skip to Main Content

কভারস্টোরি I উইন্টার নস্টালজিয়া

‘সন্ধ্যার বেগুনি মুহূর্ত নাবিককে নিয়ে আসে ঘরে’—এলিয়টের এই উচ্চারণের মতো শীতের কুয়াশামদির আলস্য মানুষকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় স্মৃতিতে। তাতে রঙ-ঘ্রাণ-সুর অবিভাজ্য হয়ে ওঠে। আচ্ছন্ন ও কাতর করে দেয়। লিখেছেন চঞ্চল আশরাফ

এক
আমরা হেঁটেছি যারা নির্জন খড়ের মাঠে পউষ সন্ধ্যায়,
দেখেছি মাঠের পারে নরম নদীর নারী ছড়াতেছে ফুল
কুয়াশার; কবেকার পাড়াগাঁর মেয়েদের মতো যেন হায়
তারা সব; আমরা দেখেছি যারা অন্ধকারে আকন্দ ধুন্দুল
জোনাকিতে ভ’রে গেছে; যে-মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ—কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

আমরা বেসেছি যারা অন্ধকারে দীর্ঘ শীত রাত্রিটিরে ভালো,
খড়ের চালের পরে শুনিয়াছি মুগ্ধরাতে ডানার সঞ্চার:
পুরোনো পেঁচার ঘ্রাণ; অন্ধকারে আবার সে কোথায় হারালো!
বুঝেছি শীতের রাত অপরূপ, মাঠে-মাঠে ডানা ভাসাবার
গভীর আহ্লাদে ভরা; অশথের ডালে-ডালে ডাকিয়াছে বক;
আমরা বুঝেছি যারা জীবনের এই সব নিভৃত কুহক;

