skip to Main Content

ফিচার I ইউকেলেলে

বাংলাদেশে এই বাদ্যযন্ত্র জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সম্প্রতি। সংগীতানুরাগীদের চাহিদার চাপে গড়ে উঠেছে শেখানোর স্কুল

তারের যেসব বাদ্যযন্ত্র রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ইউকেলেলে বেশ জনপ্রিয়। এটি হাওয়াইয়ান ইনস্ট্রুমেন্ট। এর উদ্ভব পর্তুগালে। ১৮৭৯ সালে পর্তুগিজ প্রবাসীদের সঙ্গে র‌্যাভেনস্ক্র্যাগ জাহাজে করে হাওয়াই চলে আসে ম্যাশেটি ডি ব্রাগ নামের ছোট গিটারসদৃশ একটি যন্ত্র। একসময় এটি কাভাকিনহো, ব্রাগিনহা, ম্যানশেটি ও কাভাকো নামেও পরিচিত ছিল। বাজানোর সময় দেখা যায়, ছোট ফ্রেটবোর্ডে আঙুলগুলো দ্রুত লাফিয়ে চলছে। হাওয়াইয়ের মানুষজন এর নাম দিল ইউকেলেলে। ইউকে শব্দের অর্থ লাফানো এবং লেলে শব্দের অর্থ মাছি বা ছোট পোকা।
অনেকে মনে করেন, হাওয়াইয়ের রাজা কালাকুয়ার নামানুসারে এই যন্ত্রের নামকরণ হয়েছে। কারও মতে, এর পরিচয় তৈরি হয়েছে রানি লিলিওকালানির নাম থেকে।
সে সময় ম্যানুয়েল নুনিস, অগাস্টো ডায়াজ এবং জোস এসপিরিতো সান্তো— এই তিনজন হাওয়াইয়ান ইউকেলেলে বানাতেন। শুরুতে তাঁরাই বাজাতেন। তাঁদের বানানো এই যন্ত্র একসময় আমেরিকা পর্যন্ত যায়। হাওয়াই রাজা কালাকুয়ার বিশেষ পছন্দের বাদ্যযন্ত্র হয়ে উঠেছিল এটি। পরিচিতির বছর দশেকের মধ্যে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হয় সেই অঞ্চলে।
ইউকেলেলের কাঠামো তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। তবে প্লাস্টিকের তৈরি বডিরও দেখা মেলে। হাওয়াইয়ান কোয়া, ম্যাপল, ওয়ালনাট, মার্টল, ব্রাজিলিয়ান কানারি, লেসউড, মেহগনি ইত্যাদি কাঠ ব্যবহার করা হয়। কাঠের ধরনের ওপর সাউন্ড ও টোন নির্ভর করে। মেহগনির কথাই ধরা যাক। এই কাঠের বডিতে সফট ও মেলো টোন পাওয়া যায়। বয়স ও পক্বতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর সাউন্ড কোয়ালিটি আরও ভালো হতে থাকে। হাওয়াইয়ান নির্মাতারা কাঠকে ইউকেলেলের জন্য আদর্শ হিসেবে মনে করে থাকে। বডিকে ফাঙ্গাস থেকে রক্ষা করতে সিনথেটিক অ্যাডহেসিভ ব্যবহার করা হয়। এতে থাকে চারটি নাইলন স্ট্রিং। কিছু ইউকেলেলেতে স্টিল স্ট্রিংও থাকে। মূলত অ্যাকুইস্টিক এই ইনস্ট্রুমেন্ট হয় চার ধরনের। সুপ্রানো, কনসার্ট, টেনর ও বারিটোন। আকার ও শব্দের ওপর ভিত্তি করে এই শ্রেণিবিভাগ করা হয়। সুপ্রানোর দৈর্ঘ্য ১৭-২২ ইঞ্চি, কনসার্ট ২৩-২৫ ইঞ্চি, টেনর ২৬-২৭ ইঞ্চি এবং বারিটোন ২৮-৩০ ইঞ্চি হয়ে থাকে। প্রতিটির আবার পাইনঅ্যাপল শেপ আছে। চার নম্বর স্ট্রিং থেকে এক নম্বর স্ট্রিংয়ে এর স্ট্যান্ডার্ড টিউন G-C-E-A তে করা হয়। হাইব্রিড ভার্সন হিসেবে ইদানীং এই পরিবারে যোগ হয়েছে বেজ ইউকেলেলে। এর টিউনিং প্যাটার্ন E-A-D-G।
