skip to Main Content

কুন্তলকাহন I চুলের চার সংকট

পরিচর্যার আগে এটা জানাই বরং বেশি জরুরি। তবেই না দেখভালের পরিকল্পনা হবে যথাযথ। সুরক্ষার পাশাপাশি সৌন্দর্য রক্ষায়

শীতের বিকেলটা একসময় ছিল চুল পরিচর্যার সময়। বাঙালি মায়েরা এমন বিকেলে পিঁড়ি নিয়ে বসতেন এক সারিতে, একে অন্যকে মাথায় তেল দিয়ে শক্ত করে বেণি করে দিতেন। এই বেণি রাতভর থাকত, কখনো কখনো খোলা হতো ২-৩ দিন পর। গোসলের সময় আমলকী আর রিঠার ঘন কাই দিয়ে তারা চুল পরিষ্কার করতেন। ফলাফল? চুলে পাক ধরলেও নানি-দাদিরা কিন্তু এখনো এই প্রজন্মের চেয়ে বেশি ঘন চুলে ঘুরে বেড়ান।
চুল পরিচর্যার এমন সময় গত হয়েছে অনেক আগে। সেই জায়গা দখল করেছে কেরাটিন, পিআরপি, মাইক্রো নিডলিং কিংবা হাইড্রা মাসাজের মতো আরও অনেক অত্যাধুনিক পদ্ধতি। শুধু তা-ই নয়, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসে অগোছালো রুটিন, ঘুমের সমস্যা, শারীরিক ও মানসিক টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে চুল ও চুলের ঘনত্বে!
চুলের সমস্যার কোনো একটি মূল কারণ আসলে বের করা মুশকিল। বরং চারটি টপ মোস্ট টকড সমস্যা নিয়ে কথা বলা যাক। যা কমবেশি সবাই প্রতিনিয়ত ফেস করেন। সঙ্গে থাকছে পরিত্রাণের উপায়, যেন শীতের রুক্ষ আবহাওয়াও চুলের স্বাস্থ্যকে কোনোভাবেই বৈরী করে তুলতে না পারে।
কেমিক্যাল ড্যামেজ
চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে কিংবা শুধু ট্রেন্ড ফলো করতে আমরা প্রায়ই চুলে ব্লিচ, রিল্যাক্সার বা হেয়ার ডাইয়ের মতো স্ট্রং কেমিক্যাল ব্যবহার করি। পরে এই কেমিক্যালই ধীরে ধীরে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হেয়ারস্টাইলিস্টদের মতে, ঘন ঘন কেমিক্যাল ব্যবহার করলে চুল ধীরে ধীরে ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং ঝরে পড়ার পরিমাণও বাড়ে দ্বিগুণ হারে। কেমিক্যাল চুলের উপরিভাগের প্রোটিন ভেঙে দেয়। এতে চুল হয়ে পড়ে দুর্বল ও প্রাণহীন। এ ছাড়া স্ক্যাল্পের স্বাভাবিক তৈলাক্ততা কমে যায়।
চুল যদি কেমিক্যালি ড্যামেজড হয়, তবে এর পরিচর্যায় কেমিক্যালবিহীন প্রসাধন ব্যবহার করাই ভালো। স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে হেয়ার মাস্কের জুড়ি নেই। ময়শ্চার মাস্কগুলো চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ফিরিয়ে দিতে সক্ষম। এ ছাড়া চুলের ভেঙে যাওয়া প্রোটিনকে রিস্টোর করে, চুল শাইনি করে তোলে।
সান ড্যামেজড হেয়ার
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব কোথায় নেই। পরিবেশ, মুড, ত্বক অথবা চুল—সব ক্ষেত্রেই সূর্য মহাশয় এমনভাবে মাথার ওপর চেপে বসে আছেন, যেন কিছু হলেই ঘাড় চেপে ধরবেন! সে ক্ষেত্রে চুলকে যদি অতিরিক্ত শুষ্ক দেখায় কিংবা চুল ফাটা একদমই দূর না হয়, তবে বুঝতে হবে চুল সান ড্যামেজের শিকার। এর মূল কারণ অতিরিক্ত সান এক্সপোজার। ফলে চুলের রঙেও পরিবর্তন দেখা দেয়। সেই সঙ্গে চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে।
এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দুষ্কর হলেও অসম্ভব নয়। সমাধানের শুরুটা হোক চুল ট্রিম করার মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, চুলে ড্যামেজ বেশি হলে চুল কাটা পড়বেও বেশি। এ ছাড়া ডিম ও টক দইয়ের সংমিশ্রণে তৈরি প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্লিনিক্যাল ইউভি প্রোটেকশন ট্রিটমেন্টও হতে পারে দারুণ সমাধান। ভবিষ্যতে সান ড্যামেজ এড়াতে বাইরে বের হওয়ার সময় হ্যাট অথবা স্কার্ফ সঙ্গে রাখা যেতে পারে।
হিট ড্যামেজড হেয়ার
কারও চাই স্ট্রেইট হেয়ার, তো কারও কার্লি; কেউ কেউ ব্লো ড্রাই ছাড়া বাইরে বেরোন না তো কেউবা শুধু চান একটু ম্যানেজেবল হেয়ার। কারণ যা-ই হোক, সবার জন্য সল্যুশন কিন্তু একই, বাড়তি হিট দিয়ে চুলকে মনের মতো করে সাজানো। সাময়িকভাবে সুন্দর দেখালেও দীর্ঘ মেয়াদে চুলকে ভীষণ ঝক্কিতে পড়তে হয়। এক্সটার্নাল হিট স্বাভাবিক সৌন্দর্য ম্লান করে চুলকে করে তোলে ভঙ্গুর, প্রাণহীন ও পাতলা। আর তাই হিট ড্যামেজড হেয়ারের যত্নে হওয়া চাই বাড়তি সাবধান। নেওয়া যেতে পারে প্রোটিন বা কেরাটিন ট্রিটমেন্ট। এ ছাড়া চুলের ধরন বুঝে হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরোয়া মাস্ক এ ক্ষেত্রে দারুণ এক উপায়। ডিম, দই আর অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক বানিয়ে চুলে মাখিয়ে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নেওয়া চাই। এ ছাড়া স্যালনে বিভিন্ন রকম বিশেষায়িত ট্রিটমেন্ট নেওয়া যেতে পারে চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে।
মেকানিক্যাল ড্যামেজ
চুলের যত্নে আসলে প্রতিদিন কতটুকু সময় ব্যয় করা উচিত? কারও জন্য বাইরে বের হওয়ার আগে চুল পরিপাটি করে নেওয়াতেই পুরো ধ্যান আবার কেউ সাপ্তাহিক পরিচর্যায় চুলকে সুন্দর রাখতে ব্যতিব্যস্ত। এর মধ্যে কতজন আছেন, যারা চুলকে সঠিক উপায়ে আঁচড়ে নিতে জানেন অথবা চুলের জন্য হেয়ার ফ্রেন্ডলি ব্রাশ, ব্যান্ড বা ক্লিপ ব্যবহার করেন?
এগুলোর মাধ্যমে চুল যখন ড্যামেজের সম্মুখীন হয়, তাই হলো মেকানিক্যাল ড্যামেজ। এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যাদের চুল ফাটার প্রবণতা আছে, তাদের ক্ষেত্রে। এর সমাধান ততটা জটিল নয়। চুলের স্টাইলিংয়ে অতিরিক্ত টাইট হেয়ার ব্যান্ড বা ক্লিপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা চাই। ভেজা থাকলে চুল বাঁধা এড়িয়ে চলতে হবে। চুলের ধরন বুঝে জট ছাড়ানোর সহজ সমাধান খুঁজে নেওয়া জরুরি। এতে সময় বাঁচবে এবং চুলও সুন্দর থাকবে। চুল ফাটা থেকে চুলকে বাঁচাতে ব্যবহৃত বালিশ ১৫ দিনে একবার পরিবর্তন করা জরুরি। এ ছাড়া বালিশের কভার হিসেবে মখমল ও স্যাটিনের কভার ব্যবহার করা যেতে পারে।
বৈশ্বিক পরিবর্তন, মানসিক অবসাদ, শারীরিক পরিবর্তন ইত্যাদি ক্রমাগতই জানান দিয়ে যায়, সৌন্দর্য আসলে যত্নে রক্ষা হয়। আর এই সৌন্দর্যের বড় একটা অংশজুড়ে আছে চুল। চুলের যত্ন এবং সমস্যা থেকে পরিত্রাণ আসলে সময়সাপেক্ষ। তাই যেকোনো ড্যামেজ থেকে চুলকে বাঁচাতে অবশ্যই সতর্ক থাকা চাই। কিন্তু চুল পড়ার সমস্যা এবং স্ক্যাল্পে যদি সমস্যার পরিমাণ অস্বাভাবিক হয়, তবে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

 বিদিশা শরাফ
মডেল: তাজরিয়ান
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top