skip to Main Content

টেকসহি I সচেতন সালংকারা

শখের দাম লাখ টাকা হোক, কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি না করে। মডার্ন ইকো-কনশাস কনেদের জন্য পারফেক্ট চয়েজ

বিয়েতে গয়না পরতেই হবে? হবে। কারণ, এটি আমাদের মানসিকতায় গভীরভাবে গেঁথে আছে। সেখানেই শেষ নয়, গয়নাটি হওয়া চাই সোনা বা হীরার। তবেই-না তৃপ্তি! হ্যাঁ, দামি ধাতুতে গড়ানো গয়নার প্রতি আচ্ছন্ন সবাই; আর তা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। কিন্তু জানা আছে, সোনা ও মূল্যবান ধাতু নিয়ে অত মাতামাতির জন্য পরিবেশকে কতটা মূল্য দিতে হয়? সে ক্ষেত্রে ছোট্ট একটি উদাহরণই যথেষ্ট।
সোনার কার্বন ফুটপ্রিন্টের ওপর আলোকপাত করে গবেষকেরা বলছেন, একটি ৯ গ্রাম, ২২ ক্যারেট প্লেইন সোনার আংটি সায়ানাইড, পারদ বর্জ্যসহ প্রায় ২০ হাজার কেজি বিষাক্ত বর্জ্য তৈরি করে, যা বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন টন। এই বিষাক্ত বর্জ্য যেখানে প্রতিবছর তৈরি হচ্ছে, সেখানে পরিবেশের ওপর তার কেমন বিরূপ প্রভাব পড়ে, একবার কল্পনা করে দেখা যেতে পারে। একজন সুস্থ-সবল মানুষকে মেরে ফেলতে মাত্র আধা গ্রাম সায়ানাইডই যথেষ্ট। শুধু একটি আংটিতে যেখানে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়, সেখানে আপাদমস্তক সোনায় মোড়ানো কনের গয়না থেকে কার্বন নিঃসরণের ওপরে পরিবেশ কতটা ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে, ভাববার বিষয় বটে। সে কারণেই গবেষকেরা বলছেন, আমাদের কেনার অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন হওয়ার সময় এসে গেছে। বিয়েতে কনে সাজবেন, গয়না পরবেন, তাতে আপত্তি নেই; আপত্তি করা হচ্ছে গয়নার জন্য বেছে নেওয়া ধাতুর ওপর। যারা নিজেদের পরিবেশসচেতন বলে দাবি করেন, তারা অন্তত বিয়ের গয়না নিয়ে নতুন করে একটু ভেবে দেখতে পারেন।
সোনার চেয়ে হীরা ভালো। সত্যি। যদিও বিয়েতে আমাদের দেশে সোনার মতো হীরা অতটা জনপ্রিয় নয়। প্রথম কারণ এর অত্যধিক দাম। মধ্যবিত্ত হীরা কিনতে কিছুটা ভয় পায়; কারণ, সোনার ক্রমবর্ধমান দামের জন্য সেটিকে তাদের ভালো ইনভেস্টমেন্ট বলে মনে হয়। হীরার গয়নায় সে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না, অনেকটা মানসিক কারণেই। যদিও মূল ব্যাপারটি আসলে ভিন্ন। যাহোক, সেই তর্কে না যাওয়াই ভালো! হীরারও কিন্তু প্রচুর পরিবেশগত নৈতিক প্রভাব রয়েছে। হীরা পরিবেশ উপযোগী ধাতু নয়, এটি স্বয়ং পরিবেশবাদীরাই দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি পরিবেশ ও পকেটের প্রতি সদয় ল্যাব-উত্থিত হীরার ওপর মনোযোগ পড়েছে তাদের। ‘ল্যাব-উত্থিত হীরা ঐতিহ্যগতভাবে খনন করা হীরার একটি টেকসই ও নৈতিক বিকল্প। নবায়নযোগ্য শক্তিচালিত ল্যাবরেটরিগুলোতে বাস্তুতন্ত্রের ব্যাঘাত না ঘটিয়েই এগুলো তৈরি করা হয়। তাই ইদানীং গবেষকেরা বলছেন, সোনা কেনার বদলে বরং এই হীরা যদি ব্যবহার করা হয় গয়নায়, তাতে পরিবেশের ক্ষতি খানিকটা কম হবে। সর্বদা নৈতিক শ্রম অনুশীলনগুলোকে সমুন্নত রেখেই বেশ কিছু ব্র্যান্ড এখন এই ল্যাব-উত্থিত হীরা দিয়ে চমৎকার সব আধুনিক গয়না তৈরি করছে। নিশ্চিন্তে বেছে নেওয়া যেতে পারে সেগুলো। ইচ্ছে করছে না? সমস্যা নেই! আপনার জন্য আরও সহজ উপায় রয়েছে।