মজার ব্যাপার হলো, আমাদের দেশি বাদ্যযন্ত্র দোতারার টিউন করা যায় ইউকেলেলেতে। কয়েকভাবে এই টিউন করা হয়। সবচেয়ে পরিচিত এবং বেসিক টিউনিং হলো E-B-E-A। দোতারার যুগল; অর্থাৎ ‘সা’কে ভেঙে দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্ট্রিংয়ে দেওয়া হয়। প্রয়োজনমতো যেকোনো নোটে টিউন করে নেওয়া যায় দোতারা ফরম্যাটে। হালের ইউকেলেলেতে প্লাগ করার সুবিধা রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্রসেসর ও প্যাডেল কানেক্ট করেও বাজানো হয় এই যন্ত্র।
বাংলাদেশে ইউকেলেলের প্রবেশ সাম্প্রতিক। তবে অল্প দিনেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যন্ত্রটি। নতুন মিউজিশিয়ানদের অনেকেই এর প্রতি ঝুঁকেছেন। এ নিয়ে কথা হয় ইউকেলেলে সেন্টার বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী ফিকুল আহমেদ মেঘনের সঙ্গে। তিনি জানান, এখনকার মিউজিশিয়ান ও কম্পোজারদের বেশ পছন্দের বাদ্যযন্ত্র এটি। এখানকার প্যাটার্নের সঙ্গে মিশে গেছে যন্ত্রটি। ফলে বাজানোর ধরনে এর প্রকৃতি অনেকটাই দেশি রূপ নিয়েছে। তবে আগ্রহীদের একটা বড় অংশ শখের বশে এটি কেনেন।
বিশ্বখ্যাত ইউকেলেলে বাদকেরা হলেন জেক শিমাবুকুরো, তাইমান গার্ডনার, সিনথিয়া লিন, জন কিং, জেমস হিল প্রমুখ। বাংলাদেশি আর্টিস্টদের মধ্যে আছেন চিরকুট ব্যান্ডের ইমন চৌধুরী, রায়েফ আল হাসান রাফা, ইমরানসহ বেশ কয়েকজন। ফিকুল আহমেদ মেঘনের তত্ত্বাবধানে ‘ইউকেলেলে সেন্টার বাংলাদেশ’-এ রয়েছে শেখার সুযোগ।
বর্তমানে প্রায় সব বাদ্যযন্ত্রের দোকানে ইউকেলেলে পাওয়া যায়। ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় সে রকম বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। এ ছাড়া বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, ধানমন্ডির মেট্রো শপিং মল এবং উত্তরার কিছু মার্কেটে এটি পাওয়া যাবে। ভালো ব্র্যান্ডের ইউকেলেলের মধ্যে রয়েছে হাওয়াইয়ান, আমেরিকান ও করডোবান। এ ছাড়া আছে চায়নিজ ব্র্যান্ড জিলাক্স ও এবান। আছে জাপানিজ ব্র্যান্ড মাহালো এবং কোরিয়ান ড্রিম মেকার। ৪০০০ থেকে শুরু করে মোটামুটি ৩০০০০ টাকা পর্যন্ত এর দাম হয়ে থাকে। তবে এর চেয়েও বেশি দামি ইউকেলেলে বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

 তাওসিফ আহমেদ
মডেল: জামান মির্জা
মেকওভার: পারসোনা
কৃতজ্ঞতা: বিস্কুট ফ্যাক্টরি
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top