জীবনানন্দ দাশের (১৮৯৯-১৯৫৪) ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতার শুরুতেই এ দুটি অনুচ্ছেদ রয়েছে। ওই কবিতার প্রায় সর্বাঙ্গে শীতের কম্পন পাঠমাত্র টের পাওয়া যায়। কথক এখানে স্মৃতিকাতর, তার কাছে শীত হলো স্থবিরতা ও মৃত্যুর পদধ্বনি। তাতে কাম্য হয়ে ওঠে ফেলে আসা জীবনের যা-কিছু সুখকর, সব যেন দৃশ্যের পর দৃশ্যে জীবন্ত ফিরে আসে।
স্মৃতিতে জমে থাকা এই সব দৃশ্যের একেকটি গুচ্ছ কবির কাছে ‘কুহক’ হিসেবে উপলব্ধ হয়েছে। ক্ষণিকের এই জীবনে সবই নশ্বর, তাই একে আমরা উপভোগ করতে চাই পুরোপুরি, এমনকি যা কিছু অতীত হয়ে গেছে, সেসবের উদ্্যাপন কাম্য হয়ে ওঠে। স্মৃতি হলো ফেলে আসা জীবনকে দেখার একটা অবলম্বন, অবসর পেলে আমরা তার দ্বারস্থ হই। শীতকাল সেই সুযোগ এনে দেয়।
দুই
বর্ষা ও শীত—এ দুটি ঋতুই বাঙালিকে বেশি স্মৃতিকাতর করে তোলে অন্যান্য মৌসুমের তুলনায়। একটি রোম্যান্টিক, অন্যটি বাস্তবিক। মধ্যযুগের গীতিকবিতা থেকে আজ অব্দি রচিত সাহিত্যের দিকে তাকালে মোটামুটি এই ধারণা পাওয়া যায়। যদিও স্মৃতিকাতরতা রোম্যান্টিকের প্রধান একটি লক্ষণ, বৃষ্টি আর শীতের মৌসুমে তাই প্রবল হয়ে ওঠে। কেননা, এ দুটি সময় মানুষ গৃহকাতর হয়ে পড়ে। ঘরেই তখন নিরাপত্তা অনুভব করে। ঘর মানেই একগুচ্ছ স্বজনের সঙ্গ, আলাপ, আয়েশি যাপন—সব মিলিয়ে এমন এক পরিসর, যাতে থেকে থেকে উঁকি দেয় অতীত। যেমন চাদরটা আলমারি থেকে বের করে মা বলছেন, এটা তোর বাবা গায়ে দিত, কিংবা এই সোয়েটারটা তোর দাদি বুনেছিলেন, কিংবা বারান্দার রোদটা তোর দাদির খুব প্রিয় ছিল!
বলা হয়ে থাকে, আলস্য বাঙালির শ্রেষ্ঠ বিনোদন। শীত এলেই এটা ভর করে তাদের জীবনে। আলস্য মানুষকে অতীতমুখী আর স্মৃতিকাতর করে দেয়। লেপ নয়তো কম্বলের তলায় শুয়ে পড়ার পর কত স্মৃতি ভিড় করে কর্টেক্সে, তাতে পৃথিবীর রূপ-রসের কিছুই যেন বাদ যায় না। এত যে, সিন্যাসথিসিয়া ঘটে যায়। মানে, ইন্দ্রিয়প্রসারণ। উনিশ শতকের ফরাসি প্রতীকবাদী কবিতায় এর উদাহরণ কম নয়। তাতে রঙ হয়ে যায় ঘ্রাণ আর গন্ধ রঙ, এমনকি সুর হয়ে ওঠে। সূর্য না-ওঠা সকালের কুয়াশায় বেগুনি কার্ডিগান পরা রূপসীকে হাঁটতে দেখেছিল কেউ, একবার দেখে আর ভুলতে পারা দূরে থাক, তার শরীর ছুঁয়ে আসা বাতাসের গন্ধটির তীব্র সম্মোহনে সে জড়িয়ে পড়ে এবং সেই নারীকে খুঁজে পাওয়ার জন্য তার আস্ত একটা শীতের মৌসুম মুছে গেল! পরের শীতে সেই রূপসী তার কর্টেক্সে ফিরে এলো, এবার তার রূপান্তর ঘটল রঙে আর ঘ্রাণে। আর সে কাউকে খোঁজে না, কেবল বর্ণ ও গন্ধের সন্ধানে একেকটি কুয়াশাময় সকাল পার করে দেয়। পরের বছর সে শুধু গন্ধই খোঁজে, কিন্তু তার স্নায়ু জানিয়ে দেয়—ঘ্রাণটির রঙ বেগুনি। মানে, চরিত্রটির সিন্যাসথিসিয়া ঘটল। তারপর কী হলো? পরের বছরের শীতকালে তার কর্টেক্স নতুন একটা তথ্য দিল। তা এই—হারিয়ে ফেলা ওই ঘ্রাণ কেবল রঙের চেহারা নিয়ে হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় না, এর নিজস্ব ও নির্দিষ্ট সুরও রয়েছে। কিন্তু কী করে, কখন তা খুঁজে পাওয়া সম্ভব? শীতের সকালে, কুয়াশার ভেতর চলতে চলতে ইন্দ্রিয়বিপর্যয়ের মধ্যে একেকটি সুরের সঙ্গে ঘ্রাণটিকে মিলিয়ে নেওয়ার অবিরাম পরীক্ষার একটা পর্যায়ে এসে সে জানতে পারল—গ্রিক সুরস্রষ্টা ইয়ানির ‘আনটিল দ্য লাস্ট মোমেন্ট’ সংগীতটি নানা রেখায় ভর করেছে তাতে। নস্টালজিয়া যখন পেয়ে বসে কাউকে, তখন এমনই ঘটে, তার স্মৃতির নানা দৃশ্য বদলে যেতে থাকে, রূপান্তরিত হয়।

