skip to Main Content

এডিটর’স কলাম I চাই ভারসাম্য-কানিজ আলমাস খান

 

উইমেন অন্ট্রাপ্রেনরস অ্যান্ড ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স নিয়ে সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে কথা বলতে হয়েছিল। বিষয়টি এই সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। আমার মনে হয়েছে, বিষয়টি শেয়ার করি। আমি যা ভালোভাবেই উপলব্ধি করি। কারণ, একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আমাকে কর্মক্ষেত্র এবং ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য রক্ষা করেই চলতে হয়। ব্যক্তিজীবনেও রয়েছে নানা ভাগ। এর একটা অবশ্যই একেবারে নিজস্ব। সেই জগৎটা একান্তই আমার। তাই প্রতিদিন আমার কিছুটা সময় থাকে নিজের জন্য। অনেক সময় হয়তো পারা যায় না। তবু চেষ্টা করি। চুপচাপ বসে থাকা, গান শোনা বা বইপড়ার মধ্যেই আমার সেই আপন ভুবনে থাকা। এটা বেশ জরুরি। আবার পরিবারকে সময় দেওয়া। এখানে যেমন সবাইকে সময় দিতে হয়, তেমনি একেকজনকে আলাদা করেও দিতে হয়। এসব আমরা নারীরা সবাই অবগত। আমাদের জীবন আসলে সবাইকে নিয়ে। এর সঙ্গে রয়েছে সামাজিকতা। সেটাও ব্যক্তিজীবনের অংশ।
নারী উদ্যোগ এবং উদ্যোক্তাদের নিয়ে নানা সময়ে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষা হয়েছে। সেখানে অনেক কিছুই উঠে এসেছে। এসব তথ্য ভুল কিংবা ভিত্তিহীন, তা কিন্তু নয়। তবে আমি মনে করি, নিজের জীবন দিয়েই প্রকৃত অবস্থাটা অনুধাবন করা যায়। বোঝা যায়। কারণ, সেটা তো আপনার একেবারেই প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা।
নারী উদ্যোগ একেবারে হালের বিষয় তা নয়; বরং বর্তমানে সংখ্যাটা উল্লেখ করার মতো। এবং আশা জাগানো। অথচ উদ্যোগ বা অন্ট্রাপ্রেনরশিপ বিষয়কে একটা সময় পর্যন্ত পুরুষেরই একচেটিয়া ভাবা হতো। এই মনোভাবে পরিবর্তন অবশ্যই এসেছে। নব্বইয়ের দশক থেকে মেয়েরা অনেক বেশি তৎপর হয়েছে। তবু মেয়েরা উদ্যোক্তা হবে শুনলে আমাদের পিতৃতান্ত্রিক অবচেতন একটুখানি হোঁচট খায়। মেয়েকে, বোনকে বা স্ত্রীকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বলেন বাবা, ভাই বা স্বামী। এমনকি মা-ও। পরিচিতজনেরা কিন্তু আলোচনা করেন।
যা হোক, ‘গ্লোবাল অন্ট্রাপ্রেনরশিপ মনিটর বা জেম’ বিশ্বজুড়ে নানা বিষয়ে সমীক্ষা করে থাকে। ২০১৬-১৭ সালে নারী উদ্যোক্তাদের ওপর যে সমীক্ষা তারা করেছে, তা বেশ আশাব্যঞ্জক। এই প্রতিবেদন বলছে, ২০১৬ সালে ৭৪টি দেশের আনুমানিক ১৬৩ মিলিয়ন নারী উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরু করেছেন অথবা চালাচ্ছেন। এর পাশাপাশি অন্তত ১১১ মিলিয়নের রয়েছে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা। এগুলো কেবল সংখ্যা নয়, বরং এই সংখ্যার পেছনে রয়েছে যেমন চড়াই আর উতরাইয়ের গল্প, তেমনি আছে অবদানের কথাও। কারণ, একটা কিছু শুরু করতে গিয়ে একজন নারীকে নানা সমস্যার মধ্যে যে পড়তে হয়। পুরুষ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে পথ এতটা সমস্যাসংকুল নয়।
তবে একটা কথা আমি স্বীকার করতে চাই, কিছু বিষয় আমার জন্য সহজ ছিল। ব্যাংকঋণ কিংবা বাড়িভাড়া পেতে সমস্যা হলেও আমি মানসিক শক্তি আর সহায়তা পেয়েছি আমার পরিবারের কাছ থেকে। আমার হাজবেন্ড আমাকে নিয়েই বাড়ি খুঁজতে গিয়েছেন। সেখানেও আমাদের দুজনের নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। আবার আমার শাশুড়ি আমাকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন। আমি সে ক্ষেত্রে নিজেকে ভাগ্যবান বলতে পারি।
