skip to Main Content

টেকসহি I ইন ট্রেন্ড ইনজেকটেবল

সৌন্দর্য রক্ষার অনন্য সব উদ্ভাবনী সূত্রের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির ফিউশন। আরও পার্সোনালাইজড, কার্যকর ফল পাওয়ার জন্য

সুন্দর থেকে সুন্দরতর ত্বকের চাহিদা বড় করেছে প্রসাধন বাজার। সেই ল্যান্ডস্কেপে নতুন যোগ হয়েছে ইনজেকটেবল কসমেটিকস। তুলনামূলক মসৃণ, কোমল, সতেজ ত্বকের আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে নতুন ধরনের এই রূপচর্চায়। কাটা-ছেঁড়াহীন প্রক্রিয়া এটি। অনেকের মতে, কসমেটিক সার্জারির আধুনিক সংস্করণ। সব মিলিয়ে সৌন্দর্যবিশ্বের গেম চেঞ্জার বলা যেতে পারে।
ইনজেকটেবল কসমেটিকস ব্যবহার করার জন্য প্রথমেই যেতে হবে বিশেষজ্ঞের দোরগোড়ায়। কারণ, চিকিৎসাবিদ্যার বিভিন্ন নিয়ম মেনে ব্যবহার করা হয়। কাঙ্ক্ষিত সৌন্দর্য পেতে চামড়ার নিচে পৌঁছে দেওয়া হয় উপযুক্ত প্রসাধন। এ জন্য ব্যবহৃত হয় ইনজেকশন। প্রচলনের প্রথম দিকে মুখমণ্ডলে তৈরি হওয়া রিংকেল দূর করতে, আর লিপকে ফুলার লুক দেওয়ার জন্য পরিচিতি পেয়েছিল এই পদ্ধতি। এরপরে যোগ হয়েছে আরও নানান ধরন।
ইনজেকটেবল কসমেটিকসে ব্যবহৃত মূল উপাদান দুটি। বটুলিনিয়াম টক্সিন ও ডারমাল ফিলার। বটুলিনিয়াম টক্সিন মুখত্বকের পেশি শিথিল রাখে। ফলে ত্বকে লাইন তৈরি হয় না। আর ডারমাল ফিলার কাজ করে রিংকেলগুলো সারিয়ে তুলতে। চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যেতে পারে এই আধুনিক রূপচর্চাকে।
নিউরোমডুলেটর
রিংকেল কমানোর ট্রিটমেন্ট হিসেবে নিউরোমডুলেট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন এতে ব্যবহৃত হয়। এর কাজ ফেশিয়াল মাসল রিলাক্স করা। ফেস লাইন ও ভাঁজগুলো ত্বকের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া। পোরের আকার ছোট করে আনা। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকনে হওয়ার শঙ্কা কমায়।
ডারমাল ফিলার ও বায়ো স্টিমুলেটর
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ডারমাল ফিলার ত্বকে বয়সের ছাপকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কার্যকারিতা বাড়ায়। তবে এ জন্য ত্বকের বেশ গভীর পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়। বায়ো-স্টিমুলেটরস যেমন পলি-এল-ল্যাকটিক অ্যাসিড এবং ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সিলিপাটাইট কোলাজেনের সংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। ত্বকে তারুণ্যের উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।
বায়ো স্কিন রিমডেলিং ও পিআরপি
ট্র্যাডিশনাল হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বেইসড ফিলারের সঙ্গে বায়ো রি-মডেলারস যেমন পেপটাইড, এক্সসামস ও প্ল্যান্ট বেইসড গ্রোথ ফ্যাক্টরস যোগ করা হয়। ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এগুলো। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। একই সঙ্গে পিআরপি অর্থাৎ, প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা এবং স্টিম সেল ট্রিটমেন্ট কাজ করে ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে। এটি ত্বকের সারফেস টেক্সচার মসৃণ রাখতেও ভূমিকা রাখে। দাগ দূর করে। আবার সুন্দর চুলের জন্যও দারুণ কার্যকর।
হাইব্রিড ফিলার ও মেসো বুস্টার
অ্যাসথেটিক ল্যান্ডস্কেপের নতুন সংযোজন। মূলত হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বেইসড ট্রিটমেন্ট। দীর্ঘ সময় ধরে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সিঅ্যাপাটাইটের সাহায্যে কোলাজেন উদ্দীপ্ত করে। যার প্রভাব খুব দ্রুত চোখে পড়ে ত্বকে। ত্বক টান টান হয়। মেসোবুস্টারস বায়ো স্টিমুলেশনের একটি ফর্ম। এটি ত্বকের তারুণ্য ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখে।
ইনজেকটেবল কসমেটিকসের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট কোনটি হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ পাওয়া যাবে বিশেষজ্ঞের কাছে। সে অনুযায়ী নিতে হবে পরবর্তী পদক্ষেপ। বর্তমান সময়ে জনপ্রিয়তার তালিকায় প্রথম পাঁচটি পদ্ধতি হচ্ছে বোটক্স, শুভাও, রিস্টাইলিন, স্কাল্পট্রা ও কাইবেলা।
