skip to Main Content

ফিচার I চুলচর্চায় চলতি

এ মুহূর্তে নতুনতর সংযোজন। চুলের পরিচর্যায় হালের এই ধারার চুলচেরা বিশ্লেষণ তো চাই। বোঝার সুবিধার্থে

প্রি পুয়িং প্যারেড
মূলত প্রি শ্যাম্পুইংয়ের অভিনব এক প্রক্রিয়া এটি। শ্যাম্পু করার আগে এই হেয়ার ট্রিটমেন্ট চুলে রক্ষাবেষ্টনী তৈরি করে। কারণ, চুল ও মাথার ত্বক থেকে যতই তেল, ময়লা আর ধুলাবালি পরিষ্কার করুক না কেন, শ্যাম্পুতে থাকা সালফেট আর প্যারাবেনের মতো কেমিক্যালগুলো চুলের প্রাকৃতিক তেল এবং সেবামকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফল- শুষ্ক, ভঙ্গুর আর নেতিয়ে পড়া চুল। প্রি পুয়িং এসব ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। মূলত শ্যাম্পুর আগে শুকনো চুলে তেল কিংবা কন্ডিশনার মাখিয়ে করা হয় প্রি পুয়িং। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে নেয়া হয় চুল। তারপর সেরে নেয়া হয় শ্যাম্পুইং। প্রি পুয়িংয়ের ফলে শুধু আঙুল দিয়েই চট করে ছাড়িয়ে নেয়া যায় চুলের জট। চিরুনির ব্যবহার হয় না বলে চুল পড়া কমে। কমে চুলের আগা ফাটা ভাব। শ্যাম্পুর জন্য চুল প্রস্তুত করতে জুড়ি নেই এ প্রক্রিয়ার। সঙ্গে বাড়তি আর্দ্রতার জোগান দিতেও দারুণ। কারণ, শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল বা কন্ডিশনার নির্দিষ্ট সময় ধরে রেখে দেওয়ার ফলে চুলের গভীর পর্যন্ত পুষ্টি পৌঁছে যায়। খোলা কিউটিকলও বন্ধ হয়। ফলে পরবর্তী সময়ে শ্যাম্পুর ক্ষতিকর উপাদানগুলো গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। চুলের নেতানো ভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। চুল দেখায় ঝরঝরে। যেকোনো ধরনের হেয়ার মাস্ক কিংবা কন্ডিশনার ব্যবহার করা যায় প্রি পুয়িংয়ের জন্য। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সেগুলো যেন সিলিকনমুক্ত হয়। সে জন্য লেবেলের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্সট্রা ময়শ্চারাইজিং কিংবা ডিপ কন্ডিশনার এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত। কন্ডিশনার বা ক্রিমি মাস্ক ব্যবহার করতে না চাইলে তেল বেশ জুতসই অপশন। পাতলা চুলে প্রি পুয়িংয়ের জন্য নারকেল তেল আর ঘন চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। গ্রেপসিড, আমন্ড আর সানফ্লাওয়ার অয়েলও চলে। তবে একদম খাঁটি আর অর্গানিক অয়েল বেছে নিলে উপকারটা বেশি পাওয়া যাবে। বাসায় বসেও তৈরি করে নেয়া যায় প্রি পুয়িংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট। আধা কাপ দই, দুই টেবিল-চামচ নারকেল তেল আর এক টেবিল-চামচ মধুর মিশ্রণ তৈরি করে নিয়ে মাখিয়ে নিতে হবে চুলের আগাগোড়ায়। তারপর প্লাস্টিক ক্যাপ পরে নিতে হবে মাথায়। ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে শ্যাম্পু করতে হবে চুল।
কো ওয়াশিং কনসেপ্ট
শ্যাম্পু বাদেই চলবে চুল ধোয়ার কাজ। শুধু কন্ডিশনারে। প্রচলনের শুরুতে আফ্রিকান আমেরিকানদের ঘন কোঁকড়ানো চুলের যত্নে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কো ওয়াশিং। এখন তো মেইনস্ট্রিম ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। মূলত ঘন শুষ্ক চুলের জন্য বেশি উপযোগী এটি। কিন্তু পাতলা চুলে এটা বাড়তি কোনো টেক্সচার যোগ করতে পারে না। ভারী কন্ডিশনার ব্যবহৃত হয় বলে উল্টো আরও নেতিয়ে পড়ে চুল। হেয়ার কেয়ার রুটিনে কো ওয়াশিংয়ের অন্তর্ভুক্তি প্রথম দিকে ঝামেলাপূর্ণ মনে হতে পারে। কারণ, মাথার ত্বকে মানিয়ে নিতে এ প্রক্রিয়ার কিছুদিন সময় লাগে। তাই শুরুতে তৈলাক্ত ভাব তৈরি হতে পারে চুলে আর স্ক্যাল্পে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার নিয়মিত চর্চায় এসব অসুবিধা কাটিয়ে ওঠা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে একবার কো ওয়াশিংই চুলের জন্য যথেষ্ট। শ্যাম্পুর বদলে কন্ডিশনারে চুল ধোয়া হয় বলে একদম ঝা-চকচকে পরিষ্কার না হলেও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখায়। শ্যাম্পুর ব্যবহার অনেক সময়ই চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে, কো ওয়াশিংয়ে সে হ্যাপা নেই। বরং এ প্রক্রিয়ায় চুল