তবে কেবল উদ্যোগ নিলেই হবে না, বরং নেওয়ার আগে আগপিছ বিবেচনা করা প্রয়োজন। এটা অনেকে করেন না বলেই ড্রপআউট হয়ে যান। এই সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। পুরুষদের তুলনায় বরং বেশি। এ জন্যই কোনো উদ্যোগ শুরুর আগে প্রয়োজন মোটিভেশন। তা ছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, বিশেষায়িত শিক্ষা বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, অর্থের সংস্থান ইত্যাদি সহায়ক বিষয়গুলো উদ্যোগকে টেকসই করতে ভূমিকা রাখতে পারে।
যেকোনো উদ্যোগকেই আমি স্বাগত জানাই। তা পুরুষের উদ্যোগই হোক বা নারীর। এর একটাই কারণ, সেই উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। নারীদের যেহেতু এখনো কঠিন বাধা পেরিয়ে তবেই দাঁড়াতে হয়, তাই এ ক্ষেত্রে তাদের অবদান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সারা পৃথিবীর নারী উদ্যোক্তাদের অন্তত ৪৮ মিলিয়ন নবীন উদ্যোক্তা এবং ৬৪ মিলিয়ন নারী পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক বা একাধিক মানুষের কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। এর মধ্যে আমরা বাংলাদেশিরাও কিন্তু আছি। বাংলাদেশে মোট উদ্যোগে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ১০ শতাংশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই বৃদ্ধি উল্লেখ করার মতো। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষকেও টপকে যাচ্ছে। আমার কাছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটটা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে। এখানে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোক্তাদের সংখ্যাটা কিন্তু আশাব্যঞ্জক। ফ্যাশন হাউজ এবং এর সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, আবার সৌন্দর্যসেবা খাত। যে খাতের আমি একজন প্রতিনিধি। এখানেও কিন্তু নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা উল্লেখ করার মতো। সারা দেশে অন্তত দুই লাখ বিউটি পার্লার আছে। ছোট, বড়, মাঝারি মিলিয়ে। সেখানে কম করে হলেও চার লাখ নারী কাজ করেন।
এ ছাড়া আছে হস্ত ও কুটিরশিল্প খাত। এখানেও নারীরা বিশেষ অবদান রাখছেন। কাপড়ের ব্যবসা, মুদি ও স্টেশনারি দোকান, কৃষিপণ্যের ব্যবসা এবং অন্যান্য। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে সৌন্দর্য খাত রয়েছে বলে কয়েক বছর আগের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে।
এমন আশা জাগানো পরিস্থিতি যেমন আছে, তেমনি হতাশার জায়গা যে নেই তা নয়। কারণ, নারী উদ্যোক্তাদের রয়েছে পদে পদে বাধা। ঋণপ্রাপ্তিতে সমস্যা, ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে উদার হলেও অনেক ক্ষেত্রেই বেঁকে বসে। মেয়েদের তা সে চাকরিই করুক বা ব্যবসা- ঘরে ও বাইরের ভারসাম্য বজার রাখতে হয়। সাপোর্ট সার্ভিসের অভাব তাদের থাকেই। এ ছাড়া লিঙ্গবৈষম্য যেমন আছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আছে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির বাধা।
অথচ আমরা ভুলে যাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবার ও সমাজে তাদের অবদান দৃশ্যমান। দারিদ্র্য দূরীকরণে তারা কার্যকর সহায়ক শক্তি হয়ে ওঠে।
এখানে একটা বিষয় বলে রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশ যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে অত্যন্ত গুরুত্ব পাচ্ছে নারী। কারণ, লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নও নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে চলার পথ আরও সুগম করতে হবে।
এর সবচেয়ে বড় কারণ দেশের অর্ধেক নারী। ফলে বিশাল এই জনসংখ্যাকে সক্ষম করে তুলতে হবে। আশার কথা, মেয়েরা আগে চেয়ে অনেক সাহসী। তা সে গ্রামেই হোক বা শহরে। পড়াশোনায় ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। কর্মক্ষেত্রেও। তবে উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের গ্যাপ আমি মনে করি, যত দিন যাবে তত কমে আসবে। বিশেষ করে আমাদের আর্থসামাজিক পরিবর্তন এখন আর অদৃশ্য কোনো বিষয় নয়।
