skip to Main Content

ত্বকচর্চা I মিশ্রতায় শস্ত্র

ত্বক যদি একই সঙ্গে শুষ্ক ও তেলে হয়? কেমন হবে ব্যতিক্রমী এই ত্বকের পরিচর্যা?

মুখত্বকের একাংশ তেলে, কিন্তু আরেক অংশ একদম শুষ্ক- এটাই মিশ্র ত্বকের প্রধান বিশেষত্ব। সাধারণত মুখের টি-জোনকে তৈলাক্ততার তালিকায় ফেলা হয়। অর্থাৎ কপাল, নাক ও চিবুকে তেলে ভাবের আধিক্য দেখা যায়। কারণ, এসব অংশে ত্বকের তেলগ্রন্থিগুলো বেশি সক্রিয় থাকে। অন্যদিকে, বাকি মুখ অর্থাৎ গাল, চোয়াল আর চুলের চারপাশে ফুটে ওঠে শুষ্কতা। মৃত কোষ জমে দেখায় নির্জীব এবং খসখসে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, মিশ্র ত্বকে একই সঙ্গে দেখা দেয় ব্রণের প্রকোপ আর র‌্যাশের সমস্যা।
ত্বক মিশ্র প্রকৃতির হয়ে ওঠার পেছনে বহুবিধ কারণ বের করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকের মতে, বংশপরম্পরায় এ ধরনের ত্বকের অধিকারী হন অনেকে। হরমোনের কারণেও ত্বকে মিশ্রতা দেখা দেয়। এমনকি ভুল স্কিনকেয়ার প্রডাক্টের ব্যবহার ত্বকে তৈরি করতে পারে মিশ্রতা। ত্বকের জন্য উপযোগী নয় এমন কেমিক্যালে তৈরি পণ্যের ব্যবহার তৈলাক্ততা কিংবা শুষ্কতায় হেরফের ঘটিয়ে দিতে পারে। ফলে মিশ্র ভাব সৃষ্টি হয় ত্বকে।
ত্বক মিশ্র কি না, তা বের করার পদ্ধতি সহজ। এর জন্য বেশি জোগাড়যন্ত্রের দরকারও নেই। বেয়ার ফেসড মেথড এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। এর জন্য ভালো কোনো ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হয় প্রথমে। তারপর ত্বকে কোনো ধরনের ময়শ্চারাইজার, সিরাম কিংবা ট্রিটমেন্ট ক্রিম না মেখে আধঘণ্টার অপেক্ষা। নির্দিষ্ট সময়ের পর যদি শুধু কপাল ও নাকে তেলের চকচকে ভাব ফুটে ওঠে আর বাকি অংশের ত্বক শুষ্কই দেখায়, তাহলে বুঝতে হবে ত্বক মিশ্র। ব্লটিং শিট মেথডও এই কাজে জনপ্রিয়। মূলত ত্বকের বিভিন্ন অংশে ব্লটিং পেপার চেপে চেপে পরীক্ষা করা হয়। যদি নাক ও কপালের অংশ থেকে তেল উঠে আসে ব্লটিং পেপারে, বুঝতে হবে ত্বক মিশ্র। আরও উপায় আছে। ময়শ্চারাইজার মাখার পর স্পষ্ট বোঝা যায় ত্বকের মিশ্রতা। এটা ত্বকের অন্যান্য অংশকে স্বাভাবিকভাবে আর্দ্রতার জোগান দিলেও টি-জোনকে অতিরিক্ত তেলে করে তোলে। গাল কিংবা চোয়ালের লোমকূপের চেয়ে নাকের উপরের লোমকূপ বেশি দৃশ্যমান মিশ্র ত্বকে।
ত্বক শুধু শুষ্ক, স্বাভাবিক কিংবা তৈলাক্ত হলে এর যত্ন নেওয়াটা যেমন সহজ, মিশ্রতায় যত্নআত্তি ততটাই জটিল। প্রতিদিন দুটি ভিন্ন রূপ রুটিন তো মেনে চলা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে একই সঙ্গে দুটো ত্বকের জন্য উপযোগী এমন একটা প্রাত্যহিক নিয়ম গুছিয়ে নিতে হবে, যা মেনে চললে কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
ডেইলি ডোজ
