skip to Main Content

যাপনচিত্র I জীবন ও জার্নি

মীর রাব্বি। ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন জনপ্রিয় রেডিও ও টেলিভিশন উপস্থাপক। বিজ্ঞাপনচিত্রে তার নেপথ্যকণ্ঠ শোনা যায় নিয়মিত। মেজবাউর রহমান সুমনের ধারাবাহিক ‘কফি হাউজ’, অনিমেষ আইচের চলচ্চিত্র ‘জিরো ডিগ্রি’তে দেখা গেছে তাকে। বর্তমানে অভিনয়ে নিয়মিত। ভ্যালেন্টাইন দিবসের নাটক ‘বুক পকেটের গল্প’ দিয়ে রয়েছেন চর্চায়চাকরিজীবন পেছনে ফেলে বর্তমানে সৃষ্টিশীল কাজেই নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। কাজের বাইরে তার দিন কিছুটা দেরিতে শুরু হয়। সকালে ঘুমোতে খুব পছন্দ করেন। সুযোগ পেলে ১১টা-১২টা পর্যন্ত। ঘুম থেকে উঠে ফোনে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ সম্পন্ন করে সাজিয়ে ফেলেন সারা দিনের কর্মপরিকল্পনা। ফোন কলে ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে কাজ, ডিরেক্টরদের সঙ্গে গল্প নিয়ে নানা কথা বলা, এনজিওর জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে কাজ সারেন দিনের শুরুতেই। দুপুরে একবারে সারেন ব্রাঞ্চ। ডিম, বেসিক প্রোটিন, ব্রেড, দুধের মতো হালকা খাবার ও পানীয় থাকে পাতে। চেষ্টা করেন কার্ব ও চিনি এড়িয়ে যাওয়ার। তবে সন্ধ্যা বা রাতে প্রোপার ফুড গ্রহণকে প্রাধান্য দেন। নিজেকে একদমই ভোজনরসিক দাবি করেন না। ঠিক যতটুকু না খেলেই নয়। মাঝরাতে ঘুমানোর কারণে কখনো কখনো রাত ১টায় হালকা কিছু খাওয়া হয়। নিজেকে ফিট রাখতে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ও হাঁটাহাঁটিতে আস্থা তার। নিকটতম গন্তব্যে পৌঁছতে পায়ের ওপরই ভরসা রাখেন।
অবসর সময়ে টিভি, সিরিজ, বই পড়া, সিনেমা দেখায় ব্যস্ত থাকেন। রাতে ফিল্ম, টিভি সিরিজ, নিউজ কনটেন্ট দেখার অভ্যাস আছে। নতুন কোনো টিভি সিরিজ আকৃষ্ট করলে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করেন না। পছন্দের টিভি সিরিজ ডেক্সটার, হ্যানিবল, কম্যুনিটি, ডার্ক জাস্টিজ, দ্য ফল গাই, সনস অব অ্যানার্কি, দ্য অফিস, প্রিজন ব্র্যাক থেকে হালের ক্রিয়েচার, দ্য বয়েজ, ট্রু ডিটেকটিভ, মি. রোবট, মানি হেইস্ট, নার্কোস, সাইলো।
অন্যদিকে ক্রিটিক ও কমার্শিয়াল—সব ঘরানার সিনেমা দেখেন এই অভিনেতা। বিশেষত অ্যান্থনি হপকিন্স, আল পাচিনো, রবার্ট ডি নিরো, হিথ লেজার, জেইক ইলেনহল, স্যামুয়েল লেরয় জ্যাকসন, মরগান ফ্রিম্যান, টম হ্যাংকসের মতো অভিনেতাদের অভিনয় ও তাদের যেকোনো সিনেমা দেখেন বুঁদ হয়ে। আবার কখনো অ্যানা হ্যাথওয়ে ও রবার্ট ডি নিরো অভিনীত দ্য ইনটার্ন, ভেকেশন ফ্রেন্ডস, হলমার্কের মুভি, অ্যাডাম স্যান্ডলার, কেভিন হার্টের মতো অভিনেতাদের হালকা কমেডি ঘরানার সিনেমা দেখেন মুডের ওপর নির্ভর করে। তবে সবচেয়ে পছন্দের সিনেমা পারফিউম: দ্য স্টোরি অব আ মার্ডারার, সিটি অব গড, ম্যান পুশ কার্ট, সাইল্যান্স অব দ্য ল্যাম্ব প্রভৃতি। সিনেমা দেখার সময় অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি, ডিরেক্টর’স পারসপেক্টিভ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।