অনেক জুয়েলারি ব্র্যান্ড ভাঙা হীরা থেকে গয়না তৈরি করে। কাটতে কাটতেই তো হীরা আসল হীরা হয়ে ওঠে। আসল হীরা তৈরির চক্করে যে অংশগুলোকে কেটে ফেলে দেওয়া হয়, সেই হীরার চিপগুলো কারিগরদের মাধ্যমে প্রাচীন নানা কৌশল ব্যবহার করে পুনরায় তৈরি করা হয়। এই হীরার চিপগুলোকে ব্যবহার করে অনন্য ডিজাইনে রূপান্তর করা হয়, যা প্রতিটি টুকরাকে মূল্যবান ও টেকসই করে তোলে। পরিবেশবিদেরা বলছেন, দয়া করে এমন সব নৈতিক ব্র্যান্ডের কাছে যান, যেগুলো প্রকৃতপক্ষে হস্তনির্মিত টুকরা তৈরি করে, যাতে কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়। কিংবা এমন ব্র্যান্ডের আশ্রয় নিন যেগুলো পুনর্ব্যবহৃত সামগ্রী ব্যবহার করে, স্থানীয় কারিগরদের সমর্থন দেয়, স্বচ্ছতা খোঁজে, দীর্ঘায়ু বিবেচনায় রাখে এবং একটি সবুজ শিল্পের জন্য সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি গ্রহণ করে। খুব জটিল মনে হচ্ছে? আরও সহজ করে বললে তারা আসলে বোঝাতে চাচ্ছেন, টেকসই উপকরণে তৈরি গয়না বেছে নেওয়ার জন্য।
সবকিছু তো বদলাচ্ছে, বিয়ের পোশাকে লালের জায়গায় রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সাদা, সেখানে গয়না বদলাবে না কেন? সোনা-হীরা বাদ দিয়ে কেবল ফুলের গয়নায় বিয়ে হওয়ার নজির কিন্তু আমাদের দেশেই আছে। অতটা ব্যতিক্রমী না হলেও বরং স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত টেকসই গয়না উপকরণ যা পরিবেশের ওপর ন্যূনতম প্রভাব ফেলে না, বেছে নেওয়া যেতে পারে সেগুলো। আধুনিক জুয়েলারি ডিজাইনাররা কিন্তু সেগুলো নিয়ে ব্যাপক কাজ করছেন। ফলে বিশ্বজুড়েই সেগুলো ট্রেন্ডি। যার মধ্যে রয়েছে কাঠ, ফ্যাব্রিক এবং পুনর্নির্মাণ করা ধাতুর মতো উপকরণ। অনেক জুয়েলারি ব্র্যান্ড আজকাল ফল, ফুল, বীজ ও মসলার টুকরার এমন সব অসাধারণ গয়না তৈরি করছে, দেখলে যে কেউ চমকে উঠবে। সেগুলো দৃষ্টিনন্দন ও সহজসাধ্য। অর্থাৎ ব্যয়বহুল নয়। স্বদেশি অনেক ব্র্যান্ডই ব্যতিক্রমী জুয়েলারি নিয়ে কাজ করছে। একজন আধুনিক কনে হিসেবে যারা অন্যদের চেয়ে নিজেকে আলাদা দেখাতে চান, তারা অনায়াসে সেগুলো বেছে নিতে পারেন। তাতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে! ব্যতিক্রম কনে হিসেবে আখ্যা মিলবে এবং অন্যরাও এ ব্যাপারে উৎসাহ পাবে। পরিবেশ, অর্থ—দুই-ই বাঁচবে।
পরিবেশের এসব কচকচানি শুনে যাদের বিরক্তি বাড়ছে আর ভাবছেন, বিয়েতে গোল্ড বা ডায়মন্ড জুয়েলারি পরব না, তা হয় নাকি? তাদের পছন্দের কাছে আসলে এসব যুক্তি ধোপে টিকবে না। তবে তাদের জন্যও পরামর্শ রয়েছে। সোনা পরুন, তবে নতুন না কিনে। অর্থাৎ পারিবারিক সূত্রে পাওয়া বা ঘরে পড়ে থাকা পুরোনো সোনার গয়নাকেই পছন্দমতো ডিজাইনে তৈরি করে রি-ইউজ করতে পারেন। তাতেও চলবে। আবার আজকাল গয়না ভাড়াও পাওয়া যায়। মাত্র এক দিনের জন্য না হয় সেই ভাড়া করা গয়নাকে বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হলো। অনেক ব্র্যান্ডই ইদানীং ক্লায়েন্টদের গয়না ভাড়া দেওয়ার বিকল্প অফার করে। উপরন্তু সেটি মিলবে মূল মূল্যের সামান্য একটি ভগ্নাংশে। ব্যাপারটি কিন্তু একেবারে মন্দ নয়। শখও মিটল, পরিবেশেরও ক্ষতি হলো না! এই রি-ইউজ এবং রেন্টেড গয়নার ব্যবহার কিন্তু সারা বিশ্বেই রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বুদ্ধিমানেরা এমন জায়গায় বিনিয়োগ করেন, যা কেবল উপযোগিতা দেয় না, বরং অর্থের মূল্য আরও বাড়িয়ে তোলে। একটি সবুজ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য এটুকু তো করাই যায়।

 রত্না রহিমা
মডেল: আনসা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: কারুতন্ত্র
জুয়েলারি: ময়সানাইট বিডি
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top