বর্তমানে সাপোর্ট সার্ভিসের অভাব আগের চেয়ে অনেক কমেছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনার পাশাপাশি প্রশাসনিক, পরিচালন ও আইনি সহায়তা দিচ্ছে।
আমি সৌন্দর্যসেবা খাতে জড়িত থাকায় ভালো করেই জানি, কী ধরনের সমস্যায় মেয়েদের পড়তে হয়। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক পেশাগত শিক্ষা না থাকা। এই গুরুত্ব বিবেচনায় আমি একটি ইনস্টিটিউট করেছি। যেখানে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে এসে মেয়ে ও ছেলেরা এই খাতে পেশাদার হতে চাইলে কিংবা উদ্যোক্তা হতে চাইলে প্রশিক্ষণ নিতে পারে। তবে আমি একটা কথা বারবার বলি, সেটা হলো ভয় পেলে চলবে না; বরং লক্ষ্যটা বড় হতে হবে। অনেক দূরে তা স্থির করতে হবে। মেয়েরা কিন্তু দশভুজা। অনেক কিছুই তাদের করতে হয়। তবে একটি উদ্যোগ স্থায়ী হয় ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দক্ষতা। প্রতিষ্ঠান যত বাড়তে থাকবে, ততই প্রফেশনালদের নিয়োগ দিতে হবে। তবেই সাফল্য মিলবে। পাশাপাশি কর্মপরিবেশকে উষ্ণ ও আন্তরিক রাখতে হবে। এটা শুধু কথার কথা নয়, বরং পারসোনা সেটা মেইনটেইন করে থাকে।
বর্তমানে উদ্যোক্তাদের তো শুধু দেশে নয়, প্রয়োজনে বিদেশেও যেতে হয়। তাই ব্যালান্সিং সেখানেও প্রয়োজন হয়। আমি মনে করি, এই ভারসাম্য নিশ্চিত করা সম্ভব যদি কর্মপরিবেশ তেমন আন্তরিক হয়। আমার প্রতিষ্ঠানে বিষয়টিকে তাই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। যাতে করে সবার মধ্যে একটা ওনারশিপ তৈরি হয়। এই পরিবেশ অবশ্য অধিক ফল দিয়ে থাকে। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, এই ভারসাম্য বৃদ্ধি পেলে কর্মীরা আরও কমিটেড হয় এবং প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করার প্রবণতা কমে।
তবে বর্তমানে অনেক অপশন তৈরি হয়েছে। এই ভারসাম্য বজায় রাখতে আপনার সুবিধামতো উদ্যোগ কিংবা চাকরি নিতে পারেন। বলতেই হবে কর্মজীবী নারীদের অনেক ক্ষেত্রেই জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার যোগ্যতা রয়েছে। কারণ, পরিস্থিতি অনুধাবনের ক্ষমতা থাকে, নিবেদিতপ্রাণ, এক হাতে নানা ধরনের কাজে পারঙ্গম এবং সংকট সামাল দেওয়ার ক্ষমতা।
আবার একেবারে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমরা জীবনের জন্য কাজ করি। কাজের জন্য জীবন নয়। এ জন্য কাজকেও উপভোগ করতে হবে। একইভাবে জীবনও। দুটোকে সমান্তরালভাবে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মেয়েদের জন্য আমি জানি এটা বেশ কঠিন। তাই মাঝেমধ্যে ভারসাম্যের অভাব হয়। তবে তা ঠিকও হয়ে যায়। উদ্যোক্তাই হোক বা প্রতিষ্ঠিত বিজনেস উওম্যান কিংবা ওয়ার্কিং উওম্যান- কেউ কেউ আছেন কেবল ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবেন। ক্যরিয়ারকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। সংসার নয়। অনেকে সংসার করেনও না। আবার দাম্পত্য জীবন থাকলেও সন্তান নিতে চান না। ক্যারিয়ারই অধিক প্রাধান্য পায়। তারা আসলে ‘একলা চলো রে’ নীতিতে চলেন। ফলে তাদের জন্য জীবন আর কাজের ব্যালান্স করা সহজ। কিন্তু যারা ক্যারিয়ারও করেন, সমান গুরুত্ব দিয়ে সংসারও সামলান তাদের কথা আলাদা। আমি তো মনে করি, এতে কষ্ট হলেও একটা অন্য রকম মজা আছে। জীবনকে পুরোপুরি উপভোগ করা যায়। আমার সঙ্গে আপনারা অনেকে একমত হতেও পারেন, আবার না-ও পারেন। আমি কিন্তু দারুণভাবে তা এনজয় করি।
