skip to Main Content

ছুটিরঘণ্টা I দিনগার্ডের চিঠি…

পর্বতারোহণের প্রস্তুতির রোমাঞ্চে ভরা পথ। নিসর্গ এখানে রহস্যময়। লিখেছেন রিয়াসাদ সানভী

১৮ মে ২০১৮। বুকি, উত্তরা কাশী জেলা, উত্তরাখন্ড। স্বপ্ন অন্বেষণের দৌড় শেষে ৮০ টগবগে তরুণ ফিরছে হিমালয়ের একেবারে অন্দর থেকে। তাদের পাশ কাটিয়ে গঙ্গোত্রীর দিকে জীবনযুদ্ধে ভঙ্গুর মানুষদের নিয়ে শাঁ শাঁ করে ছুটে চলেছে বাস, জিপগুলো। সবাই যাচ্ছেন পারলৌকিক মুক্তির আশায়। আহা! এ মানুষগুলো যদি পথের পাশের ভাগীরথী নদী কিংবা পাইন বনে ছাওয়া সবুজ বুগিয়ালের সৌন্দর্যটুকুও নয়ন ভরে দেখতো, নিশ্চিত তীর্থে যাওয়ার চেয়েও এ বড় কম পুণ্যের কাজ নয়। শেষ ১৫ দিন আমরা আমাদের তীর্থেই ছিলাম। অসীম আকাশের নিচে সোজা পূর্বে তাকালে আকাশছোঁয়া মাউন্ট জনলি। তার আশপাশে দ্রুপদি কা ডান্ডা, মাচাধার পর্বতশ্রেণি। আর ছিল অসীম আকাশ। পরে আসছি সেই গল্পে।

দুলকি চালে দুন এক্সপ্রেস যখন হাওড়া স্টেশনে ঢুকলো, ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা ছুঁই-ছুঁই। অর্থাৎ পাক্কা ছয় ঘণ্টা লেট। পুরো স্টেশন যেন ভেঙে পড়লো ট্রেনটির ওপর। এতক্ষণ শুয়ে-বসে থেকে অপেক্ষার বাঁধ ভেঙেছে মানুষগুলোর। আমাদের থ্রি টায়ার এসি। ফলে এখানে ভিড় নেই। নিজ নিজ সিট খুঁজে পেতে কোনো সমস্যা হলো না। ভারতের দূরপাল্লার ট্রেনগুলো চলেও এক্সপ্রেস গতিতে। তারপরও অনেক ক্ষেত্রেই লেট, এ যেন ভারত ভাগ্যবিধাতার তৈরি নিয়তি। দুপুরে ঠেসে খেয়েছিলাম, পেটে সিগন্যাল দিচ্ছে রাতের জন্য ক্ষমা দাও বাবা। একটি আপেলেই পর্ব সমাধা। ট্রেনের কু ঝিক ঝিক চোখে ঘুম নামাতে সাহায্যই করলো। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কামরার জানালা গলে পরদিন সকালের রোদ আমাদের স্বাগত জানালো ঝাড়খন্ডের রুক্ষ প্রান্তর। চারদিকে লাল মাটির ছোট ছোট টিলা। বোঝা যাচ্ছে অনেক দিন বৃষ্টিহীন এই অঞ্চল। ঝাড়খন্ডের পর দুপুরের আগেই বিহার। বিদেশি কেউ যদি হঠাৎ না জেনেই এখানে চলে আসেন, দুটো জিনিস দেখে বুঝতে পারবেন, তিনি বিহারে আছেন। প্রথমত প্রচুর মহিষের পাল, দ্বিতীয়ত মাঠে ময়দানে প্রাকৃতিক কৃত্যাদি সম্পন্ন করা মানুষজন। আগে থেকেই এ ব্যাপারে জানা থাকায় বিহার চিনতে আমাদের ভুল হলো না। এখানে দিগন্তব্যাপী ফসলের ক্ষেত। যত দূর চোখ যায়, কোনো বাড়িঘরের দেখা নেই। বাইরের অবস্থা দেখেই গরমের তেজ টের পাওয়া যাচ্ছিল। বিকেলের দিকে আমরা প্রবেশ করলাম উত্তর প্রদেশে। ভারতের সবচেয়ে বড় প্রদেশ। এই প্রদেশের একটি ব্যাপার আমাকে চমকে দিল। ট্রেন লাইনের ধারেই জনপদের খুব কাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে ময়ূর আর নীল গাইয়ের পাল। আমাদের দেশ থেকে এ দুটি প্রজাতি বহু আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। আর এখানে মানুষের সঙ্গে এদের যৌথ বসবাস। শেষ বিকেলেই আমরা পার হয়ে এলাম গয়া, কাশী। ট্রেনে এখন বিরক্তি লাগতে শুরু করেছে। সে বিরক্তির রেশ একেবারে পরদিন হরিদ্বার স্টেশনে নামা পর্যন্ত থেকেছিল। কিন্তু দেবভূমির প্রবেশদ্বারে পৌঁছে নিমেষে সব বিরক্তি ক্লান্তি উধাও। আমরা প্রবেশ করেছি শিবের এলাকায়। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী গারোয়াল কুমায়ুন অঞ্চলে তাদের সবচেয়ে বড় পুণ্য তীর্থগুলো অবস্থিত। এই অঞ্চলে আমিষ খাবার পাওয়া বড়ই কঠিন। কিন্তু দুগ্ধজাত নানা পদ এবং নিরামিষের স্বাদ অতুলনীয়। ট্রেনেই পরিচয় হয়েছিল কলকাতার নিলয়দাদের সঙ্গে। তারাই নিয়ে গেলেন পীযূষদার হোটেলে। একেবারে গঙ্গা ঘাটের কাছেই আমাদের এক দিনের ক্ষণিকালয়। পীযূষদা আশ্বাস দিলেন, তিনি পরদিন উত্তর কাশীর বাস টিকিটের ব্যবস্থা করে দেবেন। সেই আশ্বাসে নিশ্চিত হয়ে খেয়েদেয়ে বেরোলাম গঙ্গা ঘাটের উদ্দেশে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে গঙ্গার ধর্মীয় গুরুত্ব অসীম। গঙ্গোত্রীর গো মুখ থেকে উৎপত্তি হয়ে ঋষিকেশ হরিদ্বার হয়েই গঙ্গা পার হয়েছে বিস্তৃত ভারতবর্ষ। বাংলাদেশে তার নাম পদ্মা। ফলে হরিদ্বারে পুণ্য প্রত্যাশী মানুষের ভিড় সব সময় লেগে থাকে। হার কি পুরি ঘাটে সন্ধ্যা-আরতি শুরু হলো। গঙ্গার পবিত্র জলে অঞ্জলি ভাসানো আর ঢোল করতালের সুর মিশে সৃষ্টি করেছে অন্য দ্যোতনা। আমরা তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরলাম। পরদিন খুব ভোরে বাস।
হরিদ্বার থেকে উত্তর কাশী দীর্ঘযাত্রা পথ গেছে গারোয়ালি পার্বত্যভূমির সবুজ উপত্যকার চড়াই-উতরাই বেয়ে। সরু এক চিলতে পথকে প্রশস্ত করার কাজ চলছে। ফলে ধুলাবালির রাজত্ব। অনেক নিচে বয়ে চলা গেøসিয়ার গলা হিমালয়ান জলধারার নীলাভ সৌন্দর্য ভুলিয়ে দেবে ক্লান্তি। কখনো বাস আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, কিন্তু উতরাই ধরে নামার সময় তার গতি রোলার কোস্টারের শিহরণ জাগাচ্ছে। চূড়ান্ত দক্ষতা না থাকলে এ রুটে কোনো চালকের স্টিয়ারিংয়ে না হাত দেওয়াই ভালো। এমন সব রোমাঞ্চের শিহরণ সাথী করে অবশেষে উপত্যকার মতো উত্তর কাশী শহরে এসে উপস্থিত হলাম দুপুরের পর। উত্তর কাশীতেই ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয় উপমহাদেশের সেরা একটি পর্বতারোহণ প্রতিষ্ঠান নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিং। পরশু থেকে এখানেই শুরু হবে কঠিন বেসিক মাউন্টেইনিয়ারিং কোর্স। শহর