skip to Main Content

এডিটর’স কলাম I সৌন্দর্য আত্মপ্রত্যয়ে

কারও শরীর সম্পর্কে কটূক্তি কিংবা প্রশ্ন তোলার অধিকার কারও নেই। কারও শরীর কারও বিচার্য বিষয় হতে পারে না। শরীরের প্রসঙ্গ এনে কাউকে বিব্রত বা উপহাস করা সমাজসম্মত নয়। এতে মাঝে মাঝে ভয়ংকর দুর্ঘটনাও ঘটে

‘বডি শেইমিং’ কথাটা কিঞ্চিৎ অস্বস্তিকর আমার কাছে। এক বছর ধরে এটা সবচেয়ে বেশি কানে বাজছে। মিডিয়া বেশ সোচ্চার থেকেছে এ নিয়ে। নামিদামি সব সেলিব্রিটি কথা বলেছেন, সমালোচনা করেছেন, বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তর্ক-বিতর্কের ঝড় উঠেছে। পাশ্চাত্য বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ হাওয়া বইছে। সেদিন এ-সম্পর্কিত এক সেমিনারে অংশ নিলাম।

এটা একটা কনসেপ্ট। একধরনের প্রতীকী প্রতিবাদ একে বলা যেতে পারে। যার অর্থ হচ্ছে, কারও শরীরের কাঠামো নিয়ে কোনো রকম মন্তব্য করে কখনোই কাউকে হেনস্তা করা যাবে না। সে রোগা হোক, মোটা হোক, কালো কিংবা ফরসা হোক- সে বিষয়ে কোনো উক্তি, কটূক্তি, উসকানিমূলক মন্তব্য, তাচ্ছিল্য করে কথা বলা রীতিমতো অপরাধ। যার যার শরীর, তার তার ব্যাপার। সেটি কেমন, তা অন্যের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে না। যদিও বাস্তবে বেশির ভাগ সময় তাই হয়ে আসছে। কনসেপ্টটি নতুন হলেও এর সঙ্গে আমরা পরিচিত সেই ছেলেবেলা থেকে। রাস্তাঘাটে, অনুষ্ঠানে, মার্কেটে, পরের বাসায় এমনকি নিজের পরিবারেও- সর্বত্র কেউ না কেউ এর শিকার হচ্ছে। কৈশোরে আমি নিজেই কত শুনেছি, তুমি অ্যাতো শুকনা কেন? বেশি করে খাও, শরীর তো হাড্ডিসার! আর কেউ মোটা হলে তো কথাই নেই। তাদের পদে পদে কত যে কথা শুনতে হয়! আমার মনে হয়, শারীরিক কাঠামো নিয়ে মন্তব্য করা আমাদের কাছে বিনোদনের মতোই। কোনো পার্টি বা অনুষ্ঠানে গেলে, ভাবি আপনি আগের চেয়ে বেশি মোটা হয়ে গেছেন বা শুকিয়ে গেছেন- এ ধরনের কথা শুনতে হয় না এমন মানুষ সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরিবারের যে শিশুর শরীর অন্যদের মতো নয়, সে ছোটবেলা থেকেই নানা রকম মন্তব্য শুনেই বড় হয়। স্কুল, কলেজ, এমনকি বাসাতেও। আসলে মোটা-চিকন, খাটো-লম্বা, কালো-ফরসা- এসব মেনে নেয়ার মানসিকতা আমাদের নিজেদের পরিবারেরই থাকে না, সমাজের অন্যদের কথা তো বাদই দিলাম। এর কোনো শ্রেণিভেদও নেই। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব সব শ্রেণিতেই এক অবস্থা।
সময় পাল্টেছে। এখন রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে বলা হচ্ছে, এ রকমটা করা যাবে না। কারও শরীর সম্পর্কে কটূক্তি কিংবা প্রশ্ন তোলার অধিকার কারও নেই। কারও শরীর কারও বিচার্য বিষয় হতে পারে না। শরীরের প্রসঙ্গ এনে কাউকে বিব্রত বা উপহাস করা সমাজসম্মত নয়। এতে মাঝে মাঝে ভয়ংকর দুর্ঘটনাও ঘটে। বডি শেইমিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
আমাদের সমাজে মেয়েদের গায়ের রঙ, শরীরী কাঠামো নিয়ে তারিয়ে তোলা হতে থাকে শৈশব থেকেই। অন্যরা কী বলছে, তা-ও আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কেউ প্রশংসা করলেই আমরা বর্তে যাই আর সমালোচনা করলেই নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করি। কেউ ভাবি না, সুস্থ থাকাটাই বড় কথা। নিজেকে নিয়ে তৃপ্ত থাকাটা জরুরি। শরীর সম্পর্কে লজ্জাবোধ করার কিছু নেই।
একসময় নায়িকা মানেই ভাবা হতো স্কিনি ফিগার। এখন সে ধারণা আমূল পাল্টে গেছে। ভারতের জনপ্রিয় নায়িকা বিদ্যা বালান কিছুদিন আগে চমৎকার একটি মন্তব্য করেছেন। স্লিম সব নায়িকার ভিড়ে তার শারীরিক স্থূলতা নিয়ে সে দেশে তাকেও কম মন্তব্য শুনতে হয়নি। থোড়াই কেয়ার করেন বিদ্যা। বরং উল্টো জবাব দিয়েছেন এ বলে যে, ‘আমার শরীর বা আমি কতটা মোটা- এ নিয়ে কে কী বললো বা অনুভব করলো, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। বরং আমি তাদের নিয়ে কী চিন্তা করছি, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।’ ব্যাপারটা আসলে তেমনই হওয়া উচিত। আমি কী ভাবছি সেটাই আসল। কয়েক দিন আগে অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনে স্লিম ট্রিম মডেলদেরই কেন নেয়া হয়, এ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল মিডিয়ায়। যারা স্থূল দেহের অধিকারী, তারা কি অন্তর্বাস পরেন না- এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো সোচ্চার হয়ে উঠলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। ফলে, অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনে আজকাল প্রচুর প্লাস সাইজের মডেল দেখা যাচ্ছে। তার মানে হলো, পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। দীর্ঘদিন ধরে বহন করা ধারণাগুলো ভেঙেচুরে নতুন চিন্তাকে জায়গা করে দেয়ার সময় এসেছে। আমি সব সময় বলে আসছি, সৌন্দর্য কখনোই বাহ্যিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করে না। সৌন্দর্যের প্রকৃত মাপকাঠি শরীর নয়, মন। প্রত্যেক মানুষই তার নিজের মতো করে সুন্দর। তাকে তুলনা বা বিচার করার ভার আমাদের কাউকে দেয়া হয়নি। অন্যের ব্যাপারে মন্তব্য করা বা জাজমেন্টাল হয়ে ওঠার যে জাতিগত অভ্যাস রয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি যদি কেউ কিছু বলেও, তা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগা উচিত নয়। যে মানুষ নিজেকে সুন্দর ভাবে না, অন্যকে সুন্দর ভাবার সামর্থ্যও কিন্তু তার মধ্যে থাকে না। সুতরাং ভাবতে হবে আমি সুন্দর, কেউ অসুন্দর নয়। কেননা, জীবন সুন্দর।

মডেল: এমা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top