পায় বাড়তি কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট। তবে সাবধানতা জরুরি। কন্ডিশনার ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে চুল থেকে। নইলে হেয়ার ফলিকলের স্বাভাবিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চুল বাড়তে পারে না সুস্থভাবে। কো ওয়াশিংয়ের জন্য এমন কন্ডিশনার বেছে নিতে হবে, যা সিলিকনের মতো সিনথেটিক উপাদানমুক্ত। কারণ, এ ধরনের কন্ডিশনার সহজে চুল থেকে ওঠে না। জমতে শুরু করে মাথার ত্বকে ও চুলে। উল্টো ময়লাযুক্ত আর ভারী হয়ে যায়। ঘন চুলের জন্য প্রতিদিন ব্যবহারের উপযোগী কন্ডিশনারগুলো মাখলেই চলবে। কিন্তু পাতলা চুলের জন্য বেছে নিতে হবে ক্লিনজিং কন্ডিশনার। সাধারণ কন্ডিশনারগুলোর তুলনায় এতে পরিষ্কারক উপাদান বেশি থাকে, যা কোমলভাবে পরিষ্কার করে চুল। রাখে কন্ডিশনড। কো ওয়াশিং প্রক্রিয়ায় প্রথমে শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে নেয়া হয় চুল। এতে আটকে থাকা ধুলা ময়লা আলগা হয়। খুব সহজে কন্ডিশনার ছড়িয়ে দেওয়া যায় পুরো চুলে। প্রথমে চুলে প্রয়োজনীয় পরিমাণে কন্ডিশনার নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে মাথায় রাখা চাই কন্ডিশনিং নয়, আদতে ক্লিনজিংটাই মুখ্য এ প্রক্রিয়ায়। স্ক্যাল্প থেকে চুলের গোড়া অব্দি কন্ডিশনার ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এতে তেল, ময়লা এবং স্টাইলিং প্রডাক্টের অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার হবে সহজে। তারপর কন্ডিশনার মাথায় রেখে দিতে হবে মিনিট পাঁচেক। শুষ্ক এবং ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য সময়টা আরও বেশি হতে পারে। তারপর ধুয়ে, মুছে শুকিয়ে নিয়ে সেরে নিতে হবে স্টাইলিং। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কন্ডিশনারের ওপর চুল পরিষ্কারের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে বিপদ। শ্যাম্পুইং যেন রুটিন থেকে বাদ না পড়ে যায়; বরং অদলবদল করে প্রয়োজন অনুযায়ী চলতে পারে শ্যাম্পুইং এবং কো ওয়াশিং প্রক্রিয়া।
শিট মাস্ক ম্যানিয়া
শুধু ত্বকের যত্নে নয়, এখন শিট মাস্ক তৈরি হচ্ছে চুলের জন্য। অ্যাট হোম স্পা ট্রিটমেন্ট হিসেবে আজকাল ব্যবহৃত হচ্ছে হরহামেশাই। কোরিয়ান বিউটি ট্রেন্ডের সাম্প্রতিক এ সংযোজন মাখার বাড়তি ঝক্কি থেকে বাঁচিয়ে দেয়। ব্যবহারে সহজ। স্বল্প সময়ে দেয় স্যালন ট্রিটেড সুন্দর চুলের নিশ্চয়তা। এ মাস্কগুলো দেখতে শাওয়ার ক্যাপের মতো। ছিদ্রমুক্ত শিটগুলো ভেজানো থাকে বিভিন্ন ধরনের হেয়ার মাস্ক ফর্মুলায়। আর্দ্রতার জোগান, সৌন্দর্য পুনরুদ্ধার ছাড়াও ভলিউমের এনে দেওয়া হেয়ার শিট মাস্ক মিলছে বাজারে। শ্যাম্পু করার পর এগুলো ব্যবহার করতে হয়। চুল ধুয়ে বাড়তি পানি মুছে নিয়ে তারপর মাথায় দিতে হয় এগুলো। মাস্ক এমনভাবে মুড়ে দিতে হয়, যেন খুলে না যায়। তারপর আস্তে আস্তে ঘষে নিতে হয়। এর ফলে মাস্কে থাকা সেলফ হিটিং কন্ডিশনিং ক্রিম কার্যকর হয়ে ওঠে। এই মাস্ক ১০ থেকে ১৫ মিনিট মাথায় রেখে তারপর খুলে নিতে হবে। সবশেষে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে চুল।
কিপ ইট ক্লিন
চুলের গোড়ায় পরিপুষ্টির জোগান দিতে নয়, তেল এখন ব্যবহৃত হবে চুল পরিষ্কারের কাজে। শ্যাম্পুর মতো স্ক্যাল্পের কোনো রকম ক্ষতি কিংবা শুষ্ক না করেই কোমলভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এই ক্লিনজিং অয়েলগুলো। বিভিন্ন ধরনের উপকারী এসেনশিয়াল অয়েলযুক্ত হওয়ায় স্ক্যাল্পের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয় এগুলো। কোনো কোনো ক্লিনজিং অয়েলে থাকে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা স্ক্যাল্প সুস্থ রাখতে দারুণ কার্যকর। এ ছাড়া চুলের প্রাকৃতিক তেলের উৎপাদনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে না এগুলো। সাধারণ শ্যাম্পুর মতোই ব্যবহার উপযোগী। তবে খুব পাতলা চুলে প্রযোজ্য নয়। কেমিক্যালি ট্রিটেড, কার্লি কিংবা ওয়েভি চুলে ব্যবহার করাই ভালো।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: চাঁদনী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top