তিন
শীতের স্মৃতি মানেই ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, সেই ছোটবেলা; পরীক্ষার পর বেড়ানো, শহর থেকে গ্রামের শিকড়ে কিছুদিন—রাতে গাছের পাতায়, টিনের চালে জলবিন্দুর টুপটাপ পতনধ্বনি, ভোরে পিতামহর হাত ধরে পুকুরপাড়ের সারিবদ্ধ খেজুরগাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামানোর দৃশ্য দেখা, জল থেকে বাষ্পের ঊর্ধ্বমুখী অপস্রিয়মাণতা, উঠোনে বা বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে বসে নরম রোদের আরাম নেওয়া, মাটির চুলায় তৈরি গরম পিঠা-পায়েসের আস্বাদ—এসবের মধ্য দিয়ে কখন যে দুপুর চলে আসে তাজা শাকসবজি আর মাছের ঝোলে, টের পাওয়া মুশকিল। এরপর দক্ষিণে হেলে থাকা সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ল মধ্যাহ্নভোজের ঢেকুর তুলতে তুলতেই আর কমলা রঙের বিকেল সরষের ক্ষেতে, বাঁশঝাড়, পুকুরপাড়ের ঝোপ, নারকেলবীথির ডগায় ক্ষণিকের আলো ফেলে উধাও হয়ে যায়। তারপর ‘শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে’। শীতের রাত এলো কিছুই বুঝতে না দিয়ে, এই নীরবতা কুয়াশাকে আরও ঘন করে তোলে যেন। তবু গ্রামের পথে হাটুরেদের ফিরতে দেখা যায়, তরুণের দল চায়ের ছোট্ট দোকানটি ছেড়ে আসতে দেরি করে ফেলে। কেননা, সেখানে উনুনের আরামদায়ক আঁচ, কেটলি থেকে বের হওয়া বাষ্পের সুরভিত উত্তাপ আর ইয়ারদের সঙ্গপ্রবণ উষ্ণতা। কিন্তু সব পাখিকে শেষ পর্যন্ত ঘরে ফিরতে হয়; শীতের রাত গভীর হওয়ার আগেই ঢুকে পড়তে হয় লেপ-কম্বলের ওমে, সেখানে ভোর অব্দি শিশিরের টুপটাপ আর ঝিঁঝির একটানা শব্দের পটভূমিতে ‘নিস্পন্দ নিরপরাধ ঘুম’।

চার
কেমন ছিল শহরের শীতকাল? এখন তো বিচিত্র উৎসব আর মেলায় ভরে থাকে, পিঠাপুলিরও তাতে রেহাই নেই। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকেও এতটা ছিল না। কিন্তু কী ছিল তখন বা তার আগে, যখন শহরের সব রাস্তায় ফুটপাত তৈরি হয়নি, এত শপিং মলও নয়। কিছু কফি শপ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নির্দিষ্ট কিছু জায়গা, বেইলি রোডের নাটকপাড়া, পুরান ঢাকার কয়েকটা স্পট, মহল্লার চা-দোকান—এসবই তো ছিল শীতের হ্যাপেনিং প্লেস। হ্যাঁ, নিউমার্কেটের বইয়ের দোকান, বিশেষত প্রগতির সামনে বিকেলের পর আড্ডা জমে উঠত। উদীয়মান ও প্রসিদ্ধ কবিরা সেখানে আসতেন। আর ছিল স্টেডিয়ামের আশপাশের রেস্টুরেন্টগুলো। ঢাকার ক্রিকেট লিগ শীতের মৌসুমেই হয়, খেলাগুলো হতো এখনকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে, কলাবাগান মাঠে আর পল্লবী ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মাঠেও হতো, তবে তা ছিল আন্তবিভাগীয় ও আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেটের জন্য। এখনো সেখানে শীতের মৌসুম মানে ক্রিকেট। কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলাটি আর হয় না অনেক দিন ধরে। কেমন ছিল সেই ক্রিকেট? সাদা পোশাক আর লাল বলেই হতো ওয়ান ডে ম্যাচ আর সেটি ছিল ৬০ ওভারের। টিভি নয়, রেডিওই ছিল খেলার ধারাবিবরণীর মাধ্যম। বেতারযন্ত্রটি ঘিরে উৎসাহীর দল বসে থাকত দিনমান, ফাঁকে ফাঁকে চা আর হালকা খাবার চলত। মনে আছে চুরানব্বই সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ বনাম ভারত এ দলের ম্যাচটির কথা? শেষ ওভারে ভারত এ দলের দরকার ছিল ৫ রান, অধিনায়ক আকরাম খান বল তুলে দিলেন স্পিনার মোহাম্মদ রফিকের হাতে। ভেংকটেশ প্রসাদ (পরে ভারত জাতীয় দলের খেলোয়াড়) স্ট্রাইকিংয়ে, প্রতি বলেই রফিককে ঘিরে সতীর্থদের সলাপরামর্শ; কী উত্তেজনা! শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জিতে গেল ১ রানে, কী যে উল্লাস—ঢাকার রাস্তায় গাড়ির হর্ন বেজে উঠল একসঙ্গে, ধারাভাষ্যকার কেঁদেই ফেললেন! মাঠ চাইলেন ক্রিকেটের জন্য, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চাইলেন। পরের দিন ৬ কলামে দৈনিক ইত্তেফাকে সেই সাধুগদ্যে সচিত্র রিপোর্টের ওপর হামলে পড়া—সব আজ স্মৃতির মাধুর্য নিয়ে জেগে উঠছে। শীতকাল এলে এমন কত কী মনে পড়ে!

