওয়াই যায়। যেমন বিয়ের পর আত্মীয় বাড়ি যাওয়ার সময় ফাউন্ডেশন, কনসিলার, ব্রোঞ্জার, কনটুর, আইশ্যাডো—অতো হ্যাপায় না হয় না-ই যাওয়া হোক। হালকা কাজল টেনে, কপালে টিপ পরে নেওয়া যেতে পারে। এমন সাজে তো সব মেয়েই অপরূপা। চড়া মেকআপে বরং দৃষ্টিকটু দেখাতে পারে। অথবা বউভাতে কনে যাবেন বাপের বাড়ি, সে ক্ষেত্রেও ভারী মেকআপ করার বিশেষ প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে বরং ত্বকযত্নে মনোযোগ দেওয়াই ভালো। মেকআপ করার আগে ত্বকটাকে বরং ভালোভাবে প্রস্তুত করে নেওয়া যায়। যত সামান্য মেকআপই মাখা হোক না কেন, ত্বক আর মেকআপের মাঝে একটা ব্যারিয়ার থাকা ভালো। না হলে ক্ষতির মাত্রা বাড়বে। এ ক্ষেত্রে সিটিএম রুটিন ফলো করা যেতে পারে। সব সময় মুখ মাইল্ড ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে টোনার আর নারিশিং ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা যায়। পারলে সেরামও মেখে নেওয়া যায়। মেকআপের আগে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে অন্তত পাঁচ মিনিট ত্বককে বিশ্রাম দিতে হবে। তারপর মেকআপ ব্যবহারের পালা।
দিনের বেলা অনুষ্ঠান? সানস্ক্রিন মাস্ট। শুধু সূর্যরশ্মি নয়, মেকআপের কেমিক্যাল থেকেও কিছুটা বাড়তি সুরক্ষা মিলবে। মিনিট দুয়েক অপেক্ষার পর প্রাইমারের পালা। মেকআপ হালকা হলেও দীর্ঘস্থায়ী হবে। পাশাপাশি ত্বক আর মেকআপের মাঝে তৈরি করবে দূরত্ব। ক্ষতি কমাতে। বেস হিসেবে বিবি, সিসি অথবা টিন্টেড ময়শ্চারাইজারই সই। তৈলাক্ত ত্বকে কুশন ফাউন্ডেশনও চলতে পারে। ত্বকে অল্প কাভারেজ দেয়; ন্যাচারাল দেখায়। সঙ্গে ময়শ্চারাইজারের বাড়তি যত্নও মেলে। ব্রাশ আর স্পঞ্জকে বিরতি দিয়ে ব্লেন্ডিং করা যেতে পারে আঙুলে। মেকআপ ভালোভাবে সেট হবে। চাইলে সামান্য লুজ পাউডার দিয়ে সেট করে নেওয়া যেতে পারে। যাদের কনসিলার একান্তই প্রয়োজন, তারা শুধু প্রয়োজনীয় অংশে তা অ্যাপ্লাই করে বাকি মুখত্বক খালি রেখে দিলেও চলবে। ত্বকে ফ্রেশনেস আনতে ইলুমিনেটিং ব্লাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে বাড়তি জেল্লা আসবে। পাউডার নয়, বরং ক্রিম ব্লাশ ব্যবহারই ভালো। সেটাও আঙুল দিয়ে ব্লেন্ড করে নেওয়া যাবে। চোখের মেকআপে শুধু কাজলের টান আর মাসকারার কয়েক কোট যথেষ্ট। চোখটা ডিফাইনড দেখাতে। ঠোঁটে পছন্দের লিপকালার থাকতেই পারে। এ ক্ষেত্রে ব্রাইট শেডগুলো বেছে নিলে পুরো ফোকাসটাই ঠোঁটে চলে যাবে। ত্বকের একটু-আধটু সমস্যা আর চোখে পড়বে না। আর হালকা লিপস্টিক চাইলে কালারড লিপবামটাই বরং বেশি জুতসই হবে। পুষ্টিও মিলবে, ঠোঁটও নরম থাকবে।
কিন্তু এ তো বিরতির বদলে লম্বা মেকআপের ফিরিস্তি হয়ে গেল। গুনে গুনে মাত্র ছয়টাই প্রোডাক্ট ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রেও ছাঁটাইয়ের সুযোগ আছে, সেটা সম্পূর্ণই ব্যক্তি পছন্দ। আর মেকআপ কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না, এমন সময় বুঝে এগুলো ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে মাত্র। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই স্কিনকেয়ারের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ চলবে না!

 জাহেরা শিরীন
মডেল: সাবরিন
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top