skip to Main Content

তনুরাগ I আর্মপিট র‌্যাশ

বিজ্ঞাপনের মতো নিখুঁত, মসৃণ আন্ডারআর্মের অন্তরায় এ সমস্যা। সমাধানের আগে কারণ নিরূপণ জরুরি

আর্মপিটের র‌্যাশ, কালো দাগ কিংবা ফাঙ্গাল ইনফেকশন ভীষণ অস্বস্তিকর। খুব সাধারণ বিষয় হলেও এ নিয়ে কথা বলতে বরাবরই সংকোচ কাজ করে অনেকের মাঝে। আর্মপিট বা বগলের চামড়া শরীরের অন্যান্য জায়গার ত্বকের তুলনায় বেশি পাতলা ও স্পর্শকাতর। তা ছাড়া শরীরের এই অংশ বেশির ভাগ সময় ঘামে ভিজে থাকে বলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা একটু বেশিই। বগলের ত্বক ভাঁজ হয়ে থাকায় ঘষা লেগে বিভিন্ন ইরিটেশনও হতে পারে। এভারকেয়ার হাসপাতালের ডার্মাটোলজিস্ট রুবিনা আলী বলেন, ‘শরীরের এই অংশের ত্বক তুলনামূলক পাতলা হওয়ায় এমনিতেই বেশি সংবেদনশীল। সেই সঙ্গে পরিবেশগত নানা কারণ আর্মপিটকে আরও স্পর্শকাতর করে তোলে। স্কিনফোল্ড—যেখানে চামড়া ওপরে থাকে এবং শরীরে অন্য অংশের ত্বকের সঙ্গে ঘেঁষে থাকে, পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী আর্দ্রতা এই অংশে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। আর্মপিট একবার সংক্রমিত হলে চুলকানি, জ্বালাপোড়া শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি হয় এবং সহজে প্রদাহ সারে না। বিভিন্ন কারণে র‌্যাশ, ফুসকুড়ি কিংবা প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে আর্মপিটে।’ এগুলোর মধ্যে যেসব কারণ সচরাচর বেশি দেখা যায়—
 ডার্মাটাইটিস: ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, ডার্মাটাইটিস মানে ত্বকের জ্বালা বা প্রদাহ। এটি এটোপিক ও সেবোরিক ধরনের অ্যালার্জি। যদিও এই দুটি বগলে তুলনামূলকভাবে বিরল। এটোপিক ডার্মাটাইটিস একধরনের একজিমা, কিন্তু এটি বগলে খুব কম হয়। কারণ, এটি শুষ্ক ত্বকের সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস সাধারণত এমন এলাকায় ঘটে, যেখানে তেলের গ্রন্থি বেশি থাকে। তাই এটিও কম হয়। বগলে মূলত অ্যালার্জিক কনটাক্ট ডার্মাটাইটিস হয়। অর্থাৎ কোনো ধরনের উপাদানের সংস্পর্শে আসার ফলে সৃষ্ট অ্যালার্জি। ফলাফল—লালচে, চামড়া ওঠা, ফোলা র‌্যাশ। এটি একটি বিরক্তিকর ধরনের চর্মরোগ, যা সাধারণ অ্যালার্জির চেয়ে অনেক বেশি যন্ত্রণা দেয়।
 ডিওডোরেন্ট র‌্যাশ: ডিওডোরেন্ট থেকে হওয়া ফুসকুড়ি অন্যান্য অ্যালার্জির চেয়ে বিরক্তিকর। যে ডিও ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি ত্বকে জ্বালার সৃষ্টি করছে কি না, তা নজরে রাখা জরুরি। ডিওডোরেন্টের উপাদানগুলো এই অংশের সংবেদনশীল ত্বকের জন্য খুব অস্বস্তিকর হতে পারে। ত্বকের ভাঁজে ঘষা লেগে লাল, খসখসে, চুলকানি ফুসকুড়ি সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের র‌্যাশের ক্ষেত্রে টপিক্যাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। একবার ফুসকুড়ির সমাধান হয়ে গেলে সুগন্ধমুক্ত, হাইপো অ্যালার্জেনিক ডিওডোরেন্টে সুইচ করা ভালো।
 হিট র‌্যাশ: ঘাম ও অতিরিক্ত গরম থেকে এই র‌্যাশ হয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, মূলত গ্রীষ্মকালীন ত্বকের সমস্যা এটি। গরমের দিনে প্রায়ই ছোট লাল ফুসকুড়ি দেখা যায় আন্ডারআর্মে। এটি প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো অংশটিকে যতটা সম্ভব উন্মুক্ত এবং শুকনো রাখা। এ ক্ষেত্রে ট্যালকম পাউডারও ব্যবহার করা যেতে পারে। ওয়ার্কআউটের পর ঘামে ভেজা জামাকাপড় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাল্টে নেওয়া কিংবা বাইরের কাপড় ঘরে ফিরে দ্রুত ছেড়ে ফেলাও এজাতীয় র‌্যাশ থেকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে।
