skip to Main Content

টেকসহি I ঐতিহ্যের ঐশ্বর্য

ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ডে নামে অধিক পরিচিত। সরল বাংলায়, বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস। প্রতিবছরের ১৮ এপ্রিল দুনিয়াজুড়ে পালিত হয় বিশেষ উদ্দেশ্যে

১৯৮৫ সাল। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে প্রথমবার জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) কাছ থেকে স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশের মসজিদের শহরখ্যাত বাগেরহাট। শুধু তা-ই নয়, একই বছর ইউনেসকো এ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁর বদলগাছিতে অবস্থিত সোমপুর মহাবিহারকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে মর্যাদা দেয়। বিশ্বের কাছে সম্মান পায় প্রায় ১ হাজার ২০০ বছরের পুরোনো পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ। এই তালিকায় প্রায় ১২ বছর পর যুক্ত হয় একটি নতুন নাম। সুন্দরবন। যার পরিচয় পৃথিবীর অন্যতম বড় ম্যানগ্রোভ বা লবণাক্ত বনাঞ্চল হিসেবে।
বিশ্বজোড়া ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো সংরক্ষণ এবং মর্যাদা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইউনেসকো প্রতিবছরের ১৮ এপ্রিল পালন করে বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস। বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা এবং সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে অন্তরে ধারণ করতে পারে, সে জন্যই ১৯৮৩ সাল থেকে সাড়ম্বরে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এটি পালনের সিদ্ধান্ত অবশ্য এক দিনে হয়নি। পেছনে রয়েছে বিস্তর গল্প। ইউনেসকো এর বীজ বপন করেছিল ১৯৫৯ সালে। তারপর অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আলোর মুখ দেখে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ডে।
১৯৫৯ সালে ইউনেসকো বিপদাপন্ন সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষার জন্য একটি কনভেনশন গ্রহণ করে। এই কনভেনশন মূলত আগত প্রজন্মের জন্য সুরক্ষা এবং সংরক্ষণ প্রয়োজন এমন ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোকে কেন্দ্র করে করা হয়েছিল। অবস্থার কিছুটা অগ্রগতি হয় ১৯৬৪ সালে প্রদত্ত ভেনিস চার্টারের মাধ্যমে। একে বলা যায় বিশ্বজোড়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিকনির্দেশনা। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান কিংবা স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয় এই চার্টার।
বিশ্বব্যাপী ঐতিহ্য দিবস পালন করার নেপথ্য কারিগর প্যারিসের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস (আইসিওএমওএস)। ভেনিস চার্টারের পরিণতি হিসেবে ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে স্মৃতিস্তম্ভ, বিল্ডিং কমপ্লেক্স এবং ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ ও সুরক্ষা দিতে। এই সংস্থা কাজ শুরু করার পর সারা বিশ্বের ১৫০টি দেশের প্রায় ১০ হাজার সদস্য যুক্ত করেছে। যারা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একীভূত হয়ে ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
১৯৮২ সালে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রতিবছরের ১৮ এপ্রিল বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেয় ইউনেসকো। ১৯৮৩ সালে ইউনেসকোর ২২তম সাধারণ সম্মেলনে দিনটিকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। প্রতিবছর কোনো না কোনো প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে পালিত হয় দিবসটি।
২০২৩ সাল পর্যন্ত ইউনেসকো ১১৯৯টি স্থানকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ১৯৭৮ সালে প্রথম জার্মানির আকেন ক্যাথেড্রালকে ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো। সাংস্কৃতিক মানদণ্ডে স্বীকৃতি পায় স্থানটি। একই বছর ইকুয়েডরের কিটো শহর দ্বিতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি পায়। প্রাকৃতিক মানদণ্ডে ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ইউনেসকোর প্রথম স্বীকৃতি পায় ইকুয়েডরের গালাপ্যাগোজ দ্বীপ।