বই পড়ার অভ্যাস ছোটবেলা থেকে। গত দু বছর তাতে একটু ঘাটতি এসেছে। মুভি ও টিভি সিরিজ হয়তো বই পড়ার সময়ে ভাগ বসিয়েছে। পুরোনো এই অভ্যাস ফিরে পাওয়ার আশা রাখেন। তবে ইদানীং অনেকটা সময়জুড়ে বিভিন্ন গল্পের স্ক্রিপ্ট পড়া হয়। পছন্দের লেখক হুমায়ুন আজাদ, সৈয়দ শামসুল হক, আহমদ ছফা, শহীদুল জহির, হুমায়ূন আহমেদ, অরুন্ধতী রায়, জালালউদ্দিন রুমি, কাহলিল জিবরান, শঙ্খ ঘোষ, ভলতেয়ার প্রমুখ।
মীর রাব্বি আগাগোড়া গানপোকা! তার ওপর মহীনের ঘোড়াগুলো, দ্য বিটলস, পিঙ্ক ফ্লয়েড বিশেষত রজার ওয়াটারসের প্রভাব তীব্র। রজার ওয়াটারস থাকাকালে পিঙ্ক ফ্লয়েডের শেষ অ্যালবাম ‘দ্য ফাইনাল কাট’-এর গান অথবা ‘ইন দ্য ফ্লেশ কনসার্ট ট্যুর’-এর পারফরম্যান্স এখনো তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বড় হয়েছেন একান্নবর্তী পরিবারে। বাংলা গান শোনার হাতেখড়ি অন্যদের কাছ থেকে প্রভাবিত হয়েই। ছোট থাকতেই শুনেছেন অঞ্জন দত্ত, কবীর সুমন, নচিকেতা, ওয়ারফেজের গান। এ ছাড়া চাইম, অবসকিউর, ডিফারেন্ট টাচ শুনেছেন অনেক। তবে আইয়ুব বাচ্চু, হাসান, জেমস এবং সঙ্গে প্রিন্স মাহমুদের প্যাকেজ তার বেড়ে ওঠার সময়কার অন্য রকম অনুষঙ্গ বলে মনে করেন। জেমসের প্রতি রয়েছে ভিন্নমাত্রার মুগ্ধতা। রাব্বির মতে, ‘জেমস ইজ দ্য আলটিমেট ট্রু রকস্টার’। ‘লেইস ফিতা লেইস’ অথবা ‘স্টেশন রোড’ অ্যালবামগুলো তার নস্টালজিয়ার অংশ বৈকি!
সেলিব্রিটি ক্রাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাব্বি মজার ছলেই বলেন, ‘একজনের নাম বলা মুশকিল! কারণ, এটি সময়ে সময়ে পাল্টাতে পারে। তবে এমা ওয়াটসন, স্কারলেট জোহানসন, অ্যান হ্যাথওয়ে, পেনেলোপে ক্রুজ, জেনিফার লরেন্সের কথা বলতেই হবে।’
হোম ইন্টেরিয়রে এই অভিনেতা খুব মিনিমালিস্টিক। ওয়ার্ম লাইট পছন্দ। ভিনটেজ, অ্যানটিক, ভিক্টোরিয়ান বা স্থানীয় বেতের ফার্নিচারে আস্থা। নিজের আঁকা ছবি দেয়ালে শোভা পায়।
স্টাইল কী, এমন প্রশ্নের জবাবে রাব্বির উত্তর, ‘একজন মানুষ তার বাস্তবিক ও বর্তমান সময়ে মনস্তাত্ত্বিক ও পারিপার্শিক অবস্থা থেকে যে স্টেটমেন্ট দেয়, এটি তা-ই।’
রাব্বি বেশ ভ্রমণপিয়াসি। নেপাল, ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরে এসেছেন। নেপাল তার কাছে অদ্ভুত এক মায়ার দেশ। সেখানকার শান্ত আবহাওয়া ও পরিবেশে একধরনের প্রশান্তি খুঁজে পান; বিশেষ পছন্দের জায়গা পোখারা। আবার অনেক লোকসমাগমের পরও থাইল্যান্ড ভালো লাগে ভিন্ন কারণে; এককথায় এটি তার কাছে কসমোপলিটান। আবার ক্রাবি, রাইলের মতো নির্জন সমুদ্রসৈকত ও দ্বীপও পছন্দ তার। যুক্তরাষ্ট্রের মাল্টিকালচার পছন্দ; মূল নিউইয়র্কের একটু দূরে, ম্যাসাচুসেটসে গেলে প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার সময় পাওয়া যায় বলে মনে করেন।