শহুরে শীতের স্মৃতি মধুর আলস্য আর বিনোদনে ভরা। কেবল নাটক নয়, নতুন নাটকের মহড়া দেখতে যাওয়া, কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠানে, সিনেমা হলে, কনসার্টে না গেলে যেন দিনটা কাটল না মনমতো। আর তখন তো ভিডিও ক্যাসেটের যুগ, রাত জেগে হিন্দি কিংবা কলকাতার বাংলা সিনেমা নয়তো হলিউডের কোনো ছবি দেখার সংস্কৃতি। এখনকার মতো অত চ্যানেল ছিল না টিভিতে, ফলে দেশের বাইরে ভারতীয় দূরদর্শনই ছিল ভরসা। সে জন্য ছাদের উঁচু বাঁশে অ্যান্টেনা জুড়ে দেওয়া হতো, তাতে অ্যালুমিনিয়ামের এক বা একাধিক ঢাকনাও শোভা পেত!

পাঁচ
ঠান্ডার তীব্রতা নিয়ে এবার স্মৃতিচারণা চলতে পারে। ১৯৮৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সকালে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় ফিরছি ছোট ভাইকে নিয়ে। ভোরে শরীর-মনের সঙ্গে ঠান্ডার ধস্তাধস্তির পর লেপের তলা থেকে বের হয়ে ট্রাউজারের উপর জিনস, ডাবল মোজা, কেডস, স্যান্ডো গেঞ্জির উপর শার্ট, হাফ সোয়েটার, সোয়েটার আর জ্যাকেট পরে বের হওয়া গেল। ঘন কুয়াশার মধ্যে কাঁপতে কাঁপতে আমরা টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ডে এলাম। রাস্তা, দোকানপাট, কাউন্টার প্রায় জনশূন্য। টিকিট কাটার পর জানা গেল, যাত্রী সবে ৬ জন, ২০ জন হলেই বাস ছাড়বে। আমরা একটা টি-স্টলে ঢুকলাম এই ভাবনায় যে, চা খেতে খেতেই যাত্রীরা চলে আসবে। দোকানি চা বানিয়ে সামনে রাখল, ঠোঁটে তুলতেই দেখি একটু আগের ধোঁয়া-ওঠা তরল ঠান্ডা হয়ে গেছে! দু-চার ঢোঁকে শরবতের মতো তা শেষ করে বাসে উঠলাম। দেখি, যাত্রী মোটে ১০ জন। লোকজন বলতে লাগল, ‘ছাড়ো, করটিয়ায় যাত্রী পাইবা, মির্জাপুরে সূর্য দেখবা, যাত্রীও পাইবা।’ ড্রাইভার বলল, ‘ইঞ্জিন ঠান্ডা হইয়া গেছে, গরম না হইলে ছাড়ন যাইবো না।’ স্টার্ট দিয়ে কিছুক্ষণ পর বাস চলতে শুরু করল। ততক্ষণে সাড়ে আটটা বেজে গেছে, কিন্তু কুয়াশা কাটেনি, ফলে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলতে লাগল। করটিয়া বাসস্টপেজ প্রায় জনশূন্য, কুয়াশাময় সারা পথ পাড়ি দিতে আড়াই ঘণ্টার জায়গায় সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগে গেল। ঢাকায় এসেও সূর্যের দেখা মিলল না। টিভিতে সন্ধ্যার খবরে জানা গেল, সারা দেশেই তাপমাত্রা ছিল কম, ঢাকাতেই সাড়ে সাত ডিগ্রি। আর শীত পঞ্চগড়ে ভয়াবহ, মাত্র সাড়ে পাঁচ ডিগ্রি।
দশ বছর আগের ঘটনা বলি। ডিসেম্বরেই, ঢাকা থেকে একটা হাফ সোয়েটার পরে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশে রওনা দিলাম। যমুনা ব্রিজ পর্যন্ত ঠিকঠাকই ছিল। এরপর যত উত্তরে যেতে থাকি, শীত তত তীব্র হতে থাকে। খাওয়ার জন্য বিরতির জায়গায় নামলে, জ্বালানির প্রয়োজনে কোথাও থামলে দরজা খোলার পর তা টের পাওয়া যায়। বাসের ভেতরে বাতাস ঢুকতে পারে না বলে এবং যাত্রীশরীরের উষ্ণতায় ঠান্ডার তীব্রতা বোঝার উপায় নেই। কিন্তু রাত এগারোটায় যখন গন্তব্যে নামলাম, ঠকঠক করে কাঁপুনি শুরু হলো। গত ডিসেম্বরে কলকাতা থেকে হায়দরাবাদে গিয়ে এর উল্টো অভিজ্ঞতা হলো। এয়ারপোর্টে নেমে ব্লেজার খুলে ফেলতে হয়েছে। সেখানকার পানিও তখন গরম।