বাংলাদেশের বাগেরহাট, সোমপুর মহাবিহার ও সুন্দরবন—এই তিনটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল রয়েছে। প্রথম দুটি ১৯৮৫ সালে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে জায়গা পেয়েছে। অন্যদিকে সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে প্রাকৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
বাগেরহাট বলতে মূলত পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইসলাম ধর্মপ্রচারক উলুঘ খানুল আজম খান জাহানের হাত ধরে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভৈরব নদের তীরে গোড়াপত্তন হওয়া তৎকালীন নগরী বা শহরকে বোঝায়। প্রাচীন এই শহরকে ঐতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ৩২১ নম্বর ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ইউনেসকো। শহরের ঐতিহ্যবাহী ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ, সিংগাইর মসজিদ, উলুঘ খানজাহানের সমাধিসৌধ, নয় গম্বুজ মসজিদ, খানজাহান নির্মিত প্রাচীন রাস্তা, জিন্দাপীর মসজিদ, বিবি বেগনী মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, রনবিজয়পুর মসজিদ, সাবেকডাঙ্গা পুরাকীর্তি। তবে পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সবকিছু যে একই রকম আছে, তা নয়। কালের গহ্বরে অনেক কিছু হারিয়েও গেছে। সমৃদ্ধ প্রাচীন খলিফাতাবাদ শহরের অসংখ্য স্থাপনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে।
ঐতিহাসিকদের মতে, আনুমানিক ৩০০ বছর ধরে সোমপুর মহাবিহার বৌদ্ধদের অন্যতম প্রসিদ্ধ ধর্ম শিক্ষাদান কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত ছিল। যেখানে শুধু এই উপমহাদেশের শিক্ষার্থীই নয়; অন্যান্য দেশের বৌদ্ধরাও ভিড় জমাতেন। চীন, তিব্বত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধরা উচ্চতর ধর্মজ্ঞান চর্চা করতে এখানে আসতেন। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম বৌদ্ধবিহার। ইউনেসকো ঘোষিত তালিকায় এই পাহাড়পুর বিহারকে ৩২২তম বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউনেসকো কর্তৃক এ দেশের সর্বশেষ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ঐতিহ্যবাহী স্থান সুন্দরবন। আনুষ্ঠানিকভাবে ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্যের চিহ্ন হিসেবে ঘোষণা করা হয় একে।
২০১৪ সাল পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় দেশের নতুন পাঁচটি সম্ভাব্য স্থান অন্তর্ভুক্ত ছিল। লালবাগ কেল্লা, হলুদ বিহার, জগদ্দল বিহার, লালমাই-ময়নামতির স্মৃতিস্তম্ভ সমগ্র, মহাস্থানগড় এবং এর আশপাশের জায়গা। এখন বাকি ইউনেসকোর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া।
২০২১ সালের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্ভাব্য (টেনটেটিভ) তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য দেশের আরও ২১৫টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানকে নির্বাচন করেছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। নির্বাচিত স্থানের মধ্যে ‘আর্কিওলজিক্যাল সেটেলমেন্টস অন লিটারেল ল্যান্ডস্কেপ অব সাউথ ওয়েস্টার্ন পার্ট অব বাংলাদেশ’ বিভাগে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৭টি প্রত্নস্থান। ‘ব্রিক বিল্ট মোগল মস্ক ইন বাংলাদেশ’ বিভাগে রয়েছে মোগল আমলের ৩০টি মসজিদ। ‘কালচারাল ল্যান্ডস্কেপ অব মহাস্থান অ্যান্ড করতোয়া রিভার’ বিভাগে মহাস্থান অঞ্চলের ৮৪টি প্রত্নস্থল। ‘আর্কিওলজিক্যাল সাইটস অ্যান্ড ল্যান্ডস্কেপ অব লালমাই-ময়নামতি’ বিভাগে লালমাই-ময়নামতি অঞ্চলের ২১টি প্রত্নস্থল। ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি কমপ্লেক্স বাংলাদেশ’ বিভাগে জাতীয় সংসদ ভবন, ‘দ্য আর্কিটেকচারাল ওয়ার্ক অব মাজহারুল ইসলাম, অ্যান আউটস্ট্যান্ডিং কন্ট্রিবিউশন টু দ্য মডার্ন মুভমেন্ট ইন সাউথ এশিয়া’ বিভাগে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের নকশা করা ১৬টি স্থাপনা, ‘মোগল ফোর্টস অব ঢাকা: অ্যাডাপটিভ স্টাইল অব মোগল ফোর্টস অন ফ্লুভিয়াল ট্রেইন’ বিভাগে লালবাগ কেল্লা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী তিনটি জলদুর্গ এবং ‘মোগল অ্যান্ড কলোনিয়াল ব্রিক টেম্পলস অব বাংলাদেশ’ বিভাগে মোগল ও ঔপনিবেশিক সময়ের ৩৩টি মন্দির নির্বাচিত তালিকায় স্থান পেয়েছে।