সব ধরনের ত্বকের মতো মিশ্র ত্বকের জন্য সিটিএম অর্থাৎ ক্লিনজিং, টোনিং ও ময়শ্চারাইজিং মাস্ট। ক্লিনজার হিসেবে লোশন কিংবা জেল বেসড ক্লিনজার বেছে নেওয়াই ভালো। ত্বক শুষ্ক বা চিটচিটে হবে না। কার্যকরভাবে দূর করবে ত্বকের দূষণ, ময়লা আর মেকআপ। বেশি শুষ্ক অংশের জন্য কোমল ক্লিনজিং ব্রাশও ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু একদম হালকা হাতে। মিশ্র ত্বকের ক্লিনজার বাছাইয়ের সময় খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন টি-জোনকে ম্যাটিফাই করতে সাহায্য করে, গাল কিংবা চোয়ালের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক না করেই। মাইসেলার ওয়াটার এ ক্ষেত্রে দারুণ অপশন। বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, হাইড্রেটিং সিরামাইডযুক্ত স্কিন ব্যালান্সিং টোনার মিশ্র ত্বকের জন্য বেশি উপকারী। এগুলো শুষ্ক অংশে পরিপুষ্টি জোগাবে। রাশ টেনে ধরবে বাড়তি তৈলাক্ততার। অয়েল ফ্রি লাইটওয়েট ময়শ্চারাইজার মাখা যেতে পারে। আর দিনের বেলা জিঙ্ক অক্সাইডযুক্ত সানস্ক্রিন সুরক্ষিত করবে মিশ্র ত্বককে। এর এসপিএফ যেন কমপক্ষে ৩০ এর ওপর হয়। মিশ্র ত্বকের রাতের রূপ রুটিনও প্রায় একই। শুধু সানস্ক্রিনের বদলে আলফা কিংবা বিটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিডযুক্ত সেরামের ব্যবহার হতে পারে ত্বকে। স্যালিসাইলিন, হায়ালুরনিক কিংবা রেনিটল সমৃদ্ধ সেরামও মিশ্র ত্বকের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে। এগুলো ত্বকের অতিরিক্ত তেলে ভাব রুখবে, শুষ্কতা সারাবে রাতভর। ত্বকের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করবে।
সপ্তাহ শেষে
সপ্তাহে অন্তত দুবার এক্সফোলিয়েশন জরুরি, মিশ্র ত্বকের জন্য। এ ক্ষেত্রে সুগার বেসড মাইক্রোবিডেড স্ক্রাব মানানসই। যা ত্বকের মৃতকোষ সারাইয়ে চমৎকার। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ইনফিউজড স্ক্রাবও বেছে নেওয়া যেতে পারে। এগুলো ত্বকের গভীরে ঢুকে পরিষ্কার করে ত্বক। প্রয়োজন বুঝে ফেস মাস্কও ব্যবহার করতে হবে নিয়মিত। মিশ্র ত্বকের জন্য মাল্টি মাস্কিং বেস্ট অপশন। এ ক্ষেত্রে ত্বকের তৈলাক্ত অংশের জন্য ম্যাটিফায়িং ক্লে মাস্ক আর শুষ্ক অংশের জন্য হাইড্রেটিং ক্লে মাস্ক বেছে নেওয়া যেতে পারে। আর বাসায় বসে প্যাক তৈরি করতে চাইলে তৈলাক্ত ও শুষ্ক অংশের জন্য আলাদা করে বানিয়ে তা ব্যবহারে উপকার বেশি। মিশ্র ত্বকে ফেস অয়েলও জরুরি। এ ক্ষেত্রে পাতচৌলি, ল্যাভেন্ডার, স্যান্ডেলউড, গ্রেপসিড, ক্যারট সিডের মতো এসেনশিয়াল অয়েল বেশি উপকারী।
পনেরো দিন পর
শুধু মুখত্বক নয়- গলা, ঘাড়, পিঠসহ পুরো শরীরের অন্যান্য অংশেরও বাড়তি যত্ন প্রয়োজন ১৫ দিন অন্তর। এ ছাড়া বাসায় বসে অ্যাট হোম পিল ট্রিটমেন্টও সেরে নিলে ভালো। এগুলোর নিয়মিত ব্যবহার ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ সারায়। দেয় উজ্জ্বল নতুন ত্বক। তবে পিল প্যাড, জেল বা সিরামগুলো যেন মিশ্র ত্বকের জন্য উপযুক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, রেনিটল, আলফা আর বিটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিডযুক্ত পিলগুলো মিশ্র ত্বকে বেশি মানানসই।
মাসে একবার
বাসায় বসে নিয়মিত যত্নের পাশাপাশি মাসে একবার ত্বক পরীক্ষা করিয়ে উপযোগী একটি ফেসিয়াল ট্রিটমেন্ট বেছে নেওয়া খুব জরুরি। অভিজ্ঞ হাতে করানো এ প্রফেশনাল ট্রিটমেন্ট ত্বকচর্চায় দেবে পরিপূর্ণতা।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: রিফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top