ছয়
নতুন কম্বলটি জড়িয়ে নিল বাবা-মা, তখনই সচিৎকার কেঁদে উঠল তাদের মাঝখানে শায়িত পাঁচ বছরের শিশুটি। বলল, ‘কম্বলটা ওই বাবুকে দিয়ে আসো!’ কোন বাবু? মায়ের বক্তব্য, সন্ধ্যার পর ফেরার সময় সে দেখেছিল, ফুটপাতে ছেঁড়া কাঁথা কোনোমতে জড়িয়ে একটা বাচ্চাকে নিয়ে শুয়ে আছে তার মা। বারবার প্রশ্ন করেছে, বাবুটার ঠান্ডা লাগবে না? মা, শীতকাল খুব পচা।…
কাঁদতে কাঁদতে হাত-পা ছুড়ে শিশুটি কম্বল গায়ে রাখার সুযোগ দেয় না। দাবি একটাই—ওই বাবুকে দিয়ে আসো! শেষ পর্যন্ত পুরোনো ও ব্যবহারযোগ্য একটা কম্বল নিয়ে বের হতে হলো বাবা-মাকে। সঙ্গে শিশুটিও চলল। বাইরে তীব্র কুয়াশা, ঠান্ডা হাওয়া। এরই মধ্যে ফুটপাতে শুয়ে থাকা সেই ঘুমন্ত মা ও শিশুর গায়ে কম্বলটি জড়িয়ে দেওয়া হলো।…
সাত
রাত দীর্ঘ আর দিন ছোট বলে শীত খুব আলস্যমদির মৌসুম। অবসরের কাল। তখন গল্পগুলো এসে জমে যায়। সব গল্পই শেষ পর্যন্ত মানুষ স্মৃতি থেকে বলে। পৃথিবীকে স্বপ্ন-কল্পনায় ভরা মায়ার অপরূপ গ্রহ বলে মনে হয়। কিন্তু, বাস্তবিক, আজ যা ঘটমান, আগামীর শীতে তা স্মরণযোগ্য হলে গল্পের ঝুড়ি আরেকটু ভারী হয়ে ওঠে। লেপের আদরে চোখ বুজে থাকার এই মৌসুমে পৃথিবী ‘গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল’ হয়ে উঠলে কে আর ঘুমিয়ে থাকতে চায়? তবু হাইবারনেশন বলে একটা কথা আছে। মানুষ সেদিকে যায় না; কারণ, তার ঘুমিয়ে পড়ার আগে কিছু কাজ থাকে। প্রতিজ্ঞা থাকে। শীত নিয়ে লেখা রবার্ট ফ্রস্টের (১৮৭৪-১৯৬৩) ‘স্টপিং বাই উডস অন আ স্নোয়ি ইভনিং’ কবিতায় যেমন আমরা পড়েছি। আরেকবার নস্টালজিক করে দেওয়ার মতোই সেই লাইনগুলো:
The woods are lovely, dark and deep,
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep.

মডেল: জেসিয়া ও রাব্বি
ওয়্যারড্রোব: টপ টেন ও কে ক্র্যাফট
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন ও সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top