সাধারণত সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যার অন্তর্গত স্মৃতিস্তম্ভ, দালান, বন, পাহাড়, হ্রদ, মরুভূমি, প্রাসাদ ও শহর। ১৯৭২ সালে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশনে ঐতিহ্যবাহী স্থানের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা হয়। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বলতে মূলত স্মৃতিস্তম্ভ, ভবন ও স্থানকে বোঝায়। অন্যদিকে প্রাকৃতিক ঐতিহ্য বলতে প্রাকৃতিক স্থান যা বিজ্ঞান, সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ, ভূতাত্ত্বিক ও ভৌতিক গঠনকে (প্রাণী ও উদ্ভিদের হুমকির সম্মুখীন প্রজাতির বাসস্থানসহ) বোঝায়।
বাংলাদেশ ১৯৮৩ সালের ৩ আগস্ট ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশন গ্রহণ এবং দেশের ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কাজ শুরু করে। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য প্রকল্পের আওতায় বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি এই তালিকা প্রণয়নের কাজ করে। প্রকল্পটির কাজ হলো বিশ্বের নানা স্থানে ছড়িয়ে থাকা অনন্যসাধারণ সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক গুরুত্ববিশিষ্ট স্থানসমূহ চিহ্নিত এবং তা একটি বৈশ্বিক তালিকায় লিপিবদ্ধ করা। ২০০৪ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক তালিকায় নাম লিপিবদ্ধকরণের জন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে ছয়টি এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের পক্ষে চারটি মানদণ্ড ছিল। ২০০৫ সালে দশটি মানদণ্ড মিলিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। যেগুলোর মধ্যে অন্তত একটি পূরণ করলে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় স্থান পাবে ঐতিহ্যটি।
সাংস্কৃতিক মানদণ্ডের প্রথম বিষয়টি হচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী স্থানের মধ্যে সৃজনশীলতা থাকতে হবে। তা ছাড়া সভ্যতার অনন্য সাক্ষ্য বহন করে এমন বৈশিষ্ট্য থাকা চাই। প্রাকৃতিক নিদর্শনের মধ্যে ব্যতিক্রমী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নান্দনিক গুরুত্ব রয়েছে এমন ঐতিহ্য থাকতে হবে। সভ্যতার ইতিহাস যুক্ত এমন ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে।
বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস পালনের তাৎপর্য অনেক। সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও স্মৃতিস্তম্ভের ইতিহাস-সম্পর্কিত সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এর অন্যতম লক্ষ্য। শুধু তা-ই নয়, এই দিনে ঐতিহ্যবাহী স্থান সম্পর্কে বিভিন্ন জ্ঞান দেওয়া হয়। পাশাপাশি আগত প্রজন্মের কাছে তাদের গৌরবময় অতীতের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। বিশ্বব্যাপী ঐতিহ্যকে কেন সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করাই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে নানা প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। যেগুলো স্থায়ী জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন যাপিত জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসের দিনে বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক বিভিন্নতার দিক তুলে ধরার পাশাপাশি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলো টিকিয়ে রাখার বার্তাও দেওয়া হয়।

 সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top