প্রাণীর প্রতি তার রয়েছে গভীর মমত্ববোধ। পোষা বিড়াল ‘মিউ মিউ’র কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মোহাম্মদপুরের একটি ড্রেনের কাছ থেকে একে উদ্ধার করেছিলেন অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শিয়া; সেই থেকে বিড়ালটি এক যুগ ধরে রয়েছে রাব্বির কাছে। এ ছাড়া তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে ১৩টি পার্শিয়ান বিড়াল আছে। একসময় কুকুরও পুষতেন।
অনেকে হয়তো জানেন না, এই অভিনেতা একজন ট্যাটু আর্টিস্ট; পাশাপাশি ভালো ছবি আঁকতে পারেন। একসময় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বছর পাঁচেক থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। ম্যানহাটন সিটির যেখানে তিনি থাকতেন, আশপাশে অনেক ট্যাটু শপ ছিল। সেখান থেকে খানিকটা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তার বাম হাতের ওপরের অংশ থেকে বুক পর্যন্ত আছে বেশ বড় একটি ট্যাটু। সেটি করিয়েছেন পলিনেশিয়ান থিমে। বলে রাখা ভালো, পলিনেশিয়ান অন্তর্ভুক্ত অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনিসহ যেসব দ্বীপ আছে, তাদের কালচারাল সিম্বল-সংবলিত এই ট্যাটু।
পেইন্টিং বেশ পছন্দ করেন। পছন্দের পেইন্টার ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ, সালভাদর দালি, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, মিকেলাঞ্জেলো, পাবলো পিকাসো, গুস্তাফ ক্লিম্ট। ইচ্ছে আছে এসব আর্ট দেখতে ফ্রান্স ও ইতালির বিখ্যাত গ্যালারিগুলোতে যাওয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আমেরিকা, দ্য মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টসহ বেশ কিছু গ্যালারিতে গিয়েছেন ইতিমধ্যে।
মীর রাব্বি আড্ডাবাজ। সৃষ্টিশীল মানুষদের সঙ্গেই আড্ডাবাজি বেশি। বন্ধুসংখ্যা হাতে গোনা; তাদের মধ্যে রয়েছেন মিউজিশিয়ান বুনো, জয়ী, রাকা প্রমুখ। তার ভাষ্য, ‘আমার কাছে জীবনকে একটি সহজ সিম্পল জার্নি মনে হয়। সেই জার্নিকে আমরা আসলে মানবসভ্যতায়, আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে একেক সময়, একেক শতাব্দীতে, একেক ভৌগোলিক অবস্থানে, একেক দেশে, একেক রকম করে মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। এসব কারণে মানুষের জীবন-যাপন নানাভাবে প্রভাবিত হয়। সেটি অর্থ উপার্জনের জার্নি থেকে শুরু করে যশ, খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা বা বর্তমানে পণ্য বাজারজাতকরণের জার্নি, যা হয়তো ২০ বছর আগেও চিন্তা করা যায়নি। তবে এসবের বাইরে এটি এমন এক জার্নি, যেখানে আসলে নিজেকে চেনা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ সামাজিক জীব; পৃথিবীর একটি অংশ। আমরা দিন শেষে পৃথিবীর সঙ্গে যত কানেক্টেড থাকতে পারব, জীবনের জার্নিটা তত সহজ হবে।’

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: মো. রাকিবুল হাসান রাফিউ
লোকেশন: টেরাকোটা টেলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top