 ফলিকিউলাইটিস: ব্যাকটেরিয়া অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে লোমকূপে সৃষ্ট প্রদাহের নাম ফলিকিউলাইটিস। দেখতে লাল ফুসকুড়ি আর সাদা ব্রণের মতো। এগুলোর কারণে তীব্র ব্যথা হতে পারে। তাই মাঝেমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকেরও প্রয়োজন পড়ে, অনেক সময় তীব্রতার ওপর যা নির্ভর করে। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়াই উত্তম।
 দাদ অথবা ফাঙ্গাল ইনফেকশন: দাদ একধরনের ছত্রাক সংক্রমণ, যা আটকে থাকা আর্দ্রতার কারণে শরীরের ভাঁজযুক্ত স্থানে বেশি হয়। লাল সীমানাসহ রিং আকৃতির হয় এ সংক্রমণ। তাই একে রিং ওয়ার্মও বলা হয়। ভেজা, স্যাঁতসেঁতে স্থানে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি। এ ধরনের চিকিৎসার জন্য সাধারণত টপিক্যাল অ্যান্টিফাঙ্গাল ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
 সোরায়সিস: ইনভার্স সোরায়সিস হলো একটি ফর্ম, যা সাধারণত ত্বকের ভাঁজে দেখা দেয়। তবে এটি স্ট্যান্ডার্ড সোরায়সিসের চেয়ে একটু ভিন্ন। আর্দ্র পরিবেশের কারণে শরীরের যেকোনো স্থানেই হতে পারে। দেখতে লাল লাল ছোপ ছোপ র‌্যাশের মতো। এ ধরনের র‌্যাশ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই উত্তম।
 ক্যানডিডা: এটি অন্য ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ, বিশেষত ক্যানডিডা ইস্টের মাধ্যমে সৃষ্ট। এটি ফুসকুড়ির মতো দেখায়, যা সাধারণ চিকিৎসায় সারে না। এ ক্ষেত্রে বগলের ত্বককে যথাযথ পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিফাঙ্গাল অয়েন্টমেন্ট ও ওষুধ খাওয়া চাই।
 হাইড্রাডেনাইটিস সুপারটিভা: এটি বিষফোড়া নামেই বিশেষ পরিচিত। অ্যাকনে ইনভারসা একটি দীর্ঘস্থায়ী, প্রদাহজনক ব্যাধি, যা চুলের ফলিকলকে প্রভাবিত করে। এটি শরীরের যেকোনো অংশের ত্বকের ভাঁজে ঘটতে এবং ত্বকের নিচে ফোড়া, দাগ, সাইনাস ট্র্যাক্টসহ উপস্থিত হতে পারে। এর চিকিৎসা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। এ জন্য অবশ্যই কোনো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা প্রয়োজন।
 এরিথ্রাসমা: স্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে, এরিথ্রাসমা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের একটি রূপ, যা বিশেষ করে বগলের মতো লুকানো স্থানকে বেছে নেয় সবার আগে। এটির কারণে হাইপোপিগমেন্টেড লাল প্যাচ তৈরি হয়, পাশাপাশি চুলকানিও হয় বেশ। মূলত টপিক্যাল অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওয়াশ এবং ক্রিম দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়।
 ক্যানসার ট্রিটমেন্ট: কেমোথেরাপি কিংবা রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রায়শই বিভিন্ন র‌্যাশ বা চুলকানির সৃষ্টি হয় ত্বকে, বিশেষত আর্মপিটে। এ ধরনের সমস্যা তৈরি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক কারণে বগলে ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ হতে পারে। তাই এতে অস্বস্তি হলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করা এবং যথাযথ নিয়ম মেনে চলা জরুরি।

 নাইমা তাসনিম
মডেল: জাকিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top