থেকে কিছুটা দূরে পাহাড়ের কোলে এ ইনস্টিটিউটের অনন্য সৌন্দর্যময় ক্যাম্পাস। প্রকৃতির সঙ্গে যান্ত্রিকতার চমৎকার সমন্বয় হয়েছে এখানে। পাইনগাছে ছাওয়া ক্যাম্পাসে পাখি আর বানরকুলের স্বচ্ছন্দ পদচারণ আসলে পর্বতারোহণের সঙ্গে প্রকৃতি ও পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেয়। পরদিন ভর্তির সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। এরপর কঠিন প্রশিক্ষণ শুরু।
পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণে আমাদের মূলত তিনটি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়েছে। রক ক্রাফট, আইস ক্রাফট এবং স্নো ক্রাফটিংয়ের বিভিন্ন ধাপে শিক্ষার্থীদের প্রতি ছুড়ে দেওয়া হয়েছে কঠিন সব চ্যালেঞ্জ। যা থেকে উতরে যেতে প্রয়োজন হয় চূড়ান্ত শারীরিক ও মানসিক শক্তিমত্তার। ক্যাম্পাসের প্রথম সাত দিন প্রায় দশ কিলোমিটার হেঁটে আমরা যেতাম টেকলা রক ক্লাইম্বিং এরিয়ায়। যেখানে কঠিন পাথুরে দেয়াল বেয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ চলতো। ভাগীরথীর পার ধরে উত্তর কাশী শহর ছাড়িয়ে আসি গঙ্গার তীরে পাহাড়ের উপর টেকলায়। এর ফাঁকে একদিন আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো হিল ওয়াকিংয়ে। পিঠে ফুল লোডেড রুকস্যাক। ওজন ১৫ কেজির কম হবে না। ক্লান্ত হলেও যেখানে-সেখানে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে শেষ হলো হিল ওয়াকিং। পাইন বনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসা সকালের মিঠে আলোর রেখা আর দূরে বরফে ঢাকা শুভ্র বান্দরপুঞ্চ পর্বতের চূড়া ভুলিয়ে দিলো ক্লান্তি। এভাবেই আমাদের ক্যাম্পাসের দিনগুলো ফুরিয়ে আসে। সময় ঘনিয়ে এলো বেস ক্যাম্পে যাওয়ার। যেখানে হবে আমাদের প্রশিক্ষণের সিংহভাগ। নির্ধারিত দিনে আমরা যাত্রা করলাম বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে। বাস আমাদের নামিয়ে দিয়ে গেল ভাগীরথীর পারে, বুকিতে। এ জনপদ পার হলেই সভ্যতার সঙ্গে আগামী সতেরো-আঠারো দিনের জন্য আড়ি। আমরা হারাবো গহন হিমালয়ের কোলে। প্রথম দিনের হিসেবে বুকি থেকে তেলের ছয় কিলোমিটার অংশটুকুই বেস ক্যাম্পে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পিঠে বিশ কেজির রুকস্যাক কাঁধে একেবারে আকাশের দিকে উঠে যাওয়া খাড়া পথ ফিটনেসের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেবে। ভাগ্য ভালো, প্রথম দিনের পথ অতি উচ্চতায় নয়। শেষমেশ অবশ্য তেলে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। কিন্তু ততক্ষণে সেদিনের মতো সব শক্তি শেষ। পাইন বনের ফাঁকে ঘাসের সবুজ বুগিয়ালে পড়েছে আমাদের তাঁবু। এসেছি কঠিন পর্বতারোহণ কোর্সে অংশগ্রহণ করতে। সবকিছুই তাই নিজেকেই করতে হবে। তাঁবু টানানো, ঝিরি থেকে পানি আনা। রাতে পড়তে হলো ভয়াবহ বৃষ্টির কবলে। একটানা তিন ঘণ্টা বর্ষণ করে শান্ত হলো আকাশ, ততক্ষণে আমাদের তাঁবু ভিজে চুবচুবে। ভাগ্য ভালো, স্লিপিং ব্যাগ ভিজে যায়নি। নইলে রাতের ঘুম শিকেয় উঠতো। পরদিনের ট্রেক আরও লম্বা, পথে বিশাল সব ওঠানামা। কিন্তু আগের দিনের যাত্রা শরীরকে এ আবহাওয়ার সঙ্গে অনেকটাই সহনীয় করে তুলেছে। তেল থেকে আমরা রওনা দিয়েছিলাম সাড়ে সাতটায়। আজকের গন্তব্য গুজ্জারহাটে যখন পৌঁছালাম, ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে তিনটে বেজে গেছে। গতকালের মতো এতটা কষ্ট হয়নি। গুজ্জারহাটের উচ্চতা প্রায় এগারো হাজার ফুট। ফলে এখান থেকে উচ্চতাজনিত অসুস্থতার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। বিকেলে আমরা গেলাম অ্যাক্লেমাটাইজেশন হাইকে। বেশি উচ্চতায় সুস্থ থাকার তরিকা এটি। বারো হাজার ফুটের উপরে কেউ যদি বেশি উচ্চতায় গিয়ে তার থেকে নেমে এসে অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতায় ঘুমায়, তার অসুস্থতার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। দেখা হলো অসাধারণ সুন্দর খেরা তাল। তাল মানে লেক। এর স্বচ্ছ পানিতে প্রতিবিম্বিত হচ্ছে বরফচূড়ার প্রতিচ্ছবি। পুরো এলাকাটাই সাক্ষাৎ স্বর্গ। বহুদূর বিস্তৃত ঘাসের ঢালু ময়দান। আর তার চারপাশজুড়েই বরফ পাহাড়ের হাতছানি। সন্ধ্যার মুখে আমরা ফিরলাম ক্যাম্পে। এখানে কঠোর নিয়মকানুনের বেড়াজাল। পৌনে সাতটায় গরম স্যুপ, তারপর ফল ইন। সেখানে দেওয়া হয় পরের দিনের দিকনির্দেশনা। আগামীকাল আমরা চলে যাবো বেস ক্যাম্প। আমাদের পরবর্তী ১৫ দিনের ঠিকানায়। সাতটার মধ্যে রাতের খাবার পরিবেশন করা হলো। এরপর কারও কোনো কাজ নেই। সেই সুযোগও নেই। সারা দিনের ট্রেকিংয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুধুই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া।
পরদিন আমরা চলেছি বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে। আস্তে আস্তে আমরা পেরিয়ে আসছি ট্রি লাইন। পাইনের সারি উধাও হচ্ছে। অবশ্য খুব বেশি দূর যেতে হবে না। সাড়ে বারো হাজার ফুট উচ্চতায় আমাদের বেস ক্যাম্প। হিমালয়ান অঞ্চলে মূলত এর কাছাকাছি উচ্চতা থেকে বড় গাছের সারির শেষ হয়। মাত্র দুই ঘণ্টার ট্রেকিংয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম বেস ক্যাম্পে। দিনগার্ড ভ্যালির পাহারাদার হয়ে সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সাড়ে