আমার যতটুকু সময় যেখানে দেওয়ার, সেটা ঠিকঠাকমতো দিই। কোয়ালিটি টাইম দেওয়াটাই আসল। এ জন্য আমি নিজে ভাগ করে নিই আমার কাজের জায়গায় সময় কতটুকু দেব, আর সংসারে কতটুকু। সেটা যদি এক ঘণ্টাও হয় তো হোক। কিন্তু সেটা কার্যকর হতে হবে। দুটো জীবনকে চালাতে আমাদেরও কৌশলী হতে হবে। কারণ, কোথাও কখনো সময় বেশি দিতে হয়; কখনো কম দিলেও চলে। এ জন্য আমি মনে করি রুটিন থাকাটা জরুরি। আর একজন নারী উদ্যোক্তার জন্য তার উদ্যোগও সন্তানের মতো। তাকে সেভাবেই পরিচর্যা করতে হয়, লালন করতে হয়। তবেই তো বড় হয়। অন্যদিকে, যাদের সন্তান আছে তারা নিজের সন্তানকে তিলে তিলে বড় করে তোলেন। কারণ, কখনোই কোনো মা চান না তার সন্তান অসফল হোক। তা ছাড়া সুনাগরিক, সুস্থ মানুষ এই দেশকে, এই পৃথিবীকে উপহার দেওয়ার ইচ্ছা এবং কমিটমেন্ট সব মায়েরই থাকে। ফলে সন্তানকে তাঁর সময় দিতেই হয়। পাশাপাশি সংসারে সিনিয়র সিটিজেনরা থাকেন, স্বামী থাকে। বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়-পরিজনও। সবার জন্যই সময় রাখতে হয়। আমি কিন্তু এই শেষেদের দলে। সবাইকে নিয়ে চলতেই আমি পছন্দ করি। সময় দিই। আর একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, কর্মজীবন অবশ্যই কঠিন। সেখানে প্রতিযোগিতা থাকে, টানাপোড়েন থাকে, সমস্যা থাকে। এমনকি নিজের ব্যবসা সামলাতে গিয়েও অনেক সমস্যার সম্মুখীন আমাদের হতে হয়। প্রতিযোগিতা সেখানেও আছে। তখন প্রয়োজন প্রিয় মানুষদের সান্নিধ্য, তাদের সাপোর্ট। যেটা আমি সব সময়েই পেয়ে থাকি। ঘরে এবং বাইরে সামলাতে হলে হাজবেন্ডকে বন্ধু করে নিতে হয়। তার সঙ্গে অনেক কিছু শেয়ার করে অনেক সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। পাশে থেকে আত্মবিশ্বাস জোগায়। সংসার কার কর্মক্ষেত্রের ভারসাম্য রক্ষা অনেকভাবেই সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন আপনার হাজবেন্ড। আমরা অনেকেই হয়তো মনে করি, টাকা দিয়েই সবকিছু সেরে ফেলা যায়। বাস্তবে কিন্তু তা হয় না। এই যেমন আমি আমার বয়স্ক কোনো আত্মীয়কে অনেক কিছু কিনে দিতে পারি। ধরা যাক আমার শাশুড়ির কথাই। তাঁকে টাকা দিয়ে দিলাম তিনি তাঁর মতো করে কিছু কিনে নিলেন, সেটা এক বিষয়। আর আমি নিজে তাঁর জন্য কিছু নিয়ে এলাম। সেটা আরেক বিষয়। উপরন্তু আমি তাঁর সঙ্গে আধঘণ্টা সময় কাটালে যেটা হবে তা কিন্তু ওই উপহারে হবে না। আজকে আমি যেখানে আছি সেটা কিন্তু সম্ভব হয়েছে এসব সম্পর্কের কারণে।
এর বাইরে আমাদের সবারই কোনো না কোনো সোশ্যাল কমিটমেন্ট আছে বা থাকেও; আমরা চেষ্টা করি কিছুটা সময় বাঁচিয়ে রেখে সেই কাজে ব্যয় করতে। আমার মনে হয়, সব সফল কর্মজীবী নারী বা উদ্যোক্তা নারীদের পেছনে অবশ্যই রয়েছে পরিবারের সমর্থন। সে জন্যই তো তার পক্ষে নির্ভার হয়ে পেশাগত কাজে মনোনিবেশ করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কাজের জায়গায় সংসারকে নিয়ে যাওয়া যেমন সমীচীন নয়, তেমনি সংসারে কাজ নিয়ে আসাও। দুটোকে নিরাপদ দূরত্বে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। না হলে শান্তি নষ্ট হয়।
আর একটা বিষয়, বর্তমানে ছেলে ও মেয়ে উভয়ে স্বাবলম্বী। ফলে দাম্পত্যে কম্প্রোমাইজ আর অ্যাডজাস্টমেন্ট কেউই করতে চায় না। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এই ট্রেন্ড মোটেই কাম্য নয়।
পরিশেষে বলি, জীবন আমি একা একা উপভোগ করি বা সবাইকে নিয়ে, ভারসাম্য সবক্ষেত্রেই প্রয়োজন। কে কতটা সুন্দর আর কার্যকরভাবে সেটা করতে পারছে সেটাই দেখার। এই ভারসাম্য নষ্ট হলে তার ইমপ্যাক্ট কর্মজীবনে যেমন পড়ে তেমনি ব্যক্তিজীবনেও। নতুনদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে শুরু থেকেই যেন আমরা এই ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করি এবং সুস্থ সুন্দর জীবন উপভোগ করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top