skip to Main Content

কভারস্টোরি I বর্ষামঙ্গল

হেঁশেলকে হ্যাসেল মনে হবে না, যদি এর যত্ন হয় নিয়মিত, সঠিকভাবে
উৎসবের বিকেলে রান্নাঘরে ঢুকতেই এসে হাজির মেহমান। শুধু কি তাই! আলাপ করতে করতে রান্নাঘরেই চলে আসা! এরপরের গল্পটা হতে পারে, ‘ইশ্, এমন নোংরা কেন?’ কিংবা ‘বাহ্, আপনার রান্নাঘর তো অনেক সুন্দর’!
রান্না নামের আর্ট যেখানে রচিত হয়, সেই শিল্পালয়ের ব্যাপারে কতটুকু সচেতন সাধারণ হেঁসেল-ঠ্যালা মানুষেরা? হেঁসেলকে হ্যাসেল ভাবা হোক বা হেসেখেলে রান্নার ঘরই ভাবা হোক না কেন, সেটার যত্ন জরুরি বটে। নিজের ও পরিবারের জন্য, সুস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরির জন্য।
তাই এখন জেনে নিই যত্ন করে রান্না করার ঘরকে সযত্নে রাখার উপায়গুলো।
রান্নাঘরের আনাচকানাচে: রান্নাঘর মানেই শুধু চুলা আর হাঁড়িকুঁড়ি নয়। সিঙ্ক, পাইপ, র‌্যাক, জানালাসহ অনেক কিছু! সপ্তাহে এক দিন রান্না হোক বা দিনে একবার, এসব জিনিসের যত্ন নেওয়া চাই নিয়মিত।
যেমন ধরা যাক সিঙ্ক। নানা ধরনের তরল তাতে ফেলা হয়। যেমন বাসন মাজার লিকুইড, কখনো কখনো ব্যবহৃত তেল, কখনো এঁটো ঝোল— আরও কত কী! তাই এর যত্ন করতে হবে সবার আগে। প্রথমেই লক্ষ রাখতে হবে, কোনোভাবেই পাইপ যেন বন্ধ না হয়ে যায়। নিয়মিত গরম পানি ঢালতে হবে সিঙ্কের পাইপে তেল কিংবা ময়লা না জমার জন্য। তেলাপোকা বা অন্যান্য কীট দূর করার জন্যও এটা কার্যকর। প্রতিদিনই সিঙ্ক ধুয়ে নিলে ভালো হয়। ডিমের খোসা, চায়ের পাতা ইত্যাদি সেখানে ফেলা কখনোই ঠিক নয়। নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
রান্নাঘরে নানা রকমের ময়লা ফেলার বিন রাখা যেতে পারে। একটা বিনে সবজি, একটা বিনে শুকনো খাবার ফেলা হলে কোনটা কখন পরিষ্কার করতে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। খুব বেশি ময়লা জমিয়ে রাখতে নেই। কারণ, তাতে বোটকা গন্ধ হয়। নিশ্চয়ই রান্নাঘরে ঢুকেই নাকে রুমাল দিতে চান না।
এখন প্রায়ই রান্নাঘরে অসমোসিস প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধ করার যন্ত্র থাকে। সেটার পাইপ পরিষ্কার রাখা দরকার। প্রয়োজন নিয়মিত বিরতিতে ফিল্টার বদলানোর। নইলে পানি যেমন অস্বাস্থ্যকর হয়, তেমনই বাইরে থেকে দেখা কালো ফিল্টার রুচি নষ্ট করে।
রান্নাঘর মানেই তাক আর বয়ামের সারি। তাই তাক পরিষ্কার করা হোক নিয়মিত। তেলাপোকা, মাকড়সার হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে মরিচের গুঁড়া। পাতলা একটা কাপড়ে পুঁটলি বেঁধে রান্নাঘরের বিভিন্ন তাকে রেখে দিন।
বাসন রাখার কোনো তাক থাকলে সপ্তাহে অন্তত এক দিন সেটি স্টিম করিয়ে নিয়ে ভালো। কোথায় কোন পোকা বাসা বাঁধে সে তো বোঝা দায়; বরং পরিষ্কার রাখাই শ্রেয়।
আজকাল শুধু চুলা থাকলেই হচ্ছে না কিন্তু। ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ আরও অনেক কিছু থাকে। সেগুলোর পার্ট বাই পার্ট খুলে পরিষ্কার করে রাখলে চট করে ব্যবহারের সময় ঝামেলা কম পোহাতে হয়। রান্নাঘরের একটু যত্ন হলে কিন্তু রুচি আর স্বাস্থ্য— দুটোরই যত্ন হয়ে যায়।
চুলার যত্নে
গ্যাসের মতো দাহ্য একটি পদার্থ নিয়ন্ত্রণ করে এই চুলা। একটু অবহেলায় হতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। চুলার সার্ভিসিং করানো যেতে পারে। নবগুলো ঠিক আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। দেখতে হবে চুলা লিক করে কি না। ভারী রান্নার পর চুলার ক্রাউন অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে লাল আগুনে হাঁড়িতে পোড়া লাগতে পারে অল্পতেই। কালিও উঠতে পারে। মাঝে মাঝে ভাতের ফ্যান, দুধ বা ডাল উপচে চুলার উপর পড়তে পারে। সেটা সঙ্গে সঙ্গে মুছতে হবে। এসবের জন্য সব সময় আলাদা কাপড় ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। তা না হলে এক জায়গার তেল অন্য জায়গায় লেগে হিতে বিপরীত হতে দেরি হবে না।
কনটেইনার সমগ্র
আজকাল সবাই রান্নাঘরে সবকিছু কনটেইনারে আলাদা করে রাখে। এতে দরকারি জিনিসটি খুঁজে পাওয়া যায়। আবার সারিবদ্ধ করেও রাখা যায়। কিন্তু এই কনটেইনার সাফ করা ভুলে গেলে চলবে না। নিয়মিত ঢাকনাসহ পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে রোদে দিতে হবে। বিশেষ করে বর্ষাকালে চাল-ডাল ইত্যাদিতে পোকা হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বেশি থাকলে চাল-ডালও রোদে দিন। কিংবা কনটেইনার খালি হলে রিফিল করার আগে সেগুলোর রোদপোহানি হোক আচ্ছামতো।
এগজস্ট বা ফ্যান
রান্নাঘরের অবধারিত একটি অংশ এগজস্ট। অনেকে আবার ছোট্ট একটা ফ্যানও রাখেন। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করলে জমে থাকা ধুলো উড়ে আসতে পারে খাবারেই।
ধারালো সরঞ্জামের যত্ন
ছুরি, বঁটি, চপবোর্ড— ইত্যাদি ছাড়া রান্নাঘর একেবারেই ভোঁতা! তাই এগুলোর যত্ন নিতে নিয়মিত ধার করাতে পারেন। শুধু চাকু নয়, চামচসহ যেকোনো স্টেইনলেস স্টিলের যত্নে কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস চিপে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। কিছুক্ষণ পরে ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে ধুয়ে নিতে পারেন। চকচকে ও ঝকঝকে হবে। ব্রাশ নিয়মিত বদলে নিন। এটি বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। দাঁতে কিংবা হাতে যেখানেই হোক। বঁটি ধার করার জন্য জানালা দিয়ে বাইরে কান পেতে থাকুন। ধার করানোর মানুষ প্রায়ই হেঁটে যায় রাস্তা ধরে।
এসবের পাশাপাশি রান্নাঘর খোলামেলা রাখার চেষ্টা করুন। যেন বাতাস নিয়মিত যাতায়াত করতে পারে। একটা জানালা থাকা খুব দরকার। তাহলে ভ্যাপসা গন্ধ দূর হবে, ধোঁয়াও পালাবে আবার রান্নাঘরে ঢুকলে নিজেকে বন্দি মনে হবে না। হেঁসেলকে হ্যাসেল মনে হবে না।

 রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামান
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top