ছয় হাজার মিটারি পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট জনলি। নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিংয়ের স্থায়ী বেসক্যাম্প এটি। বছরজুড়েই নানা কোর্সের শিবির ফেলা হয় এখানে। ফলে সবকিছুই বেশ গোছানো। এসেই তাঁবু টানিয়ে ফেললাম আমরা। বেশ বড় আর্কটিক টেন্ট। এক তাঁবুতে আটজনের থাকার ব্যবস্থা। আমাদের গ্রুপে আমরা ছয়জন। সঙ্গে যোগ দিলো শ্রীলঙ্কান সামিরা। পরদিন থেকে শুরু হলো আইস ক্রাফটিং। ডোকরানি বামক গ্লেসিয়ারের কঠিন বরফে তার চেয়েও কঠিনতর অনুশীলন। এর মাঝেই আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। কখনো গ্লেসিয়ারে আগুনে রোদ উঠছে। মুখের নিরাভরণ ত্বক ফেটে চৌচির অবস্থা। প্রথম দুই দিন আমরা এই আবহাওয়া পেলাম বটে। তারপর দিন থেকেই শুরু হলো প্রচন্ড তুষারপাত। রাত সাড়ে চারটায় কোর্স শিক্ষকের চিৎকারে ঘুম ভেঙে দেখি বরফের চাপে তাঁবু ভেঙে পড়ার জোগাড়। সেই হিম শীতল রাত থেকে পরবর্তী দুই দিন চললো একটানা বরফপাত। কিছুক্ষণের জন্য হয়তো থামে, পরক্ষণে শ্রাবণের অঝোর ধারার বারিপতনের মতো বরফপাত চলতে লাগলো। সমতলের বৃষ্টি হয়তো রোম্যান্টিকতার জন্ম দেয়, হিমালয়ের অন্দরে বসে দুই দিন তুষারপাতের মধ্যে বসে থাকার মাঝে সেরকম কিছু দেখি না। এভাবেই দিনগার্ডের দিনগুলো কেটে যাচ্ছে আমাদের। প্রতিদিন সূর্য উঠছে মাউন্ট জনলির ওপার থেকে। হিমালয়ের দিন রাত পর্বতের সঙ্গে সখ্যের উত্তেজনায় জমজমাট হয়ে উঠতে লাগলো। আইস ক্রাফটের পর দুই দিন স্নো ক্রাফটে হাঁটুসমান বরফে অনুশীলন। তারপর দ্রুপদি কা ডান্ডা পর্বতের অ্যাডভান্স বেস ক্যাম্পে কাটাতে হলো আরও দুই দিন। পনেরো হাজার আট শ ফুট উচ্চতায় হাইট গেইনের মাধ্যমে সমাপ্ত হলো ১৫ দিনের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ। বেস ক্যাম্পের শেষ দিনে খোলা মাঠে বসে দিলাম তাত্ত্বিক পরীক্ষা। ম্যাপ রিডিং পরীক্ষায় আমাদের রোপ ওয়ান একটুর জন্য প্রথম স্থান থেকে বঞ্চিত হলো। এ ১৫টি দিনে সময় গোনারও সময় ছিল না। প্রতিটি মুহূর্তে কোনো না কোনো কিছু করতে হয়েছে। এভাবেই কেটে গেছে পনেরো দিন। আমরা ফিরে এলাম ক্যাম্পাসে। কিন্তু তত দিনে দিনগার্ড ভ্যালি শরীর ও মনে তার স্থায়ী চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। তাকে যে মনে রাখতেই হবে!

ছবি: লেখক

This Post Has One Comment
  1. অল্প কথায় ভালো লেখা। এই ইন্সটিটিউটে আমি ২০০৮ সালে ‘সার্চ এন্ড রেস্কিউ’ কোর্স করার সময় ছিলাম – তাই লেখার স্থানগুলো ১০ বছর পর চোখে ভেসে উঠেছিলো – এজন্য লেখককে ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top