 ইনজেকটেবল কসমেটিকস প্রসিডিউরের মধ্যে বোটক্সের জনপ্রিয়তা তালিকার প্রথম দিকে। সূক্ষ্মরেখা এবং বলিরেখা মুছে নিখুঁত ত্বক পাওয়া যায় এই পদ্ধতিতে। বোটক্স ইনজেকশনে মূল উপাদান বোটোলোনিয়াম টক্সিন। এই ইনজেকশন পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করতে হয়। তাই চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। বোটক্স ৩ থেকে ৫ মাস অবধি কার্যকর থাকে।
 শুভাও এর মূল উপাদান বোটোলোনিয়াম টক্সিন টাইপ এ নিওরোটক্সিন। এর কাজ মূলত নার্ভের সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করা। এটি ব্যবহারে কপালের ত্বক মসৃণ হয়, ভাঁজ তৈরি হয় না। বলিরেখা দূর হয়। মাসলও নিয়ন্ত্রিত হয় বলে ঝুলে যায় না। আগে থেকে তৈরি ত্বকের গভীর ভাঁজগুলো মসৃণ করে। দুশ্চিন্তার ছাপ, স্ট্রেস, প্রি-ম্যাচিওর এজিংয়ের চিহ্ন দূর করে।
 রিস্টাইলিন হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বেইসড ফেশিয়াল ফিলার। গাল ও ঠোঁট পুষ্ট করে তোলে। রিংকেল দূর করে। ত্বকের তারুণ্য ফিরিয়ে আনে। বয়সের ছাপ দূর হয়। বিশেষ ভূমিকা রাখে কানেকটিভ টিস্যু অর্থাৎ নাক, ঠোঁট, চিকবোন আর জ লাইনে। এক বছরের বেশি সময় ধরে টিকে থাকে রিস্টাইলিন।
 স্কাল্পট্রা একটি ডারমাল ফিলার প্রসিডিউর। চেহারায় চিকবোন পরিপুষ্ট না হলে এ পদ্ধতি সাহায্য করতে পারে। পলি এল ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহার করে ন্যাচারাল কোলাজেন প্রোডাকশন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোলাজেন লেভেল বৃদ্ধি পায় বলে চিকবোনের শেপে পরিবর্তন দেখা যায়। বেশ দীর্ঘস্থায়ী ট্রিটমেন্ট এটি। দু বছর অবধি কার্যকর থাকে।
 কাইবেলা চিবুকের চর্বি, অর্থাৎ ডাবল চিন কমানোর উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে। লোয়ার ফেস স্লিমিং এবং লিফট আপ করতে ভূমিকা রাখে। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্টিফাইড ট্রিটমেন্ট এটি।
আধুনিকতম প্রসাধন ইনজেকটেবল কসমেটিকস ব্যবহারের আগে সুবিধা ও অসুবিধা—দুই বিষয়েই তথ্য জানা থাকলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হতে পারে।
সুবিধা
 ইনজেকশনের মাধ্যমে কসমেটিকস ব্যবহার, বিষয়টি শুনতে জটিল মনে হলেও আদতে তা নয়; বরং খুব সহজ। দ্রুত সম্পন্ন হয় এই প্রক্রিয়া। দীর্ঘ সময় দরকার পড়ে না।
 ব্যথামুক্ত পদ্ধতি। এতে ত্বকে দীর্ঘ সময় ব্যথা থাকার কোনো শঙ্কা নেই বলা যেতে পারে।
 অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।
 মাসেলের ব্যথা নিরসনে কাজ করে।
 ঘর্মগ্রন্থির ঘাম নিঃসরণে ভূমিকা রাখে। তুলনামূলক কম ঘাম হয়।
 মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
 হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বেইসড ফিলার ব্যবহার করা হলে ত্বকে আর্দ্রতা বাড়ার সুফল উপভোগ করা যেতে পারে। যার প্রভাব ঠোঁটেও পড়ে। ফলে ঠোঁট ফাটার সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে।
 ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত নিয়মিত প্রসাধনগুলো ইনজেকটেবল কসমেটিকস ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পরে তুলনামূলক বেশি কার্যকর হয়।
অসুবিধা
 প্রসাধনপূর্ণ ইনজেকশন ব্যবহৃত হয় সরাসরি ত্বকে। একাধিকবার ব্যবহারের ফলে চামড়া সামান্য হলেও আঘাতপ্রাপ্ত হবে। যার ফলে সৃষ্ট দাগ কিছুদিন থেকে যেতে পারে। অনেক সময় বিভিন্ন অংশে ফোলা ভাব তৈরি হয়। তিন থেকে পাঁচ দিন এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
 অস্থায়ী সমাধান। নির্দিষ্ট সময়ের পর পুনরায় একই পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন পড়বে।
 প্রত্যেকের ত্বকে ইনজেকটেবল কসমেটিকস আলাদাভাবে কাজ করে। অনেকে প্রথমবারেই কাঙ্ক্ষিত ফল পান না। তখন একাধিকবার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে।
 বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় এটিকে সহজলভ্য বলা যাবে না, বরং খানিকটা ব্যয়বহুল। তাই সবার নাগালের মধ্যে নয় এই ট্রিটমেন্টগুলো।

 সারাহ্ দীনা
মডেল: মিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top